Tuesday 16 August 2011

ঈদ সামনে রেখে ভারত থেকে আসছে বিপুল পরিমাণ ফেনসিডিল ও ইয়াবা

জি. এম. বাবর আলী, বরিশাল
ঈদ সামনে রেখে ভারত থেকে অবৈধভাবে আনা হচ্ছে বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য। এরই মধ্যে নগরীতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে দুয়েকটি ছোটখাটো চালানের সঙ্গে ফেনসিডিলের বড় একটি চালানও আটক হয়েছে। চোরাইপথে ভারত থেকে বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য আসার ফলে এখন তা যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে এবং ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে মাদকসেবীর সংখ্যা। ফলে জনমনে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে। অবশ্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মাদকমুক্ত নগরী গড়তে সব শ্রেণীর মানুষের আন্তরিক সহযোগিতা প্রয়োজন বলে দাবি করে।
বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে ভারত থেকে চোরাইপথে বরিশালে বিপুল পরিমাণ ফেনসিডিল আনা হয়। মাঝে মাঝে র্যাব-পুলিশের হাতে ২/১ জন মাদক ব্যবসায়ী কিছু ফেনসিডিলসহ আটকও হয়। কিন্তু জামিনে মুক্তি পেয়ে আবারও শুরু করে মাদক ব্যবসা।
অপর দিকে মাদক ব্যবসার নেপথ্য গডফাদারের ভূমিকায় থাকা ব্যক্তিরা সাধারণত আটক হয় না। ফলে দিন দিন প্রসার হচ্ছে মাদক ব্যবসা। বাড়ছে মাদক বিক্রির স্থান ও মাদকসেবীর সংখ্যা।
এর আগে ভারত থেকে শুধু ফেনসিডিল আনা হলেও বর্তমানে এর সঙ্গে যোগ হয়েছে ইয়াবা। প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণ ইয়াবা আসছে বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। সূত্র জানায়, সাতক্ষীরা, বেনাপোল ও যশোর থেকে এসব মাদকদ্রব্য বরিশাল আনা হয়। আর ব্যবসায়ীদের নিরাপদ রুট হলো সড়কপথে যশোর, ফরিদপুর-টেকেরহাট হয়ে বরিশাল অথবা খুলনা-বাগেরহাট-পিরোজপুর হয়ে বরিশাল। আবার কখনও কখনও ঢাকা হয়ে লঞ্চযোগে বরিশালে আনা হয় এসব মাদকদ্রব্য।
সূত্র আরও জানায়, বর্তমানে বরিশালে এক বোতল ফেনসিডিল বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকায়। ঈদ ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে এর দামও বাড়তে থাকবে।
সাতক্ষীরা-বেনাপোল সীমান্ত এলাকা থেকে মাদক ব্যবসায়ীরা ২২০ টাকা দামে এ ফেনসিডিল ক্রয় করে। একইভাবে ওই এলাকা থেকে ১৬০ টাকা করে কেনা হয় ইয়াবা ট্যাবলেট। আর বরিশালে তা বিক্রি করা হয় ৩০০ থেকে সাড়ে ৩০০ টাকায়। নিরাপদে মাদকদ্রব্য বরিশালে পৌঁছতে ঘাটে ঘাটে বিভিন্ন সেক্টরে নিয়মিত অর্থ দিতে হয়। সে কারণে কয়েকগুণ দাম বেড়ে যায় বলে জানায় সূত্রটি।
ওই সূত্রমতে, বরিশালে ফেনসিডিলের বড় ধরনের ব্যবসায়ী রয়েছে ১০ থেকে ১৫ জন। আর সহজ ও নিরাপদ বহনযোগ্য হওয়ায় ইয়াবা বিক্রির সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীর সংখ্যা আরও অনেক বেশি বলে জানা যায়।