Saturday 29 January 2011

দেশজুড়ে বিক্ষোভ অবরোধ ভাংচুর



ডেস্ক রিপোর্ট

শেয়ারবাজারে ভয়াবহ দরপতনের ক্ষোভে গোটা দেশের বিনিয়োগকারীরা রাস্তায় নেমে আসেন গতকাল। বাজারের এই অবস্থাতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেটের কারসাজি বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিনিয়োগকারীরা। বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, সিলেট, নরসিংদী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, রাজশাহী, বগুড়া, রংপুরসহ বিভাগীয় ও জেলা শহরগুলোতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। আমাদের অফিস ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর :
অর্থমন্ত্রী ও গভর্নরের পদত্যাগ দাবি
চট্টগ্রাম : শেয়ারবাজারে নজিরবিহীন কেলেঙ্কারির কারণে গতকাল ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছিলেন চট্টগ্রামের বিনিয়োগকারীরা। তারা স্টক এক্সচেঞ্জের সামনে দফায় দফায় ব্যাপক বিক্ষোভ দেখান তারা। দুই দফায় এক ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করেন বিক্ষোভকারীরা। স্টক এক্সচেঞ্জ ভবন ছাড়িয়ে খাতুনগঞ্জ, জামালখান, প্রেসক্লাব এলাকাসহ নগরীর বিভিন্ন এলাকায় তাদের বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।
অস্বাভাবিক দরপতনের কারণে এসইসির নির্দেশে আধঘণ্টা লেনদেন চলার পর সকাল সাড়ে ১১টার দিকে বন্ধ হয়ে যায় চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) লেনদেন। বেলা ১২টা নাগাদ কয়েক হাজার বিনিয়োগকারী সিএসই’র সামনে জড়ো হন। তারা প্রথমে আগ্রাবাদ উপহার সিনেমা হলের সামনে থেকে মিছিল বের করেন। পরে স্টক এক্সচেঞ্জের সামনে শেখ মুজিব রোড অবরোধ করে মিছিল করতে থাকেন তারা। আগে থেকেই সিএসই ভবনের সামনে মোতায়েন ছিল পুলিশ। পরে তাদের সঙ্গে আরও শতাধিক পুলিশ সদস্য যোগ দেয়। পুলিশ একপর্যায়ে বিক্ষোভকারীদের রাস্তা থেকে হটিয়ে দেয়। এ সময় বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে পুলিশের কয়েক দফা ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়। পুলিশের ধাওয়া খেয়ে বিনিয়োগকারীরা সিএসই ভবন, উপহার সিনেমা হলের সামনে এবং বাদামতলী এলাকায় অবস্থান নিয়ে মিছিল করেত থাকেন। এ সময় এলাকার দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। ডবলমুরিং জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার তানভীর জানান, বিক্ষোভকারীদের অনুরোধ করলে তারা রাস্তা ছেড়ে দেয়। বেলা ২টার দিকে বিনিয়োগকারীরা আবারও রাস্তা বন্ধ করে মিছিল করে। কয়েক মিনিট পরই পুলিশ তাদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দেয়। সিএসই ভবনের আশপাশের এলাকায় বেলা ১২টা থেকে টানা ৩ ঘণ্টা দফায় দফায় বিক্ষোভ মিছিল হয়। বেলা ১টার দিকে নগরীর অন্যতম বৃহত্ বাণিজ্য কেন্দ্র খাতুনগঞ্জ থেকে কয়েকশ’ বিনিয়োগকারী মিছিল নিয়ে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে জড়ো হন। তারা অর্থমন্ত্রী ও বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নরের পদত্যাগ এবং ইউনিপে টু ইউসহ এলএমএল কোম্পানিগুলোর কার্যক্রম নিষিদ্ধের দাবি জানান।
এদিকে বিনিয়োগকারীরা বিকালে এক সভায় ইনভেস্টরস ফোরাম অব চিটাগং নামক একটি সংগঠন গঠন করেন। সংগঠনটির পক্ষ থেকে গত ১৫ দিন ধরে শেয়ারবাজারে যে ধস চলছে তা তদন্তে একজন সাবেক বিচারপতির নেতৃত্বে কমিটি গঠন করে দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করার দাবি জানানো হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জে অগ্নিসংযোগ, লাঠিচার্জে আহত ৫
নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জের হাজার হাজার বিনিয়োগকারী বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। সকালে থেকেই শহরে বিক্ষোভ মিছিল, সড়ক অবরোধের চেষ্টা, ব্রোকারেজ হাউজ ভাংচুর, রাস্তায় অগ্নিসংযোগ করেন তারা। এ সময় পুলিশের সঙ্গে বিনিয়োগকারীদের বাকবিতণ্ডা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পুলিশ বিক্ষুব্ধ বিনিয়োগকারীদের ওপর বেধড়ক লাঠিচার্জ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পুলিশের লাঠিচার্জে পাঁচজন আহত হন সারা শহরে আতঙ্ক দেখা যায় এবং একাংশে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
বাংলাদেশ ব্যাংক অফিসে ইটপাটকেল নিক্ষেপ
