Wednesday 23 November 2011

শেয়ারবাজারে দরপতন অব্যাহত : তিনদিনে ডিএসই’র সূচক পড়েছে ৫৬০ পয়েন্ট : বাংলাদেশ ব্যাংক ঘেরাও


অর্থনৈতিক রিপোর্টার

দরপতনের কবল থেকে বের হতে পারছে না শেয়ারবাজার। গতকালও দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচকের বড় ধরনের পতন হয়েছে। দিনশেষে ডিএসই সাধারণ সূচকের পতন হয়েছে ২২৮ পয়েন্ট। এ নিয়ে ঈদ-পরবর্তী তিন কার্যদিবসে ডিএসই সূচকের পতন হয়েছে ৫৬০ পয়েন্টের মতো। ঈদ-পরবর্তী প্রথম দুই দিন সূচকের পতন হয়েছিল প্রায় ১৬৬ পয়েন্ট করে। গতকাল পতন ২০০ পয়েন্ট ছাড়িয়ে গেছে। অব্যাহত দরপতনে শেয়ারবাজারের সূচক এখন মাত্র ৪ হাজার ৬৪৯ পয়েন্টে এসে দাঁড়িয়েছে। গত ডিসেম্বরে এ সূচক সর্বোচ্চ ৮ হাজার ৯১৮ পয়েন্টে উন্নীত হয়েছিল। মাত্র ১১ মাসের ব্যবধানে সূচকের এ মহাপতনে বিনিয়োগকারীদের পুঁজি হারানোর হাহাকারে প্রতিদিনই ভারী হয়ে উঠছে মতিঝিল এলাকা।
গতকালও পুঁজি হারানো বিনিয়োগকারীরা প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে। এই কর্মসূচি শুধু ডিএসই ভবন চত্বরে সীমাবদ্ধ ছিল না, বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশ ব্যাংক কার্যালয় ঘেরাও করে বিক্ষোভ ও সমাবেশ করেছে। এ সময় বিনিয়োগকারীরা শেয়ারবাজারের বর্তমান পরিস্থিতির জন্য অর্থমন্ত্রী ও বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নরকে দায়ী করে তাদের পদত্যাগের দাবিতে নানা সেম্লাগান দেয়।
গতকাল লেনদেন শুরুর প্রথম ১৫ মিনিট সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা থাকলেও এরপর শুরু হয় টানা পতন। পতনের ধারা অব্যাহত থাকায় ২২৮ পয়েন্ট কমে শেষ হয় দিনের লেনদেন। দরপতনের প্রতিবাদে বেলা ১২টা থেকে বিনিয়োগকারীরা ডিএসই ভবনের সামনের রাস্তায় বিক্ষোভ সমাবেশ শুরু করেন। বেলা ১টার দিকে মিছিল নিয়ে এসইসি কার্যালয়ে যেতে চাইলে পুলিশ শাপলা চত্বরের সামনে বাধা দেয়। বিনিয়োগকারীরা তখন বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে অবস্থান নেয় এবং রাস্তায় বসে পড়ে। এ সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান ফটক বন্ধ করে দেয়া হয়। বিনিয়োগকারীরা শেয়ারবাজারের চলমান মন্দার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নরকে দায়ী করে তার বিরুদ্ধে নানা সেম্লাগান দেন এবং তার পদত্যাগ দাবি করেন। এসময় হ্যান্ড মাইকে নিঃস্ব হয়ে যাওয়া বিনিয়োগকারীরা তাদের কষ্টের কথা বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন।
বাংলাদেশ ব্যাংক কার্যালয় ঘেরাও প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম শাহদাত উল্লাহ ফিরোজ বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের অসময়োচিত পদক্ষেপ এবং অতিমাত্রার তদারকির কারণে বাজারে পতন শুরু হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন সিদ্ধান্তের কারণে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বড় ধরনের আস্থার সঙ্কট তৈরি হয়েছে। এ সঙ্কটের কারণে নানা উদ্যোগ নেয়ার পরও বাজারের পতন ঠেকানো যাচ্ছে না। আমরা গভর্নরের অদূরদর্শী সিদ্ধান্তের শিকার হয়ে আজ পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছি। আগামীতে আরও কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা দেয়া হবে বলে জানান তিনি।