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণে র্যাব নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করলেও পুলিশের ভূমিকা নিয়ে সবসময়ই প্রশ্ন উঠেছে। প্রায় প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও র্যাবের অভিযানে উদ্ধার হয় মাদকদ্রব্য। ঈদে অতিরিক্ত মাদকদ্রব্য চোরাইপথে আনা হচ্ছে বিষয়টি মাথায় রেখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তত্পর রয়েছে বলে দাবি করেছে সংশ্লিষ্ট মহল। গত মঙ্গলবার নগরীর লঞ্চঘাট এলাকা থেকে প্রায় ৬০০ বোতল ও কাশিপুর এলাকা থেকে ৩০ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করে পুলিশ। আগের দিন মাধবপাশা থেকে ৩০টি ইয়াবাসহ আটক করা হয় মনির নামের এক প্রভাষককে। র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে আটক মনির জানান, সাতক্ষীরা থেকে এ ইয়াবা ট্যাবলেট আনা হয়। গৌরনদীতে ছাত্রলীগের ছেলেরা মাদক ব্যবসায়ী যুবলীগ কর্মীদের কাছ থেকে উদ্ধার করে ফেনসিডিল। প্রতিদিনই বিভিন্ন এলাকা থেকে মাদকদ্রব্য উদ্ধারের ঘটনায় অনুমান করা যায়, কি পরিমাণ মাদকদ্রব্য আমদানি হচ্ছে বরিশালে। ফেনসিডিল ও ইয়াবার পাশাপাশি লক্ষ্মীপুরসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে আমদানি হচ্ছে বিপুল পরিমাণ গাঁজা।
কোতোয়ালি মডেল থানায় যোগদান করেই ওসি শাহেদুজ্জামান ফেনসিডিলের একটি বড় চালান আটক করতে সক্ষম হয়েছেন। গত বুধবার নগরীর লঞ্চঘাট এলাকায় অভিযান চালিয়ে একটি ট্রাক থেকে প্রায় ৬০০ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করেন তিনি। ওসি শাহেদ বলেন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণে পুলিশের যথার্থ ভূমিকা রয়েছে। এরই মধ্যে লঞ্চঘাট থেকে ফেনসিডিলের একটি বড় চালান আটক করা হয়েছে। এছাড়া নগরীর ৫/৭ জন বড় ধরনের মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে সন্দেহজনক ব্যক্তির গতিবিধির ওপর নজর রাখা হয়েছে।
বরিশালে সবচেয়ে বেশি মাদকদ্রব্য আটক হয় র্যাব-৮-এর অভিযানে। প্রায় প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও অভিযান চালিয়ে র্যাব উদ্ধার করে ফেনসিডিল, গাঁজা, ইয়াবা, হেরোইনসহ অন্যান্য মাদকদ্রব্য। চলতি বছর শুধু গাঁজাই উদ্ধার করা হয়েছে ৩ মণ ৭ কেজি। র্যাবের এসব অভিযান নিয়ে সিপিসি-১-এর অধিনায়ক মেজর রাশেদ বলেন, র্যাব-৮-এ যোগদান করার পর থেকে মাদকদ্রব্যের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে। যতদিন বরিশালে থাকব, ততদিন এ অভিযান অব্যাহত থাকবে। একই সঙ্গে তিনি পুরোপুরি মাদকমুক্ত নগরী গড়তে সব শ্রেণীর মানুষকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

Wednesday 10 August 2011

ঈদ সামনে রেখে দেশে চাঁদাবাজির মহোত্সব চলছে : ওবায়দুল কাদের

স্টাফ রিপোর্টার
ঈদকে সামনে রেখে দেশজুড়ে চাঁদাবাজির মহোত্সব চলছে বলে অভিযোগ করেছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, কাঁচাবাজার, ফুটপাত, লঞ্চঘাট থেকে শুরু করে সর্বত্রই ফ্রি-স্টাইলে চাঁদাবাজি চলছে। এ সত্যকে চাপা দিয়ে লাভ হবে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে এসব কঠোরহস্তে দমন করতে হবে।
গতকাল রাজধানীর মিরপুর বাঙলা কলেজে জাতীয় শোকদিবস উপলক্ষে কলেজ ছাত্রলীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। সভায় তিনি ছাত্রলীগের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডের কঠোর সমালোচনা করেন।