সিলেট : দেশের অন্য স্থানের মতো সিলেটের ব্রোকারেজ হাউজগুলো সাড়ে ১১টার পর থেকে বন্ধ করে দেয়া হয়। এরপর বিনিয়োগকারীরা আগের দিনের মতো রাস্তায় বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। এ সময় বাংলাদেশ ব্যাংক সিলেট শাখা অফিস লক্ষ্য করে কিছু ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। বিনিয়োগকারী ফোরামের উদ্যোগে এক প্রতিবাদ সমাবেশও অনুষ্ঠিত হয়। দুপুরে নগরের চৌহাট্টা এলাকার আরএন টাওয়ার থেকে বিনিয়োগকারীরা বিক্ষোভ মিছিল করেন। মিছিলটি নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তালতলা এলাকায় বাংলাদেশ ব্যাংকের সিলেট শাখায় একটি মিছিল থেকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। তবে এতে কোনো ক্ষতি হয়নি।
ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক আবরোধ, আটক ১
নরসিংদী : নরসিংদীর ৪টি ব্রোকারেজ হাউজের ৩ শতাধিক সাধারণ বিনিয়োগকারী গতকাল বিক্ষোভ মিছিল করে। মিছিলটি শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে অবস্থান নেয়। এতে প্রায় ৩ ঘণ্টা যানচলাচল বন্ধ থাকে। রাস্তার উভয় দিকে প্রায় ৫ কিঃমিঃ যানজট সৃষ্টি হয়। বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও লাঠিচার্জের ঘটনা ঘটে। পুলিশ মো. খবিরুল ইসলাম নামে এক বিনিয়োগকারীকে গ্রেফতার করেছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অর্থমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি
ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি: কেন্দ্রীয়ভাবে শেয়ার লেনদেন বন্ধ করে দেয়ার পর বিক্ষুব্ধ বিনিয়োগকারীরা শহরের রাস্তায় নেমে আসেন। দুপুরে কয়েকশ’ বিক্ষোভকারী বিক্ষোভ মিছিল করেন। এ সময় অস্বাভাবিকভাবে পতনের ঘটনায় অর্থমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করে স্লোগান দেয়া হয়। পরে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
রাজশাহীতে এসইসি সভাপতির পদত্যাগ দাবি
রাজশাহী শেয়ার বাজারে অব্যাহত দরপতন ও ঢাকায় বিনিয়োগকারীদের গ্রেফতারের প্রতিবাদে রাজশাহীতে বিক্ষোভ প্রদর্শন ও সমাবেশে করেছেন বিনিয়োগকারীরা। গতকাল দুপুরে বিনিয়োগকারীরা নগরীর সাহেববাজার এলাকার আইসিবি কার্যালয়ের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল করেন। মিছিল শেষে আইসিবি কার্যালয়ের সামনে বিক্ষুব্ধ সহস্রাধিক বিনিয়োগকারী সমাবেশে মিলিত হন। তারা দরপতনের জন্য আবারও এসইসি (সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশন) সভাপতিকে দায়ী করে তার পদত্যাগ দাবি করেন। এ সময় অর্থমন্ত্রীরও পদত্যাগ দাবি করেন তারা। তাদের অভিযোগ, দেশের পুঁজিবাজারে গত এক মাস ধরে দরপতন অব্যাহত থাকলেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। ফলে সিন্ডিকেট তাদের কারসাজি নির্বিঘ্নে চালিয়ে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের ভূমিকাকেও দায়ী করা হয়। তারা বলেন, এসইসি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের নেতিবাচক ভূমিকার কারণে সিন্ডিকেট ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
বগুড়ায় গভর্নর, অর্থমন্ত্রী ও ডিএসই প্রেসিডেন্টের পদত্যাগ দাবি
দ্বিতীয় দিনের মতো গতকালও বগুড়া শহরে সড়ক অবরোধ, বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন বিনিয়োগকারীরা। সকাল ১১টার দিকে শহরের বড়গোলার সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন তারা। আইসিবির সামনে সমাবেশে বক্তারা এসইসি, ডিএসই প্রেসিডেন্ট, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ও অর্থমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেন তারা। তারা আরও বলেন, অব্যাহত দরপতন রোধ না হলে বিনিয়োগকারীরা বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দেবে।
রংপুরে আন্দোলনের হুমকি
রংপুর : বিনিয়োগকারীরা রংপুর নগরীর প্রধান প্রধান সড়কে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। রংপুর প্রেসক্লাব চত্বরে সমাবেশ করেন তারা। সমাবেশে বক্তারা বলেন, একটি চক্রের কারণে শেয়ারবাজার বারবার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তারা অবিলম্বে দেশের উন্নয়নের স্বার্থে এসব ভেলকিবাজি বন্ধ করার আহ্বান জানান। এসব বন্ধ না হলে বৃহত্তর আন্দোলনের হুমকি দেন তারা

