Tuesday 26 April 2011

ক্ষমতা ছাড়ার আহ্বান খেলাফত আন্দোলনের : সরকারের ইসলাম বিরোধী কর্মকাণ্ডের শ্বেতপত্র প্রকাশ











স্টাফ রিপোর্টার

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের কোরআনবিরোধী নারীনীতিসহ ২০ দফা ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডের প্রাথমিক শ্বেতপত্র প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন। গতকাল রাজধানীর একটি রেস্টুরেন্টে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ শ্বেতপত্র প্রকাশ করা হয়। এ সময় দলের নেতারা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকার কোরআন-সুন্নাহবিরোধী কোনো আইন কখনও করবে না। তিনি নির্বাচনী ইশতেহারেও বলেছিলেন ক্ষমতায় গেলে তার সরকার কোরআনবিরোধী কোনো আইন পাস করবে না। কিন্তু ক্ষমতায় বসে বর্তমান সরকার শুধু নারীনীতিই নয় বরং একের পর এক কোরআন-সুন্নাহবিরোধী কার্যকলাপের জন্ম ও প্রশ্রয় দিচ্ছে। তারা বলেন, সরকার ভালোভাবে দেশ চালালে যতদিন জনগণ চায় চালাক। কিন্তু ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ড করলে তা সহ্য করা হবে না। কোরআনবিরোধীদের সঙ্গে আমাদের কোনো আপস নেই। শান্তিপূর্ণভাবে দেশ চালাতে ব্যর্থ হলে প্রয়োজনে এখনই ক্ষমতা ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান নেতারা।
শ্বেতপত্রে বলা হয়, মহান আল্লাহতায়ালা ওহির মাধ্যমে যে নারীনীতি দিয়েছেন, নারীদের কল্যাণে তাই যথেষ্ট। কিন্তু সরকার এই নীতি বাদ দিয়ে জাতিসংঘে গৃহীত সিডো অনুসরণ করে তৈরি নতুন নারীনীতি বাস্তবায়নে মরিয়া হয়ে উঠেছে। আল্লাহর দেয়া নীতি বাদ দিয়ে এই নীতি করাই কোরআনবিরোধী। তাছাড়া সব ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমঅধিকার কথাটাও বেহুদা। নারীনীতির কোরআন-সুন্নাহর সঙ্গে সাংঘর্ষিক ধারাগুলোর ব্যাপারে দেশের আলেমরা বিভিন্ন সভা-সমাবেশ ও মিডিয়ার মাধ্যমে প্রচার করলেও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে এতে ইসলামবিরোধী কিছু নেই। এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
নারীনীতি ছাড়াও সরকারের অনৈসলামিক কর্মকাণ্ড প্রসঙ্গে বলা হয়—রাষ্ট্রপতি ফতোয়া বন্ধ করার যে ইচ্ছা ব্যক্ত করেছেন তা কোরআনের সুরা নিসার ১৭৬ নম্বর আয়াতের বিরোধী। রাসূল (সা.)-এর জন্ম নিয়ে কটূক্তিকারীর বিচার না করা হাদিসবিরোধী। পবিত্র কোরআনের বিশুদ্ধতা চ্যালেঞ্জ করে আদালতে রিট আবেদন সুরা বাকারার ২ নম্বর আয়াতের বিরোধী। পবিত্র হাজরে আসওয়াদকে শিবলিঙ্গের সঙ্গে তুলনার পরও সরকারের নীরবতা কোরআনবিরোধী। সংবিধানে কোরআনবিরোধী বিভিন্ন বিষয় সংযুক্তি, ভারতের মতো ধর্মনিরপেক্ষতা প্রতিষ্ঠার জন্য উঠেপড়ে লাগা, ফরজ বিধান হিজাববিরোধী রায় ও পরিপত্র জারি, অনৈসলামিক কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ডিজি সামীম মোহাম্মদ আফজালকে বহাল রাখা, আলেম-ওলামা ও কওমি মাদ্রাসার বিরুদ্ধে জঙ্গিবাদের অপপ্রচার, ইসলামবিরোধী জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন সরকারের কোরআন-হাদিসবিরোধী কর্মকাণ্ডের মধ্যে উল্লেখযোগ্য।
খেলাফত আন্দোলন নেতারা বলেন, সরকার নিজের ভুল না বুঝে উল্টো আন্দোলনকারী হাফেজ, আলেমদের হত্যা, মিথ্যাবাদী বলা, গ্রেফতার, হয়রানি ও গুম করছে কার স্বার্থে দেশবাসী তা জানতে চায়। মুফতি আমিনী হাফেজ্জি হুজুরের এতিম সন্তানদের সম্পদ আত্মসাত্ করেছে বলে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য সম্পূর্ণ অসত্য, মিথ্যা ও বানোয়াট। হাফেজ্জি হুজুরের খান্দানের কিছু হলে সরকারের পতন অনিবার্য বলে উল্লেখ করে নেতারা বলেন, সরকার সাংবিধানিকভাবে বৈধ হরতালে বাধা দিয়ে অন্যায় ও অপরাধ করেছে। নারীনীতি নিয়ে তারা যে ফাসাদ সৃষ্টি করছে তাতে বিদেশি এজেন্ডা বাস্তবায়নের চক্রান্তই প্রকাশ পাচ্ছে—যা কোরআনবিরোধী। সরকার রিমান্ডের নামে অমানবিক নির্যাতন, বিনা বিচারে উলঙ্গ করে পুরুষাঙ্গে ইলেকট্রিক শক দেয়া সম্পূর্ণ হারাম ও কোরআন-হাদিসবিরোধী।
২০ দফা ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডের বাইরেও ধর্মীয়, রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ক্ষেত্রে বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি এবং জুলুমের বর্ণনা দেয়া হয় শ্বেতপত্রে। এ প্রসঙ্গে বলা হয়, এ সরকারের সময় কোরআন তিলাওয়াতের পরিবর্তে রবীন্দ্রসঙ্গীত দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু, আল্লাহর ক্ষমতা নিয়ে সিইসি’র কুফরি মন্তব্য, আজান সম্পর্কে বাজে মন্তব্য, মাদ্রাসা ছাত্রের হাত কেটে নেয়া, স্কুলের সাইনবোর্ড থেকে কোরআনের আয়াত তুলে ফেলা, রাবিতে পায়জামা-পাঞ্জাবি, টুপি-দাড়ি ও হিজাবের ওপর আপত্তি করা, ইডেন কলেজে ছাত্রী পাচারের ঘৃণ্য কাজসহ সারাদেশে খুন, ধর্ষণ, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ও দলপ্রীতিতে ইনসাফ ও মানবতা ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে। এসব কাজ ইসলামবিরোধী। তারা অবিলম্বে নারীনীতিসহ ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ড বাতিল, গ্রেফতারকৃতদের মুক্তি ও মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে সরকারকে বলেন, হঠকারিতা ছেড়ে শান্তিতে ক্ষমতায় থাকুন। নতুবা ভয়াবহ পরিণতি দেখবেন। তখন হা-হুতাশ করেও লাভ হবে না বলে সতর্ক করেন নেতারা।
সংবাদ সম্মেলনে শ্বেতপত্র পাঠ করেন খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা জাফরুল্লাহ খান। এ সময় দলের আমির শাহ আহমদুল্লাহ আশরাফ, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা সাজিদুর রহমান ফয়েজি, ঢাকা মহানগর সভাপতি মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী, মাওলানা ফখরুল ইসলাম, মাওলানা সুলতান মুহিউদ্দিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন

টিএইচ খান ও রফিক-উল হক : ফতোয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলার এখতিয়ার আদালতের নেই

