Friday 31 December 2010

বিদ্যুত্-গ্যাসের অভাবে চট্টগ্রাম ও ঢাকায় ৩শ’ প্রকল্প বন্ধ

জাহিদুল করিম কচি, চট্টগ্রাম

বিদ্যুত্ ও গ্যাস সংযোগের অভাবে চট্টগ্রাম ও ঢাকা শহরে প্রায় পাঁচ হাজার সম্পূর্ণ নতুন ফ্ল্যাট বর্তমানে খালি পড়ে আছে। এসব ফ্ল্যাটের ক্রেতারা বিদ্যুত্ ও গ্যাসের অভাবে ফ্ল্যাটে উঠতে পারছেন না। এই ফ্ল্যাটগুলোর আনুমানিক বাজার মূল্য তিন হাজার কোটি টাকা। এছাড়া বিদ্যুত্ সংযোগের অভাবে তিনশ’র বেশি নতুন প্রকল্পের প্রায় ৩ হাজার ৬শ’ অ্যাপার্টমেন্টের কাজ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে আছে। রিহ্যাব সূত্র জানিয়েছে, প্রায় চার হাজারের অধিক ক্রেতা বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে ফ্ল্যাট কিনেও ফ্ল্যাটে ঢুকতে পারছেন না। এসব ক্রেতা প্রতি মাসে ১০ কোটি টাকা বাড়ি ভাড়া বাবদ ব্যয় করছেন। তদুপরি ১৫ কোটি টাকা সুদ গুনতে হচ্ছে অর্থ লগ্নিকারী প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ গ্রহণের কারণে।
রিহ্যাব চট্টগ্রাম অঞ্চলের প্রধান মোফাখখারুল ইসলাম খসরু জানান, বিদ্যুত্ ও গ্যাস সংযোগ প্রদান বন্ধ থাকায় এরই মধ্যে আনুমানিক তিনশ’ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন থেকে দেশ বঞ্চিত হয়েছে শুধু প্রবাসীদের কাছে ফ্ল্যাট বিক্রি কমে যাওয়ার ফলে। বিদ্যুত্ ও গ্যাস সংযোগে বিদ্যমান নিষেধাজ্ঞার কারণে ফ্ল্যাট কেনার সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে কমে গেছে। বিশেষ করে প্রবাসী বাংলাদেশীদের দেশের আবাসন খাতে বিনিয়োগ অস্বাভাবিক
হ্রাস পেয়েছে। উল্লিখিত এপার্টমেন্ট প্রকল্পগুলো বন্ধ থাকার কারণে আনুমানিক ৩০ হাজার নির্মাণ শ্রমিক সরাসরি তাদের কর্মসংস্থান থেকে বঞ্চিত হওয়া ছাড়াও পরোক্ষভাবে এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত দু’লক্ষাধিক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। রিহ্যাব জানিয়েছে, বর্তমানে অনেক ডেভেলপার চরম আর্থিক সঙ্কটে নিপতিত হয়েছে প্রকল্প সম্পন্ন করতে ব্যর্থ ও তৈরি প্রকল্পগুলো হস্তান্তর করতে না পারায়। এই অবস্থা আরও কিছুদিন চললে অনেক ডেভেলপার দেউলিয়া হয়ে যাবে।
বাংলাদেশের গৃহায়ন শিল্প বর্তমানে নানাবিধ সমস্যা ও সঙ্কটে আবর্তিত হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা, চউক ও রাজউক কর্তৃক নকশা অনুমোদনে দীর্ঘসূত্রতা, নির্মাণ সামগ্রীর অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, আয়কর বৃদ্ধি, রেজিস্ট্রেশন ফি অস্বাভাবিক বৃদ্ধি এবং বিদ্যুত্ ও গ্যাস সার্ভিসগুলোর সংযোগ প্রদানে অচলাবস্থার কারণে এই খাতের বিনিয়োগকারী, ডেভেলপার, দেশি ও প্রবাসী ক্রেতাসাধারণ এবং লিংকেজ শিল্পের উদ্যোক্তারা চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। রিহ্যাব সূত্র জানিয়েছে, বিদ্যুত্ সমস্যা সমাধানে সোলার পদ্ধতি প্রবর্তনে সরকারের পদক্ষেপ অভিনন্দনযোগ্য। তবে এরই মধ্যে সমাপ্ত প্রকল্পগুলোতে সোলার প্যানেল স্থাপন দুরূহ ব্যাপার। রিহ্যাব সোলার প্যানেল ব্যবহারের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সর্বজন গ্রহণযোগ্য নীতিমালা প্রণয়নের জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানানো হয়েছে।

খেলাফত মজলিসের অধিবেশনে ৪ মাসের কর্মসূচি ঘোষণা : দেশে নির্বাচিত ফ্যাসিজম চলছে - ইসহাক

স্টাফ রিপোর্টার

খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাক বলেছেন, ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে বর্তমান মহাজোট সরকারের দেশ ও ইসলামবিরোধী পদক্ষেপের মোকাবিলা করতে হবে। তিনি বলেন, আধিপত্যবাদী শক্তির ক্রীড়নক এ সরকার সংবাদমাধ্যম ও বাকস্বাধীনতার টুঁটি চেপে ধরে ক্ষমতার মসনদকে পাকাপোক্ত করতে চায়। বর্তমানে দেশে চলছে নির্বাচিত ফ্যাসিজম। আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার বলতে কিছু নেই। জাতি হিসেবে আমরা এক বীভত্স বাস্তবতার মুখোমুখি। সরকারি দলের ক্যাডারদের পাশাপাশি মানুষ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দ্বারাও নির্যাতিত হচ্ছে। কথায় কথায় পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র, জঙ্গিবাদ ইত্যাদির ধুয়া তুলে বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের হামলা-মামলা ও নির্যাতনের মাধ্যমে সরকার ভিন্নমতের রাজনৈতিক দলের কণ্ঠরোধ করতে চায়।
গতকাল খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় সাধারণ পরিষদের ৬ষ্ঠ অধিবেশনের উদ্বোধনী বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সকালে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের মাল্টিপারপাস হলে আয়োজিত অধিবেশনে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের মহাসচিব অধ্যাপক আহমদ আবদুল কাদের, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা শফিক উদ্দিন, অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম, মাওলানা সাখাওয়াত হোসাইন, সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর হোসাইন, অধ্যাপক এম কে জামান, মক্তিযোদ্ধা শফিউল আলম, মুহাম্মদ মুনতাসির আলী, মাওলানা নুরুজ্জামান খান, অধ্যাপক কেএম আলম, মাওলানা নোমান মাজহারী, শেখ গোলাম আসগর, মাওলানা রুহুল আমিন সাদী, অধ্যাপক মুহাম্মদ আবদুল জলিল, ড. মোস্তাফিজুর রহমান ফয়সল, মাওলানা সৈয়দ মুজিবুর রহমান পেশোয়ারী, মাওলানা ফরিদ আহমদ সিদ্দিকী, অধ্যাপক দেলোয়ার হোসাইন, মাওলানা শামসুজ্জামান চৌধুরী, ছাত্রমজলিস সভাপতি শায়খুল ইসলামসহ অর্ধশত ডেলিগেট।
অধিবেশনে সংবিধান থেকে আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস উঠিয়ে দেয়া এবং ইসলামী রাজনীতি নিষিদ্ধের পাঁয়তারা, দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি, সাংস্কৃতিক আগ্রাসন, মুসলিম নির্যাতন ও সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন, বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের নির্যাতন, সরকারের নগ্ন দলীয়করণ, গৃহীত ধর্মহীন শিক্ষানীতি, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে হুমকি এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিতে তীব্র নিন্দা ও উদ্বেগ প্রকাশ করে ৯টি প্রস্তাব গৃহীত হয়। এছাড়া সরকারের ওইসব দেশ ও ইসলামবিরোধী সিদ্ধান্ত বন্ধসহ বিভিন্ন ইস্যুতে ১০ থেকে ২৫ জানুয়ারি গণসংযোগ, ২৬ জানুয়ারি দেশব্যাপী মানববন্ধন, মার্চে বিভাগীয় সদরে সমাবেশ এবং এপ্রিলে জাতীয় ওলামা সমাবেশসহ ৪ মাসব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
অনুষ্ঠানে খেলাফত মজলিসের মহাসচিব অধ্যাপক আহমদ আবদুল কাদের বলেন, খেলাফত রাষ্ট্রব্যবস্থার মধ্যেই মানুষের প্রকৃত মুক্তি নিহিত। আর এ লক্ষ্যে দেশের জনগণকে সংগঠিত করে একটি মজবুত, আপসহীন আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য সংগঠনের সব নেতাকর্মীকে ময়দানে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করতে হবে।
এদিকে উদ্বোধনী অধিবেশন শেষে জুমার নামাজের আগে খেলাফত মজলিসের বিরাট একটি শোভাযাত্রা রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।