বিক্ষোভে অংশ নেয়া আবদুল রাজ্জাক নামের একজন বিনিয়োগকারী জানান, তিনি হাবিবুর রহমান সিকিউরিটিজে লেনদেন করেন। ২০১০ সালের নভেম্বরে তার বিনিয়োগ করা মূলধন ছিল ১ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। এক বছরের ব্যবধানে চলতি বছরের নভেম্বরে এসে তার মূলধন ৭০ লাখের নিচে নেমে এসেছে। এতে তিনি ৪০ শতাংশেরও বেশি বিনিয়োগ হারিয়েছেন। রাজ্জাক জমিজমা বিক্রি এবং অন্যান্য ব্যবসা বন্ধ করে জমানো সব টাকা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করেন এবং এ ব্যবসাকে কেন্দ্র করেই তার মূল আয়। পুঁজি হারিয়ে এখন আহাজারি, বিক্ষোভ আর বার বার আশায় বুক বেঁধে পতনের জালে পা দেয়া ছাড়া তার কিছুই করার নেই।
পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যাওয়া আরেক বিনিয়োগকারী হুমায়ুন কবির জানান, দীর্ঘদিন সৌদি আরবে ছিলেন। দেশে ফিরে জমানো সব টাকা নিয়ে ৮ হাজার সূচকে সিনহা সিকিউরিটিজের মাধ্যমে বাজারে বিনিয়োগ করেন। নিজের মূলধন ছিল ৫০ লাখ এবং ঋণসহ প্রায় ১ কোটি টাকারও বেশি তার বিনিয়োগ দাঁড়ায়। কিন্তু বিপর্যয়ের পর সূচক গতকাল সাড়ে চার হাজার পয়েন্টে এসে দাঁড়ায়। এ অবস্থায় তিনি মূল পুঁজি হারিয়ে এখন ব্রোকারেজ হাউসের কাছে ৩০ লাখ টাকা ঋণে রয়েছেন। শেয়ারাবাজারে বিনিয়োগ করে নিঃস্ব এ আহমেদ নামের একজন বিনিয়োগকারী বরিশাল থেকে গতকাল রাতে আমার দেশ কার্যালয়ে ফোন করে জানান, তিনি বিভিন্নভাবে ধার-দেনা করে শেয়ারবাজারে ৫৭ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন। বিনিয়োগের বিপরীতে তিনি মার্জিন লোনও নিয়েছিলেন। এখন তার পুঁজির পুরোটাই শেষ হয়ে গেছে। এখন ব্রোকারেজ হাউস উল্টো তার কাছে ২ লাখ টাকা পাওনা হয়েছে। তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমরা নিঃশেষ হয়ে গেছি, আমাদের বাঁচান। শেয়ারবাজারে দরপতনে এভাবে প্রতিদিনই বাড়ছে নিঃস্ব মানুষের সংখ্যা। আর তাদের কান্নার ধ্বনি প্রতিদিনই বাড়ছে।
গতকাল ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে মোট ২৪৮টি কোম্পানির ৪ কোটি ৮ লাখ ১৬ হাজার ২৬৮টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড ইউনিটের লেনদেন হয়েছে। মোট লেনদেনের পরিমাণ ২৫২ কোটি ৮৬ লাখ ৫৭ হাজার ৮৬২ টাকা, যা আগের দিনের চেয়ে ৬৮ কোটি ৮৭ লাখ টাকা কম। ডিএসইর সাধারণ মূল্যসূচক আগের দিনের চেয়ে ২২৮ দশমিক ২০ পয়েন্ট কমে ৪ হাজার ৬৪৯ দশমিক ৩৩ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে ডিএসই-২০ মূল্যসূচক আগের দিনের চেয়ে ১৪২ দশমিক ৬৬ পয়েন্ট কমে ৩ হাজার ৫৭৯ দশমিক ৯৫ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। লেনদেনকৃত ২৪৮টি কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ৮টির কমেছে ২৩৯টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১টি কোম্পানির দর।
আর্থিক লেনদেনের ভিত্তিতে প্রধান ১০টি কোম্পানি হলো— গ্রামীণফোন, বেক্সিমকো লিমিটেড, ফু-ওয়াং সিরামিকস্, ন্যাশনাল ব্যাংক, তিতাস গ্যাস, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ইউসিবিএল, এমআই সিমেন্ট, মার্কেন্টাইল ব্যাংক লি. ও স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যাল।

সূচক ৫ হাজার পয়েন্টের নিচে : বিনিয়োগকারীদের পুঁজি হাওয়া


অর্থনৈতিক রিপোর্টার