Saturday 22 January 2011

টঙ্গীতে আ’লীগ ও পুলিশি বাধায় ওয়াজ মাহফিল পণ্ড : মুসল্লিদের বিক্ষোভ মিছিল

স্টাফ রিপোর্টার, টঙ্গী

গত রাতে টঙ্গী পৌর এলাকার ১ নম্বর ওয়ার্ডের মোদাফা হাজী কালু মিয়া আদর্শ মহিলা মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে আয়োজিত ওয়াজ মাহফিল স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও থানা পুলিশের বাধার কারণে পণ্ড হয়ে যায়।
মাহফিলের আয়োজক ও উপস্থিত শ্রোতারা জানান, হাজী কালু মিয়া আদর্শ মহিলা মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ আয়োজিত ওয়াজ মাহফিল হাজী আবদুল আজিজের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হচ্ছিল। স্থানীয় বক্তারা বয়ান করার একপর্যায়ে রাত সাড়ে ৮টায় মাহফিলের প্রধান বক্তা মাওলানা তারেক মনোয়ার মাহফিলস্থলে উপস্থিত হন। এ সময় পুলিশ ও আওয়ামী লীগ কর্মীরা মাওলানা তারেক মনোয়ারকে মঞ্চে উঠতে বাধা দেয়। এ সময় আওয়ামী লীগ কর্মী ও মুসল্লিদের মধ্যে ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। এ অবস্থায় পুলিশ তারেক মনোয়ারকে মাহফিলস্থল ত্যাগে বাধ্য করে এবং তাকে রাজধানীর উত্তরা আবদুল্লাহপুর পর্যন্ত এগিয়ে নিয়ে যায়। এদিকে এ ঘটনার প্রতিবাদে মাহফিলে আগত শত শত ধর্মপ্রাণ মুসল্লি তাত্ক্ষণিকভাবে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মুসল্লিরা মিছিল নিয়ে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতা আবদুুল আলীম মোল্লার বাড়ির সামনে গিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। এ সময় আবদুল আলীমের লোকজন লাঠিসোঁটা নিয়ে মারমুখী অবস্থান নিলে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। টঙ্গী থানার ওসি গাজী রুহুল ইমামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, মাহফিলের প্রধান বক্তা তারেক মনোয়ারের ব্যাপারে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা আপত্তি জানিয়েছেন। ফলে আমরা তার পরিবর্তে অন্য বক্তা দিয়ে মাহফিল চালিয়ে যাওয়ার অনুরোধ জানিয়েছিলাম। কিন্তু মাহফিল কর্তৃপক্ষ তাদের সিদ্ধান্তে অটল থাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কায় মাহফিল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