২৮ জনের আত্মহনন : পাঁচ অভিভাবক খুন

নাছির উদ্দিন শোয়েব

২০১০ সালে আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছিল ইভটিজিং নামে যৌন অপরাধ। এসব অপরাধ গুরুতর হলেও এগুলো লোকমুখে ইভটিজিং নামেই প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। ইভটিজিংয়ের ঘটনায় খুন-খারাবি, অভিভাবকের ওপর হামলা ও তরুণীদের হাত-পা কেটে নেয়ার মতো লোমহর্ষক ঘটনাও ঘটেছে। বখাটেদের বেপরোয়া আচরণ ও নারীদের উত্ত্যক্ত করার প্রবণতায় সারাদেশে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়। সরকার ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে নানামুখী প্রতিরোধমূলক উদ্যোগ নিলেও বখাটেদের তত্পরতা বন্ধ করা যায়নি। এমনকি প্রতিবাদকারীরাও বখাটেদের রোষানলে পড়েছে। তাদের হামলায় নাটোরের কলেজ শিক্ষক মিজানুর রহমান এবং ফরিদপুরে হয়রানির শিকার এক কিশোরীর মা চাঁপা রানী ভৌমিকের মৃত্যু ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। অপরাধ দমনে র্যাব-পুলিশ ও গোয়েন্দাদের মাঠে নামানো হয়। তাতেও কাজ হচ্ছিল না। পরে হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী ভ্রাম্যমাণ আদালত গঠন করে সারাদেশে এ অপরাধ প্রতিরোধ করার কার্যক্রম চালু করা হয়।
পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, চলতি বছর নভেম্বর পর্যন্ত উত্ত্যক্ততার শিকার হয়ে ২৮ জন নারী আত্মহত্যা করেছে। প্রতিবাদ করতে গিয়ে ৫ অভিভাবক খুন হয়েছেন এবং বখাটেদের হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করতে গিয়ে নিহত হয়েছেন ১৮ জন তরুণী। ইভটিজিং প্রতিরোধে ভ্রাম্যমাণ আদালত এ সময় ঢাকায় একজন শিক্ষকসহ বিভিন্ন স্থানে অর্ধশতকে আটক করে সাজা দিয়েছে। একটি মানবাধিকার সংগঠনের তথ্যমতে, মে মাসে ইভটিজিংয়ের শিকার ১৩ , জুনে ২৭, জুলাইয়ে ৩১, আগস্টে এর সংখ্যা দাঁড়ায় ২৮-এ। আর সেপ্টেম্বরে এর সংখ্যা দাঁড়ায় ৩৬ জন, যা ছিল রেকর্ড। র্যাবের হিসাবমতে, সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ইভটিজিংয়ের শিকার হয়েছে ১৩৮ জন কিশোরী ও তরুণী এবং গ্রেফতার হয়েছে ১২৬ জন। এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ৩৫ ভাগ ইভটিজার সমাজবিরোধী, দুর্বৃত্ত; ৩২ ভাগ স্কুল-কলেজগামী ছাত্র ও ৩৩ ভাগ ইভটিজার মধ্যবয়সী।
অধিকারের প্রধান নির্বাহী অ্যাডভোকেট আদিলুর রহমান বলেন, নারীর প্রতি সামাজিক নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি, আইন ও বিচার ব্যবস্থার দীর্ঘসূত্রতা, ভিকটিম ও সাক্ষীর নিরাপত্তার অভাব, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার দুর্নীতি, নারীর অর্থনৈতিক দুরবস্থা, দুর্বল প্রশাসন ইত্যাদি কারণে নারী নির্যাতন বাড়ছে। ভিকটিম নারী বিচার না পাওয়ায় অপরাধীরা উত্সাহিত হচ্ছে ও সহিংসতার মাত্রা বেড়েই চলেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, নারী নির্যাতন এবং ইভটিজিং একই ধরনের অপরাধ নয়। ইভটিজিং বলতে ছোটখাটো তিরস্কার, অশালীন মন্তব্য, টিককারি ও অঙ্গভঙ্গি বুঝায়। কিন্তু ইদানিং হত্যাকাণ্ডসহ লোমহর্ষক ঘটনা ঘটছে। প্রতিরোধে এগিয়ে আসায় তরুণী ও তার অভিভাবকরা খুন হচ্ছেন। নারী উত্ত্যক্ত করার ঘটনায় যেখানে খুন-খারাবির ঘটনা ঘটছে সে ঘটনাকে শুধুমাত্র ইভটিজিং বলে চালিয়ে দেয়া হলে অপরাধীর উপযুক্ত শাস্তি নাও হতে পারে। এ জন্য আইনের ধারাটি আরও কঠিন না হলে অপরাধীরা আইনের ফাঁক-ফোকর গলে বেরিয়ে যেতে পারে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের দেয়া সাজার নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষ হলে কারাগার থেকে বেরিয়ে এসে তারা ভয়ঙ্কর অপরাধ করতে পারে। একই সঙ্গে এর প্রতিরোধে সবাইকে সামাজিকভাবে এগিয়ে আসতে হবে।
ইভটিজিং প্রতিরোধে গত ২ নভেম্বর সারাদেশে হাই অ্যালার্ট জারি করতে সরকারকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। বিচারপতি ইমান আলী ও বিচারপতি ওবায়দুল হাসান সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই অপরাধে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ এবং অপরাধের শিকার কিশোরী, তরুণী ও নারীদের সুরক্ষার ব্যবস্থা করতেও সরকারকে নির্দেশ দেন তারা। পরে গত ১০ নভেম্বর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন সচিবালয়ে সাংবাদিকদের জানান, বখাটে নারী উত্ত্যক্তকারীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে মোবাইল কোর্টকে। তিনি আরও জানান, মোবাইল কোর্ট পরিচালনার অন্যান্য আইনের সঙ্গে বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ৫০৯ ধারা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ফলে ইভটিজার বখাটেদের রুখতে এ আইন কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, উত্ত্যক্তকারীদের সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ডাদেশের বিধান রেখে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধন করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। উত্ত্যক্ত করা রোধে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মল্প্পণালয়ে তিন দফা প্রস্তাব পাঠিয়েছে আইন কমিশন। এর মধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি প্রতিরোধের জন্য একটি আইন করা, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের কিছু ধারা সংযোজন এবং দণ্ডবিধির ৫০৯ ধারার স্পষ্ট ব্যাখ্যা রাখার কথা বলা হয়েছে। উত্ত্যক্ত করা বা যৌন হয়রানি বন্ধে নতুন করে আইন করতে গেলে অনেক সময় লাগবে। তাই বিদ্যমান ২০০৩ (সংশোধিত) সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমনের জন্য যে আইন রয়েছে তার কিছু ধারা প্রতিস্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আসামিরা যেন সহজে ছাড় না পায় ও শাস্তির মেয়াদ যেন বেশি হয় সেদিকে দৃষ্টি রেখে আইনটি করা হয়েছে।
দণ্ডবিধির ৫০৯ ধারায় উত্ত্যক্ত করার বিষয়ে বলা আছে, ‘যে ব্যক্তি কোনো নারীর শালীনতার অমর্যাদা করার অভিপ্রায়ে এই উদ্দেশে কোনো মন্তব্য করে, কোনো অঙ্গভঙ্গি করে বা কোনো বস্তু প্রদর্শন করে যা ওই নারী শুনতে পায় অথবা অনুরূপ অঙ্গভঙ্গি বা বস্তু দেখতে পায়, কিংবা ওই নারীর নির্জনবাসে অনধিকার প্রবেশ করে, সেই ব্যক্তির বিনাশ্রম কারাদণ্ডের মেয়াদ ১ বছর পর্যন্ত হতে পারে। অথবা অর্থদণ্ড বা উভয়বিধ দণ্ডে দণ্ডিত হবে। মন্ত্রণালয় জানায়, এ আইনে নারীর শালীনতার অমর্যাদা বলতে কি বোঝায়, তার স্পষ্ট ব্যাখ্যা নেই।’ এর মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক ৫০৯ ধারাকে মোবাইল কোর্টে সংযুক্ত করে বিভিন্ন স্থানে সীমিত পরিসরে মোবাইল কোর্টের অভিযান শুরু হয়। কিন্তু বখাটেদের উপদ্রব কতটুকু কমেছে তা এখনও বোঝা যাচ্ছে না।
গত মাসে ঢাকায় এক শিক্ষার্থীকে উত্ত্যক্ত করার অভিযোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবরেটরি স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষক সাইফুল ইসলামকে আটক করে এক বছরের কারাদণ্ড দেয় ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ সময় ঢাকা ছাড়াও ফরিদপুর, ঠাকুরগাঁও, ফেনী, গোপালগঞ্জ, বরিশাল, বাগেরহাট, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, রাজশাহী, কুড়িগ্রাম, সরাইল, ভৈরব, ঈশ্বরদী, হাকিমপুর, বগুড়া, পাবনা ও কাপাসিয়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রায় অর্ধশত যুবককে আটক করে ভ্রাম্যমাণ আদালত বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়েছে।
উল্লেখ্য, ১৯ জানুয়ারি বখাটের হাতে লাঞ্ছিত হয়ে ঢাকায় নবম শ্রেণীর ছাত্রী নাসপিয়া আকন পিংকি আত্মহত্যা করে। ৩ এপ্রিল বখাটের হাতে উত্ত্যক্ত হয়ে ঢাকার খিলগাঁও থানার নন্দীপাড়া এলাকায় অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী উম্মে কুলসুম ইলোরা (১৪) আত্মহত্যা করে। ৫ এপ্রিল কিশোরগঞ্জের তারাইল উপজেলার কোনাভাওয়াল গ্রামে মরিয়ম আক্তার পিংকি (১৬) নামে এক কিশোরীকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করে বখাটেরা। ১ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহ আনন্দমোহন কলেজে ছাত্রলীগ ক্যাডারের হাতে লাঞ্ছিত হয় ছাত্রীরা। একুশে ফেব্রুয়ারি শহীদ মিনারে ফুল দিতে আসার সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় টিএসসির সামনে এক ছাত্রীকে কটূক্তি করার প্রতিবাদ করায় তার অভিভাবকদের পিটিয়ে যখম করা হয়েছে। ১২ অক্টোবর নাটোর জেলার বাগাতিপাড়া উপজেলার লোকমানপুর কলেজ রসায়ন বিভাগের শিক্ষক মিজানুর রহমান মিজান কলেজের ছাত্রীদের দীর্ঘদিন ধরে উত্ত্যক্ত করার প্রতিবাদ করায় স্থানীয় বখাটে যুবক আসিফ ও রাজন লোহার রড দিয়ে তাকে পিটিয়ে আহত করে। ২৫ অক্টোবর মিজানুর রহমান মিজান হাসপাতালে মারা যান।
ফরিদপুর জেলার মধুখালী উপজেলা সদরের গ্যাঁড়াখোলায় দশম শ্রেণীতে পড়া দুই মেয়ে হীরা ও মুক্তাকে উত্ত্যক্ত করার প্রতিবাদ করায় বখাটে দেবাশীষ সাহা রনি ও তার সঙ্গীরা ২৬ অক্টোবর দুই ছাত্রীর মা চাঁপা রানী ভৌমিকের (৪৮) ওপর মোটরসাইকেল তুলে দিয়ে তাকে হত্যা করে। অক্টোবরে বখাটেদের হাতে ৪ জন নিহত হয়েছে। এদের মধ্যে ১৭ বছরের কিশোরী আনিজা আক্তার বখাটের প্রেমের প্রস্তাবে সাড়া না দেয়ায় তাকে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। এছাড়া একজন শিক্ষক, কিশোরীর মা এবং একজন মহিলার স্বামী বখাটেদের অত্যাচারের প্রতিবাদ করায় বখাটেরা তাদের হত্যা করে। অক্টোবরে ১৯ ব্যক্তি নির্যাতনের প্রতিবাদ করায় বখাটেদের আক্রমণে আহত হন। নভেম্বর মাসে বখাটেদের দৌরাত্ম্যে ৩ কিশোরী আত্মহত্যা করে। ২ পুরুষ বখাটের দৌরাত্ম্যের প্রতিবাদ করতে গিয়ে তাদের হাতে নিহত এবং ৫৪ জন আহত হয়। ১ নভেম্বরে সিরাজগঞ্জ জেলার রায়পুর উপজেলার নিঝুড়ি গ্রামের নবম শ্রেণীর ছাত্রী রূপালীকে একই এলাকার সুশীল চন্দ্র মণ্ডল জোরপূর্বক ধরে নিয়ে সিঁথিতে সিঁদুর পরিয়ে একটি ঘরে আটকে রাখে। এ ঘটনায় রূপালী গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে। ৪ ডিসেম্বর বরগুনা সদর উপজেলার ঘটবাড়িয়া গ্রামে কলেজছাত্রী সুমা আক্তারের এক পা কেটে নেয় বখাটেরা। পরে তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উন্নত চিকিত্সার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়।