স্টাফ রিপোর্টার

ফতোয়া নিষিদ্ধ করে হাইকোর্টের দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে আপিল শুনানিতে অ্যামিকাস কিউরির মতামতে প্রবীণ আইনজীবী টিএইচ খান ও ব্যারিস্টার রফিক-উল হক বলেন, ফতোয়া হচ্ছে পবিত্র কোরআন, হাদিস ও ইসলামী শরিয়াভিত্তিক অভিমত বা উপদেশ। কাজেই ফতোয়াকে নিষিদ্ধ করে রায় দেয়া তো দূরের কথা, এ নিয়ে কোনো ধরনের প্রশ্ন তোলারও এখতিয়ার কোনো আদালতের নেই। দেশের প্রচলিত আইন ও সংবিধানের আলোকেও ফতোয়া বৈধ বলে মত দেন তারা। ফতোয়া দেয়া ও নেয়া সংবিধানস্বীকৃত মৌলিক অধিকারের অন্তর্ভুক্ত। প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের নেতৃত্বে গঠিত আপিল বিভাগের ফুল বেঞ্চে গতকাল তারা এ অভিমত পেশ করেন।
উল্লেখ্য, ২০০১ সালে বিচারপতি গোলাম রব্বানীর নেতৃত্বে হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চ কোনো অভিযোগ বা মামলা ছাড়াই স্বপ্রণোদিত হয়ে ফতোয়া নিষিদ্ধ করে রায় দেন। রায়ের বিরুদ্ধে দুটি আপিল করা হয়। বর্তমানে আপিল বিভাগের ফুল বেঞ্চে এ আপিল দুটির শুনানি একযোগে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ফতোয়ার বিষয়ে মতামত দেয়ার জন্য আদালত সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও সিনিয়র আইনজীবী বিচারপতি টিএইচ খান এবং সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল ও সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল হকসহ ১০ বিশিষ্ট আইনজীবীকে অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে নিয়োগ দেন।
ব্যারিস্টার রফিক-উল হক : গতকাল ফতোয়া নিয়ে আপিলের শুনানি শুরু হলে ব্যারিস্টার রফিক-উল হক সংবিধান, বিভিন্ন আইন, বিভিন্ন মামলার নজির ও বিভিন্ন দেশের রেফারেন্স তুলে ধরে আদালতে বলেন, ফতোয়া হচ্ছে সংবিধানস্বীকৃত একটি মৌলিক অধিকার। ফতোয়া নিষিদ্ধ করে হাইকোর্ট যে রায় দিয়েছেন, তা আদৌ সঠিক নয়। এ ধরনের রায় দেয়ার এখতিয়ার হাইকোর্টের নেই। তিনি বলেন, ফতোয়া হচ্ছে ব্যক্তিগত অভিমত। এ অভিমতের ভিত্তিতেই আমাদের সমাজ ও পারিবারিক শৃঙ্খলা টিকে রয়েছে। অভিমত বা মতামত দেয়ার অধিকার সবার রয়েছে। এটা সাংবিধানিক অধিকারও। তবে কোনো নির্বাহী আদেশ নয়, কেউ ইচ্ছে করলে এটা গ্রহণ করতে পারে আবার নাও করতে পারে। তবে আমাদের দেশে প্রত্যন্ত অঞ্চলের সাধারণ মানুষ ফতোয়াকে বাধ্যবাধকতা বলে মনে করে। এজন্য সাধারণ মানুষকে সচেতন করে তুলতে হবে। তিনি বলেন, ফতোয়ার অপব্যবহার হচ্ছে। এটা অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই। আমাদের দেশে প্রায় সব আইনেরই যেমন ব্যবহার রয়েছে, তেমনিভাবে এর অপব্যবহার আছে। মূল কথা হলো অপব্যবহার বন্ধ করতে হবে। এটা করতে গিয়ে যে একেবারে আইনটিই নিষিদ্ধ করে দিতে হবে, এমনটি নয়। তিনি বলেন, কেউ যদি ফতোয়ার নামে কাউকে শাস্তি দেন, তবে সেটি অপরাধ। এ অপরাধের বিরুদ্ধে ফৌজদারি আইনে আদালত ব্যবস্থা নিতে পারেন।
বিচারপতি টিএইচ খান : ফতোয়া নিষিদ্ধ করার অধিকার কোনো আদালতের নেই বলে উল্লেখ করে সিনিয়র আইনজীবী বিচারপতি টিএইচ খান বলেন, যারা ফতোয়া নিষিদ্ধ করে অতি-উত্সাহী রায় দিয়েছেন তারা কি একবার ভেবে দেখেছেন, ফতোয়া নিষিদ্ধ হলে এর পরিণাম কত ভয়ঙ্কর হবে? তারা হয়তো না বুঝেই এটা করেছেন। কিন্তু ফতোয়া নিষিদ্ধ করার এখতিয়ার তাদের ছিল না। তারা এখতিয়ারবহির্ভূত কাজটি করে সমাজকে একটি চরম বিশৃঙ্খল অবস্থার দিকে ঠেলে দিচ্ছিলেন। তিনি বলেন, সংবিধান অনুযায়ীই ফতোয়া বৈধ এবং ফতোয়া দেয়া ও গ্রহণ করা সাংবিধানিক অধিকার। ফতোয়ার নামে যদি কোথাও কোনো অপরাধ হয়, সেটা প্রতিরোধ বা প্রতিকারের জন্য আমাদের দেশে প্রচলিত আইন রয়েছে। তবে এখন কেউ কেউ গ্রাম্য সালিশকেও ফতোয়া হিসেবে চিহ্নিত করে এর বিরুদ্ধে লেগেছেন। এটাও ঠিক নয়। ফতোয়া নিষিদ্ধ হলে আমাদের সামাজিক কাঠামো ভেঙে পড়বে। সমাজে চরম বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে। যৌতুকপ্রথা বেড়ে যাবে। সেইসঙ্গে ইভটিজিংসহ নারী নির্যাতনও বেড়ে যাবে। সামাজিক শৃঙ্খলার জন্যই ফতোয়ার বিষয়টিকে টিকিয়ে রাখতে হবে। সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদ, ৪১ অনুচ্ছেদ থাকলে ধর্মীয় স্বাধীনতাও থাকবে। আর ধর্মীয় স্বাধীনতা থাকলে মুসলমানদের ফতোয়া দেয়া ও নেয়ার অধিকারও থাকবে। ফতোয়ার নামে যদি কেউ এর অপব্যবহার করে, তার জন্য ইসলামের এই অবিচ্ছেদ্য বিধান অবৈধ ঘোষণা করার কোনো আইনি বা যৌক্তিক ভিত্তি নেই।
বিচারপতি গোলাম রব্বানী কোনো অভিযোগ কিংবা মামলা ছাড়াই নিজ উদ্যোগে ফতোয়াকে অবৈধ ও নিষিদ্ধ ঘোষণা করে ২০০১ সালে রায় দেন। অবসর নেয়ার পর নাস্তিক ও ভারতপন্থী হিসেবে বিচারপতি গোলাম রব্বানী তথাকথিত ঘাদানি কমিটিসহ ইসলামবিরোধী বিভিন্ন সংগঠনের উপদেষ্টার পদ নেন এবং তাদের অনুষ্ঠানগুলোতে যোগ দিয়ে ফতোয়াসহ ইসলামী বিধানের বিরুদ্ধে বক্তব্য দেয়া অব্যাহত রাখেন। স্বপ্রণোদিত হয়ে ফতোয়া নিষিদ্ধ করে তার দেয়া ওই রায়ের বিরুদ্ধে ২০০১ সালেই মুফতি মো. তৈয়ব ও মাওলানা আবুল কালাম আজাদ আপিল বিভাগে পৃথকভাবে দুটি আপিল করেন। আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায়ের কার্যকারিতা স্থগিত করেন। বর্তমানে ওই আপিলের শুনানি চলছে। আদালত দশজন অ্যামিকাস কিউরি নিয়োগ করে মতামত নেন। এ ছাড়াও দেশের খ্যাতিমান পাঁচ আলেমকে তাদের মতামত দেয়ার জন্য বলেছেন। গত ২০ মার্চ লিখিতভাবে তারা তাদের মতামত পেশ করেন। পাঁচ আলেমসহ অ্যামিকাস কিউরিদের প্রায় সবাই ফতোয়ার বিধান বহাল রাখা এবং হাইকোর্টের রায় বাতিলের পক্ষে মত দেন।