আনোয়ার হোসেন ২০০৯ সালে মিরপুরে নিজের ফ্ল্যাট বিক্রি করে ৩০ লাখ, নিজস্ব ব্যবসা ও আত্মীয়স্বজন থেকে ঋণ করে আরও ২৯ লাখ টাকাসহ মোট ৫৯ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছেন শেয়ারবাজারে। লাভের একটি অংশ দেয়া হবে—এ শর্তে আরও পাঁচ বন্ধুর পোর্টফোলিও ম্যানেজ করতেন তিনি। বাড়তি লাভের আশায় ব্রোকারেজ হাউস থেকে মার্জিন লোনও নিয়েছিলেন। সব মিলিয়ে তার বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ৪ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু শেয়ারবাজারের অব্যাহত ধসে আনোয়ার শুধু তার পুরো পুঁজিই হারাননি, উল্টো ব্রোকারেজ হাউস তার কাছে ৩০ লাখ টাকা পাবে। চোখের সামনেই হাওয়া হয়ে গেছে তার সব বিনিয়োগ। লাভের আশায় শুধু একজন আনোয়ার হোসেনই নন, এমন কয়েক লাখ বিনিয়োগকারী শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে আজ নিঃস্ব। শেয়ারবাজারের অব্যাহত ধসে প্রতিদিনই বাড়ছে আনোয়ার হোসেনের মতো সর্বহারা বিনিয়োগকারীর সংখ্যা। আর তাদের কান্নায় ভারী হয়ে উঠছে রাজধানীর মতিঝিল এলাকা। শেয়ারবাজারের ধস ঠেকাতে একের পর এক উদ্যোগ নেয়া হলেও তা কোনো কাজেই আসছে না। গতকালও দেশের শেয়ারবাজারে বড় ধরনের ধস নেমেছে। আগের দিনের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাধারণ সূচকের পতন হয়েছে ১৬৫ পয়েন্টের মতো। দিনশেষে ডিএসই সাধারণ সূচক গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৮৭৭ পয়েন্টে। ২০১০ সালের ১৭ জানুয়ারির পর এটিই ডিএসই সূচকের সর্বনিম্ন অবস্থান। ওইদিন ডিএসই সাধারণ সূচক ছিল ৪ হাজার ৮৭৬ পয়েন্ট। অর্থাত্ গত ২২ মাসের মধ্যে সূচকের অবস্থান সর্বনিম্নে চলে এসেছে।
ঈদের ছুটির পর শেয়ারবাজার পরিস্থিতি ভালো হবে—এমন আশায় ছিলেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। কিন্তু তাদের সে আশা দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। ঈদের ছুটির পর মাত্র দুই দিনের লেনদেনে ডিএসইর সাধারণ সূচকের পতন হয়েছে ৩৩১ পয়েন্ট। আর এ পতনের ফলে ডিএসই সাধারণ সূচক নেমে এসেছে ৫ হাজার পয়েন্টের নিচে। শেয়ারবাজারের সূচক ৫ হাজার পয়েন্টের নিচে নামতে দেয়া হবে না, বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এ ধরনের একটা ধারণা চালু ছিল। কিন্তু গতকাল তাদের সে ধারণা মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক আরও বেড়ে গেছে। গতকাল লেনদেন শুরুর মাত্র ৫ মিনিটের মাথায় ডিএসই সূচকের পতন ঘটে ১০০ পয়েন্টের মতো। সূচক ৫ হাজার পয়েন্টের নিচে নেমে আসে। উদ্বিগ্ন বিনিয়োগকারীরা ডিএসই ভবনের সামনে জড়ো হতে থাকেন। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সূচকের পতন অব্যাহত থাকলে ডিএসই ভবনের সামনে ক্ষুব্ধ বিনিয়োগকারীর উপস্থিতিও বাড়তে থাকে। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তারা বিক্ষোভ সমাবেশ শুরু করেন। বেলা ১১টা ৫৫ মিনিটে ডিএসই সূচকের ২৩৮ পয়েন্টের পতন হলে বিক্ষোভ সমাবেশ নতুন গতি লাভ করে। বেলা ১২টা থেকে সূচকে কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা দিলেও আগের দিনের তুলনায় ১৬৪ দশমিক ৭১ পয়েন্ট কমে দিনশেষে ডিএসই সাধারণ সূচক ৪ হাজার ৮৭৭ দশমিক ৫২ পয়েন্টে এসে দাঁড়ায়। ২০১০ সালের ৫ ডিসেম্বর ডিএসইর সাধারণ সূচক সর্বোচ্চ ৮ হাজার ৯১৮ পয়েন্টে উন্নীত হয়েছিল। সেই থেকে একের পর এক ধসের ঘটনা ঘটছে। অর্থাত্ মাত্র ১১ মাসের ব্যবধানে ডিএসইর সাধারণ সূচকের পতন হয়েছে ৪ হাজার ৪১ পয়েন্টের, শতাংশ হিসেবে এ পতনের হার ৪৫ ভাগেরও বেশি।
এদিকে শেয়ারবাজারে অব্যাহত পতনকে ব্যাখ্যাতীত বলে মন্তব্য করেছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও এসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম। তিনি বলেন, শেয়ারবাজারে কেন টানা দরপতন হচ্ছে, তার কোনো ব্যাখ্যা আমার কাছে নেই। টানা দরপতনের সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ নেই। তিনি আরও বলেন, দর কমতে কমতে এখন শেয়ারের দর অনেক নিচে নেমে এসেছে। এ অবস্থায় বিনিয়োগে ঝুঁকি নেই। তারপরও বিনিয়োগকারীরা কেন শেয়ার কিনছে না তা বুঝতে পারছি না। শেয়ারবাজারে অব্যাহত দরপতনের পেছনে কোনো কারসাজি রয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন বলে তিনি মন্তব্য করেন।