Wednesday 29 December 2010

নারীর প্রতি সহিংসতা ও নির্যাতন বেড়েছে



আলাউদ্দিন আরিফ

নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতার বছর ছিল ২০১০ সাল। হত্যা, খুন, শ্লীলতাহানি, যৌতুকের জন্য নির্যাতন, এসিড সন্ত্রাসের পাশাপাশি নতুন উপদ্রব হিসেবে দেখা দিয়েছে ইভটিজিং। এই বছরের শুরু থেকে ইভটিজিং দেশে মহামারি আকার ধারণ করে। বছরজুড়ে বখাটেদের হাতে প্রাণ হারান কোথাও মা, কোথাও বাবা, কোথাও শিক্ষক। এমনকি বোনকে রক্ষা করতে গিয়ে ভাই, পুত্রবধূকে রক্ষা করতে গিয়ে শ্বশুরও খুন হয়েছেন ইভটিজারদের হাতে।
দেশজুড়ে নারী নির্যাতনের এসব চিত্রের অনেক খবরই জানা যায়নি। কিছু খবর পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। কিছু ঘটনায় দেশের থানাগুলোতে মামলা হয়েছে। কিছু মামলা হয়েছে দেশের আদালতে অর্থাত্ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে। এ বছর নারী নির্যাতন ভয়াবহভাবে বেড়ে যাওয়ার কথা সরকারও স্বীকার করেছে। গত ২৭ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন জাতীয় সংসদে বলেছেন, ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন—এই ছয় মাসে সারাদেশে মোট ১ হাজার ৫৮৬ নারী ধর্ষিত হয়েছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর পরিসংখ্যানেও নারী নির্যাতন বৃদ্ধির চিত্র ওঠে এসেছে। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত দেশের থানাগুলোতে নারী নির্যাতন মামলা হয়েছে ৪ হাজার ১০টি। শিশু নির্যাতন মামলা হয়েছে ৪৫০টি। মানবাধিকার সংস্থা অধিকার পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্ট থেকে ৩১ নভেম্বর পর্যন্ত ধর্ষণের ঘটনা রেকর্ড করেছে ৪১৪টি, যৌতুক সহিংসতার ৩৫৪টি এবং এসিড নিক্ষেপের ১২৩টি ঘটনা রেকর্ড করে। ডিসেম্বর মাসে আমার দেশ-এ ৪৫টি যৌতুক সহিংসতা, ২৫টি ধর্ষণ এবং ৬টি এসিড নিক্ষেপের ঘটনার খবর প্রকাশিত হয়েছে। এসবের বাইরেও নারী নির্যাতনের অনেক ঘটনা রয়ে গেছে। এসব হিসাব থেকে সহজেই অনুমান করা যায় চলতি বছর ছিল নারীর প্রতি সহিংসতার বছর।
ইভটিজিং ও বখাটেদের দৌরাত্ম্য রোধে ২ নভেম্বর সারাদেশে হাই অ্যালার্ট জারি করতে সরকারকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। বিচারপতি ইমান আলী ও বিচারপতি ওবায়দুল হাসান সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই অপরাধে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ এবং অপরাধের শিকার কিশোরী, তরুণী ও নারীদের সুরক্ষার ব্যবস্থা করতেও সরকারকে নির্দেশ দেন। এরপর দেশে কিছু মোবাইল কোর্ট, বিছিন্নভাবে কিছু জেল জরিমানা করা হয়েছে, কিন্তু বখাটেদের উপদ্রব রোধ হয়নি।
অধিকারের প্রধান নির্বাহী অ্যাডভোকেট আদিলুর রহমান বলেন, নারীর প্রতি সামাজিক নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি, আইন ও বিচার ব্যবস্থার দীর্ঘসূত্রতা, ভিকটিম ও সাক্ষীর নিরাপত্তার অভাব, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার দুর্নীতি, নারীর অর্থনৈতিক দুরবস্থা, দুর্বল প্রশাসন ইত্যাদি কারণে নারী নির্যাতন বাড়ছে। ভিকটিম নারী বিচার না পাওয়ায় অপরাধীরা উত্সাহিত হচ্ছে ও গাণিতিক হারে সহিংসতার মাত্রা বেড়েই চলেছে।
ইভজিটিং ও বখাটেপনা : চলতি বছরের সবচেয়ে আলোচিত বিষয় ছিল ইভটিজিং। বখাটেদের উপদ্রবে বহু কিশোরী ও স্কুলছাত্রী আত্মহত্যা করে নিজেদের সম্মান বাঁচিয়েছে। চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি বখাটের হাতে লাঞ্ছিত হয়ে ঢাকায় নবম শ্রেণীর ছাত্রী নাসপিয়া আকন পিংকি আত্মহত্যা করে। গত ৩ এপ্রিল বখাটের হাতে উত্ত্যক্ত হয়ে ঢাকার খিলগাঁও থানার নন্দিপাড়া এলাকায় অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী উম্মে কুলসুম ইলোরা (১৪) আত্মহত্যা করে। গত ৫ এপ্রিল কিশোরগঞ্জের তরাইল উপজেলার কোনাভাওয়াল গ্রামে মরিয়ম আক্তার পিংকি (১৬) নামে এক কিশোরীকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করে বখাটেরা।
চলতি বছরের গত ১ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহ আনন্দমোহন কলেজে ছাত্রলীগ ক্যাডারের হাতে লাঞ্ছিত হয় ছাত্রীরা। গত একুশে ফেব্রুয়ারি শহীদ মিনারে ফুল দিতে আসার সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় টিএসসির সামনে এক ছাত্রীকে কটূক্তির প্রতিবাদ করায় তার অভিভাবকদের পিটিয়ে যখম করা হয়েছে।
চলতি বছরের ১২ অক্টোবর নাটোর জেলার বাগতিপাড়া উপজেলার লোকমানপুর কলেজ রসায়ন বিভাগের শিক্ষক মিজানুর রহমান মিজান কলেজের ছাত্রীদের দীর্ঘদিন ধরে উত্ত্যক্ত করার প্রতিবাদ করায় স্থানীয় বখাটে যুবক আসিফ ও রাজন লোহার রড দিয়ে তাকে পিটিয়ে আহত করে। গত ২৫ অক্টোবর মিজানুর রহমান মিজান হাসপাতালে মারা যান।
ফরিদপুর জেলার মধুখালী উপজেলা সদরের গাঁড়াখোলায় দশম শ্রেণীতে পড়া দুই মেয়ে হীরা ও মুক্তাকে উত্ত্যক্ত করার প্রতিবাদ করায় বখাটে দেবাশীষ সাহা রনি ও তার সঙ্গীরা গত ২৬ অক্টোবর দুই ছাত্রীর মা চাঁপা রানী ভৌমিকের (৪৮) ওপর মোটরসাইকেল তুলে দিয়ে তাকে হত্যা করে। চলতি বছরের অক্টোবর মাসে ৪ জন বখাটের হাতে নিহত হয়েছে। এদের মধ্যে ১৭ বছরের কিশোরী আনিজা আক্তার বখাটের প্রেমের প্রস্তাবে সাড়া না দেয়ায় তাকে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। এছাড়া একজন শিক্ষক, কিশোরীর মা এবং একজন মহিলার স্বামী বখাটেদের অত্যাচারে প্রতিবাদ করায় বখাটেরা তাদের হত্যা করে। অক্টোবরে ১৯ ব্যক্তি নির্যাতনের প্রতিবাদ করায় বখাটেদের আক্রমণে আহত হন।
নভেম্বর মাসে বখাটেদের দৌরাত্ম্যে ৩ কিশোরী আত্মহত্যা করে। ২ পুরুষ বখাটেদের দৌরাত্ম্যের প্রতিবাদ করতে গিয়ে তাদের হাতে নিহত এবং ৫৪ জন আহত হয়। গত ১ নভেম্বর সিরাজগঞ্জ জেলার রায়পুর উপজেলার নিঝুড়ি গ্রামের নবম শ্রেণীর ছাত্রী রূপালীকে একই এলাকার সুশীল চন্দ্র মণ্ডল জোরপূর্বক ধরে নিয়ে সিঁথিতে সিঁদুর পরিয়ে একটি ঘরে আটকে রাখে। এ ঘটনায় রূপালী গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে।
গত ৩ আগস্ট রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে তাসলিমা (২৮) নামের এক গৃহবধূর আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্টে কন্যাসন্তান ধারণ করার খবর পেয়ে স্বামী সোহেল ও তার পরিবারের সদস্য ৮ মাসের অন্তঃসত্ত্বা তাসলিমাকে হত্যা করে।
চলতি বছরের ১ ডিসেম্বর নিজ মেয়েকে উত্ত্যক্ত করায় বখাটেদের বাধা দেয়ায় মনির সরকার নামের এক ব্যক্তিকে খুন করে বখাটেরা।
গত ২৩ ডিসেম্বর মুন্সীগঞ্জে মাত্র ৬ বছরের মনিরা বখাটেদের পাশবিকতার শিকার হয়ে মারা যায়। ছোট্ট এই শিশুটিকে ধর্ষণের পর নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।
শ্লীলতাহানি : অধিকারের রেকর্ড অনুসারে চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৪১৪ জন। এর মধ্যে জানুয়ারি মাসে ৩৬, ফেব্রুয়ারিতে ৩০, মার্চে ৫৬, এপ্রিলে ৬৩, মে মাসে ৫১, জুনে ৫৫, জুলাইতে ৫১, আগস্টে ৪২, সেপ্টেম্বরে ৫৫, অক্টোবরে ৪৭ ও নভেম্বরে ৩৮ জন ধর্ষণের শিকার হয়। চলতি বছরের গত ১৪ জানুয়ারি সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া উপজেলায় রানীনগর গ্রামের দুই সন্তানের জননীকে ধর্ষণ করেছে বড়হর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক বাবু ও তার সহযোগীরা।
গত ২৪ এপ্রিল পশ্চিম লালমোহনের চরউমেদ ইউনিয়নের কচুয়াখালী গ্রামের সফি মাঝির স্ত্রী ও মেয়েকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে আওয়ামী লীগ কর্মী সিরাজ, সাইফুল, সোহাগ, আবদুল ও জুয়েল। গভীর রাতে বিএনপি কর্মী সফি মাঝির বাড়িতে ঢুকে তাকে বেঁধে সাইফুল ও জুয়েল তার মেয়ে মাদ্রাসা পড়ুয়া নবম শ্রেণীর ছাত্রীকে ধর্ষণ করে। এ সময় তার স্ত্রী মেয়েকে বাঁচাতে এগিয়ে এলে তাকেও ধর্ষণ করে সোহাগ ও আবদুল। গত ২৬ এপ্রিল ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলার চাচড়া ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের এক বিএনপি নেত্রীকে গণধর্ষণ করে স্থানীয় যুবলীগ ক্যাডার রাকিব, সফিউল্লাহ, সোহেল, নজু, আব্বাস ও আল-আমিনসহ একদল অস্ত্রধারী দুর্বৃত্ত। গত ১৭ মে কুমিল্লা জেলার নাঙ্গলকোট উপজেলার আলিয়ারা গ্রামে এক প্রতিবন্ধী তরুণী গ্রামের কমিউনিটি ক্লিনিকে টিকা দিতে গেলে ক্লিনিকের স্বাস্থ্য সহকারী মিজানুর রহমান তাকে ধর্ষণ করে।
গত ৫ জুলাই টাঙ্গাইল জেলার সখিপুর উপজেলার কাহারতা গ্রামের নবম শ্রেণীর এক কিশোরী বাজারে কাগজ কিনতে গেলে উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক হাবিবুল্লা ইতিহাস ওরফে হাবিব, ছাত্রলীগ নেতা আরিফ আহমেদ ও সখিপুর উপজেলা চেয়ারম্যান শওকত শিকদারের ভাগ্নে বাবুল আজাদ ও তার নাতি আরিফুল ইসলাম আকাশ এক কিশোরীকে অপহরণ করে ধর্ষণ করে। গত ২১ নভেম্বর হবিগঞ্জ বাহুবল উপজেলার রূপসংকর (বানিয়াগাঁও) গ্রামে ইউপি চেয়ারম্যান ডা. রমিজ আলীর বাড়িতে সুমি আক্তার নামে এক কিশোরীকে একদল দুর্বৃত্ত ধর্ষণের পর হত্যা করে।
যৌতুক সহিংসতা : চলতি বছরও যৌতুকের সহিংসতা অব্যাহত ছিল। অধিকারের রিপোর্ট অনুযায়ী ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত যৌতুক সহিংসতার ৩৫৪টি ঘটনার খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে জানুয়ারিতে ১৭, ফেব্রুয়ারিতে ২৭, মার্চে ২৪, এপ্রিলে ৩৬, মে মাসে ২৫, জুনে ৪০, জুলাইয়ে ৩৮, আগস্টে ৪৯, সেপ্টেম্বরে ৩১ ও অক্টোবরে ২৬টি ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে। এছাড়া দৈনিক আমার দেশ-এ ডিসেম্বর মাসে যৌতুক সহিংসতার ২৫টি খবর প্রকাশিত হয়েছে। এ সময় বহু নারীকে যৌতুকের জন্য হত্যা করা হয়েছে।
গত ২২ মে যৌতুকের জন্য অগ্নিদগ্ধ সীমা নামে এক গৃহবধূ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা গেছে। যৌতুকের দাবি পূরণ না করায় গত ২৮ এপ্রিল ঘুমন্ত সীমার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় নেশাগ্রস্ত স্বামী দেলোয়ার হোসেন। নিহত সীমার বাড়ি রংপুরের মুন্সীপাড়ায়। ১৬ সেপ্টেম্বর যৌতুক না পেয়ে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে আমেনা আক্তার অ্যানি নামে এক গৃহবধূর মাথা তার স্বামী ন্যাড়া করে দিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ২৮ এপ্রিল ঘুমন্ত সীমার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় স্বামী দেলোয়ার হোসেন।
এসিড সহিংসতা : বছরজুড়েই ছিল এসিড সহিংসতা। প্রথম ১১ মাসে ১২৩ জন এসিড নিক্ষেপের শিকার হন। এর মধ্যে জানুয়ারি মাসে ১৩ জন এসিডদগ্ধ হয়েছেন, ফেব্রুয়ারি মাসে ৫, মার্চে ২৩, এপ্রিলে ৬, মে মাসে ৭, জুনে ৯, জুলাইয়ে ১৩, আগস্টে ১৫, সেপ্টেম্বরে ৯, অক্টোবরে ১০ ও নভেম্বরে ৪ জন এসিডদগ্ধ হয়েছেন বলে মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের রিপোর্টে উল্লেখ রয়েছে। এছাড়া ডিসেম্বরে আরও ৬ জনকে এসিডে ঝলসে দেয়ার খবর আমার দেশ-এ ছাপা হয়েছে। গত ১৩ সেপ্টেম্বর গাইবান্ধা জেলার প্রতাপপুর গ্রামে বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় শামসুল আলম নামে এক সেনা সদস্য একই গ্রামের আবু বক্কর সিদ্দিকের স্ত্রী রাজিয়া এবং তার দুই মেয়ে রেহেনা ও রিমাকে এসিড দিয়ে ঝলসে দেয়। গত ৩ মে সাতক্ষীরা জেলার কলারোয়া থানার ইলিশপুর গ্রামে তরুণ পারভীন নামে একজন গৃহবধূ তার স্বামী আসাদুল ইসলামের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে তাকে তালাক দেয়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে গত ৯ মে আসাদুল ইসলাম, তার ভাই এমদাদুল ইসলাম ও প্রতিবেশী সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে পাঁচ-ছয় দুর্বৃত্ত পারভীনের শরীরে এসিড ঢেলে দেয় এবং মশারি দিয়ে জড়িয়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয়। মারাত্মক আহত অবস্থায় তরুণ পারভীনকে খুলনা হাসপাতালে ভর্তি করা হলে তিনি সেখানে মারা যান

নতুন কাঠামোয় বেতন দাবি : গাজীপুরে গার্মেন্ট শ্রমিকদের বিক্ষোভ সড়ক অবরোধ



স্টাফ রিপোর্টার টঙ্গী ও গাজীপুর


গাজীপুর সদর উপজেলার বড়বাড়ি এলাকার মুনলাইট গার্মেন্ট কারখানার শ্রমিকরা সরকার ঘোষিত বেতন কাঠামো যথাযথ বাস্তবায়নসহ সাপ্তাহিক ছুটি কার্যকর ও ৪০% হারে অতিরিক্ত কাজের মজুরির দাবিতে গতকাল ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক প্রায় ৩ ঘণ্টা অবরোধ করে রাখে। সকাল সাড়ে ৮টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত অবরোধ চলাকালে রাজধানীর কুড়িল বিশ্বরোড থেকে গাজীপুর সালনা পর্যন্ত মহাসড়কের উভয়
পাশে দীর্ঘ প্রায় ২৫ কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে হাজার হাজার যাত্রী চরম দুর্ভোগের শিকার হন। স্কুল-কলেজগামী ছাত্রছাত্রী ও অফিসগামী লোকজন হেঁটে নির্ধারিত সময়ের পর গন্তব্যে পৌঁছলেও দূরপাল্লার যাত্রীদের অসহায় অবস্থায় বসে থাকা ছাড়া কিছুই করার ছিল না।
শ্রমিকরা অভিযোগ করে জানায়, সরকার ঘোষিত বেতন কাঠামো অনুযায়ী জুনিয়র শ্রমিকরা তাদের ন্যায্য পারিশ্রমিক পেলেও সিনিয়র শ্রমিকরা তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এছাড়া সাপ্তাহিক ছুটি দিচ্ছে না এবং তাদের অতিরিক্ত কাজের মজুরি ৪০% এর স্থলে ৩০% দিচ্ছে কারখানা কর্তৃপক্ষ।
গতকাল সকালে শ্রমিকরা বেতন বৈষম্যের অভিযোগে কাজে যোগদান না করে কারখানার গেটে জড়ো হতে থাকে। একপর্যায়ে তারা সরকার ঘোষিত নতুন বেতন কাঠামো বাস্তবায়ন, সাপ্তাহিক ছুটি কার্যকরসহ বিভিন্ন দাবি আদায়ের লক্ষ্যে কারখানার সামনে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে। এ সময় শ্রমিকরা কারখানা ভাংচুরের চেষ্টা চালায়। খবর পেয়ে গাজীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, শিল্প পুলিশের স্থানীয় ওসিসহ টঙ্গী ও জয়দেবপুর থানার বিপুলসংখ্যক পুলিশ, আর্মড পুলিশ, ও র্যার সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। ওই গামের্ন্ট কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল আহসান খালেদের ছেলে সাইফুল আরেফিন খালেদ গিয়ে শ্রমিকদের সব দাবি পূরণের আশ্বাস দিলে তারা অবরোধ তুলে নেন।
অবরোধ চলাকালে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। দীর্ঘ প্রায় ৩ ঘণ্টা যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় শিশু ও মহিলা যাত্রীরা পড়েন মহাবিপাকে। অনেককে বাধ্য হয়েই হেঁটে গন্তব্যে দিকে রওয়ানা হতে দেখা গেছে। এ সময় ভাংচুরের আশঙ্কায় মহাসড়কের পাশের দোকানপাট সম্পূর্ণ বন্ধ ছিল। খাবার ও ওষুধের দোকানসহ সব ধরনের দোকানই বন্ধ দেখা গেছে

সরকার ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে : চরমোনাই পীর

স্টাফ রিপোর্টার

ইসলামী আন্দোলনের আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেছেন, মহাজোট সরকার দেশ ও ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নে ইসলামী রাজনীতি নিষিদ্ধের চক্রান্ত করছে। শিক্ষানীতি বাস্তবায়নের নামে ইসলামী শিক্ষা সঙ্কোচিত করার পাঁয়তারা চলছে। সরকার যেভাবে ইসলামের বিরুদ্ধে একের পর এক যুদ্ধ ঘোষণা করছে সেই ষড়যন্ত্র থেকে সরে না এলে দেশবাসী তাদের সমুচিত জবাব দেবে। তিনি বলেন, দেশের মানুষ স্বাধীনতার জন্য যেভাবে জীবন ও রক্ত দিয়েছে প্রয়োজনে ইসলাম ও ইসলামী রাজনীতি রক্ষার জন্যও জীবন দেবে। দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর চিন্তা-চেতনা ও ইসলামবিরোধী কোনো রায় দেশবাসী মানতে প্রস্তুত নয়। আল্লাহর হুকুমের সামনে কোনো কোর্ট চলবে না। গতকাল এক বিবৃতিতে তিনি এসব কথা বলেন।
এদিকে অপর এক বিবৃতিতে দলের মহাসচিব মাওলানা ইউনুছ আহমদসহ অন্য নেতারা শাকিরার কনসার্ট আয়োজনের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, শাহরুখ খানের কনসার্টের পর যারা তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে আবার শাকিরাকে দিয়ে কনসার্টের আয়োজনের চিন্তা করছে, দেশবাসী তাদের সমুচিত জবাব দেবে ইনশাল্লাহ। অপরদিকে বি-বাড়িয়ায় নিয়াজ মোহাম্মদ স্টেডিয়ামে ওপেন কনসার্টের অনুমতি প্রদানকারী ও আলেম ওলামাদের সঙ্গে ওয়াদা ভঙ্গকারী জেলা প্রশাসকের সাতদিনের মধ্যে অপসারণ দাবি করেছে কওমী ইসলামী ছাত্রঐক্য পরিষদ। গতকাল শহরে এক বিশাল বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ থেকে এ দাবি জানানো হয়।
খেলাফত আন্দোলন : বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের আমির মাওলানা আহমদুল্লাহ আশরাফ বলেছেন, বর্তমানে ধর্মনিরপেক্ষতা ইসলামের বিরুদ্ধে হাতিয়ারে পরিণত হচ্ছে। ধর্মনিরপেক্ষতার নামে বারবার ইসলামের ওপর আঘাত হানা হচ্ছে। তিনি বলেন, এদেশের মুসলমানরা মনে-প্রাণে বিশ্বাস করে, ইসলাম মানবতার মুক্তি সনদ। এটাই তাদের ইমান, অনুভূতি ও আবেগ। তাই ইসলামের বিধান, কোরআন ও ধর্মীয় রাজনীতির ওপর কোনো আঘাত এলে তা সরকারের কল্যাণ বয়ে আনবে না। তিনি গতকাল লক্ষ্মীপুর ইশাআতুল উলুম মাদ্রাসার দু’দিনব্যাপী বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।