আল্লামা আহমদ শফিসহ ৩ হাজার আলেমের বিরুদ্ধে মামলা

স্টাফ রিপোর্টার

পেট্রোলপাম্পে আগুন, গাড়ি ভাংচুর, পুলিশের কাজে বাধা, পুলিশকে ঢিল মারা, পুলিশকে হত্যার উদ্দেশ্যে আক্রমণ এবং পুলিশের হাত থেকে সরকারি ওয়্যারলেস সেট ও চায়না রাইফেল ছিনিয়ে নেয়ার অভিযোগ এনে বাংলাদেশ কওমী মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড বেফাকের চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক আল্লামা আহমদ শফির বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ। দণ্ডবিধির ১৪৩, ১৪৭, ১৪৮, ১৪৯, ৪৩৫, ৩৩২, ৪২৭, ৩৩৩, ৩৫৩, ৩০৭, ৩৭৯ এবং ৪১১ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে দেশের শীর্ষস্থানীয় আলেম ও হাজার হাজার মাদ্রাসা শিক্ষকের ওস্তাদ আল্লামা শফির বিরুদ্ধে। চট্টগ্রাম বায়েজিদ বোস্তামী থানার সাব-ইন্সপেক্টর প্রিটন সরকার বাদী হয়ে এ মামলাটি করেন। মামলায় আল্লামা আহমদ শফির নাম উল্লেখ করে তার বিরুদ্ধে অপরাধ ঘটাতে সহায়তার অভিযোগ আনা হয়েছে। এছাড়া বেনামি আরও ৩ হাজার ছাত্র-শিক্ষককে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
আল্লামা আহমদ শফিসহ ৩ হাজার ছাত্র-শিক্ষকের বিরুদ্ধে সরকারের দায়ের করা মামলাটিকে মিথ্যা, ভিত্তিহীন, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে উল্লেখ করে অবিলম্বে তা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন আলেম-ওলামারা। তারা বলেন, সরকারের পায়ের তলার মাটি সরে যাওয়ায় এখন দেশের সর্বজন শ্রদ্ধেয় আলেমে দ্বীন ও হাজার হাজার শিক্ষকের শিক্ষক আল্লামা আহমদ শফির বিরুদ্ধে মামলা করেছে। এ মামলার কারণে সরকারের ওপর আল্লাহর গজব নেমে আসবে। মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, গত ৪ এপ্রিল ইসলামী আইন বাস্তবায়ন কমিটির ডাকা সকাল-সন্ধ্যা হরতালের সময় মাওলানা আহমদ শফিসহ অপরাপর উচ্ছৃঙ্খল আসামিরা পিকেটিং করে। তারা মারাত্মক ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র, লোহার রড, লাঠিসোটা নিয়ে সড়ক অবরোধ করে রাখে। তারা পেট্রোলপাম্পে আগুন দেয় এবং অসংখ্য বাস ও যানবাহন ভাংচুর করে। পুলিশ বাধা দিলে তারা পুলিশের ওপরও চড়াও হয় এবং পুলিশকে হত্যার উদ্দেশ্যে আঘাত করে। তারা পুলিশের রাইফেল ও ওয়্যারলেস সেট ছিনিয়ে নেয়। লোহার রড দিয়ে পুলিশকে পিটিয়ে মারাত্মকভাবে জখম করে।
আল্লামা আহমদ শফির বিরুদ্ধে দায়ের করা এ মামলা মিথ্যা ও ভিত্তিহীন উল্লেখ করে বাংলাদেশ আইম্মা পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতা মুুফতি আবু ইউসুফ খান আল-মাদানী বলেন, দলমত নির্বিশেষে দেশে লাখ লাখ মানুষ আল্লামা আহমদ শফিকে শ্রদ্ধা করেন ও ভালোবাসেন। পুলিশকে হত্যার উদ্দেশ্যে আঘাত তো দূরের কথা, জীবনে তিনি কাউকে কোনোদিন কটুকথাও বলেননি। তার মতো সর্বজন শ্রদ্ধেয় একজন আলেমে দ্বীনের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও হাস্যকর অভিযোগ এনে মামলা করে সরকার নিজেদেরকেই মিথ্যাবাদী হিসেবে প্রমাণ করেছে। সরকারের মিথ্যাচার ও প্রতিহিংসার রাজনীতির বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

ইসলামী আইন বাস্তবায়ন কমিটির ১৩২ নেতাকর্মী রিমান্ডে

স্টাফ রিপোর্টার

গত সোমবারের হরতালের সময় রাজধানী থেকে ইসলামী আইন বাস্তবায়ন কমিটির গ্রেফতারকৃত ১৩২ নেতাকর্মী ও মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষককে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। বিভিন্ন থানা থেকে গতকাল তাদের ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডের আবেদন করে পুলিশ। শুনানি শেষে আদালত রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
শাহবাগ এলাকা থেকে গ্রেফতার করা ১৪ জনের মধ্যে ১২ জনকে গাড়ি ভাংচুরের অভিযোগে দ্রুত বিচার আইনের মামলায় দু’দিনের রিমান্ড দেন মহানগর হাকিম ইসমাইল হোসেন। একই মামলার আরও দু’জনকে জেলগেটে সতর্কতার সঙ্গে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। রমনা এলাকা থেকে গ্রেফতার করা ৩৪ জনকে একই অভিযোগে একই আইনের মামলায় দু’দিনের রিমান্ড দেন মহানগর হাকিম এরফান উল্লাহ। মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে গ্রেফতার করা ১৮ জনকে দু’দিনের রিমান্ডে পাঠান মহানগর হাকিম জয়নাব বেগম। এছাড়া মোহাম্মদপুরে পুলিশের কাজে বাধা দেয়ার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় মো. ইসমাইল হোসেন একই আসামিদের আরও দু’দিনের রিমান্ডে পাঠান। দু’দিন রিমান্ড শেষ হলে পরের দু’দিনের রিমান্ডের কার্যকারিতা শুরু হবে।
পল্টন এলাকা থেকে পুলিশের কাজে বাধা দেয়ার অভিযোগে গ্রেফতার করা ৭৭ জনের মধ্যে তিনজনকে জামিন, ছয়জনকে সতর্কতার সঙ্গে কারাফটকে জিজ্ঞাসাবাদ, বাকি ৬৮ জনকে দু’দিনের রিমান্ড দেন মহানগর হাকিম শাহরিয়ার মাহমুদ আদনান। অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় তিনজনকে জামিন দেয়া হয়। অন্যদিকে এই ৭৭ জনের মধ্যে ৪৪ জনকে গাড়ি ভাংচুরের অভিযোগে আরেক মামলায় রিমান্ডের আবেদন করা হলে মহানগর হাকিম আসাদুজ্জামান নূর আগামীকাল শুনানির দিন ধার্য করেন। এদের প্রত্যেককে রমনা থানার মামলায় সাত দিন এবং শাহবাগ, মোহাম্মদপুর, পল্টন থানার মামলায় পাঁচদিন করে রিমান্ডে নেয়ার আবেদন করে পুলিশ। আদালতে আসামিদের রিমান্ড বাতিল করে তাদের জামিনের আবেদন করে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া। তিনি বলেন, পবিত্র কোরআনের মর্যাদা রক্ষার আন্দোলনে তারা শরিক হয়েছেন। তারা কোনো অপরাধ করেননি। সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অভিযোগ এনে দায়ের করা মামলায় নির্যাতনের জন্য তাদের রিমান্ডে নেয়ার আবেদন করা হয়েছে। শুনানিতে তাকে সহায়তা করেন অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদনীন মেজবাহ, এমএ জলিল উজ্জ্বল, বেলাল হোসেন জসিম, জাকির হোসেন, মোহাম্মদ আলীসহ অর্ধশত আইনজীবী।

