Saturday 29 January 2011

দেশজুড়ে বিক্ষোভ অবরোধ ভাংচুর



ডেস্ক রিপোর্ট

শেয়ারবাজারে ভয়াবহ দরপতনের ক্ষোভে গোটা দেশের বিনিয়োগকারীরা রাস্তায় নেমে আসেন গতকাল। বাজারের এই অবস্থাতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেটের কারসাজি বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিনিয়োগকারীরা। বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, সিলেট, নরসিংদী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, রাজশাহী, বগুড়া, রংপুরসহ বিভাগীয় ও জেলা শহরগুলোতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। আমাদের অফিস ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর :
অর্থমন্ত্রী ও গভর্নরের পদত্যাগ দাবি
চট্টগ্রাম : শেয়ারবাজারে নজিরবিহীন কেলেঙ্কারির কারণে গতকাল ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছিলেন চট্টগ্রামের বিনিয়োগকারীরা। তারা স্টক এক্সচেঞ্জের সামনে দফায় দফায় ব্যাপক বিক্ষোভ দেখান তারা। দুই দফায় এক ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করেন বিক্ষোভকারীরা। স্টক এক্সচেঞ্জ ভবন ছাড়িয়ে খাতুনগঞ্জ, জামালখান, প্রেসক্লাব এলাকাসহ নগরীর বিভিন্ন এলাকায় তাদের বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।
অস্বাভাবিক দরপতনের কারণে এসইসির নির্দেশে আধঘণ্টা লেনদেন চলার পর সকাল সাড়ে ১১টার দিকে বন্ধ হয়ে যায় চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) লেনদেন। বেলা ১২টা নাগাদ কয়েক হাজার বিনিয়োগকারী সিএসই’র সামনে জড়ো হন। তারা প্রথমে আগ্রাবাদ উপহার সিনেমা হলের সামনে থেকে মিছিল বের করেন। পরে স্টক এক্সচেঞ্জের সামনে শেখ মুজিব রোড অবরোধ করে মিছিল করতে থাকেন তারা। আগে থেকেই সিএসই ভবনের সামনে মোতায়েন ছিল পুলিশ। পরে তাদের সঙ্গে আরও শতাধিক পুলিশ সদস্য যোগ দেয়। পুলিশ একপর্যায়ে বিক্ষোভকারীদের রাস্তা থেকে হটিয়ে দেয়। এ সময় বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে পুলিশের কয়েক দফা ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়। পুলিশের ধাওয়া খেয়ে বিনিয়োগকারীরা সিএসই ভবন, উপহার সিনেমা হলের সামনে এবং বাদামতলী এলাকায় অবস্থান নিয়ে মিছিল করেত থাকেন। এ সময় এলাকার দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। ডবলমুরিং জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার তানভীর জানান, বিক্ষোভকারীদের অনুরোধ করলে তারা রাস্তা ছেড়ে দেয়। বেলা ২টার দিকে বিনিয়োগকারীরা আবারও রাস্তা বন্ধ করে মিছিল করে। কয়েক মিনিট পরই পুলিশ তাদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দেয়। সিএসই ভবনের আশপাশের এলাকায় বেলা ১২টা থেকে টানা ৩ ঘণ্টা দফায় দফায় বিক্ষোভ মিছিল হয়। বেলা ১টার দিকে নগরীর অন্যতম বৃহত্ বাণিজ্য কেন্দ্র খাতুনগঞ্জ থেকে কয়েকশ’ বিনিয়োগকারী মিছিল নিয়ে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে জড়ো হন। তারা অর্থমন্ত্রী ও বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নরের পদত্যাগ এবং ইউনিপে টু ইউসহ এলএমএল কোম্পানিগুলোর কার্যক্রম নিষিদ্ধের দাবি জানান।
এদিকে বিনিয়োগকারীরা বিকালে এক সভায় ইনভেস্টরস ফোরাম অব চিটাগং নামক একটি সংগঠন গঠন করেন। সংগঠনটির পক্ষ থেকে গত ১৫ দিন ধরে শেয়ারবাজারে যে ধস চলছে তা তদন্তে একজন সাবেক বিচারপতির নেতৃত্বে কমিটি গঠন করে দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করার দাবি জানানো হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জে অগ্নিসংযোগ, লাঠিচার্জে আহত ৫
নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জের হাজার হাজার বিনিয়োগকারী বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। সকালে থেকেই শহরে বিক্ষোভ মিছিল, সড়ক অবরোধের চেষ্টা, ব্রোকারেজ হাউজ ভাংচুর, রাস্তায় অগ্নিসংযোগ করেন তারা। এ সময় পুলিশের সঙ্গে বিনিয়োগকারীদের বাকবিতণ্ডা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পুলিশ বিক্ষুব্ধ বিনিয়োগকারীদের ওপর বেধড়ক লাঠিচার্জ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পুলিশের লাঠিচার্জে পাঁচজন আহত হন সারা শহরে আতঙ্ক দেখা যায় এবং একাংশে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
বাংলাদেশ ব্যাংক অফিসে ইটপাটকেল নিক্ষেপ