Tuesday 28 December 2010

কুয়াকাটায় চলছে হাঙর শিকারের উত্সব : প্রশাসন নীরব, পরিবেশে বিরূপ প্রভাবের আশঙ্কা



মিলন কর্মকার রাজু, কলাপাড়া (পটুয়াখালী)


কুয়াকাটা সমুদ্রবক্ষে চলছে অবাধে হাঙর শিকার। গত এক মাস ধরে চলছে লাখ লাখ ছোট ছোট হাঙর শিকারের উত্সব। হাঙর শুঁটকি লাভজনক হওয়ায় জেলেরা হাঙর শিকারে উত্সাহী হয়ে উঠেছেন। কুয়াকাটা শুঁটকিপল্লীতে হাঙরের শুঁটকির জন্য অতিরিক্ত মাচা তৈরি হয়েছে। ছোট ছোট বাচ্চা বা জাটকা হাঙর শিকারে হাঙর প্রজাতির বংশবৃদ্ধি ব্যাহত হলেও সরকারিভাবে এই বেপরোয়া হাঙর নিধন বন্ধে কোনো আইনি পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না। এতে সামুদ্রিক পরিবেশে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
গত শুক্রবার কুয়াকাটা সৈকতের শুঁটকিপল্লীতে গিয়ে দেখা যায়, শুঁটকিপল্লীর শুঁটকির মাচায় ৮-৯ ইঞ্চি সাইজের হাজার হাজার হাঙরের বাচ্চা কেটে শুকানো হচ্ছে। গত এক মাস ধরে সাগরবক্ষে লাখ লাখ হাঙর ধরা পড়ায় শত শত জেলে অন্য মাছ শিকারের পরিবর্তে শুধু হাঙর শিকারের মহোত্সবে নেমেছেন। প্রতিদিন সন্ধ্যায় তারা শত শত ট্রলারে হাঙর বোঝাই করে শুঁটকিপল্লীতে বিক্রির জন্য নিয়ে আসেন। রাত ১০-১২টা পর্যন্ত চলে হাঙর বেচাকেনা। এরপর সারারাত ধরে চলে হাঙর কেটে মাচায় শুকানোর প্রক্রিয়া। হাঙর শুঁটকি করতে ৩ থেকে ৫ দিন পর্যন্ত সময় লাগে বলে শুঁটকি শ্রমিকরা জানান।
সাগরে মাছ শিকার করে আসা জেলে সোলায়মান জানান, ‘সাগরে অ্যাহন কোলা হাঙর (হাঙরের বাচ্চা) ছাড়া তেমন কোনো মাছ পাওয়া যায় না। আইজ সকালে সাগরে যাইয়া আড়াই হাজার কোলা হাঙর পাইছি।’ জেলে আব্বাস মিয়া জানান, ‘এইবার সাগরে অনেক হাঙর ধরা পড়ছে। গতবার এত হাঙর ছিল না। ৮-৯ ইঞ্চি থেকে ৩-৪ ফুট সাইজেরও হাঙর ধরা পড়ছে।’ একাধিক জেলে জানান, হাঙর শিকারের জন্য তারা বিভিন্ন ধরনের জাল ব্যবহার করেন। হাঙর শীতকালে বেশি ধরা পড়ে। সমুদ্রের তলদেশে পানির তাপমাত্রা কমে গেলে হাঙর ঝাঁক বেঁধে পানির উপরিভাগে চলে আসে খাদ্যের সন্ধানে। তখন বিশেষ এক ধরনের জাল (লাক্কাজাল) দিয়ে হাঙর ধরা হয়। সাগরের ১৫-২০ কিলোমিটার গভীরে জোয়ারের সময় বেশি হাঙর ধরা পড়ে। সাগর থেকে উত্তোলনের ৫-৭ ঘণ্টা পর্যন্ত হাঙর জীবিত থাকে। বাচ্চা হাঙরও ৩-৪ ঘণ্টা টিকে থাকে। তাই গভীর সমুদ্র থেকে ট্রলার চালিয়ে উপকূলে আসতে পচে যাওয়ার আশঙ্কা না থাকায় জেলেরা হাঙর শিকারের জন্য বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছেন এবং হাঙর শিকারের জন্য অতিরিক্ত বরফেরও দরকার হয় না, যা অন্য মাছের জন্য দরকার।
শুঁটকি ব্যবসায়ী নুরুল হক (৪০) জানান, ছোট হাঙর একশ’টি ১২শ’ থেকে ১৫শ’ টাকায় ক্রয় করছেন। এদের সাইজ এতই ছোট যে প্রতিকেজিতে ১৫-২০টি হাঙর উঠছে। আর বড় হাঙর কিনছেন প্রতিমণ ৬-৭ হাজার টাকায়। এ হাঙর শুঁটকি করে প্রতিমণ ৮-১০ হাজার টাকায় তারা বিক্রি করছেন চট্টগ্রাম, ঢাকার শুঁটকি ব্যবসায়ীদের কাছে।
একাধিক শুঁটকি ব্যবসায়ী জানান, হাঙরের শরীরের বিভিন্ন অংশ সেট হিসাবে বিক্রি করা হয়। হাঙরের কান, দাঁত, পাখনা ও তেল আলাদা বিক্রি করা হয়। হাঙরের কান প্রতিমণ ২২ থেকে ২৪ হাজার টাকা, তেল প্রতিমণ ৬ হাজার টাকা ও দাঁত প্রতিমণ ৭-৮শ’ টাকায় বিক্রি হয়। হাঙরের শুঁটকি বাঙালিরা না খেলেও বিদেশে এগুলোর চাহিদা ব্যাপক। তবে বর্তমানে যেরকম লাগামহীনভাবে হাঙর শিকার করা হচ্ছে তাতে সাগরে অন্য মত্স্যসম্পদে এর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশিষ্টজনরা।
জেলা মত্স্য অফিস সূত্র জানায়, হাঙর শিকার বন্ধে এখনও কোনো আইন না থাকায় তারা হাঙর শিকার রোধে কোনো পদক্ষেপ নিতে পারছে না। তবে হাঙর শিকার রোধে শিগগিরই একটি নীতিমালা চূড়ান্ত হচ্ছে বলে তারা জানান।
কলাপাড়া এমবি কলেজের প্রাণিবিজ্ঞানের প্রভাষক এনামূল কবির লিটু জানান, হাঙর মাংসাশী প্রাণী। শীতকালে প্রজনন শেষে হাঙর খাদ্যের সন্ধানে সমুদ্রের উপরিভাগে চলে আসায় শিকারিরা সহজেই হাঙর শিকার করতে পারেন। তবে ছোট হাঙর শিকার করলে সমুদ্রে অন্য মত্স্য সম্পদে এর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে।
কলাপাড়া কোস্টগার্ডের কন্টিনজেন্ট কমান্ডার আমিনুল ইসলাম আমার দেশকে জানান, হাঙর শিকার বন্ধে তাদের কোনো নির্দেশনা না থাকায় এ ব্যাপারে তারা কোনো পদক্ষেপ নিতে পারছেন না

গায়ের জোর থাকলে আদালতে যাওয়ার প্রয়োজন হয় না : বিচারপতি রাব্বানী

শীর্ষ নিউজ

সাবেক বিচারপতি গোলাম রাব্বানী বলেছেন, যাদের গায়ের জোর আছে তাদের আদালতে যাওয়ার প্রয়োজন হয় না। দেশের প্রচলিত বিচারব্যবস্থায় অসহায় মানুষ বিচার পায় না। গতকাল রাজধানীর বিয়াম মিলনায়তনে সাপ্তাহিক ও অ্যাকশন এইড আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন। বিচারপতি গোলাম রাব্বানী আরও বলেন, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের সঠিক সেবা নিশ্চিত করার জন্য স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করতে হবে। কারণ দেশের প্রচলিত বিচারব্যবস্থায় অসহায় মানুষ বিচার পায় না।
তিনি বলেন, দেশের প্রচলিত আইন, সংবিধান, সরকারি চাকরির বিধানে কোথাও জেলা প্রশাসক শব্দটি নেই। আছে ডেপুটি কমিশনার। অথচ তারা জেলা প্রশাসকের সাইনবোর্ড টানিয়ে দেশ স্বাধীন হওয়ার পরও আমাদের শাসন করে যাচ্ছেন। এ অবস্থায় বিচার সবার জন্য সমান ও সর্বজনীন হতে পারে না।
এ অবস্থার উন্নতির জন্য স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে কার্যকর করা প্রয়োজন বলে অভিমত দেন তিনি।
তিনি বলেন, প্রত্যেক ব্যক্তির উন্নতির দায়িত্ব স্ব স্বভাবে তাকে দিতে হবে। এক্ষেত্রে কোনো আপস চলবে না। তা হলে চিড়া-মুড়িতেও মানুষের অতৃপ্তি থাকবে না।

সরকারের ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডে প্রতিবাদমুখর ছিল সারাবছর