নিত্যদিনের বেড়ে চলা দুর্ভোগ ও সরকারের ভাবমর্যাদা নষ্ট করার পেছনে মন্ত্রী, ছাত্রলীগ ও প্রশাসনের ভূমিকাকে দায়ী করে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমাদের দক্ষ টিম লিডার আছেন। কিন্তু শক্তিশালী টিম নেই। জনদুর্ভোগ কমাতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সরকারের দায়িত্বশীলদের সমন্বয় নেই।
পুঁজিবাজারে বিক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীদের ফাটকাবাজ বলা বা রমজানে কম খেতে মন্ত্রীদের পরামর্শের সমালোচনা করে তিনি মন্ত্রীদের উদ্দেশে বলেন, ফ্রি-স্টাইলে কথা না বলে কাজের কাজ করুন। কম কথা বলে বেশি কাজ করুন। ভুক্তভোগী জনগণ এসবের সরব প্রতিবাদ না জানালেও আগামী নির্বাচনে নীরব ভোটে ক্ষমতাসীন দল এর জবাব পাবে। তিনি সরকারের ভাবমর্যাদা কতোটা খারাপ হয়ে উঠছে তা বিবেচনায় নিয়ে দায়িত্বশীলদের সতর্ক হওয়ার পরামর্শ
দেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, বিদ্যুতের উত্পাদন রেকর্ড ছাড়িয়েছে জানানো হলেও সাহরি ও ইফতারে লোডশেডিং কমেনি। সাম্প্রতিক সময়ে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের হাতে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের গণপিটুনি ও পুলিশের একের পর এক অঘটন সরকারের ভাবমর্যাদা ক্ষুণ্ন করছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
খালেদা বিচার ব্যবস্থাকে ধ্বংস করতে চায়
সকালে স্বাধীনতা চিকিত্সক পরিষদ (স্বাচিপ) আয়োজিত শোকদিবসের আলোচনায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা অভিযোগ করেছেন, বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া সুপরিকল্পিতভাবে বিচারব্যবস্থা ধ্বংস করতে চায়। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার কার্যকর, খালেদা জিয়ার বাড়ির রায়, তারেক-কোকোর মুদ্রা পাচার মামলা, যুদ্ধাপরাধ মামলা নিয়ে বেগম জিয়া উচ্চ আদালতের ওপর ক্ষুব্ধ। তাই তিনি উচ্চ আদালতকে সহ্য করতে পারেন না।
রাজধানীর জাতীয় জাদুঘরে অনুষ্ঠিত এ আলোচনা সভায় দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বঙ্গবন্ধু কখনও ক্ষমা করেননি। তাদের ক্ষমা করে এদেশে প্রতিষ্ঠিত করেছে জিয়াউর রহমান। তিনি কটাক্ষ করে বলেন, পাকিস্তানের প্রতি জিয়াউর রহমানের একটা ঋণ আছে। তার বাবা-মায়ের কবর পাকিস্তানে। তাই পাকিস্তানপ্রেমীদের তিনি খুব পছন্দ করতেন।
দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল আলম হানিফ বলেন, হাইকোর্ট ধ্বংস করার চেষ্টা থেকেই সেদিন আমিনীর নিজস্ব আইনজীবী থাকা সত্ত্বেও বিএনপির আইনজীবীরা আদালতে হট্টগোল পাকাতে গিয়েছিল।
তিনি প্রশ্ন রাখে, পাপিয়া উচ্চ আদালতের কোনো আইনজীবী না। তারপরও আদালতে তারা কেন গেলেন। বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া সুপরিকল্পিতভাবে বিচার ব্যবস্থাকে ধ্বংস করতে চায় বলেই তার দলের আইনজীবীরা সেদিন আদালতে গিয়ে হট্টগোল করে। মাহবুব-উল-হানিফ বলেন, মনে-প্রাণে খালেদা জিয়া এদেশের স্বাধীনতা চাননি। স্বাধীনতা চাইলে যে সংবিধানের জন্য ৩০ লাখ দেশপ্রেমিক শহীদ হয়েছে সেই সংবিধান ছুড়ে ফেলতে চাইতেন না।