যশোরে মাদ্রাসা ছাত্রদের মিছিলে গুলি : ধাওয়া করে এক হাফেজকে হত্যা












যশোর অফিস

বিতর্কিত নারীনীতির প্রতিবাদে যশোরে মাদ্রাসা ছাত্রদের মিছিলে পুলিশ ব্যাপক লাঠিচার্জ ও গুলিবর্ষণ করেছে। গুলিতে এক মাদ্রাসা ছাত্র নিহত হয়েছে। তার নাম হুসাইন আহমদ। সে কুরআনের হাফেজ। লাঠিচার্জে মাদ্রাসা ছাত্রদের মিছিলটি ছত্রভঙ্গ হয়ে গেলে পুলিশ ধাওয়া করে তাকে ঠাণ্ডা মাথায় গুলি করে হত্যা করে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে। এসময় লাঠিচার্জ ও গুলিবর্ষণে আহত হয়েছে আরও ৩০ জন মাদ্রাসা ছাত্র। গুরুতর আহত একজন নিখোঁজ রয়েছে। বেলা সোয়া ১১টার দিকে মুজিব সড়কে জিলা স্কুলের সামনে বিনা উস্কানিতে পুলিশ মিছিলে হামলা চালায়। মোট ৭৭ রাউন্ড গুলিবর্ষণের কথা স্বীকার করেছে পুলিশ।
যশোরে গুলিবর্ষণ ও নিহত হওয়ার সংবাদ ছড়িয়ে পড়ায় দেশব্যাপী প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। হত্যার প্রতিবাদ ও হরতালের সমর্থনে দেশের বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। গুলিতে মাদ্রাসা ছাত্র নিহত হওয়ার ঘটনা তদন্তে যশোরের জেলা প্রশাসক ১ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। শান্তিপূর্ণ মিছিলে গুলিবর্ষণ করে মানুষ হত্যার বিচার দাবি করেছে ‘হেফাজতে ইসলাম’।
বিতর্কিত নারীনীতি বাতিলের দাবিতে দেশব্যাপী আহূত হরতালের সমর্থনে গতকাল রোববার সকালে যশোর শহরের ভৈরব চত্বরে সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিলের ডাক দেয় হেফাজতে ইসলাম। শহরের বিভিন্ন প্রবেশ পয়েন্ট দিয়ে খণ্ড খণ্ড মিছিল সকাল ১০টার পর ভৈরব চত্বরের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। একটি মিছিল ভৈরব চত্বরে অবস্থান নেয়ার পর পুলিশ তাদের হটিয়ে দেয়। পরে বেলা সোয়া ১১টার দিকে আরও একটি মিছিল রেলস্টেশন এলাকা দিয়ে মুজিব সড়ক ধরে ভৈরব চত্বরের দিকে যাচ্ছিল। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বেলা সোয়া ১১টার দিকে মিছিলটি জিলা স্কুলের কাছাকাছি পৌঁছলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। এ সময় হেফাজতে ইসলাম নেতাদের সঙ্গে পুলিশ কর্মকর্তাদের বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। এক পর্যায়ে পুলিশ মিছিলকারীদের ওপর আক্রমণ করে। মিছিলকারীরাও পাল্টা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। কিছু সময় পর আকস্মিক গুলিবর্ষণ শুরু করে পুলিশ। এতে মিছিলকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। এ সময় পুলিশ ধাওয়া করে রেলস্টেশনের কাছে একটি নর্দমার মধ্যে হুসাইন আহমেদ নামে এক মিছিলকারীকে ধরে ফেলে। পুলিশ হুসাইন আহমেদকে ঠাণ্ডা মাথায় গুলি করে গুরুতর জখম করে। যশোর জেনারেল হাসপাতালে নেয়ার পর হুসাইন আহমদ মারা যায়। নিহত হুসাইন আহমদ মনিরামপুরের মাদানিনগর কওমী মাদ্রাসা থেকে কুরআনে হাফেজ হওয়ার পর ওই মাদ্রাসায় পঞ্চম শ্রেণীতে লেখাপড়া করতো। নিহত হুসাইন মাদানিনগর মাদ্রাসার মসজিদে মুয়াজ্জিন হিসেবেও কর্মরত ছিল।
প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও জানান, হুসাইন আহমদ পুলিশের হাতে ধরা পড়ার পর তার জীবন রক্ষার্থে অনেক কাকুতি-মিনতি করে। আশপাশের বাড়ির মহিলারাও হুসাইনকে গুলি না করার জন্য পুলিশের হাতে-পায়ে ধরে অনুরোধ জানায়। সবার অনুরোধ উপেক্ষা করে পুলিশের এক সদস্য পেটে শটগান ঠেকিয়ে গুলি করে হত্যা করে হুসাইনকে।
এদিকে সংঘর্ষ চলাকালে লাঠি, ইট প্রভৃতির আঘাতে চার পুলিশ, এক সাংবাদিকসহ অন্তত ৩০ জন আহত হয়। আহত তিন পুলিশ সদস্যকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এরা হলো—কনস্টেবল কামরুল ইসলাম, শামসুজ্জোহা ও হেলালউদ্দিন। এসআই মিজান প্রাথমিক চিকিত্সা নিয়েছেন। কর্তব্য পালনকালে ইটের আঘাতে আহত হয়েছেন স্থানীয় দৈনিক লোকসমাজের চিফ ফটোসাংবাদিক হানিফ ডাকুয়া।
ঘটনার পর বিকেলে স্থানীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে হেফাজতে ইসলাম। সংগঠনটির নেতারা দাবি করেন, তারা ভৈরব চত্বরে বিক্ষোভ সমাবেশের জন্য আগেই প্রশাসনের অনুমতি নিয়েছিলেন। তা সত্ত্বেও পুলিশ বিনা উস্কানিতে তাদের মিছিলে হামলা চালিয়েছে। পুলিশের গুলিতে একজন নিহত হওয়া ছাড়াও আশিকুর রহমান নামে একজন নিখোঁজ রয়েছে। নিখোঁজ আশিক মাদানিনগর মাদ্রাসার ছাত্র। সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের হামলায় আহতদের একাংশের তালিকা প্রকাশ করা হয়। এরা হলেন— মাদানিনগর মাদ্রাসার ছাত্র মো. মাশুকুর রহমান, মো. আবদুল আলিম, মো. আবু বকর, মো. হায়দার আলী, মো. মাহমুদুল হাসান, মো. মুস্তাইন বিল্লাহ, আব্দুর রহমান, মো. বেলাল হোসেন, মো. রাশেদুল ইসলাম, আল আমিন, মো. রাশিদুল ইসলাম, যশোর রেলস্টেশন মাদ্রাসার ছাত্র মো. কামরুল ইসলাম, ইসমাইল হোসেন এবং একই মাদ্রাসার শিক্ষক মাওলানা আবুল খায়ের, মাওলানা আনোয়ারুল করিম ও মাওলানা আব্দুল হক।
সংবাদ সম্মেলন থেকে বিনা উস্কানিতে মিছিলে গুলিবর্ষণ করে মানুষ হত্যার তীব্র নিন্দা করা হয়। সংগঠনটির নেতারা এ ঘটনার জন্য দায়ী পুলিশ কর্মকর্তাদের বিচারের দাবি জানান। এক প্রশ্নের জবাবে হেফাজতে ইসলামের নেতারা জানান, আজ আহূত হরতালে তারা মাঠে থাকবেন।
সংবাদ সম্মেলনে হেফাজতে ইসলাম নেতা মুফতি আরিফ বিল্লাহ, মীর মোহর আলী, রফিকুল ইসলাম, মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ, আবদুল হালিম, মাওলানা আবুল খায়ের, মাওলানা আল আমিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
গুলিতে মাদ্রাসা ছাত্র নিহত হওয়া প্রসঙ্গে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাকির হোসেন ও কোতোয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ইমদাদুল হক শেখ বলেন, শুধু ১২ রাউন্ড রাবার বুলেট ছুড়েছে পুলিশ। মিছিলকারীদের কাছে রক্ষিত আগ্নেয়াস্ত্রের গুলিতে হুসাইন আহমদ মারা গেছে বলে পুলিশ দাবি করেন। পুলিশ সুপার কামরুল আহসানও এ সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে যান। পরে অবশ্য কোতোয়ালি থানার সেকেন্ড অফিসার মুস্তাফিজুর রহমান শটগানের ৭৭ রাউন্ড গুলি ছোড়ার কথা স্বীকার করেন। বিকেলে এ রিপোর্ট লেখার সময় ঘটনার ব্যাপারে পুলিশের পক্ষ থেকে মামলা করার প্রস্তুতি চলছিল।
অন্যদিকে মিছিলে গুলিবর্ষণের ঘটনা শোনার পর পরই যশোর সদর আসনের সংসদ সদস্য খালেদুর রহমান টিটো ও জেলা প্রশাসক মো. নূরুল আমিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তারা প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে হাফেজ হুসাইন আহমদ হত্যার বর্ণনা শোনেন। পরে জেলা প্রশাসক মো. নূরুল আমিন ঘটনা তদন্তে এক সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। কমিটির একমাত্র সদস্য হলেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মীর জহুরুল ইসলাম।
ইসলামী আইন বাস্তবায়ন কমিটির জেলা সভাপতি আনোয়ারুল করিম যশোরী আমার দেশকে বলেন, হরতালের সমর্থনে শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশ হামলা চালায়। মিছিলকারীদের হাতে কোনো অস্ত্রশস্ত্র ছিল না। প্রত্যেকের হাতে ছিল পবিত্র কোরআন শরিফ। তিনি আজকের হরতাল স্বতঃস্ফূর্তভাবে পালনের মাধ্যমে জালিমদের অত্যাচারের জবাব দিতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানান।
পুলিশের গুলিতে নিহত হুসাইন আহমদের লাশের ময়নাতদন্ত যশোর জেনারেল হাসপাতাল মর্গে সম্পন্ন হয়েছে। বাদ আছর কেন্দ্রীয় ঈদগাহে তার নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও পুলিশ লাশ হস্তান্তরে বিলম্ব করায় জানাজা বিলম্বে অনুষ্ঠিত হয়। সন্ধ্যার আগ মুহূর্তে নিহতের জানাজা শেষে পুলিশ লাশ কর্ডন করে তার গ্রামের বাড়িতে নিয়ে দাফন করে। এসময় নিহতের গ্রামের বাড়িতে হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়।
শেরপুরে জামায়াত নেতাসহ ৬ জন গ্রেফতার : শেরপুর প্রতিনিধি জানান, ইসলামী আইন বাস্তবায়ন কমিটি আহূত হরতালকে সামনে রেখে ভোরে শেরপুর জেলা জামায়াতে ইসলামীর জেলা মজলিশে শূরার সদস্য ও সাবেক জেলা আমির ডা. আব্দুল জলিলসহ ৬ জনকে শেরপুর সদর থানা পুলিশ গ্রেফতার করে। অন্য গ্রেফতারকৃতরা হলেন শেরপুর তেরাবাজার জামিয়া সিদ্দিকিয়া মাদ্রাসার সুপার মাওলানা নুরুল ইসলাম, সহকারী সুপার মাওলানা সিদ্দিক আহমেদ, পূর্বশেরী মহিলা মাদ্রাসার সুপার মাওলানা আজিজুল হক, তেরাবাজার মাদ্রাসার কর্মচারী খলিলুর রহমান ও সৈয়দ আহমদ। এছাড়া পুলিশ ৩২০টি পোস্টার ও প্রচারপত্র আটক করে। পরে রোববার বিকেলে শেরপুর সদর থানা পুলিশ তাদেরকে শেরপুরের মুখ্য বিচারিক হাকিম মিয়া মোহাম্মদ আলী আকবার আজিজীর আদালতে সোপর্দ করে। আদালত জামিনের আবেদন মঞ্জুর করে তাদেরকে মুক্তি দেয়ার নির্দেশ দেন।
সিরাজগঞ্জে মিছিলে পুলিশের বাধা : সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি ২০১১ বাতিল এবং জাতীয় শিক্ষানীতি ও ফতোয়াবিরোধী হাইকোর্টের রায় বাতিলের দাবিতে সিরাজগঞ্জে ওলামা-মাশায়েখদের সভায় বাধা দিয়েছে পুলিশ। তানযীমুল মাদারিস দ্বীনিয়া সিরাজগঞ্জ জেলা শাখার উদ্যোগে গতকাল সকাল ১০টায় স্বাধীনতা স্কয়ারে ডাকা সভা করতে না পারায় আলেমদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিলেও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। পরে রেলওয়ে কলোনি কওমী মসজিদে মাওলানা মাহমুদুল আলমের সভাপতিত্বে সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বক্তব্য রাখেন মাওলানা আব্দুল হক হক্কানী, মাওলানা নজরুল ইসলাম, মাওলানা আব্দুস সালাম, মাওলানা আম্বর আলী, মাওলানা আহম্মদ আলীসহ প্রমুখ