রকিবুল হক

বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকেই ইসলামবিরোধী ও বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের মাত্রা এ বছর ব্যাপক আকার ধারণ করে। সরকারিভাবে ইসলামবিরোধী নানা পদক্ষেপ এবং বক্তব্য-বিবৃতির পাশাপাশি বেশ তত্পর ছিল বেসরকারি বিভিন্ন মহল। পঞ্চম সংশোধনী বাতিলের মাধ্যমে সংবিধানের মূলনীতি থেকে ‘আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস, বিসমিল্লাহ ও রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম’ উঠিয়ে দেয়া, ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করা, ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষানীতি প্রণয়ন, ফতোয়া নিষিদ্ধ, সমঅধিকার আইন করার সরকারি ঘোষণা এবং বোরকাবিরোধী আইন করার পাশাপাশি আল্লাহ ও রাসুল (সা.) সম্পর্কে কটূক্তি, জেহাদি বইয়ের নামে কোরআন-হাদিস ও ইসলামী সাহিত্যবিরোধী অপপ্রচার, বোরকা ও টুপিধারীদের হয়রানি, ইসলামিক ফাউন্ডেশনে অশ্লীল নৃত্যসহ বিভিন্ন ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডে দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। অনেকের মতে, ২০১০ সাল ছিল দেশকে ধর্মহীন করার ষড়যন্ত্রের বছর। এ বছর ইসলাম ও দেশের মুসলমানদের ঈমান-আকিদার ওপর মারাত্মক আঘাত আসে। আর এসব কর্মকাণ্ডের প্রেক্ষিতে দেশের প্রায় সব ইসলামী দলসহ ধর্মপ্রাণ মানুষের প্রতিবাদ-বিক্ষোভে মুখর ছিল পুরো বছর। নির্বাচনের আগে ‘কোরআন-সুন্নাহবিরোধী কোনো আইন করা হবে না’ বলে ওয়াদা করলেও বর্তমানে তা ভঙ্গ করায় আ’লীগ সরকারকে ইসলামবিরোধী আখ্যায়িত করে ইমান ও ইসলাম রক্ষায় তাদের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান সংশ্লিষ্টরা। তবে এসব প্রতিবাদ বিক্ষোভ দমনে সরকারের পুলিশবাহিনীও ছিল কঠোর অবস্থানে।
এ বছরের শুরুর দিকেই একটি অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন, সম্পত্তিতে নারী-পুরুষের সমানাধিকার নিশ্চিত করা হবে। এ ঘোষণাকে পবিত্র কোরআনের মিরাছি আইনবিরোধীআখ্যায়িত করে তার প্রতিবাদ জানায় বিভিন্ন ইসলামী দল। কোনো অবস্থাতেই মিরাছি আইন পরিবর্তনের সুযোগ নেই বলে ওলামারা জানান। এর কয়েকদিন আগে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা দেন, সব ধরনের ফতোয়া নিষিদ্ধ করা হবে। এই বক্তব্যে ধর্মপ্রাণ মানুষের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। কারণ ফতোয়া ইসলামের বিধান। মুসলমানদের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাই কোনোভাবেই ফতোয়া বন্ধ করা যাবে না বলে তাদের অভিমত। মার্চের দিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি অনুষ্ঠান কোরআন তেলাওয়াতের পরিবর্তে রবীন্দ্রসঙ্গীত দিয়ে শুরু করা হয়। এছাড়া বছরের এপ্রিলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার আল্লাহর ক্ষমতা নিয়ে মন্তব্য করলে তীব্র প্রতিবাদ জানান ধর্মপ্রাণ মানুষ।
এদিকে এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে রাজধানীর ইডেন ও বদরুন্নেসা কলেজে বোরকাধারী ছাত্রীদের হয়রানি ও নির্যাতনের ঘটনায় সারাদেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। ইডেন কলেজে বোরকাপরা ছাত্রীদের ধরে বোরকা খুলে সাংবাদিকদের সামনে হাজির করা হয়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী হলেও তল্লাশির নামে পর্দানশিন ও নামাজি ছাত্রীদের হয়রানির ঘটনা ঘটে। এসব প্রতিষ্ঠানে ছাত্রীদের রুম থেকে ইসলামী বই-পুস্তককে জিহাদি বই বলে তা জব্দ করে নিয়ে যায় পুলিশ। প্রশাসনের সহায়তায় এ ধরনের কর্মকাণ্ডে সারাদেশে বোরকাধারী ছাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। অপরদিকে ইডেন কলেজে ছাত্রলীগ নেত্রীদের মাধ্যমে ছাত্রীদের অনৈতিক কাজে বাধ্য করার খবরে সব মহলে ঘৃণার সৃষ্টি হয়। এদিকে এ বছর পয়লা বৈশাখ উদযাপন অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ ক্যাডারদের হাতে লাঞ্ছিত হয় অর্ধশতাধিক ছাত্রী। একুশে ফেব্রুয়ারির অনুষ্ঠানেও তাদের হাতে লাঞ্ছিত হয় বেশ কয়েকজন ছাত্রী ও অভিভাবক। এছাড়া অনৈতিক কাজে রাজি না হওয়ায় রাজশাহী ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীদের লাঞ্ছিত করে ছাত্রলীগ ক্যাডাররা। এসব ঘটনার মাধ্যমেই সারাদেশে ইভটিজিং ও অসামাজিক কার্যকলাপ ব্যাপকহারে ছড়িয়ে পড়ে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের পাজামা-পাঞ্জাবি ও বোরকা পরে আসতে নিষেধ করেন এক শিক্ষক।
বছরজুড়েই আলোচিত ছিল ’৭২-এর সংবিধান চালু ও ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করার প্রসঙ্গ। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই সংবিধানের ৫ম সংশোধনী বাতিল করে ’৭২-এর সংবিধান চালুর ঘোষণায় আতঙ্কে ছিল ইসলামী দলগুলো। কারণ এটি চালু হলে ধর্মভিত্তিক রাজনীতির সুযোগ হয়ে পড়ে অনিশ্চিত। এজন্য শুরু থেকেই তারা এর বিরোধিতা করে আসছিল। কিন্তু শত বিরোধিতা সত্ত্বেও এবছর হাইকোর্টের রায়ের মাধ্যমে সংবিধানের ৫ম সংশোধনী বাতিল করা হয়। এর পরপরই সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা বলতে থাকেন, ধর্মভিত্তিক রাজনীতির সুযোগ শেষ হয়ে গেছে, ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলো নিষিদ্ধ হবে ইত্যাদি। অবশ্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একাধিক অনুষ্ঠানে বলেছেন, ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হবে না। এরপরও অন্য মন্ত্রী-এমপিরা এই রাজনীতি নিষিদ্ধ করার কথা বলেন। এ নিয়ে নির্বাচন কমিশন ও মন্ত্রীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য বিনিময়ও হয়। মন্ত্রীরা বলেন, ধর্মভিত্তিক দল নিষিদ্ধ করবে নির্বাচন কমিশন। অপরদিকে নির্বাচন কমিশন থেকে বলা হয়, এ দায়িত্ব সরকারের, ইসির নয়।
এদিকে ধর্মীয় রাজনীতি নিষিদ্ধের এ তত্পরতায় সংশ্লিষ্ট দলগুলোতে টনক নড়ে। দেশের বৃহত্তম ইসলামী দল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীসহ প্রায় সব দল পৃথক বিক্ষোভ-সমাবেশ করে ধর্মীয় রাজনীতি নিষিদ্ধের ষড়যন্ত্র বন্ধ করতে সরকারকে হুশিয়ার করে। এ বিষয়ে রাজধানীতে সবচেয়ে বড় কর্মসূচি পালন করে চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল করিমের নেতৃত্বাধীন সংগঠন ইসলামী আন্দোলন। গত ৫ নভেম্বর মুক্তাঙ্গনে দলটির মহাসমাবেশ থেকে ইসলামী রাজনীতি নিষিদ্ধসহ ইসলামবিরোধী তত্পরতা বন্ধে সরকারকে আল্টিমেটাম দেয়া হয়। একইভাবে মুফতি ফজলুল হক আমিনীর নেতৃত্বাধীন ইসলামী আইন বাস্তবায়ন কমিটি ও ইসলামী ঐক্যজোট একাধিক বিক্ষোভ সমাবেশ করে। এছাড়া খেলাফত মজলিস, খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, সম্মিলিত ওলামা-মাশায়েখ পরিষদসহ বিভিন্ন ইসলামী দল, ধর্মীয় ও সামাজিক সংগঠন ইসলামী রাজনীতি নিষিদ্ধের ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে কর্মসূচি পালন করে।
ধর্মীয় রাজনীতি নিষিদ্ধ ইস্যুর পরপরই ছিল ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষানীতি চালু। বর্তমান সরকার নাস্তিক হিসেবে পরিচিত অধ্যাপক কবির চৌধুরীর নেতৃত্বে যে জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটি গঠন করেছিল, শুরু থেকেই তার প্রতিবাদ জানিয়ে আসছিল ধর্মীয় বিভিন্ন সংগঠন। পরে ওই কমিটি ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষানীতির যে রিপোর্ট দেয় তা প্রত্যাখ্যান করে সংশোধন বা বাতিলের জোর দাবি জানান সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু এসব দাবি ও আলেম-ওলামাদের মতামত উপেক্ষা করেই সরকার শিক্ষানীতি চূড়ান্ত করে এবং গত ৭ ডিসেম্বর তা সংসদে পাস হয়। এতে সংশ্লিষ্ট মহলে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। তারা এই শিক্ষানীতিকে ধর্মহীন ও মাদ্রাসা শিক্ষা ধ্বংসের ষড়যন্ত্র আখ্যায়িত করে কোনোভাবেই এই নীতি বাস্তবায়ন করতে দেয়া হবে না বলে ঘোষণা দেয়। এরই মধ্যে এই শিক্ষানীতি সংশোধনের দাবিতে ২৬ ডিসেম্বর সম্মিলিত ওলামা-মাশায়েখ পরিষদ হরতালের ডাক দেয়। অবশ্য পরে তা সরকারের সঙ্গে আলোচনার প্রেক্ষিতে স্থগিত করা হয়। এছাড়া এই শিক্ষানীতি সংশোধন বা বাতিলের দাবি জানিয়ে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ করেছে বিভিন্ন সংগঠন। কওমী মাদ্রাসার বোর্ড সারাদেশে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এটি বাতিলের দাবি জানিয়েছে শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক বিভিন্ন সংগঠন। এদিকে অক্টোবরে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কাউকে বোরকা পরতে বাধ্য করা যাবে না মর্মে হাইকোর্টের নির্দেশনা ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র জারির প্রেক্ষিতে সারাদেশে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। এ সিদ্ধান্তকে কোরআনের বিধান পরিপন্থী এবং নারীদের বেপর্দা করার ষড়যন্ত্র হিসেবে আখ্যায়িত করেন সংশ্লিষ্টরা।
আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডের অংশ হিসেবে ২০১০ সালে আরেকটি আলোচিত বিষয় ছিল জিহাদি বই। সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারী, বিরোধী মতকে দমন বা ইসলামবিরোধী ষড়যন্ত্রের অন্যতম হাতিয়ার ছিল এটি। পুলিশ জিহাদি বই পাওয়ার অভিযোগে গ্রেফতার করে বিভিন্ন ইসলামী দলের অসংখ্য নেতাকর্মীকে। জিহাদি বই উদ্ধারের নামে পুলিশ নিয়ে যায় মূল্যবান ইসলামী বইপত্র। অথচ এসব বইয়ের কোনোটিই সরকারিভাবে নিষিদ্ধ নয়। জিহাদি বই রাখার অভিযোগে সবচেয়ে বেশি হয়রানির শিকার হন জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবির নেতাকর্মীরা। এসব সংগঠনের কয়েকশ’ নেতাকর্মী এখনও কারাগারে রয়েছেন। পুলিশের এ তত্পরতায় সারাদেশে জিহাদি আতঙ্ক সৃষ্টি হয় ধর্মপ্রাণ সাধারণ মানুষের মাঝেও। সরকারের পুলিশবাহিনীর এসব কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ জানানো হলেও তাদের অপতত্পরতা অব্যাহত রয়েছে।
এবছর বৃহত্তর সরকারি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ইসলামিক ফাউন্ডেশনের নানা অনৈসলামিক ও বিতর্কিত কর্মকাণ্ডও ছিল বেশ আলোচিত। প্রতিষ্ঠানটির ডিজি হিসেবে বর্তমান সরকার নিযুক্ত সামীম মোহাম্মদ আফজালের নেতৃত্বেই এসব অনৈসলামিক কর্মকাণ্ড হয়। ফাউন্ডেশনের মসজিদভিত্তিক গণশিক্ষা প্রকল্প নিয়ে ষড়যন্ত্র, অশ্লীল গানবাজনা আয়োজনের ধারাবাহিকতায় গত ২৭ নভেম্বর ফাউন্ডেশনের ইমাম প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠানে মার্কিন তরুণ-তরুণীদের দিয়ে অশ্লীল উদর-নৃত্য প্রদর্শনের ঘটনায় সারাদেশে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। এসব অনৈসলামিক কর্মকাণ্ডের কারণে ইফা ডিজির অপসারণ দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন ইসলামী সংগঠন। এছাড়া বিভিন্ন অভিযোগে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব অধ্যাপক মাওলানা সালাউদ্দিনকেও অপসারণের দাবি জানান সংশ্লিষ্টরা।
সরকারের এসব বিতর্কিত সিদ্ধান্তের পাশাপাশি বেসরকারিভাবেও ইসলামবিরোধী নানা বক্তব্য-বিবৃতি ছিল আলোচিত বিষয়। এ বছর মার্চ মাসে মানিকগঞ্জে এক বিধর্মী শিক্ষক রাসুল (সা.)-কে নিয়ে কটূক্তি করেন। একইভাবে বাগেরহাটের এক হিন্দু কাবা শরিফের হাজরে আসওয়াদকে শিবলিঙ্গের সঙ্গে তুলনা করে। এসব মন্তব্যে সারাদেশে বিক্ষোভ করে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান ধর্মপ্রাণ মানুষ। কিন্তু সরকার এক্ষেত্রে ছিল নীরব। আগস্টে দেব নারায়ণ মহেশ্বর নামে এক ব্যক্তি কোরবানি বিষয়ে পবিত্র কোরআনের বিশুদ্ধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করে। এর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ বিক্ষোভের একপর্যায়ে রিটটি খারিজ করে দেন হাইকোর্ট। পরে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হলেও তাকে আটক করা হয়নি। সম্প্রতি ঢাকা সেনানিবাসের আর্মি স্টেডিয়ামে ‘কিংখান লাইভ শো’র নামে ভারতীয় শিল্পীদের এনে অশ্লীল ও নগ্ন নাচগানের আয়োজনের ঘটনায় প্রতিবাদ জানায় বিভিন্ন মহল। এছাড়া ইসলামবিরোধী নানা কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি দেশের স্বার্থবিরোধী ইস্যুতে বছরজুড়েই ধর্মপ্রাণ মানুষ ছিলেন প্রতিবাদমুখর। তবে সরকার পুলিশবাহিনী দিয়ে প্রতিবাদকারীদের কঠোরভাবে দমনের চেষ্টা চালায়। বিভিন্ন ইসলামী দলের বেশকিছু কর্মসূচিতে হামলা চালায় পুলিশ ও সরকারদলীয় ক্যাডাররা। এতে আহত হন অনেক নেতাকর্মী। বিশেষ করে জামায়াতে ইসলামীর অধিকাংশ বিক্ষোভ সমাবেশেই হামলা চালায় পুলিশ। ফলে রাজপথে বড় কোনো কর্মসূচি পালন করতে পারেনি দলটি।
গত এক বছর দেশে অনৈসলামিক কর্মকাণ্ড প্রসঙ্গে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলাম বলেন, ২০১০ সাল ছিল দেশকে ধর্মহীন করার বছর। এ বছর ধর্মহীন শিক্ষানীতি প্রণয়নের মাধ্যমে মাদ্রাসা শিক্ষাকে ধ্বংসের ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। অশ্লীল গানবাজনা আর নারীদের নগ্ন প্রদর্শনীসহ সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের মাধ্যমে ধর্মীয় মূল্যবোধকে ধ্বংসের অপপ্রয়াস চলেছে। তিনি বলেন, এ বছর ফতোয়া নিষিদ্ধ করার উদ্যোগ নেয় সরকার। জঙ্গিবাদের কথা বলে ইসলামী দল ও নেতাদের চরিত্র হনন করা হয়েছে। তিনি বলেন, যুগ যুগ ধরে ধর্মপ্রাণ মানুষ কোরআন-হাদিস ও ইসলামী বই পড়ে আসছেন। কিন্তু এ বছর সরকার জিহাদি বইয়ের ধোয়া তুলে এসব বই পড়ার প্রতি মানুষের অনাগ্রহ সৃষ্টির ষড়যন্ত্র করেছে। অথচ সরকার এসব বইকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার সাহস করেনি।
খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাক বলেন, আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় আসে তখনই ইসলামের বিরুদ্ধে কাজ করে। গোড়া থেকেই তারা ইসলাম ও মুসলমানদের প্রতি বৈরী মনোভাব প্রকাশ করে আসছে। ইসলামের কথা শুনলেই তাদের মাথাব্যথা হয়। তাদের সময় দেব নারায়ণদের মতো ইসলামবিদ্বেষীরা উত্সাহিত হয়। তারা আওয়ামী মুসলিম লীগ থেকে ‘মুসলিম’ শব্দটি বরদাশত করতে পারেনি। তারা ইসলামবিদ্বেষী, ভারতপ্রেমী। এজন্য তারা ধর্মহীন শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে কথা বলতে দেয় না। তারা বাকশালী কায়দায় স্বৈরশাসন চালাতে চাচ্ছে। তাই এ সরকার থেকে রক্ষা পেতে জাতীয়তাবাদী ও ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী এবং আলেম-ওলামাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলনে নামতে হবে। তাছাড়া দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব এবং ইসলামী মূল্যবোধ রক্ষা করা যাবে না।
ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মুফতি ফজলুল হক আমিনী দেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের মন্ত্রী-এমপিদের ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডের ফিরিস্তি তুলে ধরে বলেন, তুর্কি ও স্পেনের স্টাইলে মুসলমানদের এ বাংলাদেশ থেকে সম্পূর্ণরূপে ইসলাম নির্মূলের মিশন বাস্তবায়ন করতে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই বর্তমান সরকারকে ক্ষমতায় বসানো হয়েছে। তাদের ক্ষমতা যত দীর্ঘস্থায়ী হবে, দেশ, ইসলাম ও মুসলমানদের জন্য তত বেশি বিপদ ঘনিয়ে আসবে। দেশ ও ইসলামের স্বার্থেই এ সরকারের পতন তরান্বিত করতে হবে। কারণ রাষ্ট্র পরিচালনার গুরুভার যাদের হাতে ন্যস্ত, তারা যখন অন্যায়-অনাচার, পাপাচারে জড়িয়ে পড়ে, সাধারণ মানুষের মাঝে যখন গুনাহের কাজ ব্যাপকহারে ছড়িয়ে পড়ে, তখন সেদেশ ও জাতির ওপর আল্লাহর গজব অনিবার্য হয়ে পড়ে। সম্প্রতি দেশের নানা ঘটনাপ্রবাহে সে গজবের অশনিসঙ্কেত শোনা যাচ্ছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর ইসলামবিরোধী এমন সব ষড়যন্ত্র হচ্ছে, যা এর আগে এদেশে কল্পনা করাও কঠিন ছিল।
বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের আমির মাওলানা আহমদুল্লাহ আশরাফ বলেন, বতর্মান মহাজোট সরকার নির্বাচনের আগে বলেছিল, ক্ষমতায় গেলে কোরআন-সুন্নাহবিরোধী কোনো আইন তারা করবে না। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, তাদের মদতে ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ড সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। বছরজুড়ে সংঘটিত বিভিন্ন ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডের বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, সরকার তার ওয়াদা ভঙ্গ করেছে। ইসলামবিরোধী তত্পরতা বন্ধে নিষ্ক্রিয় ভূমিকায় সরকারের ইসলামবিদ্বেষী মনোভাবের প্রকাশ ঘটেছে। এ অবস্থা থেকে ফিরে না এলে সরকারকে চরম পরিণতি ভোগ করতে হবে।