একের পর এক উদ্যোগ নেয়ার পরও ধস ঠেকাতে ব্যর্থ হওয়ায় বড় ধরনের চাপের মুখে পড়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি)। শেয়ারবাজারে কারসাজি রোধে ব্যর্থ হওয়ায় এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা হারানোর কারণে জিয়াউল হক খোন্দকারের নেতৃত্বে গঠিত কমিশনকে সরিয়ে দেয় সরকার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক ড. খায়রুল হোসেনকে চেয়ারম্যান করে কমিশনকে পুনর্গঠন করা হয়। গত মে মাসে কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে যোগ দেন খায়রুল হোসেন। চেয়ারম্যান হিসেবে যোগদানের দিনই তিনি বলেছিলেন, বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জন করে একটি শক্তিশালী, স্বচ্ছ ও স্থিতিশীল পুঁজিবাজার গড়ে তোলাই হবে কমিশনের লক্ষ্য। কিন্তু পুনর্গঠিত কমিশন বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জনে সফল হতে পারেনি। বিভিন্ন ক্ষেত্রে কমিশন বেশ ইতিবাচক পদক্ষেপ নিলেও সেগুলো বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সফলতা দেখাতে পারেনি। ফলে পুনর্গঠিত কমিশনের ওপর বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমতে শুরু করেছে। তবে অনেকেই মনে করছেন, পুরো কমিশন পুনর্গঠিত হওয়ার কারণে অভিজ্ঞতার বিষয়ে বড় ধরনের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। আর এ কারণে বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবিলায় যথার্থ পদক্ষেপ নিতে পারছে না কমিশন। ফলে কমিশনের ওপর চাপ প্রয়োগ করে বিভিন্ন গোষ্ঠী তাদের ফায়দা হাসিল করে নিচ্ছে, কিন্তু বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরে আসছে না। বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে কমিশনের ভিতরে দ্বন্দ্ব রয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। বিশেষ করে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের মতাদর্শে প্রকাশ্য সমর্থনকারী একজন সদস্য নানাভাবে কমিশনের ওপর প্রভাব বিস্তার করছেন বলে জোর গুজব রয়েছে। এ কারণে কমিশনের মধ্যে এক ধরনের অস্থিরতা রয়েছে। বাজারেও এর প্রভাব পড়ছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
ফোর্সড সেল বন্ধে এসইসির নির্দেশনা : শেয়ারবাজারে অব্যাহত দরপতনে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি বড় ধরনের আর্থিক ঝুঁকির মুখে পড়েছে মার্জিন ঋণ দেয়া ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো। আর্থিক ঝুঁকি কমাতে বাধ্য হয়েই তারা গ্রাহকের শেয়ার ফোর্সড সেল শুরু করেছেন। আগে থেকে কিছু কিছু ফোর্সড সেল হলেও গত দু’দিনে ফোর্সড সেলের পরিমাণ বেড়েছে। এরই প্রেক্ষিতে এসইসির পক্ষ থেকে বাজার পরিস্থিতি বিবেচনায় ফোর্সড সেল না করার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন এসইসির নির্বাহী পরিচালক ও দায়িত্বপ্রাপ্ত মুখপাত্র সাইফুর রহমান। তিনি বলেন, আমরা বেশ কিছু ফোর্সড সেলের অভিযোগ পেয়েছি। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা তাদেরকে ফোর্সড সেল না করার জন্য বলেছি। আশা করছি, বাজারের স্বার্থে তারা ফোর্সড সেল করবেন না। তবে এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করার বিষয়ে স্পষ্ট কিছু বলেননি তিনি। তিনি বলেন, এক্ষেত্রে আইন পরিবর্তনের প্রয়োজন হবে। কিন্তু এটি সময়সাপেক্ষ। সেজন্য কমিশনের পক্ষ থেকে আপাতত মৌখিক নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