স্বাচিপ সভাপতি স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. আ. ফ. ম. রুহুল হকের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি ডা. মাহমুদ হাছান, স্বাচিপের সাধারণ সম্পাদক ডা. ইকবাল আর্সালান, আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক ডা. বদিউজ্জামান ভুঁইয়া ডাব্লু। উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী মুজিবুর রহমান ফকির, বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত প্রমুখ।

নকল ও ভেজাল পণ্যে ঈদবাজার দখল : ক্রেতারা বিপাকে



ডেস্ক রিপোর্ট
এবার ঈদবাজার দখল করে নিয়েছে নকল ও ভেজাল পণ্য। চড়া দামে তা-ই কিনছেন ক্রেতারা। ঈদ সামনে রেখে বাজার ক্রমেই অস্থির হয়ে উঠছে। সময়ের গতির সঙ্গে বাড়ছে প্রতিটি পণ্যের দাম। একইসঙ্গে অসাধু ব্যবসায়ীরা নকল ও ভেজাল পণ্য দেদার বিক্রি করছেন। চড়া দামে ক্রেতারা এসব ভেজাল পণ্য কিনে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। বিস্তারিত খবর পাঠিয়েছেন আমাদের প্রতিনিধিরা :
মুক্তাগাছা : মুক্তাগাছায় গত রোববার নকল-ভেজাল সেমাই এবং ফল, শাকসবজিতে দেয়া বিষাক্ত কীটনাশক জব্দ করা ছাড়াও জড়িতদের কাছ থেকে জরিমানা আদায় করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। শহরের তামাকপট্টিতে বাবুল সাহা ও সোনার মদিনা সেমাই কারখানায় দুই লক্ষাধিক টাকার সেমাই জব্দ এবং ৫০ হাজার করে ১ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।
নীলফামারী : ঈদুল ফিতরে সেমাইয়ের কদর বাড়ে দ্বিগুণ। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সৈয়দপুর শহরের কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ভেজাল লাচ্ছা সেমাই তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।
রমজান মাস উপলক্ষে অনেক হোটেলেই বিভিন্ন রঙ মিশিয়ে তৈরি করা হচ্ছে ইফতার সামগ্রী। ভেজালবিরোধী অভিযানে প্রতিবছর তাদের হাজার হাজার টাকা জরিমানা হওয়ায় এবার তারা অনেকটাই সচেতন। শহর থেকে ২-৩ কিলোমিটার দূরে আত্মীয়-স্বজন এবং বন্ধুবান্ধবের বাড়ি ভাড়া নিয়ে অত্যন্ত গোপনে তৈরি করা হচ্ছে নিম্নমানের ভেজাল লাচ্ছা সেমাই। অস্বাস্থ্যকর নোংরা পরিবেশে বর্তমানে শহরে তৈরি হচ্ছে লাচ্ছা সেমাই। পরে এগুলো সুন্দর ঝকঝকে পলিথিন, কাগজ বা অন্য কোনো প্যাকেটে ভরে তাতে ঢাকা, রাজশাহীসহ দেশের অনেক বড় বড় নামকরা কোম্পানির নাম দেয়া হচ্ছে।
বানারীপাড়া : বানারীপাড়ায় বন্দরবাজারে চিনির সঙ্কট ও নিত্যপণ্যের অগ্নিমূল্য নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবুল কালাম আজাদ ও ওসি আবদুর রব হাওলাদার বাজারদর মনিটরিং করে চলে যাওয়ার পর আগের নিয়মেই চলছেন ব্যবসায়ীরা। গত রোববার সকাল ১০টায় তারা বন্দরবাজার ব্যবসায়ীদের কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি না করে সরকারের বেঁধে দেয়া নির্ধারিত মূল্যে পণ্য বিক্রি করার আহ্বান জানান। ওইদিন প্রশাসন চলে যাওয়ার পরই ব্যবসায়ীরা তাদের পুরনো নিয়মেই পণ্য বিক্রি করছেন বলে একাধিক ক্রেতা জানান। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ জানান, সতর্ক করে দেয়ার পর কোনো ব্যবসায়ী অসাধুতা করলে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