ইসলাম ধ্বংসের কাজে ব্যস্ত সরকার : চরমোনাই পীর



স্টাফ রিপোর্টার


ইসলামী আন্দোলনের আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেছেন, ৯০ শতাংশ মুসলমানের এদেশে সংবিধান থেকে আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস বাদ দেয়া, ইসলামী রাজনীতি নিষিদ্ধ করার উদ্যোগসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে প্রমাণিত হয়, ইসলাম ধ্বংসের নীলনকশা নিয়ে মাঠে নেমেছে সরকারের একটি মহল। সন্ত্রাস, দুর্নীতি বৃদ্ধি, বিদ্যুত্, পানি ও গ্যাস সঙ্কট, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিসহ জনগণের নানা দুর্ভোগের সমাধানে সরকারের কোনো চিন্তা নেই। অথচ দেশ থেকে ইসলামকে কীভাবে ধ্বংস করা যায় সেই কাজে তারা ব্যস্ত। এরই মধ্যে বাংলাদেশ দুর্নীতিতে ৬ বার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর এবার রিমান্ডেও চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। খারাপ কাজে এ সরকার চ্যাম্পিয়ন। তিনি সরকারকে হুশিয়ার করে বলেন, ইসলামের বিরুদ্ধে যে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে তা আমাদের জীবন থাকতে বাস্তবায়ন হতে দেব না। তিনি ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ডিজির অপসারণ, ইসলামবিরোধী ষড়যন্ত্র বন্ধসহ ৬ দফা দাবি মেনে নেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। অন্যথায় বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন তিনি।
গতকাল রাজধানীর মুক্তাঙ্গনে ইসলামী আন্দোলনের উদ্যোগে সংবিধানের মূলনীতি থেকে আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস বাদ দেয়ার অপচেষ্টা, ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধের নামে ইসলাম উত্খাতের ষড়যন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতার নামে ধর্মহীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পাঁয়তারা, বোরকাবিরোধী আইনসহ সব ধরনের ইসলামবিরোধী কার্যক্রম বন্ধ, সন্ত্রাস, দুর্নীতি নির্মূল করে সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং ইফা ডিজির অপসারণ দাবিতে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদানপূর্ব সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে চরমোনাই পীর এসব কথা বলেন। এতে আরও বক্তব্য রাখেন দলের নায়েবে আমির মাওলানা আবদুর রশিদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য আল্লামা নুরুল হুদা ফয়েজি, মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা ইউনুছ আহমদ, যুগ্ম মহাসচিব অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, নগর সভাপতি এটিএম হেমায়েত উদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক বেলায়েত হোসেন, মাওলানা আতাউর রহমান, মাওলানা ইমতিয়াজ আলম প্রমুখ।
সমাবেশ শেষে স্মারকলিপি প্রদানের উদ্দেশ্যে চরমোনাই পীরের নেতৃত্বে একটি বিশাল মিছিল জিরো পয়েন্ট ও পল্টন মোড় হয়ে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় অভিমুখে রওনা হলে হাইকোর্ট মোড়ে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে বাধা দেয় পুলিশ। এসময় ইসলামী আন্দোলন নেতাকর্মীরা পল্টন থেকে হাইকোর্ট মোড় পর্যন্ত পুরো রাস্তা প্রায় দেড় ঘণ্টা অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকেন। এসময় পাশের সড়কগুলোতে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। পুলিশ অবরোধ তুলে নেয়ার জন্য আলোচনা করেও ব্যর্থ হয়। সেখান থেকে দলের মহাসচিব ইউনুছ আহমদের নেতৃত্বে ৭ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার কাছে ৬ দফা দাবিসংবলিত স্মারকলিপি হস্তান্তর করেন। পরে বেলা দেড়টার দিকে চরমোনাই পীরের অনুরোধে রাস্তা থেকে অবরোধ তুলে নেন নেতাকর্মীরা।
চরমোনাই পীর বলেন, আমরা মিছিল, সমাবেশ ও সাংবাদিকদের মাধ্যমে বারবার সরকারকে তাদের ইসলাম ও দেশবিরোধী কর্মকাণ্ডের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে আসছি। কিন্তু সরকারের তেমন পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। হয়তো তাদের কান পর্যন্ত আমাদের কথা পৌঁছায়নি। তাই লিখিত স্মারকলিপির মাধ্যমে আমাদের কথা তাদের কানে পৌঁছাতে চাই। তিনি বলেন, ভারত, আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন ধর্মনিরপেক্ষ দেশে যদি ইসলামী রাজনীতি থাকতে পারে, ৯০ শতাংশ মুসলমানের এদেশে থাকবে না—এটা বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না?
তিনি প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে আরও বলেন, আপনার বাবা যে কুদরত-ই-খুদা শিক্ষানীতি আলমারিতে তুলে রেখেছিলেন, আপনি তা খুলেছেন। এটার পক্ষে অবস্থান নেবেন না। তিনি বলেন, সরকার হাইকোর্টের মাধ্যমে ফরজ বিধান পর্দার ওপর হাত দিয়েছে। আলেম-ওলামাদের ওপর নির্যাতন চালানো হচ্ছে। এসব কর্মকাণ্ডে সারাদেশের মানুষ ক্ষুব্ধ

Saturday 3 April 2010

শীর্ষ ওলামা মাশায়েখদের উদ্বেগ : সরকার দেশ থেকে ইসলাম নির্মূল করার চেষ্টা করছে : রাবি শিক্ষক, গভর্নরের গ্রেফতার ও শাস্তি দাবি

রকিবুল হক
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বোরকা নিষিদ্ধ ও পবিত্র কোরআন তিলাওয়াতের পরিবর্তে রবীন্দ্রসঙ্গীত দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুষ্ঠান উদ্বোধন করার সিদ্ধান্তে তীব্র ক্ষোভ ও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে দেশের শীর্ষস্থানীয় ওলামা-মাশায়েখরা বলেছেন, সরকার অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে দেশ থেকে পবিত্র ইসলাম, ইসলামী মূল্যবোধ, ধর্মীয় চেতনা নির্মূল করার কাজ শুরু করে দিয়েছে। দেশের নব্বইভাগ মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে জাতিকে ধর্মহীন করার চেষ্টা সরকারের জন্য বুমেরাং হতে পারে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি ড. একেএম শফিউল ইসলাম ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমানের গ্রেফতার ও শাস্তি দাবি করে তারা বলেন, অতীতে যখনই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে তখনই ইসলাম ও ইসলামী মূল্যবোধ ধ্বংসের উদ্যোগ নিয়েছে। অবিলম্বে ড. শফিউল ইসলাম ও ড. আতিউর রহমানকে বহিষ্কার ও গ্রেফতার করা না হলে দেশের সর্বস্তরের জনগণকে নিয়ে সরকারবিরোধী তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। তারা বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর দেশের শত বছরের ঐতিহ্য মাদ্রাসা শিক্ষাকে জঙ্গিবাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে একের পর মিথ্যা অপবাদ দিয়ে মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার কাজ শুরু করে। ইসলামের বিরুদ্ধে নানামুখী ষড়যন্ত্রের পর এবার সরকার বোরকা নিষিদ্ধ করার দুঃসাহস দেখিয়েছে। ইসলামী আদর্শে বিশ্বাসী সব শ্রেণীর, সব পেশার মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তারা বলেন, তীব্র আন্দোলনের মাধ্যমে এ সরকারের ইসলাম ও দেশবিরোধী চক্রান্ত রুখে দেয়া হবে।
প্রসঙ্গত, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রীদের বোরকা পরার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে কর্তৃপক্ষ। গত ৩১ মার্চ অর্থমন্ত্রীর উপস্থিতিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি অনুষ্ঠান কোরআন তিলাওয়াতের পরিবর্তে রবীন্দ্রসঙ্গীত দিয়ে শুরু করা হয়।
ইসলামী ঐক্যজোট চেয়ারম্যান মুফতি ফজলুল হক আমিনী বলেন, বর্তমান ইসলামবিরোধী সরকারের মূল পরিকল্পনা হচ্ছে দেশ থেকে চিরতরে ইসলাম ও ইসলামী আদর্শ উত্খাত করা। তারা এই অ্যাসাইনমেন্ট নিয়েই ক্ষমতায় এসেছে। একইভাবে তুরস্ক ও স্পেনে বোরকা নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। সরকার মুখে ইসলামের কথা বললেও তাদের মূল কাজই হচ্ছে তাদের প্রভুদের কথামতো ইসলামকে ধ্বংস করা। রবীন্দ্রসঙ্গীত এখন অনুষ্ঠানের উদ্বোধনীতে ব্যবহার করছে। কিছুদিন পরে সরকার মিলাদ মাহফিলেও রবীন্দ্রসঙ্গীত বাধ্যতামূলক করবে। প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা বলেছেন দেশে একমাত্র আওয়ামী লীগই হচ্ছে ইসলামের পক্ষের শক্তি। একথা দ্বারাই প্রমাণ করে তারা ইসলামকে ভয় পায় এবং ইসলামের নামেই তারা ক্ষমতায় থাকতে চায়। তাদের ইসলাম প্রীতির নমুনাই হচ্ছে মাদ্রাসা শিক্ষা ধ্বংস করা, বোরকা নিষিদ্ধ করা এবং কোরআন তিলাওয়াতের পরিবর্তে রবীন্দ্রসঙ্গীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু করা। সময় এসেছে ঐক্যবদ্ধভাবে আওয়ামী লীগের হঠকারিতার জবাব দেয়ার। আওয়ামী লীগের এসব কর্মসূচি চলতে থাকলে দেশে ইসলামী মূল্যবোধ বিপর্যয়ে পড়বে।
খেলাফত মজলিস আমির মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাক বলেন, সরকার বিদেশিদের সঙ্গে চুক্তি করে তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়নে ক্ষমতায় এসেছে। তাই কোরআন তিলাওয়াতের পরিবর্তে রবীন্দ্রসঙ্গীত দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের বোরকা পরা নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটি সরকারের পুরনো অভ্যাস। একজন মুসলামন হিসেবে আমি এর তীব্র নিন্দা জানাই। এর প্রতিবাদ করা প্রতিটি মুসলমানের নৈতিক, সাংবিধানিক ও ইমানি দায়িত্ব। এসবের বিরুদ্ধে ইসলামী দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করে প্রতিবাদ জানাতে হবে।
খেলাফত আন্দোলনের আমির মাওলানা আহমদুল্লাহ আশরাফ বলেন, আল্লাহর কালামের পরিবর্তে রবীন্দ্রসঙ্গীত পরিবেশন বিধর্মীদের প্রতি ভালোবাসা এবং অনৈসলামিক কাজকে স্বীকৃতি দেয়ার জন্য করা হয়েছে। বাংলাদেশের নব্বইভাগ মানুষ মুসলমান। কাজেই কোনো বিবেকবান, দেশপ্রেমিক শিক্ষিত মানুষ এ কাজ করতে পারে না। ভারতের প্রতি আনুগত্যশীল হয়ে অতিভক্তির প্রমাণ দেয়ার জন্য মুসলমান হয়েও সরকার এটা করেছে। মুসলমান ও ইসলামী আদর্শের বিরুদ্ধে সরকার এখন নানামুখী ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তে লিপ্ত। দেশের মানুষের পক্ষে এটা বুঝতে আর বাকি নেই। বাংলাদেশ ও ইসলামের বিরুদ্ধে যারা এ কাজ করছে, মুসলমান হয়ে থাকলে প্রধানমন্ত্রী অবশ্যই এর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। তা না হলে জনগণ এর সমুচিত জবাব দেবে। বাংলাদেশের কোনো প্রতিষ্ঠান বোরকা পরার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার দুঃসাহস দেখাতে পারে, এটা ভাবতেও অবাক লাগে।
আহকামে শরীয়াহ হেফাজত কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ড. মাওলানা আবু ইউসুফ মাদানী বলেন, তিন লাখ মসজিদের বাংলাদেশে বোরকা নিষিদ্ধ হবে আর পবিত্র কোরআন তিলাওয়াতের পরিবর্তে রবীন্দ্রসঙ্গীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু করা হবে এটা কোনো মুসলমান একবিন্দু রক্ত থাকতে মেনে নিতে পারে না। এর প্রতিবাদ করা সবার ইমানি দায়িত্ব। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি ড. একেএম শফিউল ইসলাম ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমানের গ্রেফতার ও শাস্তি দাবি করে তিনি বলেন, অতীতে যখনই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে, তখনই ইসলাম ও ইসলামী মূল্যবোধ ধ্বংসের উদ্যোগ নিয়েছে। এবারও তারা একই পথে এগুচ্ছে। সরকার তাদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হলে এর জন্য তাদের চরম মূল্য দিতে হবে।
নেজামে ইসলাম পার্টি ও ইসলামী ঐক্যজোট মহাসচিব মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী বলেছেন, বর্তমান ধর্মনিরপেক্ষ সরকার এখন এসবই করতে চায়। বাংলাদেশের মতো দেশে বোরকা নিষিদ্ধ করা ও রবীন্দ্রসঙ্গীত দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু সরকারের অনৈসলামীকরণ প্রক্রিয়ার অংশ। তিনি বলেন, রবীন্দ্রসঙ্গীত দিয়ে এদেশে কোনোদিন অনুষ্ঠান শুরু হয়নি। এটা ধর্মনিরপেক্ষ দেশ নয় যে, কোরআন তিলাওয়াতে সমস্যা হবে। তিনি বলেন, এ সরকার ইসলামবিরোধী। তারা আল্লাহ বলতে চায় না, সৃষ্টিকর্তা বলতে চায়। বিসমিল্লাহর পরিবর্তে পরম করুণাময় আল্লাহ, জিন্দাবাদের পরিবর্তে জয়বাংলা বলতে চায়। তারা যখনই ক্ষমতায় এসেছে তখনই তাদের কার্যক্রমে অনৈসলামিক ধ্যান-ধারণা ফুটে ওঠে। এবার ক্ষমতায় আসার পর ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষানীতি চালুর ষড়যন্ত্র, ফতোয়া নিষিদ্ধ, সম্পত্তিতে নারী-পুরুষের সমানাধিকার দেয়ার উদ্যোগ নতুন কিছু নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তিনি বলেন, সরকার সংবিধান থেকে বিসমিল্লাহ এবং সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস শব্দগুলো উঠিয়ে দিয়ে দেশকে সেকুলার রাষ্ট্র বানানোর কাজ শুরু করে দিয়েছে। সরকারের এ ইসলামবিরোধী কাজের প্রতিবাদ করতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমির মাওলানা আবদুর রব ইউসুফী বলেন, বর্তমান সরকার দেশকে ধর্মনিরপেক্ষতার দিকে নেয়ার চেষ্টা করছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বোরকা পরা নিষিদ্ধ করার ঘটনা সেই ধারাবাহিকতার অংশমাত্র। এ বিষয়ে মুসলমানদের সচেতন হতে হবে।
ইসলামী আন্দোলন ঢাকা মহানগর সভাপতি মাওলানা এটিএম হেমায়েত উদ্দিন বলেন, কোরআন তিলাওয়াতের পরিবর্তে রবীন্দ্রসঙ্গীত পরিবেশন সরাসরি ইসলামের ওপর চরম আঘাতের শামিল। সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের দেশে এ ধরনের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে মুসলমানদের অন্তরে চরম আঘাত হানা হয়েছে। এর তীব্র নিন্দা জানিয়ে তিনি আরও বলেন, হিজাব ইসলামের মৌলিক বিধান। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীদের বোরকা পরা নিষিদ্ধ করে শরিয়তের এই বিধানের ওপর আঘাত হানা হয়েছে। এসব বিষয় দেশের মানুষ কোনোদিন মেনে নেবে না। এভাবে ইসলামের ওপর একের পর এক আঘাত হানার ঘটনায় সরকারকে সতর্ক করে দিয়ে তিনি বলেন, এদেশ পীর-আউলিয়ার দেশ। এখানে যেভাবে মসজিদ, মাদ্রাসা ও ইসলামের ওপর আঘাত হানা হচ্ছে তার পরিণতি হবে ভয়াবহ। ১৬ এপ্রিল মুক্তাঙ্গনে ইসলামী আন্দোলনের পক্ষ থেকে লক্ষাধিক মানুষের সমাবেশ ঘটিয়ে এর দাঁতভাঙা জবাব দেয়া হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
তাহফিজে হারামাইন পরিষদের সভাপতি মাওলানা সাদেক আহমদ সিদ্দিকী বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. শফিউল ইসলামকে অবিলম্বে বহিষ্কার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর একের পর এক ইসলামবিরোধী সিদ্ধান্ত নিতে থাকে। তারা দিনবদলের নামে ইসলাম বদলের কাজ করে যাচ্ছে। রাষ্ট্রপতি যখন সব ধরনের ফতোয়া নিষিদ্ধ করা হবে বলে ঘোষণা দেন, প্রধানমন্ত্রী যখন উত্তরাধিকার আইন বদলাতে চান, পাটমন্ত্রী যখন ধর্মকে মদের নেশার সঙ্গে তুলনা করেন এবং সরকারি দলের সাধারণ সম্পাদককে যখন আলেম-ওলামাদের কটাক্ষ করে বক্তব্য দিতে দেখা যায়, তখন বুঝতে কষ্ট হয় না, বর্তমান সরকার দিনবদলের নামে ইসলাম বদলের চেষ্টা করছে। সরকারের এ আশা পূরণ হবে না।
আওয়ামী লীগ সমর্থক ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান আলহাজ মিছবাহুর রহমান চৌধুরী বলেছেন, কোরআন তিলাওয়াতের পরিবর্তে রবীন্দ্রসঙ্গীত দিয়ে অনুষ্ঠান শুরুর ধৃষ্টতা যে দেখায় তাকে কোনো অবস্থায় ক্ষমা করা যায় না। বাংলাদেশের শতকরা নব্বইভাগ মানুষের ধর্মবিশ্বাস হচ্ছে ইসলাম। ধর্ম বিশ্বাসের ওপর আঘাত দেয়া সংবিধানেরও লঙ্ঘন। যারাই এটা করেছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। তিনি বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীদের বোরকা পরা নিষিদ্ধ করে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের মনে চরমভাবে আঘাত দেয়া হয়েছে। এটা করার অধিকার কারও নেই।
বাংলাদেশ আওয়ামী ওলামা লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি মাওলানা আখতার হোসাইন বোখারী বলেন, আমরা আওয়ামী লীগ করি বলে ইসলামের বিপক্ষে কোনো দিনই অবস্থান নেব না। বাংলাদেশে পবিত্র কোরআন তিলাওয়াতের পরিবর্তে রবীন্দ্রসঙ্গীত দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু করা হবে, অন্ততপক্ষে এটা সহ্য করার মতো নয়। বোরকা হচ্ছে নারীদের জন্য ইসলামের একটি বিধান। এটা নিষিদ্ধ করার অধিকার কারও নেই। মুসলমানদের সাংবিধানিক অধিকার হচ্ছে বোরকা পরা। এ অধিকার কেউ আদেশ জারি করে হরণ করতে পারে না। এ ধরনের ইসলামবিরোধী ও অসাংবিধানিক কার্যকলাপের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো সবার দায়িত্ব।