সিলেট : দেশের অন্য স্থানের মতো সিলেটের ব্রোকারেজ হাউজগুলো সাড়ে ১১টার পর থেকে বন্ধ করে দেয়া হয়। এরপর বিনিয়োগকারীরা আগের দিনের মতো রাস্তায় বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। এ সময় বাংলাদেশ ব্যাংক সিলেট শাখা অফিস লক্ষ্য করে কিছু ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। বিনিয়োগকারী ফোরামের উদ্যোগে এক প্রতিবাদ সমাবেশও অনুষ্ঠিত হয়। দুপুরে নগরের চৌহাট্টা এলাকার আরএন টাওয়ার থেকে বিনিয়োগকারীরা বিক্ষোভ মিছিল করেন। মিছিলটি নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তালতলা এলাকায় বাংলাদেশ ব্যাংকের সিলেট শাখায় একটি মিছিল থেকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। তবে এতে কোনো ক্ষতি হয়নি।
ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক আবরোধ, আটক ১
নরসিংদী : নরসিংদীর ৪টি ব্রোকারেজ হাউজের ৩ শতাধিক সাধারণ বিনিয়োগকারী গতকাল বিক্ষোভ মিছিল করে। মিছিলটি শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে অবস্থান নেয়। এতে প্রায় ৩ ঘণ্টা যানচলাচল বন্ধ থাকে। রাস্তার উভয় দিকে প্রায় ৫ কিঃমিঃ যানজট সৃষ্টি হয়। বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও লাঠিচার্জের ঘটনা ঘটে। পুলিশ মো. খবিরুল ইসলাম নামে এক বিনিয়োগকারীকে গ্রেফতার করেছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অর্থমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি
ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি: কেন্দ্রীয়ভাবে শেয়ার লেনদেন বন্ধ করে দেয়ার পর বিক্ষুব্ধ বিনিয়োগকারীরা শহরের রাস্তায় নেমে আসেন। দুপুরে কয়েকশ’ বিক্ষোভকারী বিক্ষোভ মিছিল করেন। এ সময় অস্বাভাবিকভাবে পতনের ঘটনায় অর্থমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করে স্লোগান দেয়া হয়। পরে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
রাজশাহীতে এসইসি সভাপতির পদত্যাগ দাবি
রাজশাহী শেয়ার বাজারে অব্যাহত দরপতন ও ঢাকায় বিনিয়োগকারীদের গ্রেফতারের প্রতিবাদে রাজশাহীতে বিক্ষোভ প্রদর্শন ও সমাবেশে করেছেন বিনিয়োগকারীরা। গতকাল দুপুরে বিনিয়োগকারীরা নগরীর সাহেববাজার এলাকার আইসিবি কার্যালয়ের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল করেন। মিছিল শেষে আইসিবি কার্যালয়ের সামনে বিক্ষুব্ধ সহস্রাধিক বিনিয়োগকারী সমাবেশে মিলিত হন। তারা দরপতনের জন্য আবারও এসইসি (সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশন) সভাপতিকে দায়ী করে তার পদত্যাগ দাবি করেন। এ সময় অর্থমন্ত্রীরও পদত্যাগ দাবি করেন তারা। তাদের অভিযোগ, দেশের পুঁজিবাজারে গত এক মাস ধরে দরপতন অব্যাহত থাকলেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। ফলে সিন্ডিকেট তাদের কারসাজি নির্বিঘ্নে চালিয়ে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের ভূমিকাকেও দায়ী করা হয়। তারা বলেন, এসইসি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের নেতিবাচক ভূমিকার কারণে সিন্ডিকেট ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
বগুড়ায় গভর্নর, অর্থমন্ত্রী ও ডিএসই প্রেসিডেন্টের পদত্যাগ দাবি
দ্বিতীয় দিনের মতো গতকালও বগুড়া শহরে সড়ক অবরোধ, বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন বিনিয়োগকারীরা। সকাল ১১টার দিকে শহরের বড়গোলার সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন তারা। আইসিবির সামনে সমাবেশে বক্তারা এসইসি, ডিএসই প্রেসিডেন্ট, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ও অর্থমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেন তারা। তারা আরও বলেন, অব্যাহত দরপতন রোধ না হলে বিনিয়োগকারীরা বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দেবে।
রংপুরে আন্দোলনের হুমকি
রংপুর : বিনিয়োগকারীরা রংপুর নগরীর প্রধান প্রধান সড়কে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। রংপুর প্রেসক্লাব চত্বরে সমাবেশ করেন তারা। সমাবেশে বক্তারা বলেন, একটি চক্রের কারণে শেয়ারবাজার বারবার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তারা অবিলম্বে দেশের উন্নয়নের স্বার্থে এসব ভেলকিবাজি বন্ধ করার আহ্বান জানান। এসব বন্ধ না হলে বৃহত্তর আন্দোলনের হুমকি দেন তারা

No comments:

Post a Comment