আগামীকাল এবিবি’র সঙ্গে এসইসির বৈঠক : শেয়ারবাজারে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ এবং ৫ হাজার কোটি টাকার ‘স্টক মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড’ গঠনের বিষয়ে আগামীকাল অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সঙ্গে এসইসির বৈঠক হবে। বেলা ১১টায় এ বৈঠক হবে বলে এসইসি সূত্রে জানা গেছে।
বিনিয়োগকারীদের বিক্ষোভ : শেয়ারাবাজারে দরপতনের প্রতিবাদে গতকালও সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ডিএসই ভবনের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ করেছেন। বেলা সাড়ে ১১টা থেকে সাড়ে ৩টা পর্যন্ত ডিএসই ভবনের সামনের রাস্তায় অবস্থান নেন তারা। তারা এ সময় শেয়ারবাজারে ধস ঠেকাতে ব্যর্থ অর্থমন্ত্রী, অর্থ উপদেষ্টা, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের বিরুদ্ধে নানা সেম্লাগান দেন এবং তাদের পদত্যাগের দাবি জানান। বিক্ষোভের সময় মতিঝিলের শাপলা চত্বর থেকে ইত্তেফাকের মোড় পর্যন্ত সব ধরনের যানচলাচল বন্ধ ছিল। এদিকে গতকাল বিনিয়োগকারীদের একটি গ্রুপ বেলা ২টার দিকে এসইসি কার্যালয় ঘেরাও করে। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে এসইসির ফটক বন্ধ করে দেয়া হয়। পরে বিনিয়োগকারীদের একটি দল এসইসি চেয়ারম্যানের সঙ্গে সাক্ষাত্ করে বিভিন্ন দাবি-দাওয়া পেশ করে। তারা গত দু’দিনের ট্রেড বাতিল, শেয়ারবাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে না আসা পর্যন্ত লেনদেন বন্ধ, ফোর্সড সেল বন্ধে এসইসির প্রজ্ঞাপন জারিরও দাবি জানান। এসইসির চেয়ারম্যান তাদের দাবির বিষয়ে আইনি দিক খতিয়ে দেখা হবে বলে আশ্বাস দেন।
বাজার পরিস্থিতি : গতকাল ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেয়া ২৫২টি কোম্পানির মধ্যে মাত্র ১৫টির দর বেড়েছে। কমেছে ২৩৫টির এবং অপরিবর্তিত ছিল ২টির। ক্রেতার অভাবে অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারের দর কমেছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। তবে দর কমলেও আগের দিনের তুলনায় লেনদেনের পরিমাণ বেড়েছে। আগের দিন ডিএসইতে ২০৬ কোটি ৫৪ লাখ টাকার আর্থিক লেনদেন হলেও গতকাল তা ৩২১ কোটি ৭৪ লাখ টাকায় উন্নীত হয়েছে।
মূলধন আড়াই লাখ কোটি টাকার নিচে : অব্যাহত দরপতনে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের বাজার মূলধন আড়াই লাখ কোটি টাকার নিচে নেমে এসেছে। গতকাল দিনশেষে ডিএসইর বাজার মূলধন ২ লাখ ৪৬ হাজার ৪৭০ কোটি টাকায় এসে দাঁড়িয়েছে। আগের দিনের তুলনায় গতকাল বাজার মূলধন কমেছে ৬ হাজার ৪১০ কোটি টাকা। গত ৫ ডিসেম্বর ডিএসইর বাজার মূলধন সর্বোচ্চ ৩ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছিল। মাত্র ১১ মাসের ব্যবধানে বাজার মূলধন কমেছে ১ লাখ ২২ হাজার কোটি টাকা।