কোরআনবিরোধী আইন বাতিলের দাবি : ১৪ মে মহাসমাবেশের মাধ্যমে রাজধানী অচল করে দেয়া হবে : ওলামা পরিষদ

স্টাফ রিপোর্টার

সম্মিলিত উলামা মাশায়েখ পরিষদের নেতারা বলেছেন, সরকার ইসলামের ওপর যে কুঠারাঘাত হানছে তাতে জাতি ক্ষুব্ধ। কুরআন-সুন্নাহবিরোধী নারী নীতিমালা বাতিল, ফতোয়া নিষিদ্ধের চক্রান্ত বন্ধ, ধর্মহীন জাতীয় শিক্ষানীতি সংশোধন এবং ইফা ডিজির অপসারণসহ বিভিন্ন দীনি ইস্যুতে সরকারের দেয়া প্রতিশ্রুতি আদায়ের লক্ষ্যে ১৪ মে পল্টনে মহাসমাবেশের মাধ্যমে রাজধানী অচল করে দেয়া হবে। এর মধ্যে দাবি মেনে না নিলে সরকার পতনের লাগাতার কর্মসূচি পালন করা হবে। তারা বলেন, ইসলামী মূল্যবোধ রক্ষায় আমরা জীবন বাজি রেখে শাহাদাতের সংকল্প নিয়ে এগিয়ে যাব ইনশাআল্লাহ। তারা আবেগতাড়িত হয়ে কোনো কর্মসূচি পালন না করে নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় ধৈর্য সহকারে আন্দোলন জোরদার করার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান।
গতকাল বিকেলে সম্মিলিত উলামা-মাশায়েখ পরিষদের উদ্যোগে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে এক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। পরিষদের সভাপতি মাওলানা মুহিউদ্দীন খানের সভাপতিত্বে পরিষদ কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় দেশের বর্তমান সঙ্কটময় পরিস্থিতি নিয়ে ব্যাপক পর্যালোচনা হয়। এতে বক্তব্য রাখেন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিচারপতি মোহাম্মদ আবদুর রউফ, পরিষদ নেতা মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী, মাওলানা আতাউল্লাহ, ফরায়েজী আন্দোলন নেতা আবদুল্লাহ মো. হাসান, অধ্যাপক ড. ইয়াহইয়ার রহমান, অধ্যাপক ড. আবদুল মা’বুদ, মাওলানা মুফাজ্জল হোসাইন খান, অধ্যাপক হাসান মঈনুদ্দীন, মাওলানা মহিউদ্দীন রব্বানী, ড. মাওলানা খলিলুর রহমান মাদানী, আলমগীর মজুমদার, মমতাজ চৌধুরী, অধ্যাপক এহতেশাম সরোয়ার প্রমুখ।
তামিরুল মিল্লাত মাদরাসা : এদিকে কোরআন-সুন্নাহবিরোধী নারী নীতিসহ যেকোনো ধরনের ইসলামবিরোধী তত্পরতা প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছেন তামিরুল মিল্লাত মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা যাইনুল আবেদীন। গতকাল মাদরাসা ময়দানে স্বাধীনতা দিবসের আলোচনা ও আলিম পরীক্ষার্থীদের দোয়া অনুষ্ঠানে তিনি আরও বলেন, আদর্শ ও দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গঠনে নৈতিক ও ইসলামী শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই।
কওমী মাদ্রাসা বোর্ড : কওমী মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড গওহরডাঙ্গার উদ্যোগে গতকাল নারী নীতির কোরআনবিরোধী ধারা প্রত্যাহার এবং হাইকোর্টের ফতোয়াবিরোধী রায় বাতিলের দাবিতে বিশাল সমাবেশ করেছে। বোর্ডের চেয়ারম্যান মুফতি রুহুল আমিনের সভাপতিত্বে এবং মহাসচিব মাওলানা শামসুল হকের পরিচালনায় সমাবেশে বক্তারা বলেন, নারী নীতিতে সিডো সনদের অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে কোরআনবিরোধী ধারা সংযোজন মুসলিম উম্মাহ মেনে নেবে না।

ইসলামশূন্য নয় হাসিনাশূন্য হবে দেশ : মুফতি আমিনী











স্টাফ রিপোর্টার
ইসলামী আইন বাস্তবায়ন কমিটির আমির ও ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মুফতি ফজলুল হক আমিনী বলেছেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধান এজেন্ডা হলো—এ দেশ থেকে ইসলামকে বিদায় করা। বিদেশি শক্তির ইঙ্গিতে শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে ইসলামশূন্য করতে চায়। এ দেশের মুসলমানরা তা হতে দেবে না। প্রয়োজেনে দেশ হাসিনাশূন্য হতে পারে; কিন্তু ইসলামশূন্য হবে না। তিনি বলেন, সরকার ইসলাম ও কোরআন ধ্বংসের ষড়যন্ত্র করছে। নির্বাচনের আগে শেখ হাসিনার হাতে তসবিহ ছিল, এখন তা নেই। সরকারের ইসলামবিরোধী কার্যকলাপের প্রতিবাদে ৪ এপ্রিল কোরআন রক্ষার হরতাল ডাকা হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, প্রয়োজনে লাখ লাখ আলেম ও ছাত্র-জনতা গ্রেফতার, কারাবরণ এবং জীবন দিতে প্রস্তুত আছে। কিন্তু কোরআনবিরোধী কোনো নীতিমালা এ দেশে বাস্তবায়ন হতে দেবে না।
গতকাল সকালে বাংলাদেশ ফটোজার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন মিলনায়তনে ইসলামী ছাত্র মোর্চা ঢাকা মহানগরীর উদ্যোগে ‘সঙ্কটে ইসলাম ও ছাত্রসমাজের ভূমিকা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মুফতি আমিনী এসব কথা বলেন। ছাত্র মোর্চা ঢাকা মহানগর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমানের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি খুরশিদ আলমের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সভায় আরও বক্তব্য রাখেন, ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী, যুগ্ম মহাসচিব মুফতি তৈয়্যেব, সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতি ফয়জুল্লাহ, প্রচার সম্পাদক মাওলানা আহলুল্লাহ ওয়াছেল, ঢাকা মহানগর সভাপতি মাওলানা আবুল কাশেম, যুব মোর্চার সভাপতি মাওলানা সাখাওয়াত হোসাইন প্রমুখ