http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/04/04/25831

প্রচলিত আদালতেই সম্ভব : দেলোয়ার

সমকাল | শনিবার | ৩ এপ্রিল ২০১০ | ২০ চৈত্র ১৪১৬ | ১৭ রবিউস সানি ১৪৩১

প্রসঙ্গ : যুদ্ধাপরাধের বিচার
সমকাল প্রতিবেদক
একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য গঠিত ট্রাইব্যুনাল নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে বিএনপি। একই সঙ্গে যুদ্ধাপরাধের পরিবর্তে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ নির্বাচনী ওয়াদা ভঙ্গ করেছে বলে অভিযোগ করেছে দলটি। বলেছে_ হত্যা, লুণ্ঠন, অগি্নসংযোগ, ধর্ষণ ও অপহরণের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার প্রচলিত আদালতেই সম্ভব। এ জন্য কোনো বিশেষ আদালত, ট্রাইব্যুনাল কিংবা তদন্ত কমিটি গঠনের প্রয়োজন নেই। গতকাল নয়া পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে বিএনপি মহাসচিব খোন্দকার
দেলোয়ার হোসেন আনুষ্ঠানিকভাবে দলের এ অবস্থান জানান। বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে দলের অবস্থান স্পষ্ট করার সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকের সিদ্ধান্তের কথা জানাতেই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থায় বিএনপি কী করবে_ এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'আমাকে হত্যা করতে এলে আমি তো চেয়ে চেয়ে দেখব না। কেউই বসে থাকে না। বিএনপিও বসে থাকবে না।'
দেলোয়ার বলেন, সরকার যুদ্ধাপরাধের বিচার থেকে সরে এসে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের কথা বলছে। এসব অপরাধ সত্যিই কেউ করে থাকলে তাদের বিচারে বিএনপির আপত্তি নেই। কিন্তু এ অপরাধের বিচার ফৌজদারি কার্যবিধিতেই করা সম্ভব। এ জন্য কোনো বিশেষ আদালত বা তদন্ত কমিটি তো নয়, আইনের নতুন কোনো সংশোধনী আনাও আইনের চোখে গ্রহণযোগ্য হবে না। এ ব্যাপারে বিডিআর ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্ট সম্প্রতি সেই মতামত দিয়েছেন।
মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে সরকার তিন সদস্যের বিচারক প্যানেল, সাত সদস্যের তদন্তকারী প্যানেল এবং ১২ সদস্যের আইনজীবী প্যানেলের নাম ঘোষণা করেছে।
'তদন্ত সংস্থা ও আইনজীবী প্যানেলে সদস্যরা একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের সদস্য' দাবি করে বলেন, ওই সদস্যরা ওয়ান-ইলেভেনের সরকারের সময়ও ছিলেন। তারা নিজ দলের লোকদের অপরাধী না বলে প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের নেতাদের অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করবেন। এদের কাছে সুষ্ঠু বিচার আশা করা যায় না।
তিনি আরও বলেন, প্রকৃত যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে কখনোই কেউ বিরোধিতা করেনি। সব সময় বলা হয়েছে, বিচার যেন স্বচ্ছ হয়। বিচার যেন প্রকৃত অপরাধীদের হয় এবং বিষয়টি রাজনীতিকরণ যেন না হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, 'টোকেন বিচার করা হবে'। তার মানে সব অপরাধীর বিচার করবে না সরকার। শুধু যাদের প্রতিপক্ষ মনে করবে তাদের বিচার হবে। এটি ন্যায়বিচার পরিপন্থী এবং অন্যায়।
সরকারের কাছে প্রশ্ন রেখে বিএনপি মহাসচিব বলেন, তারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে চায় না-কি দ্রব্যমূল্য, বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি সমস্যা এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিতে বিপর্যস্ত ও বিক্ষুব্ধ জনগণের দৃষ্টি অন্যদিকে সরিয়ে দিতে চায়?
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সরকারিভাবে যাদের যুদ্ধাপরাধী বলে তালিকাভুক্ত করা হয়েছিল তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার তাদের মুক্তি দিয়েছিল। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আওয়ামী লীগ সরকার করেনি_ এটি ঐতিহাসিকভাবে সত্য।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সারোয়ারী রহমান, যুগ্ম-মহাসচিব রিজভী আহমেদ, সহ-দফতর সম্পাদক আসাদুল করিম শাহীন, মহিলা দলের আইনবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট ফেরদাউস আক্তার ওয়াহিদ প্রমুখ।
এর আগে সকালে নবগঠিত মহিলা দলের নেত্রীরা বিএনপি মহাসচিবের নেতৃত্বে জিয়াউর রহমানের মাজার জিয়ারত করেন।

রাবি সমাজবিজ্ঞান বিভাগে বোরখা নিষিদ্ধ!

Fri 2 Apr 2010 10:25 PM BdST

rtnn রাবি, ০২ এপ্রিল (আরটিএনএন ডটনেট)-- রাজশা‌হী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রীদের বোরখা পরে ক্লাস না করার কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন বিভাগের চেয়ারম্যান ড. এ কে এম শফিউল ইসলাম। এরআগে শিক্ষক নিয়োগে দাড়ি না রাখা ও পাঞ্জাবি-পায়জামা না পরার শর্তারোপ করেছিলেন তিনি।

বিভাগের শিক্ষক নিয়োগে শর্তারোপ এবং বোরখা নিষিদ্ধ করায় শিক্ষার্থী ও অবিভাবকদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

জানা গেছে, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে দলীয়ভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে হিড়িক পড়ে যায়। এসময় সমাজবিজ্ঞান বিভাগে নতুন চারজন শিক্ষক নিয়োগ পায়।

শিক্ষক আমিনুল ইসলামকে বিভাগের চেয়ারম্যান দাড়ি না রাখা ও পাঞ্জাবি-পায়জামা না পরার শর্তে নিয়োগ দেয়। বিষয়টি নিয়ে সারা ক্যম্পাসে সমালোচনার ঝড় ওঠে।

সম্প্রতি বিভাগের চেয়ারম্যান ও সদ্য নিয়োগ পাওয়া শিক্ষক নাজমুল হকের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ছাত্রীদের বোরখা পরার জন্য ক্লাসে নানা ভাবে হেয় প্রতিপন্ন করা হচ্ছে বলে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছে।

বোরখা পরার অপরাধে ক্লাস থেকে বের করে দেয়া ও দাড় করিয়ে রাখাসহ পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দেয়ার অব্যাহত হুমকি দেয়া হচ্ছে। 'ক্লাসে মধ্যযুগীয় পোশাক বোরখা পরা যাবে না এবং এটা সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের কোন পোশাক হতে পারে না' বলে ছাত্রীদের সতর্ক করে দেয়া হয়।

কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের ফলে যেসব ছাত্রী চার/পাঁচ বছর ধরে শ্রেণী কক্ষে বোরখা পরে আসতো তারাও বোরখা খুলে আসতে বাধ্য হচ্ছে। অনেকে ক্লাস করা বন্ধ করে দিয়েছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সমাজবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. এ কে এম শফিউল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘এটি বিভাগীয় কোন সিদ্ধান্ত নয়। কিন্তু আমি আমার ক্লাসে কোন ছাত্রীকে বোরখা পরে ক্লাস করতে দেব না।’

তিনি আরো বলেন, ‘কোন সাংবাদিক এ সম্পর্কে প্রতিবেদন প্রকাশ করলে তাকে দেখে নেয়া হবে।’

আরটিএনএন ডটনেট/প্রতিনিধি/এমএম_২০২৫ ঘ.