আ’লীগ সরকারের দু’বছর : বোরকাবিরোধী তত্পরতায় ক্ষুব্ধ ধর্মপ্রাণ মানুষ

রকিবুল হক

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের দুই বছরে ইসলামবিরোধী বিতর্কিত নানা কর্মকাণ্ডের অন্যতম ছিল বোরকাবিরোধী তত্পরতা। কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা অফিসে মেয়েদের বোরকা পরতে বাধ্য করা যাবে না মর্মে আদালতের রায় এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র জারির ঘটনায় দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এছাড়া বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বোরকাধারীদের নানাভাবে হয়রানি ও নির্যাতনের বিষয়টিও ছিল ব্যাপক সমালোচিত। সরকারের এসব অনৈসলামিক কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে বিভিন্ন ইসলামী সংগঠন সারাদেশে বিক্ষোভ মিছিল-সমাবেশ করে। বিশিষ্ট আলেম-ওলামারা সরকার ও আদালতের এসব আদেশকে সরাসরি কোরআনবিরোধী আখ্যায়িত করে কোনো মুসলমান এটা মানবে না বলে ঘোষণা দেন। মহিলা মাদ্রাসাসহ অনেক প্রতিষ্ঠানে নিজস্ব নিয়মানুযায়ী এখনও বোরকা পরা বাধ্যতামূলক রয়েছে বলে তারা জানান। ফলে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের এ দেশে বোরকাবিরোধী আইনের যৌক্তিকতা ও কার্যকারিতা নিয়েও প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, গত বছরের ২২ আগস্ট বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দীন চৌধুরী ও বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট ডিভিশনের এক আদেশে বলা হয়, ‘দেশের কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা অফিসে মহিলা ও মেয়েদের বোরকা পরতে বাধ্য করা যাবে না’। একই সঙ্গে মেয়েদের খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ থেকে বিরত না রাখতেও নির্দেশ দেয়া হয়। এছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা অফিসে মহিলা ও মেয়েদের বোরকা পরতে বাধ্য করা এবং খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া থেকে বিরত রাখা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্টের এ বেঞ্চ। সরকারের শিক্ষা সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, সংস্কৃতি সচিব, সমাজকল্যাণ সচিব, মহিলা ও শিশুবিষয়ক সচিব এবং নাটোরের রানী ভবানী সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ মোজাম্মেল হককে এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়। এছাড়া কলেজের অধ্যক্ষকে আদালতে হাজির এবং তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সরকারকে নির্দেশ দেয়া হয়।
একটি জাতীয় দৈনিকে ‘বোরকা না পরলে আসতে মানা’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হলে তা আদালতের দৃষ্টিতে আনেন সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহবুব শফিক এবং অ্যাডভোকেট কেএম হাফিজুল আলম। তারা বলেন, সংবিধানের ২৮ অনুচ্ছেদের আওতায় পোশাক নির্বাচন ব্যক্তিস্বাধীনতার বিষয় হিসেবে সংবিধানস্বীকৃত মৌলিক অধিকার। কাউকে এ নিয়ে বাধ্য মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শুধু ছেলেরা খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করবে এটা বেআইনি। মেয়েদেরও খেলাধুলা বা সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নেয়ার অধিকার রয়েছে। শুধু ছেলেদের এসবের সুযোগ দিয়ে মেয়েদের বঞ্চিত করা বৈষম্য। এ পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের ওই বেঞ্চ বোরকা বাধ্যতামূলক করা যাবে না মর্মে আদেশ দেন। অবশ্য পত্রিকার ওই রিপোর্টে প্রকৃত ঘটনাকে অতিরঞ্জিত করে ছাপানো হয়েছিল বলে কলেজ সংশ্লিষ্টরা অভিযোগ করেন। এদিকে এ ঘটনার সঙ্গে সঙ্গেই রানী ভবানী কলেজের অধ্যক্ষ মোজাম্মেল হকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়। ওই কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ রহিমা বেগম আমার দেশকে বলেন, গত বছর ২৩ আগস্ট মোজাম্মেল হককে অধ্যক্ষের পদ থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরে ওএসডি করা হয়। পরবর্তী সময়ে অধিদফতরের পক্ষ থেকে তদন্ত এবং তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয় বলে জানা গেছে।
হাইকোর্টের বোরকাবিরোধী এ রায়ের তিনদিনের মাথায় ২৫ আগস্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্মীয় পোশাক পরতে বাধ্য না করা প্রসঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকেও একটি পরিপত্র জারি করা হয়। এতে বলা হয়, সরকারি-বেসরকারি কোনো কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যায়নরত ছাত্রীদের ধর্মীয় পোশাক পরতে বাধ্য করা হচ্ছে এবং তাদের খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণে বাধা দেয়া হচ্ছে মর্মে সম্প্রতি কয়েকটি পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে— যা সরকারের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। ছাত্রীদের সুশিক্ষা ও মেধা বিকাশের জন্য ধর্মীয় পোশাক পরতে বাধ্য করা এবং খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণে বাধা দেয়া কোনোক্রমেই কাম্য নয়। এমতাবস্থায় সংবিধানের ২৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী মানবাধিকার সংরক্ষণের লক্ষ্যে এ নির্দেশনা দেয়া হলো। পরিপত্রে বলা হয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রীদের বোরকা বা ধর্মীয় পোশাক পরতে বাধ্য করা যাবে না; ছাত্রীদের খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণে বাধা দেয়া যাবে না; বোরকা না পরার কারণে কোনো ছাত্রীকে নির্যাতন, হয়রানি বা তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে না; বোরকা বা ধর্মীয় পোশাক পরতে বাধ্য করা এবং ছাত্রীদের খেলাধুলা ও অন্যান্য সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণে বাধা দেয়া অসদাচরণ হিসেবে গণ্য করা হবে; শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান/ব্যবস্থাপনা কমিটি নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে বর্ণিত বিষয়গুলো প্রতিপালনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিশ্চিত করবেন; এবং বর্ণিত বিষয়ে কোনো অভিযোগ পাওয়া গেলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে দফতর/অধিদফতর/শিক্ষা বোর্ড তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
এর আগে ২ মার্চ বোরকা না পরার কারণে কাউকে অযথা হয়রানি না করার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট বিভাগ। একটি জাতীয় দৈনিকে রংপুরে বোরকা না পরা নারীদের আটকের ঘটনায় প্রকাশিত সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি এটিএম ফজলে কবির সমন্বয়ে গঠিত ডিভিশন বেঞ্চ এ আদেশ দেন। জাতীয় দৈনিকটিতে প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়, রংপুরের চিড়িয়াখানা ও সুরভী উদ্যানে বোরকা ছাড়া চলাফেরা করায় ১৯ যুবক-যুবতীকে আটক করে ডিবি পুলিশ। প্রকাশিত সংবাদে আরও বলা হয়, ডিবি পুলিশের দাবি হচ্ছে— ইসলামপরিপন্থী ও ধর্মীয় আইনবিরোধী কাজ করা এবং পর্দানশীন অবস্থায় চলাচল না করার কারণে তাদের আটক করা হয়। প্রকাশিত এ সংবাদটিকে একজন আইনজীবী আদালতের দৃষ্টিতে আনলে বোরকা না পরার কারণে কাউকে হয়রানি না করতে নির্দেশ দিয়ে সংশ্লিষ্ট ডিবি পুলিশ ইন্সপেক্টরকে তলব করা হয়। পরবর্তী সময়ে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয় বলেও জানা গেছে।