Tuesday 12 April 2011

ইসলামী সংগঠনের বিক্ষোভে উত্তাল রাজধানী : কোরআনবিরোধী নারীনীতি প্রতিহত করার ঘোষণা













স্টাফ রিপোর্টার

কোরআনবিরোধী নারী উন্নয়ন নীতিমালা ও ফতোয়া নিষিদ্ধের রায় বাতিলসহ বর্তমান আওয়ামী সরকারের ইসলামবিরোধী বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে গতকাল বিক্ষোভে উত্তাল ছিল রাজধানী ঢাকা। পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী প্রায় সব ধর্মীয় সংগঠন ও মুসল্লির উদ্যোগে দিনব্যাপী চলে বিক্ষোভ। তবে বাদ জুমা বিভিন্ন মসজিদ থেকে মিছিল নিয়ে মুক্তাঙ্গন এলাকায় জড়ো হলে পল্টন ও আশপাশের এলাকা মিছিলের নগরীতে পরিণত হয়। একই সময় বিভিন্ন সংগঠনের বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিলে স্থবির হয়ে পড়ে এ এলাকার স্বাভাবিক কার্যক্রম। পল্টন থেকে জিরো পয়েন্ট, প্রেসক্লাব, নাইটিংগেল মোড়, দৈনিক বাংলাসহ বিভিন্ন সড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকে বেশ কয়েক ঘণ্টা। আগে থেকেই পল্টন এলাকায় পানিকামান, রায়ট কার ও প্রিজনভ্যান নিয়ে বিপুলসংখ্যক পুলিশ অবস্থান নিলেও তারা মিছিলকারীদের বাধা দেয়নি।
পৃথক বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে বক্তারা আওয়ামী সরকারের কোরআন ও ইসলামবিরোধী সব কর্মকাণ্ড প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়ে বলেন, এদেশ ৯০ শতাংশ মুসলমানের দেশ। এখানে কোরআন ও ইসলামবিরোধী কোনো আইন করতে দেয়া হবে না। জীবন দিয়ে হলেও এসব আইন প্রতিহত করা হবে। তারা বলেন, অবিলম্বে কোরআনবিরোধী নারী উন্নয়ন নীতিমালা, ফতোয়াবিরোধী রায়, ধর্মহীন শিক্ষানীতি বাতিল এবং ইমামদের সামনে নৃত্যানুষ্ঠান করার অপরাধে ইফা ডিজিকে অপসারণ করতে হবে। অন্যথায় ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের পতন ঘটানো হবে। তারা ৪ এপ্রিল ঘোষিত হরতাল
সফলের আহ্বান জানিয়ে বলেন, এই হরতালে সরকার বাধা দিলে মিসরের তাহরির স্কয়ারের মতো ঢাকা অবরোধ করা হবে। এদিকে রাজধানীর পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন স্থানে একই ধরনের বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে জানা গেছে।
সম্মিলিত উলামা-মাশায়েখ পরিষদ : গতকাল বাদ জুমা পল্টন এলাকায় সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে সম্মিলিত উলামা-মাশায়েখ পরিষদ। মুক্তাঙ্গনে মিছিলপূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক ড. খলিলুর রহমান মাদানী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার কোরআনবিরোধী যেসব আইন
করতে যাচ্ছে, এদেশের মানুষ বুকের তাজা রক্ত দিয়ে হলেও তা প্রতিহত করবে। উলামারা শহীদ হতে জানেন। ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে প্রয়োজনে এদেশে ইসলামী বিধান প্রতিষ্ঠিত করা হবে। তিনি অবিলম্বে কোরআনবিরোধী নারী উন্নয়ন নীতি খসড়া ও নাস্তিক্য শিক্ষানীতি বাতিলের দাবি করেন। অন্যথায় সরকার পতনের একদফার আন্দোলনে নামার ঘোষণা দেন তিনি। সমাবেশ থেকে আগামী মঙ্গলবার প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন এবং ১৮ মার্চ সারাদেশে সব মসজিদ থেকে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
মাওলানা মহিউদ্দীন রব্বানির সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন ইসলামিক পার্টির সভাপতি অ্যাডভোকেট আবদুল মোবিন, মুসলিম লীগ মহাসচিব কাজী আবুল খায়ের, ন্যাপ ভাসানী সভাপতি শেখ আনোয়ারুল হক, শর্ষিনার পীর শাহ আরিফ বিল্লাহ সিদ্দিকী, মাওলানা আহমেদ আলী কাসেমি, মমতাজ চৌধুরী প্রমুখ। সমাবেশ শেষে বিশাল একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে পল্টন, প্রেস ক্লাব, কদম ফোয়ারা মোড়, কাকরাইল হয়ে মালিবাগ মোড়ে গিয়ে শেষ হয়। এ মিছিলে আরও অংশ নেয় আহকামে শরিয়াহ হেফাজত কমিটি, মাদ্রাসা ছাত্র কল্যাণ পরিষদ, ইসলাহুল মুসলিমিন বাংলাদেশ, জাতীয় ফতোয়া বোর্ড, আইম্মাহ পরিষদ প্রমুখ সংগঠন। এদিকে দেশের সব বিভাগ এবং বড় জেলাতেও উলামা পরিষদের উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল-সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয় বলে জানা গেছে।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ : কোরআনবিরোধী নারীনীতি বাতিলসহ বিভিন্ন দাবিতে মুক্তাঙ্গনে বিরাট সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল করে চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। বাদ জুমা সমাবেশ শুরু হয়ে বিকাল পর্যন্ত চলে। এতে ঢাকার আশপাশের এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে লোকজন যোগ দেয়। দলের ঢাকা মহানগর সভাপতি অধ্যাপক এটিএম হেমায়েত উদ্দিনের সভাপতিত্বে সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে দলের নায়েবে আমির মাওলানা ফয়জুল করিম বলেন, সম্পদ বণ্টনে নারী-পুরুষের সমানাধিকার বাস্তবায়ন হলে দেশের ঘরে ঘরে আগুন জ্বলে উঠবে। নারী অধিকার নিয়ে যারা কাজ করছেন, তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন— ঘরে কী আপনাদের স্বামীরা আপনাদের অধিকার দেয় না। যারা চিল্লাচ্ছেন, তাদের পরিবারে শান্তি নেই। তাদের স্বামীদের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই।
সমাবেশে ঢাকা মহানগর আমির অধ্যাপক এটিএম হেমায়েত উদ্দিন বলেন, সরকার নারীনীতি বাস্তবায়নের চেষ্টা করলে সংসদ, সচিবালয়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাও করা হবে।
ইসলামী আইন বাস্তবায়ন কমিটি : কোরআনবিরোধী নারী নীতিমালার প্রতিবাদে গতকাল রাজধানীসহ সব জেলা-উপজেলা পর্যায়ে পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে ইসলামী আইন বাস্তবায়ন কমিটি। কেন্দ্রীয়ভাবে বাদ জুমা মুক্তাঙ্গনে মিছিলপূর্ব সমাবেশে সভাপতির ভাষণে কমিটির আমির ও ইসলামী ঐক্যজোট চেয়ারম্যান মুফতি ফজলুল হক আমিনী বলেন, আগামী ৪ এপ্রিলের হরতাল হলো কোরআন রক্ষার হরতাল। হাইকোর্ট থেকে ফতোয়া নিষিদ্ধের বিরুদ্ধে জনগণের প্রতিবাদের হরতাল। এ হরতাল সফলে মাঠে নামা প্রত্যেক মুসলমানের ইমানি দায়িত্ব। তিনি বলেন, সুপ্রিমকোর্ট থেকে ফতোয়ার ব্যাপারে মতামত প্রদানের জন্য আলেম নির্বাচন করতে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে ইসলামী ফাউন্ডেশনের কবরপূজারি ডিজি শামিম মুহাম্মদ আফজালকে। আমরা তার এ নির্বাচনকে মানি না। কারণ সে কোরআনের দুশমন, ইসলামের দুশমন, রাসুলের দুশমন। সে ইমামদের সঙ্গে নর্তকী নাচিয়েছে। সমাবেশে অন্যান্যের মাঝে বক্তব্য রাখেন মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী, মুফতি মুহাম্মদ তৈয়্যেব, অধ্যাপক মাওলানা আবদুল করিম, মুফতি ফয়জুল্লাহ, মাওলানা আবুল কাশেম, মাওলানা আহলুল্লাহ ওয়াছেল প্রমুখ। সমাবেশ শেষে বিশাল মিছিল মুক্তাঙ্গন থেকে জিরো পয়েন্ট হয়ে প্রেস ক্লাবের সামনে গিয়ে শেষ হয়।
কওমী মাদ্রাসা বোর্ড : বিভিন্ন দাবিতে সকালে মুক্তাঙ্গনে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করে বাংলাদেশ কওমী মাদ্রাসা বোর্ড (বেফাক)। মিছিলপূর্ব সমাবেশে বক্তারা বলেন, সম্পদে নারী-পুরুষ সমান সুযোগের নীতি করেও জনগণকে ধোঁকা দেয়ার চেষ্টা করছে সরকার। গণমাধ্যমে ছলনাময় মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর গলাবাজি করছে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ লোকজন। নারী নীতিমালায় ১৯টি সমস্যা রয়েছে বলে উল্লেখ করেন তারা। সমাবেশে বিতর্কিত জাতীয় শিক্ষানীতির বিষয়ে বেফাকের ১২ দফা ও ফতোয়াবিরোধী হাইকোর্টের রায় প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়।
বেফাক সহ-সভাপতি আল্লামা আশরাফ আলীর সভাপতিত্বে মিডিয়া শাখার সমন্বয়ক হুমায়ুন আইয়ুবের পরিচালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সহ-সভাপতি মুফতি শহিদুল ইসলাম, মহাসচিব মাওলানা আবদুল জাব্বার, সহকারী মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক, আল্লামা আবদুল মালেক হালিম, মাওলানা নিজাম উদ্দিন, খেলাফত আন্দোলনের জাফরুল্লাহ খান, মাওলানা মজিবুর রহমান হামিদী, মুফতি মো. তৈয়ব, মুফতি বশির উল্লাহসহ প্রায় অর্ধশত মাদ্রাসা প্রতিনিধি।
খেলাফত মজলিস : বিক্ষোভ মিছিলপূর্ব সমাবেশে খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাক বলেন, কোরআন ও ইসলামের শত্রু বর্তমান সরকারের পতনই এখন একমাত্র বিকল্প। ক্ষমতায় এসে তারা একের পর এক কোরআন ও ইসলামের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করে যাচ্ছে। এ সরকারের হাতে দেশ, জনগণ ও ইসলাম নিরাপদ নয়।
দলের ঢাকা মহানগর সভাপতি মাওলানা নোমান মাজহারীর সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন মাওলানা শফিক উদ্দিন, শেখ গোলাম আসগর, অধ্যাপক মুহাম্মদ আবদুল জলিল প্রমুখ। সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিল বিজয়নগর, পল্টন, প্রেস ক্লাব এলাকা প্রদক্ষিণ করে।
মহিলা জামায়াত : বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী মহিলা বিভাগের সেক্রেটারি খোন্দকার আয়শা সিদ্দিকা বলেছেন, ইসলাম নারীকে যে সম্মান, মর্যাদা ও অধিকার দিয়েছে—তা আমাদেরকে যথাযথভাবে উপলদ্ধি করতে হবে। কোরআনে বর্ণিত উত্তরাধিকার আইন যথেষ্ট বাস্তব ও নারীর জন্য সম্মানজনক। তিনি গতকাল সংগঠনের ধানমন্ডিতে মহানগরী কার্যালয়ে আয়োজিত থানা সেক্রেটারি সম্মেলনে সভানেত্রীর বক্তব্যে এ কথা বলেন।
খেলাফত মজলিস : বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমির মাওলানা আবদুর রব ইউসুফী বলেন, ফতোয়া আছে, থাকবে। এর বিরুদ্ধে যারাই কথা বলবে, তাদের ব্যাপারে এদেশের ওলামায়ে কেরাম ও ইসলামপ্রিয় তাওহিদি জনতা সিদ্ধান্ত নেবে। গতকাল বাদ জুমা মুক্তাঙ্গন থেকে বিক্ষোভ মিছিল-পরবর্তী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। মজলিসের নগর সভাপতি প্রিন্সিপাল মাওলানা আবদুস সামাদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন মাওলানা আতাউল্লাহ আমিন, মাওলানা আজিজুর রহমান হেলাল, মাওলানা এনামুল হক মুসা, এম ছালেহ আহমদ, হাফেজ শামসুল আলম, নোমান উদ্দিন প্রমুখ।
জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম : জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম নেতারা বলেন, ইসলামবিদ্বেষী সাম্রাজ্যবাদীদের দালাল ধর্মহীন আওয়ামী সরকার এদেশ থেকে কোরআন-হাদিস ও ইসলামী আকিদা-বিশ্বাস নির্মূলের যে নীল নকশা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে—তার বিরুদ্ধে সম্মিলিত প্রতিরোধ গড়ে তোলা প্রত্যেক মুসলমানের ইমানি দায়িত্ব।
মাদ্রাসা ছাত্রকল্যাণ পরিষদ : সরকারের কোরআনবিরোধী নারীনীতি অনুমোদন এবং মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণের প্রতিবাদে বাংলাদেশ মাদ্রাসা ছাত্রকল্যাণ পরিষদ বাদ জুমা বায়তুল মোকাররম উত্তর গেট থেকে এক বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি পল্টন-প্রেস ক্লাব-কাকরাইল হয়ে মালিবাগ মোড়ে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়