নিঃস্ব বিনিয়োগকারীর আর্তনাদ বাড়ছে : শেয়ারাবাজারে দরপতনে প্রতিদিনই নিঃস্ব বিনিয়োগকারীদের আর্তনাদ বাড়ছে। নিঃস্ব আনোয়ার হোসেন বলেন, গত তিন মাসে আমার সঙ্গে বাসার যোগাযোগ নেই। রাতে বন্ধু-বান্ধবের বাসায় থাকি। গত রোজার ঈদও বাইরে কাটিয়েছি, এবার কোরবানির ঈদও পরিবারের সঙ্গে করতে পারিনি। দুই ছেলে ও স্ত্রী নিয়ে সংসার কীভাবে চলছে, তার খোঁজ-খবর নিতে পারছি না। বাসাভাড়া দিতে পারছি না। আমি নিঃস্ব হয়ে গেছি। লক্ষ্মীপুর জেলার বিজয়নগর গ্রামের আনোয়ার হোসেন আরও বলেন, সরকার আমাদের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের জন্য আহ্বান জানিয়েছে। তাদের সে আহ্বানে সাড়া দিয়ে আজ আমরা সব হারিয়ে সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েছি। আনোয়ার হোসেন তার কষ্টের কথা বলতে গিয়ে বারবার বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ছিলেন।
ইকবাল খান রিপন নামে আরেক বিনিয়োগকারী বলেন, ২০১০ সালের আগস্ট মাসে তিনি শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করেন। তার মোট বিনিয়োগের পরিমাণ সাড়ে ৪৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে জমি বিক্রি করে ২১ লাখ, বাকি টাকা বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়স্বজন থেকে ধার করেছেন। ৪৩ লাখ টাকার বিপরীতে মার্জিন লোন নিয়েছেন ২৩ লাখ টাকা। কিন্তু পোর্টফোলিও এখন নেগেটিভ হয়ে গেছে। অর্থাত্ শেয়ার বিক্রি করে মার্জিন লোন শোধ করা সম্ভব হবে না। ইবিএল হাউসে লেনদেন করেন তিনি। তিনি বলেন, এখন একবেলা খেয়ে আরেক বেলা না খেয়ে চলছে জীবন। গত চার মাস বাসাভাড়া দিতে পারছি না। দুই সন্তানের মধ্যে বড় জন লেখাপড়া করছে; কিন্তু তার খরচও দিতে পারছি না। তিনি বলেন, মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছি। দুশ্চিন্তায় রাতে ঘুম হয় না।
গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার নুরুল ইসলাম জানান, তিনি জমি ও স্ত্রীর গয়না বিক্রি করে, নিজের জমানো টাকা, আত্মীয়স্বজন, বন্ধু-বান্ধবের কাছ থেকে ধার করে মোট ৩২ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন। এখন তার বিনিয়োগের পরিমাণ মাত্র ৮ লাখ টাকায় নেমে এসেছে। তিনি বলেন, বন্ধু-বান্ধবকে মুনাফা দেব—এ শর্তে টাকা ধার নিয়েছিলাম। প্রতি লাখে মাসে এক হাজার টাকা দেয়ার কথা বলে টাকা ধার নিয়ে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করেছিলাম। কিন্তু এখন পর্যন্ত কাউকে কোনো লাভ তো দূরের কথা, পুঁজিই হাওয়া হয়ে গেছে। যাদের কাছ থেকে ধার করেছি, তারা এখন আমার শত্রু হয়ে গেছে। স্ত্রীর সঙ্গেও টানাপড়েন চলছে। তিনি বলেন, শেয়ারবাজারের কারণে এখন জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, আমাদের টাকা লুটপাট করা হয়েছে। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারে এসে শেয়ারবাজারে লুটপাট করেছিল; এবার আবারও তারা লুটপাট করেছে।

শেয়ারবাজারে অব্যাহত দরপতনে বিনিয়োগকারীদের ঘোষণা : দাবি পূরণ না হলে ৭ ডিসেম্বর মহাসমাবেশ


অর্থনৈতিক রিপোর্টার

শেয়ারবাজারে দরপতন অব্যাহত রয়েছে। গতকাল দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাধারণ সূচকের পতন হয়েছে ৪০ পয়েন্ট। ফলে দিনশেষে সূচক গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৩৬ পয়েন্টে। এ নিয়ে টানা ৪ দিন সূচকের পতন দিয়ে শেষ হয়েছে গতকালের লেনদেন। আর এ সময়ে ডিএসই সূচক হারিয়েছে ৪১৯ পয়েন্ট।