এদিকে বোরকা বিষয়ে আদালতের নির্দেশ এবং সরকারের পরিপত্রের পাশাপাশি বোরকাধারী ছাত্রীদের নানাভাবে হয়রানি ও নির্যাতনের বিষয়টিও ছিল ব্যাপক সমালোচিত। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে রাজধানীর ইডেন এবং বদরুন্নেছা কলেজে বোরকাধারী ছাত্রীদের হয়রানি ও নির্যাতনের ঘটনায় সারাদেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। ইডেন কলেজে বোরকা পরা ছাত্রীদের ধরে বোরকা খুলে সাংবাদিকদের সামনে হাজির করা হয়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী হলেও তল্লাশির নামে পর্দানশীন ও নামাজি ছাত্রীদের হয়রানির ঘটনা ঘটে। এসব প্রতিষ্ঠানে ছাত্রীদের রুম থেকে ইসলামী বই-পুস্তককে জিহাদি বই বলে তা জব্দ করে নিয়ে যায় পুলিশ। প্রশাসনের সহায়তায় এ ধরনের কর্মকাণ্ডে সারাদেশে বোরকাধারী ছাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের পাজামা-পাঞ্জাবি ও বোরকা পরে আসতে নিষেধ করেন এক শিক্ষক। এছাড়া মহাজোট সরকারের সময় পিরোজপুরে বোরকা পরা শিক্ষকসহ তিন শিক্ষার্থীকে পুলিশ আটক ও নির্যাতন করলে ধর্মপ্রাণ মানুষের মধ্যে চরম ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। এসব কর্মকাণ্ডে বর্তমান সরকারকে ইসলামবিরোধী হিসেবেও আখ্যায়িত করেন সংশ্লিষ্টরা।
বোরকার বিরুদ্ধে হাইকোর্টের রায় ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র জারিসহ বিভিন্ন তত্পরতাকে সরকারের ইসলাম ধ্বংসের ষড়যন্ত্র হিসেবে আখ্যায়িত করে ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মুফতি ফজলুল হক আমিনী বলেন, পর্দা ইসলামের ফরজ বিধান। কাজেই এ ফরজ বিধানের বিরুদ্ধে কেউ রায় দিলে তা কেউ মানতে পারে না। এটা সরাসরি কোরআন-হাদিসের বিপরীত রায়। এ দেশের কোনো মুসলমান এ রায় মানবে না। এসব আইন কার্যকর হবে না। তিনি বলেন, এ সরকার ভাবছে গায়ের জোরে এসব আইন কার্যকর করবে; কিন্তু তা পারবে না। আইয়ুব খান কোরআনে হাত দিয়ে যেভাবে ধ্বংস হয়েছে, বর্তমান আওয়ামী সরকারও সেভাবে ধ্বংস হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল করিম বোরকাবিরোধী হাইকোর্টের রায়কে পর্দা উচ্ছেদ করার প্রাথমিক প্রক্রিয়া বলে মন্তব্য করে বলেন, এ সরকারের টার্গেট হলো— বিভিন্ন দেশে যেভাবে বোরকা নিষিদ্ধ করা হয়েছে, এ দেশেও সেই আইন করা। সরকারের পরিপত্র ও আদালতের রায় তারই ধারাবাহিকতা। অথচ পর্দা করা ফরজ বিধান। তাই আদালতের রায় ও সরকারের পরিপত্র এ ফরজ বিধানের খেলাপ। আদালত ‘অমুসলিমদের বোরকা পরা বাধ্যতামূলক করা যাবে না’— এ রায় দিতে পারত মন্তব্য করে তিনি বলেন, এ দেশের অনেক প্রতিষ্ঠানে তো ইউনিফর্ম পরা বাধ্যতামূলক আছে। তাহলে বোরকাকেও ইউনিফর্ম হিসেবে আখ্যায়িত করতে আপত্তি কোথায়? এ রায় শুধু ইসলামকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানোর জন্য দেয়া হয়েছে। এটা মুসলমানরা কোনোদিন মেনে নিতে পারে না, মেনে নেবে না। এটা মানলে কেউ মুসলমান থাকবে না।