শরণখোলা (বাগেরহাট) প্রতিনিধি : বাগেরহাটের শরণখোলায় রমজান মাসে নিত্যপণ্যের দাম লাগামহীনভাবে বেড়ে চলেছে। চালের বাজার কিছুটা নিয়ন্ত্রণে থাকলেও রোজার শুরু থেকেই অন্যসব জিনিসের দাম কেজিপ্রতি দুই টাকা থেকে ১৫ টাকা বাড়িয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ফলে নিম্নআয়ের মানুষ ও শ্রমজীবীরা পড়েছেন সীমাহীন দুর্ভোগে। বিশেষ করে কাঁচামরিচ ৪০ টাকা থেকে হয়েছে ১০০ টাকা। পাইকারি মোকামে মূল্যবৃদ্ধির অজুহাত দেখিয়ে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে অতিরিক্ত মুনাফা। ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ তথ্য।
বেগমগঞ্জ (নোয়াখালী) : সরকারের বেঁধে দেয়া বাজারদর মুখ থুবড়ে পড়েছে নোয়াখালীতে। জেলার প্রধান বাণিজ্যিক শহর চৌমুহনীসহ প্রত্যন্ত অঞ্চলের কোথাও তা মানা হচ্ছে না। বাজার মনিটরিং কাজে প্রশাসনিক তদারকির কথা থাকলেও তা দেখা যাচ্ছে না। ফলে অসাধু ব্যবসায়ীরা বেপরোয়া হয়ে উঠছেন। দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিতে মানুষ দিশেহারা।
সরেজমিনে দেখা যায়, জেলার প্রধান বাণিজ্যিক শহর চৌমুহনীতে চিনি, ছোলা, সোয়াবিন, পেঁয়াজ, রসুন, মোসুর ডাল ও মসলা আইটেমসহ সব পণ্যের দাম লাগামহীনভাবেই বেড়ে চলছে।
অপরদিকে মাছ, মাংস, ফল-মূল, বেকারি পণ্য হোটেলের খাবারসহ সব জিনিস ভেজালে সয়লাব। মাছ ও ফল-মূলে রয়েছে বিষাক্ত ফরমালিন, মহিষের মাংসকে গরুর মাংস বলে বিক্রি হচ্ছে। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে নিম্নমানের ও পচা-বাসি খাওয়ার পরিবেশন করছে হোটেলগুলো। ক্ষতিকর ভেজাল ও বিভিন্ন রঙ মিশিয়ে তৈরি করা হচ্ছে ইফতার।
এ নিয়ে জানতে চাইলে চৌমুহনী সাধারণ ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ জানান, খোদ সরকারই বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খোন্দকার নুরুল হকের সঙ্গে আলাপ করলে তিনি আমার দেশকে জানান, খবর পেয়েছি পণ্যের অধিক দাম নেয়া হচ্ছে। আগামী দু-এক দিনের মধ্যে উপজেলা প্রশাসন বাজার তদারকি করবে।
বগুড়া : বগুড়ার ধুনটে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) দুই ডিলারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ডিলাররা মালামাল উত্তোলন না করায় ইউএনও তাদের ডিলারশিপ বাতিল করে নতুন ডিলার নিয়োগের জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে পত্র পাঠিয়েছেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ভোক্তাদের মাঝে ন্যায্য মূল্যে টিসিবির পণ্য বিক্রির জন্য দুই ডিলার নিয়োগ দেয়া হয়। এরা হলো মেসার্স হৃদয় অন্তর ট্রেডার্সের আতিকুল ইসলাম শামীম ও মেসার্স উত্তরবঙ্গ ট্রেডিং এজেন্সির রেজাউল ইসলাম রেজা। প্রত্যেক ডিলারের অনুকূলে ২০১১-১২ অর্থবছরে প্রথম কিস্তিতে চিনি ২ হাজার কেজি, সয়াবিন তেল ১ হাজার ২০০ লিটার, মসুর ডাল (দেশি) ১ হাজার কেজি, ছোলা ৫০০ কেজি, খেজুর (জাহেদি) ২৫০ কেজি ও খেজুর (সায়ের) ২৫০ কেজি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ওই পরিমাণ পণ্যের মূল্য বাবদ ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৮৫০ টাকার ডিডি/পে-অর্ডার টিসিবির রাজশাহী আঞ্চলিক কার্যালয়ের অনুকূলে জমা দিয়ে গত ৪ আগস্টের মধ্যে মালামাল উত্তোলনের সময় ছিল। বিভিন্ন পণ্যের মধ্যে চিনি ৫৮ টাকা, সয়াবিন তেল ১০২ টাকা (লিটারপ্রতি), মসুর ডাল ৬৮, ছোলা ৫৮, জাহেদী খেজুর ৫৫ ও সায়ের খেজুর ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রয়মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু ওই দুই ডিলার তাদের অনুকূলে বরাদ্দ করায় মালামাল উত্তোলন করেননি। ভোক্তাদের মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তদন্ত সাপেক্ষে দুই ডিলারের নিয়োগ বাতিলসহ নতুন ডিলার নিয়োগের জন্য ৭ আগস্ট জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে পত্র পাঠিয়েছেন।
ডিলার আতিকুল ইসলাম শামীম বলেন, টিসিবির বরাদ্দকৃত মালামাল অত্যন্ত নিম্নমানের হওয়ায় তা উত্তোলন করা হয়নি। নিম্নমানের পণ্যসামগ্রী লোকজন কিনতে চায় না।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আতাউল গনি বলেন, জনগণের মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে বিষয়টি তদন্ত করে দেখা গেছে ডিলাররা টিসিবির মালামাল উত্তোলন করেননি।
টিসিবির রাজশাহী আঞ্চলিক প্রধান জহুরুল ইসলাম বলেন, বগুড়ার অন্য ডিলাররা মালামাল উত্তোলন করে ভোক্তাদের মধ্যে ন্যায্য মূল্যে বিক্রি করছেন। কিন্তু আজও কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি

ব্যর্থতার দায় নিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ করা উচিত : চরমোনাই পীর

স্টাফ রিপোর্টার
ইসলামী আন্দোলনের আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের কশাঘাতে জনজীবন চরম দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। জিনিসের মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় মানুষ অতিষ্ঠ। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। তিনি বলেন, বাণিজ্যমন্ত্রী সব ক্ষেত্রে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন। ব্যর্থতার দায়ভার নিয়ে তাকে পদত্যাগ করা উচিত। গতকাল এক বিবৃতিতে তিনি আরও বলেন, বাণিজ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের পরই জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যায়। বাণিজ্যমন্ত্রী কম খাওয়ার নসিহত করেন অথচ তিনি কি কম খান? জিনিসপত্রের দাম সরকারের মন্ত্রী-এমপিদের আয়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ানো হয়। কিন্তু নিম্ন ও মধ্যবিত্ত লোকের কথা কেউ চিন্তা করেন না।
বর্তমানে জিনিসপত্রের দাম যে হারে বেড়েছে, তাতে মানুষ না খেয়ে ও অর্ধাহারে থাকা ছাড়া কোনো উপায় নেই। দেশের সাধারণ মানুষের ওপর নির্ভর করে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম নির্ধারণ করা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন তিনি।