এদিকে শেয়ারবাজারে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার দাবিতে ৯ দফা দাবি জানিয়েছে বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদ। আগামী ৬ ডিসেম্বরের মধ্যে এসব দাবি মেনে নিয়ে শেয়ারবাজারের স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা না হলে আগামী ৭ ডিসেম্বর ঢাকায় বিনিয়োগকারীদের মহাসমাবেশ করা হবে বলে জানিয়েছেন পরিষদের নেতারা। গতকাল পরিষদের নিজস্ব কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ মহাসমাবেশের ঘোষণা দেয়া হয়। অবশ্য শেয়ারাবাজারে দরপতনের প্রতিবাদে গতকালও বিনিয়োগকারীরা ডিএসই ভবনের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে। গতকালের বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, সূচকের পতন দিয়ে শুরু হয় দিনের লেনদেন। লেনদেন শুরুর ১০ মিনিটে ডিএসই সূচকের পতন ঘটে ৩৫ পয়েন্টের মতো। এরপর সূচকে কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা দিলেও ১০ মিনিটের ব্যবধানেই ফের নিম্নমুখী ধারা দেখা দেয়। বেলা সাড়ে ১১টায় পতনমুখী ধারা থেকে বেরিয়ে আসে বাজার এবং বেলা ১২টা পর্যন্ত সূচকের একটানা বৃদ্ধি ঘটে। এসময় সূচক আগের দিনের তুলনায় ৬৮ পয়েন্ট বেড়ে যায়। কিন্তু এরপর টানা দরপতন শুরু হলে শেষ পর্যন্ত আগের দিনের তুলনায় ৪০ দশমিক ৬৩ পয়েন্টের পতন দিয়ে শেষ হয় দিনের লেনদেন। লেনদেনে অংশ নেয়া ২৪৯টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ৭৫টির, কমেছে ১৬৩টির এবং অপরিবর্তিত ছিল ১১টির। সূচক পতনের পাশাপাশি লেনদেনের পরিমাণও কমেছে। আগের দিনের তুলনায় ৪০ কোটি টাকা কমে দিনশেষে লেনদেন হয়েছে ২৯০ কোটি টাকা। বাজার সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা না থকার কারণে সামান্য দরবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গেই শেয়ার বিক্রির চাপ বেড়ে যায়। বিক্রি চাপ বেড়ে যাওয়ার কারণে দরপতনের ঘটনা ঘটছে। তারা আরও জানান, দরপতন ঠেকাতে হলে শেয়ারের চাহিদা তৈরি করতে হবে। কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা বাজারে সক্রিয় না হলে সে চাহিদা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। ব্যাংকগুলো বিনিয়োগের যে ঘোষণা দিয়েছে তার কোনো প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। অথবা বিনিয়োগ করলেও তা খুবই সামান্য আকারের। বর্তমানে বাজারে বিনিয়োগের অত্যন্ত অনুকূল পরিবেশ রয়েছে বলেও সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
বিনিয়োগকারীরা অভিযোগ করছেন, ঘোষণা দিলেও তারা এখন পর্যন্ত শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করেনি। ব্যাংকগুলো এ ধরনের ঘোষণা দিয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। এর আগে বাংলাদেশ ফান্ডের ৫ হাজার কোটি টাকা দিয়ে শেয়ারাবাজারের স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার ঘোষণা দেয়া হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে সে ফান্ডের কোনো প্রভাবই পড়েনি। কালোটাকা বিনিয়োগের সুযোগ দেয়া হলেও এ বিষয়ে সরকারের অস্পষ্ট অবস্থানের কারণে কালোটাকা বিনিয়োগ হচ্ছে না। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের বাজারে সক্রিয় হওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছিল। কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা আর বেশি নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে। বাজারের স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে এসইসি দফায় দফায় মার্চেন্ট ব্যাংক, অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি, ব্রোকারেজ হাউসের প্রতিনিধি, স্টক এক্সচেঞ্জের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছে। কিন্তু এসব বৈঠকের পরও বাজারে ধস থামছে না।