৪ এপ্রিল সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক : কোরআনবিরোধী নারী নীতির বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছেন আলেম সমাজ












রকিবুল হক

উত্তরাধিকার সম্পত্তিতে নারী-পুরুষের সমান অধিকার রেখে সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভা বৈঠকে অনুমোদিত ‘জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতিমালা-২০১১’ এর খসড়ার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ-বিক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে দেশের ইসলামপ্রিয় মানুষ। কয়েক বছর ধরে এ নীতি করার ঘোষণা দেয়ার পর অবশেষে তা অনুমোদনের খবরে হতবাক ও চরম ক্ষুব্ধ হয়েছেন তারা। এ নীতিকে সম্পূর্ণ কোরআনের আইনবিরোধী উল্লেখ করে তা প্রত্যাখ্যান করেছে ধর্মীয় সংগঠনগুলো। কোরআনের আইনবিরোধী এ নীতির প্রতিবাদে গতকাল রাজধানীতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে সম্মিলিত উলামা-মাশায়েখ পরিষদ, খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, ইসলামী ঐক্যজোটসহ বিভিন্ন সংগঠন।
সরকারের এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে গতকাল মুক্তাঙ্গনের সমাবেশ থেকে ৪ এপ্রিল দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দিয়েছেন ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মুফতি ফজলুল হক আমিনী। এছাড়া খসড়া এ নীতি অনুমোদনের প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন, কওমি মাদ্রাসা বোর্ড, ফতোয়া বোর্ড, ন্যাপ ভাসানী প্রমুখ সংগঠন। এসব সংগঠনের নেতারা বলেন, ফতোয়া নিষিদ্ধের উদ্যোগ ও নারীনীতি প্রণয়ন একই সূত্রে গাঁথা। এর মাধ্যমে আওয়ামী সরকার দেশ থেকে ইসলামকে নির্মূল করতে চায়। কিন্তু এদেশের ধর্মপ্রাণ মানুষ তা কোনো অবস্থায়ই বরদাশত করবে না। কোরআনের আইন পরিবর্তনের এখতিয়ার কারও নেই। অবিলম্বে নারীনীতি বাতিল ও ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ড বন্ধ না করা হলে প্রয়োজনে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে এ সরকারের পতন ঘটানো হবে বলে ঘোষণা দেন তারা।
ইসলামী ঐক্যজোট : কোরআনবিরোধী নারীনীতির প্রতিবাদে গতকাল বিকালে মুক্তাঙ্গনে ইসলামী ঐক্যজোটের বিক্ষোভ মিছিলপূর্ব সমাবেশে সংগঠনের চেয়ারম্যান মুফতি ফজলুল হক আমিনী বলেন, এ নীতিমালা কোরআনের পরিপন্থী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে হাত দিয়ে কোরআনের আইন পরিবর্তন করতে যাচ্ছেন আল্লাহতায়ালা তার সেই হাত চুরমার এবং তার গদিতে আগুন জ্বালিয়ে দেবেন। তিনি বলেন, নারীনীতি অনুমোদন প্রমাণ করে তিনি ফতোয়াকেও নিষিদ্ধ করে দেবেন। আর ফতোয়া নিষিদ্ধ হলে ইসলাম নিষিদ্ধ হবে। এই এখতিয়ার কারও নেই। প্রত্যেক মুসলমানের দায়িত্ব কোরআন রক্ষা করা। তিনি দেশের সব মাদ্রাসা বন্ধ রেখে ছাত্র ও শিক্ষকদের আন্দোলনে নামার আহ্বান জানান।
তিনি নারীনীতির প্রতিবাদ এবং অবিলম্বে এটা বাতিলসহ ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে ৪ এপ্রিল দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ঘোষণা করেন। সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন নেজামে ইসলাম পার্টির সভাপতি মাওলানা আবদুর রকিব অ্যাডভোকেট, ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী প্রমুখ। সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল মুক্তাঙ্গন, জিরো পয়েন্ট ও পল্টন মোড় হয়ে প্রেস ক্লাবে গিয়ে শেষ হয়।
জামায়াতে ইসলামী : সম্পদের উত্তরাধিকার প্রশ্নে ‘নারী-পুরুষের সমান অধিকার’ দেয়ার প্রস্তাব রেখে ‘নারী উন্নয়ন নীতি-২০১১’ এর খসড়া মন্ত্রিসভা অনুমোদন করার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমাদ ও ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলাম।
এক বিবৃতিতে তারা বলেন, পবিত্র কোরআনে আল্লাহপাক উত্তরাধিকার সূত্রে মুসলিম নারী ও পুরুষের জন্য সম্পত্তিতে কে কত অংশ পাবে তা সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছেন। শত শত বছর ধরে এ আইন আমাদের সমাজে চালু আছে। এমনকি ব্রিটিশ আমলসহ কোনো আমলেই এই আইনের ওপর হস্তক্ষেপ করার সাহস কোনো সরকার করেনি। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান মহাজোট সরকার মুসলিম উত্তরাধিকার আইন পরিবর্তনের মাধ্যমে কোরআনের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। আল্লাহ বর্ণিত আইন বাতিল করার ক্ষমতা কোনো সরকারেরই নেই। এই খসড়া নীতিমালা অনুমোদনের মাধ্যমে সরকার নিজেদের প্রকাশ্যে ইসলামবিরোধী সরকার হিসেবে চিহ্নিত করল। অথচ নির্বাচনের প্রাক্কালে আওয়ামী লীগ ঘোষণা দিয়েছিল, ইসলামবিরোধী কোনো আইন পাস করা হবে না। তারা বলেন, সরকার নারীদের প্রতি বৈষম্য দূর করার নামে কোরআনের আইন পরিবর্তনের যে ঘোষণা দিয়েছে তার প্রতিবাদ করা মুসলিম নারী-পুরুষ সবার ঈমানী দায়িত্ব। শতকরা ৯০ ভাগ মুসলমানের এ দেশে কোরআনের আইন পরিবর্তনের উদ্যোগ দেশবাসী কখনও মেনে নেবে না। এদেশের আলেম সমাজ ও তৌহিদী জনতা এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে ইনশাআল্লাহ। এ হঠকারী সিদ্ধান্ত বাতিল করার জন্য তারা সরকারের কাছে জোর দাবি জানান। অন্যথায় দায়দায়িত্ব সরকারকেই বহন করতে হবে বলে তারা উল্লেখ করেন।
ইসলামী আন্দোলন : ইসলামী আন্দোলনের আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল করিম এক বিবৃতিতে নারী উন্নয়ন নীতিমালার অনুমোদনকে ইসলামের বিরুদ্ধে সরাসরি আক্রমণ হিসেবে অভিহিত করে বলেন, যারা কোরআনের সুস্পষ্ট আইন সম্পত্তির বণ্টনকে অস্বীকার করে নতুন আইন প্রণয়ন করে, তারা সরাসরি কোরআনকেই অস্বীকার করে। আর কোরআনকে অস্বীকারকারী কেউ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠের দেশের মন্ত্রিত্বে থাকতে পারে না। তিনি সরকারের বিরুদ্ধে অপ্রতিরোধ্য আন্দোলন করার হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
খেলাফত আন্দোলন : বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা মোহাম্মদ জাফরুল্লাহ খান বলেছেন, সম্পদে উত্তরাধিকার প্রশ্নে মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত নারী-পুরুষ সমানাধিকার আইন সম্পূর্ণ কোরআনবিরোধী। এটা পবিত্র কোরআনের বিধানের ওপর সরাসরি হস্তেক্ষেপ এবং মহান আল্লাহতায়ালার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার শামিল। তিনি ঈমান ও মুসলিম কৃষ্টি-কালচার রক্ষায় সরকারের ইসলামবিরোধী তত্পরতা প্রতিরোধের আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানান।