http://rtnn.net/details.php?id=23233&p=1&s=5

বিএনপির অভিযোগ যুদ্ধাপরাধের বিচারকে বাধাগ্রস্তের শামিল

Sat 3 Apr 2010 8:05 PM BdST

rtnnঢাকা, ০৩ মার্চ (আরটিএনএন ডটনেট)-- যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়া সম্পর্কে প্রধান বিরোধী দল বিএনপির অভিযোগ বিচারকে বাধাগ্রস্ত করার শামিল বলে মন্তব্য করেছেন আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ। তিনি বলেছেন, বিরোধী দলের কেউ মানবতাবিরোধী অপরাধ করলে সেক্ষেত্রে তাকে বিচারের বাইরে রাখা সম্ভব নয়।

শনিবার নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে আইনমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

'সরকার বিরোধী দলকে ঘায়েল করতে এ বিচারকে ব্যবহার করছে'- বিএনপি মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের এমন অভিযোগ নাকচ করে দেন আইনমন্ত্রী।

তিনি বলেন, কাউকে রাজনৈতিকভাবে হয়রানির উদ্দেশ্যে নয়, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় একাত্তরে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করা হচ্ছে।

বিচার চলাকালে আইনজীবী প্যানেলে আরো আইনজীবী যুক্ত হবে বলেও জানান ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ।

আওয়ামী লীগেও যুদ্ধাপরাধী রয়েছে বিএনপি নেতাদের এমন অভিযোগ তুলে ধরে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে মন্ত্রী বলেন, ‘কে আপরাধী তা খুঁজে বের করার দায়িত্ব তদন্ত সংস্থার। এ বিষয়ে অন্য কারো মন্তব্য করা সমীচীন হবে না।’

শফিক বলেন, যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্য যাদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে তারা খুবই দক্ষ এবং সৎ। এজন্য এ বিচার নিয়ে সন্দেহ প্রকাশের কোনো সুযোগ নেই।

প্রসঙ্গত, গত ৩০ মার্চ বিএনপি মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘রাজনৈতিক হয়রানির উদ্দেশ্যে উনারা (সরকার) ইচ্ছামত যুদ্ধাপারাধীর তালিকা করেছেন। এতে সত্যিকারের যুদ্ধাপারাধীদের চিহ্নিত করে বিচার না করার প্রশ্ন জনমনে তীব্র হয়ে দেখা দিয়েছে।’

গত ৩১ মার্চ বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বিচার প্রক্রিয়া সম্পর্কে বলেন, ‘শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ হাসিনা যুদ্ধাপরাধীদের আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতা। যুদ্ধাপরাধের বিচারের আগে তাদের আশ্রয়দাতাদের বিচার করা উচিত।’

আরটিএনএন ডটনেট/এমইউএ/এমএম_১৭৫৫ ঘ.

http://rtnn.net/details.php?id=23261&p=1&s=1

যুদ্ধাপরাধের বিচার সম্পর্কে সরকার জাপার সঙ্গে আলোচনা করেনি: এরশাদ



Sat 3 Apr 2010 7:48 PM BdST

rtnnঢাকা, ০৩ এপ্রিল (আরটিএনএন ডটনেট)-- সরকারের শরীক দল হওয়ার পরও যুদ্ধাপরাধের বিচার সম্পর্কে জাতীয় পার্টির সঙ্গে কোনোরূপ আলোচনা করা হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন পার্টির চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচএম এরশাদ। তবে সরকার আলোচনা না করলেও এ বিচার বিষয়ে জাতীয় পার্টির সম্মতি রয়েছে বলে জানান তিনি।

শনিবার বিকালে বনানীস্থ জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে দলের প্রেসিডিয়াম বৈঠক শুরুর আগে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি।

দেশের বর্তমান বিদ্যুত ও পানি সঙ্কট বর্তমান সরকারের সৃষ্ট নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ সমস্যা সমাধানের জন্য কিছুটা সময় লাগবে।

সঙ্কটের সমাধান না হওয়া পর্যন্ত দেশবাসীকে একটু ধৈর্য ধারণ করতে অনুরোধ জানান এরশাদ।

শারীরিক অসুস্থতার কারণে বেগম রওশন এরশাদকে নিয়ে আগামী রবিবার সিঙ্গাপুর যাবেন বলে সাংবাদিকদের জানান তিনি।

http://rtnn.net/details.php?id=23259&p=1&s=1

Thursday 1 April 2010

কোটালীপাড়ায় ১৯৪ যুদ্ধাপরাধীর তালিকা প্রকাশ : অনেকেই আ’লীগ কমিটিতে রয়েছেন

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি
গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় ১৯৪ জন যুদ্ধাপরাধীর তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। গতকাল কোটালীপাড়ার মুক্তিযোদ্ধাদের সমাবেশ থেকে এ তালিকা প্রকাশ করা হয়। এ তালিকায় কোটালীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ পদে বহাল নেতাকর্মীদের নাম রয়েছে।
মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশে বক্তারা বলেন, কোটালীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটির শীর্ষ পদে ’৭১-এর সশস্ত্র রাজাকার রয়েছে। তাদের নাম রাজাকারের তালিকায়ও রয়েছে। এসব রাজাকারকে দল থেকে বহিষ্কার ও বিচার করতে হবে।
যুদ্ধাপরাধ মামলায় ১ জন রিমান্ডে
গোপালগঞ্জে যুদ্ধাপরাধ মামলায় জয়নাল মল্লিক (৬০) নামের এক ব্যক্তিকে ৩ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। গোপালগঞ্জ থানা পুলিশ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দীলিপ কুমার ভৌমিকের আদালতে এ সংক্রান্ত মামলার আসামি জয়নালকে ৫ দিনের রিমান্ডে নেয়ার আবেদন করেছিলেন।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণে জানা যায়, ১৯৭১ সালের ১০ জুলাই সদর উপজেলার নখড়ীরচর গ্রামের চান মাওলানা ওরফে কোমর উদ্দিন, জয়নাল মল্লিক ও পার্শ্ববর্তী পারকুশলী গ্রামের রেজাউল মাওলানার নেতৃত্বে ২০/২৫ জন লোক নখড়ীরচর গ্রামের আবদুর রাজ্জাকের বাড়িতে এসে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে। একপর্যায়ে তারা আবদুর রাজ্জাককে নৌকায় করে ধরে নিয়ে গোপালগঞ্জের বধ্যভূমিতে গুলি করে হত্যা করে।
এ ঘটনায় নিহতের ভাতিজা খলিলুর রহমান শেখ গত বছর ১৭ জুলাই গোপালগঞ্জ সদর থানায় ওই ৩ জনের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের মামলা করেন (মামলা নং-১৩, তাং ১৭.০৭.০৯)।

http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/04/02/25484

'প্রকৃত' যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চায় বিএনপি

Shamokal শুত্রুবার | ২ এপ্রিল ২০১০ | ১৯ চৈত্র ১৪১৬ | ১৬ রবিউস সানি ১৪৩১

বিশেষ প্রতিনিধি
সরকারি দলের নির্বাচনী অঙ্গীকার অনুযায়ী \'প্রকৃত\' যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চায় প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। সরকার বর্তমানে \'মানবতাবিরোধী\' অপরাধের কথা বলে যুদ্ধাপরাধের বিচার করলে তা \'রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ\' করতে চায় বলে সন্দেহ প্রকাশ করছে দলটি।
এমনকি \'আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল অ্যাক্ট\' অনুযায়ী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হওয়ার ব্যাপারেও প্রশ্ন তুলছে তারা।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ অভিমত ব্যক্ত করা হয়। বৈঠকে একই সঙ্গে চলমান বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাসের ভয়াবহ সংকটের মধ্যে সরকার জনগণের দৃষ্টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়া শুরু করেছে বলে অভিমত ব্যক্ত করে দলটি। সূত্র জানায়, বৈঠকে যুদ্ধাপরাধের বিচারের পাশাপাশি চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, জনদুর্ভোগের বিষয়, দলের সাংগঠনিক অবস্থা, বিভাগীয় মহাসমাবেশের ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা হয়। বৈঠকের সিদ্ধান্ত আজ দুপুর ১২টায় দলের নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তা তুলে ধরবেন।
রাত সাড়ে ৮টায় গুলশান কার্যালয়ে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সভাপতিত্বে বৈঠক শুরু হয়ে পৌনে ১১টায় শেষ হয়। বৈঠকে স্থায়ী কমিটির সদস্যদের মধ্যে মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, এম শামসুল ইসলাম, লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান, বেগম সারোয়ারী রহমান, এমকে আনোয়ার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও নজরুল ইসলাম খান উপস্থিত ছিলেন।
সূত্র জানায়, বৈঠকে বলা হয়, বিএনপি \'প্রকৃত\' যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চায়। \'প্রতিহিংসামূলক\' বিচার নয়। সরকার যে \'মানবতাবিরোধী\' বিচারের কথা বলছে_ তা আগের দেওয়া অঙ্গীকারের সঙ্গে কোনো মিল নেই। মানবতাবিরোধী বিচার \'ওয়ার্ল্ড ক্রাইম ট্রাইব্যুনাল অ্যাক্ট\'-এর অধীন করা হয়। কিন্তু সরকার তা করছে না বলে অভিমত ব্যক্ত করা হয়। বৈঠকে আরও বলা হয়, সরকার নির্বাচনের আগে জনগণকে দেওয়া কোনো ওয়াদাই পূরণ করতে পারছে না। তারা অবিলম্বে পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাসসহ সব নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়নের জোর দাবি জানান।
সূত্র জানায়, বৈঠকে বিএনপির বিভাগীয় মহাসমাবেশ দ্রুত সম্পন্ন করে ঢাকায় মহাসমাবেশ থেকে দেশ ও জনস্বার্থ রক্ষায় সরকারবিরোধী আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণার ব্যাপারে আলোচনা হয়। বৈঠকে আগামী ১৮ এপ্রিল খুলনা বিভাগ, ২৮ বা ২৯ এপ্রিল বরিশাল, ৪ মে রাজশাহী বিভাগ এবং পরে সিলেট বিভাগে মহাসমাবেশ করার সিদ্ধান্ত হয়। একই সঙ্গে দ্রুত বিরোধপূর্ণ ঢাকা মহানগরসহ দলের অবশিষ্ট জেলাগুলোতে কমিটি গঠনের ব্যাপারেও আলোচনা হয়।
দেলোয়ারের ব্রিফিং
এর আগে দুপুরে প্রকৃত যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে বিএনপির আপত্তি নেই বলে জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন। একই সঙ্গে তিনি বলেন, আমরা প্রকৃত যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিপক্ষে নই। তবে এ বিচার নিয়ে উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা চলছে। যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করতে অসৎ উদ্দেশ্য চরিতার্থে সরকারের মন্ত্রীরা তাদের বিরুদ্ধে নানা আবোল-তাবোল অবান্তর মন্তব্য করে চলছেন।
আরমানিটোলার নিজ বাসায় সাংবাদিকদের দেওয়া এক ব্রিফিংয়ে প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। বিএনপি মহাসচিব বলেন, \'আমরা বারবার বলে আসছি, প্রকৃত যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। এটা আমাদের দলের অবস্থান। কিন্তু যেখানে সরকার রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে বিচার প্রক্রিয়া চালাচ্ছে, তাতে কীভাবে নিরপেক্ষ তদন্ত হবে?\' তিনি বলেন, \'সত্যিকার অপরাধের সুষ্ঠু তদন্ত করে বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে। তা না হলে ন্যায়বিচার নিয়ে জনমনে সন্দেহ দেখা দেবে।\'
তিনি আরও বলেন, চট্টগ্রামের মহাসমাবেশে খালেদা জিয়া তার বক্তব্যে অতীতের মতো এবারও পরোক্ষভাবে যুদ্ধাপরাধীদের সমর্থন দিয়েছেন_ আওয়ামী লীগের এ অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তারা অসৎ উদ্দেশ্যে এসব অবান্তর মন্তব্য করছেন।
খোন্দকার দেলোয়ার অভিযোগ করে বলেন, মহাজোট সরকার জনপ্রিয়তা প্রমাণে ভোলা-৩ আসনের উপনির্বাচনে জয়ের সবরকম কারসাজি সম্পন্ন করেছে।

প্রমাণিত না হওয়ার আগে যুদ্ধাপরাধী বলা যাবে না: টিপু

Thu 1 Apr 2010 9:10 PM BdST

ঢাকা, ০১ এপ্রিল (আরটিএনএন ডটনেট)-- একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িতদের বিচারে গঠিত বিশেষ ট্রাইব্যুনালের প্রধান আইনজীবী গোলাম আরিফ টিপু বলেছেন, অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ার আগে কাউকে যুদ্ধাপরাধী বলা যাবে না।

বৃহস্পতিবার প্রথমবারের মতো ট্রাইব্যুনাল কার্যালয়ে এসে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

এসময় চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীরা যাতে দেশ থেকে পালিয়ে যেতে না পারে সে বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান ট্রাইব্যুনালের প্রধান আইনজীবী।

অভিযোগ থাকলেই হবে না মন্তব্য করে টিপু বলেন, প্রমাণের আগে কাউকে দোষী বলা আইন বিরুদ্ধ। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত কাউকে যুদ্ধাপরাধী বলা যাবে না।

তদন্তরে জন্য ইতিমধ্যেই তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তদন্তকালীন সময়ে অভিযুক্তদের দেশ ত্যাগ ঠেকাতে সরকারকেই কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে।

ট্রাইব্যুনালের প্রধান আইনজীবী বলেন, ১৯৭১ সালে যাদেরকে হত্যা করা হয়েছে এবং যারা শ্লীলতাহানির শিকার হয়েছেন তাদের আত্মীয়-স্বজনদের দেয়া তথ্য, সংবাদপত্র আর বেতারের প্রতিবেদন, তথ্যচিত্র এবং ডকুমেন্টারি তদন্তকাজে ব্যবহার করা হবে।

তিনি বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় যারা মানবতাবিরোধী বিভিন্ন অপরাধ করেছে তাদের বিচার করতে না পারলে দেশে অপরাধ ও দুর্নীতির মাত্রা বেড়ে যাবে।

যুদ্ধাপরাধের বিচারে শতভাগ স্বচ্ছতা অবলম্বনের নিশ্চয়তা দিয়ে তিনি বলেন, কেবল নির্দিষ্টভাবে যাদের সম্পর্কে অভিযোগ পাওয়া যাবে তাদেরকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হবে।

http://rtnn.net/details.php?id=23208&p=1&s=3