নানা উদ্যোগ নেয়ার পরও বাজারে দরপতনের পেছনে কারসাজি থাকতে পারে বলেও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ধারণা। তারা বলেন, দরপতন ঘটিয়ে কম দামে শেয়ার কেনার সুবিধা করে দেয়া হচ্ছে। কম দামে শেয়ার কেনার জন্যই এখন প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা নিষ্ক্রিয় হয়ে রয়েছে। দর আরও কমে গেলে তারা শেয়ার কিনতে শুরু করবে এবং তারা পরবর্তীতে দর বাড়িয়ে মুনাফা হাতিয়ে নেবে।
মহাসমাবেশের ঘোষণা : শেয়ারবাজারে স্থিতিশীলতা ফিরে না আসলে আগামী ৭ ডিসেম্বর মহাসমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদ। গতকাল মতিঝিলস্থ নিজস্ব কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির সভাপতি মিজানুর রশীদ চৌধুরী বলেন, আমরা সরকারকে ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় দিয়েছি। এ সময়ের মধ্যে যদি বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরে না আসে তাহলে আগামী ৭ ডিসেম্বর সারাদেশের বিনিয়োগকারীদের নিয়ে মহাসমাবেশ ডাকা হবে। এ মহাসমাবেশ থেকে বৃহত্তর আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। তিনি বলেন, আমাদের মহাসমাবেশ ডাক দিতে বাধ্য করবেন না। আমরা কোনো রাজনৈতিক দল করি না। আমরা সাধারণ বিনিয়োগকারী। পুঁজি হারিয়ে আমরা আজ আন্দোলনে নামতে বাধ্য হচ্ছি।
সমাবেশে লিখিত বক্তব্যে বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে শেয়ারবাজারের স্থিতিশীলতার জন্য ৯ দফা দাবি পেশ করা হয়। এগুলো হলো—ব্যাংকগুলোকে আগামীকাল (আজ) থেকে আমানতের ১০ শতাংশ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ শুরু, মার্চেন্ট ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বীমা কোম্পানিগুলোকে আইনি সীমার মধ্যে সর্বোচ্চ পরিমাণে বিনিয়োগে বাধ্য করা, মিউচুয়াল ফান্ডের মূলধনের ৮০ শতাংশ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগে বাধ্য করতে হবে, কোম্পানি আইন সংশোধন করে পরিচালকদের কমপক্ষে ৪০ থেকে ৫১ শতাংশ শেয়ার সংরক্ষণে বাধ্য করা, অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগে এনবিআর ও দুদকের পক্ষ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি, বৃহত্ পুঁজির বিনিয়োগকারীদের ভয় না দেখিয়ে তাদের বিনিয়োগে বাধ্য করা, আইসিবিকে শেয়ার ক্রয়ে বাধ্য করা, প্রিমিয়াম ছাড়াই আইপিওতে কোম্পানিকে শেয়ার ছাড়ার অনুমতি দেয়া, বিনিয়োগকারীদের বিরুদ্ধে সব মামলা প্রত্যাহার।
এ সময় পরিষদের সিনিয়র সহ-সভাপতি কাজী নজরুল ইসলাম, সহ-সভাপতি সেলিম চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে এম শাহদাত উল্লাহ ফিরোজ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
পরিষদের নেতারা বলেন, শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের নিয়ে প্রতারণা করা হচ্ছে। ব্যাংকগুলো বিনিয়োগে আসার ঘোষণা দিলেও তারা বিনিয়োগ করছে না। ব্যাংকগুলো যদি ৭ থেকে ১০ দিন পর্যন্ত বড় ফান্ড নিয়ে বাজারে বিনিয়োগ শুরু করতো তাহলে বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতো। কিন্তু তা হচ্ছে না। তারা আরও বলেন, ব্যাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি) ৫ হাজার কোটি টাকার ‘স্টক মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড’ গঠনের ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু আমরা ধারণা করছি, এ ধরনের ফান্ড গঠন করা সম্ভব হবে না। বাংলাদেশ ফান্ড গঠন করে বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে মনস্তাত্ত্বিক প্রতারণা করা হয়েছে বলে তারা জানান।