গতকাল বিকালে রাজধানীর মুক্তাঙ্গনে ‘উত্তরাধিকারে নারী-পুরুষ সমানাধিকার আইন বাতিলের দাবিতে’ বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিলপূর্ব সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। এতে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন দলের ঢাকা মহানগর আমির মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী, মাওলানা সাজিদুর রহমান ফয়েজী, মাওলানা সাইফুল ইসলাম সুনামগঞ্জী, মাওলানা ফখরুল ইসলাম, আবদুল মান্নান ঢালী ও মাওলানা আবুল কাসেম কাসেমী প্রমুখ। সমাবেশ শেষে রাজধানীতে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি জাতীয় প্রেস ক্লাব হয়ে পল্টন মোড়ে এসে শেষ হয়।
সম্মিলিত ওলামা-মাশায়েখ পরিষদ : খসড়া নারীনীতির বিরুদ্ধে গতকাল বিকালে মুক্তাঙ্গনে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে সম্মিলিত ওলামা-মাশায়েখ পরিষদ। মিছিলপূর্ব সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে পরিষদের সভাপতি মাওলানা মুহিউদ্দীন খান বলেন, কোরআন-হাদিসবিরোধী নারীনীতির নামে সরকার আল্লাহ ও রাসূলের (সা.) বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। মুসলমানরা এ আইন বরদাশত করবে না। তিনি অবিলম্বে এটা বাতিল ও ফতোয়া নিষিদ্ধের চক্রান্ত বন্ধের দাবি জানান। অন্যথায় হরতালসহ লাগাতার কর্মসূচি দিয়ে সরকার পতনের আন্দোলনের হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন। সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাক, মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী, জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, অধ্যক্ষ যাইনুল আবেদীন প্রমুখ। সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল পল্টন এলাকা প্রদক্ষিণ করে।
কওমি মাদ্রাসা বোর্ড : সম্পদে নারী-পুরুষের সমান অধিকার রেখে মন্ত্রিসভায় পাস হওয়া খসড়া নারী উন্নয়ন নীতিমালা কোরআনের সরাসরি বিরোধী বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ কওমি মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড-বেফাকের নেতারা। তারা বলেন, সরকারের নির্বাচনী অঙ্গীকার ছিল কোরআন, সুন্নাহবিরোধী কোনো আইন পাস করা হবে না। সরকার ক্ষমতায় এসে বিভিন্ন ধাপে পরিকল্পিতভাবে কাজের মাধ্যমে প্রমাণ করেছে এদেশে কোরআন সুন্নাহ থাকতে দেয়া হবে না। পশ্চিমা প্রভুদের খুশি করতে যদি এই নারী উন্নয়ন নীতিমালা চূড়ান্ত হয় তাহলে সরকার প্রধানসহ মন্ত্রিসভার সদস্যদের দেশ ছেড়ে পালানোর সুযোগ দেয়া হবে না।
বিবৃতি প্রদানকারীরা হলেন, বেফাকের সভাপতি ও চট্টগ্রাম হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক আল্লামা শাহ্ আহমেদ শফি, সহ-সভাপতি আল্লামা আশরাফ আলী, আল্লামা আনোয়ার শাহ্, আল্লামা মোস্তফা আজাদ, আল্লামা নূর হোসেন কাসেমী, বেফাক মহাসচিব মাওলানা আবদুল জব্বার, সহকারী মহাসচিব মাওলানা আবুল ফাতাহ মো. ইয়াহিয়া ও মাওলানা মাহফুজুল হক, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ সাদী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রতিনিধি মাওলানা সাজিদুর রহমান।
ছাত্রমজলিস : বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রমজলিসের কেন্দ্রীয় সভাপতি মুহাম্মদ শায়খুল ইসলাম ও সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ আবুল কাশেম এক যুক্ত বিবৃতিতে মন্ত্রিসভায় সম্পত্তিতে নারী-পুরুষের সমঅধিকার প্রতিষ্ঠার বিধান নিয়ে যে নারী উন্নয়ন নীতি ২০১১ অনুমোদন হয়েছে তার তীব্র প্রতিবাদ জ্ঞাপন করেন।
ওলামা-মাশায়েখ কমিটি : নারী উন্নয়ন নীতি অনুমোদনের প্রতিবাদে ওলামা-মাশায়েখ কমিটির প্রখ্যাত আলেমরা বলেন, শতকরা ৯০ ভাগ মুসলমানের এ দেশে কুরআনের আইন পরিবর্তনের উদ্যোগ দেশবাসী কখনও বরদাশত করবে না। এদেশের পীর-মাশায়েখ, আলেম সমাজ ও তৌহিদী জনতা এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে। এ আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত বাতিল না করা হলে কঠোর আন্দোলনের মাধ্যমে এ সরকারের ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডের জবাব দিতে আলেম সমাজ পিছপা হবে না। বিবৃতিদাতারা হলেন হজরত মাওলানা আবুল কালাম মুহাম্মাদ ইউসুফ, মাওলানা মুহাম্মাদ আবদুস সুবহান, মাওলানা মুহাম্মাদ আবু তাহের, মাওলানা অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম, মাওলানা যাইনুল আবেদীন, মাওলানা আবদুস শহীদ নাসিম, মাওলানা এটিএম মাসুম, ড. মাওলানা আবুবকর রফিক আহমদ, মাওলানা সিরাজুল ইসলাম, মাওলানা মুফতি আবদুস সাত্তার প্রমুখ।
শরিয়াহ হেফাজত কমিটি : আহকামে শরিয়াহ হেফাজত কমিটির আহ্বায়ক হাফেজ মাওলানা মাহবুবুর রহমান, যুগ্ম আহ্বায়ক মুফতি মাওলানা ড. আবু ইউসুফ খান, মহাসচিব অধ্যাপক মাওলানা আবদুছ ছবুর মাতুব্বর, শর্ষিণার ছোট পীর মাওলানা আরিফ বিল্লাহ সিদ্দিকী, পীর আলহাজ মাওলানা আবদুল মোমেন নেসারী প্রমুখ এক বিবৃতিতে বলেন, নারী-পুরুষ সমান অধিকার আইনের খসড়া অনুমোদন কুরআনের ওপর প্রকাশ্য হস্তক্ষেপ ছাড়া আর কিছুই নয়। এটা আল্লাহতায়ালা ও কুরআনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার শামিল। অতএব সরকারের এহেন সিদ্ধান্তকে অবিলম্বে বাতিল করতে হবে। অন্যথায় সঙ্গত কারণেই ঈমানদার মুসলমান জীবনের বিনিময়ে হলেও দেশবাসীকে সঙ্গে নিয়ে তা প্রতিহত করবে।
এ বিষয়ে আরও বিবৃতি দিয়েছেন, ইসলামী ঐক্য আন্দোলনের সিনিয়র নায়েবে আমির প্রিন্সিপাল রেজাউল আলম খন্দকার ও সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রুহুল আমিন, ন্যাপ ভাসানীর চেয়ারম্যান শেখ আনোয়ারুল হক ও মহাসচিব হাসরাত খান, জাতীয় ফতোয়া বোর্ডের মুফতি প্রফেসর ড. ইয়াহইয়ার রহমান, প্রফেসর ড. আবদুল মাবুদ, প্রফেসর মাওলানা আবদুস সালাম মাদানী, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সভাপতি শায়খ আবদুল মুমিন প্রমুখ।
প্রসঙ্গত, সম্পদের উত্তরাধিকার প্রশ্নে নারী-পুরুষের সমান অধিকার দেয়ার বিধান রেখে অনুমোদিত ‘নারী উন্নয়ননীতি ২০১১’-এর খসড়ায় নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে নারীর প্রতি সব ধরনের বৈষম্য বিলোপ সনদ (সিডও) বাস্তবায়নসহ ১৯৯৭ সালের নীতিমালার প্রায় সব বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এটি বাস্তবায়ন হলে কোরআনের আলোকে উত্তরাধিকার সংক্রান্ত যে আইন আছে তা পাল্টে যাবে