Saturday 8 January 2011

নগরজুড়ে তীব্র গ্যাস সঙ্কট



কাজী জেবেল

গ্যাস সঙ্কটে জ্বলছে না রান্নার চুলা। ঢাকা, সাভার, টঙ্গী, ফতুল্লা, নারায়ণগঞ্জসহ অনেক এলাকায় বেশিরভাগ সময় পাইপে গ্যাস না থাকায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। কিছু এলাকায় গ্যাস থাকলেও লাইনে চাপ কম থাকায় মিটমিটিয়ে জ্বলছে চুলা। ফলে ঠিকমতো রান্না করতে না পারায় রাজধানী ও আশপাশ এলাকার মানুষ দুর্ভোগের মধ্যে দিনাতিপাত করছেন। এছাড়া পর্যাপ্ত গ্যাস সরবরাহ না থাকায় শিল্প-কারখানা ও সিএনজি রিফুয়েলিং স্টেশনগুলোতে অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। কমে গেছে উত্পাদন। অনেক শিল্প-কারখানায় দিনে কাজ কমিয়ে রাতে কাজ বাড়িয়ে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। রাতে গ্যাসের চাপ কিছুটা বাড়ার কারণে এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। নতুন সংযোগ দেয়া বন্ধ করা ও সিএনজি স্টেশনে রেশনিং পদ্ধতি চালু করার পরও গ্যাসের ঘাটতি কমাতে না পারায় ক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীরা। তারা বলেছেন, গ্যাস সঙ্কটের কারণে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন যেমন কমছে, তেমনি দৈনন্দিন জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া গত ৪ জানুয়ারি এক সেমিনারে বিদ্যুত্-গ্যাস সঙ্কটের কারণে শিল্পায়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেছেন।
এদিকে আশার কোন বাণী শোনাতে পারেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। তিতাস কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, প্রতিদিন ২৫০ থেকে ২৬০ কোটি ঘনফুট গ্যাসের বিপরীতে উত্পাদন হচ্ছে ১৯৬ থেকে ১৯৭ কোটি ঘনফুট। ঘাটতি ৫৩ কোটি ঘনফুট গ্যাস। আগামী দুই বছরেও এ সমস্যার সমাধানের কোনো সম্ভাবনা নেই। গ্যাসের দাবিতে তিতাসের বিভিন্ন অভিযোগ কেন্দ্রে প্রতিদিন অসংখ্য অভিযোগ জমা পড়ছে। এদিকে গ্যাস সঙ্কটকে পুঁজি করে তরলিকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) দাম বাড়িয়ে দিয়েছে ব্যবসায়ীরা। চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বোতলজাত এলপিজি গ্যাসেরও সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এদিকে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাসের দাবিতে ফুঁসে উঠেছে সাধারণ জনগণ। গতকাল মিরপুর, মুগদাসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় গ্যাসের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। যে কোনো সময় তা জনবিস্ফোরণে পরিণত হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
মিরপুর এলাকার কাজীপাড়ার বাসিন্দা গৃহিণী জান্নাতুল ফেরদৌস গ্যাস সঙ্কটে ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, শীত আসার পর থেকে ভোর থেকে সকাল ১১টা পর্যন্ত গ্যাস থাকে না। এরপর গ্যাস এলেও রাত ১০টা পর্যন্ত লাইনে চাপ থাকে না। এতে মিটিমিটি করে চুলা জ্বলে, যা দিয়ে রান্না করা যায় না। তবে ১০টার পর গ্যাসের চাপ তুলনামূলকভাবে বাড়ে। মগবাজারের গ্রিনওয়ে এলাকার বাসিন্দা গৃহিণী তাবিয়া সুলতানা বলেন, গ্যাসের অভাবে দিনে রান্না করা যাচ্ছে না। রাত জেগে গভীর রাত থেকে ভোর পর্যন্ত রান্না করতে হচ্ছে। মিরপুরের শেওড়াপাড়ার বাসিন্দা জহিরুল ইসলাম অভিযোগ করেন, তার এলাকায় এক মাসের বেশি সময় ধরে সকাল সাড়ে ৭টা থেকে বিকাল পর্যন্ত গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না। সাভারের ধলপুর এলাকার বাসিন্দা মো. শাহাদাত হোসেন, রিয়ার উদ্দিনসহ একাধিক বাসিন্দা জানান, গত এক থেকে দেড় মাস ধরে দিনে গ্যাস থাকে না। ফলে ওই এলাকার বাসিন্দারা গভীর রাত পর্যন্ত সারাদিনের খাবার রান্না করে রাখেন। একই অভিযোগ করেছেন পুরান ঢাকা, সূত্রাপুর, শান্তিনগর, বাসাবো, উত্তরাসহ বেশিরভাগ আবাসিক এলাকার বাসিন্দারা। নারায়ণগঞ্জ ও সাভার শিল্প এলাকার একাধিক ব্যবসায়ী ও কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গ্যাস সঙ্কটের কারণে উত্পাদন কমে গেছে। দিনে গ্যাসের চাপ কম থাকায় গভীর রাত পর্যন্ত কাজ করতে হচ্ছে। এ বিষয়ে গ্যাসসেবা দানকারী প্রতিষ্ঠান তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের পরিচালক (অপারেশন) খালিদ হাসান গ্যাস সঙ্কটের কথা স্বীকার করে গতকাল আমার দেশকে বলেন, প্রতিদিন গ্যাসের চাহিদা দৈনিক ২ হাজার ৫০০ মিলিয়ন অর্থাত্ ২৫০ কোটি ঘনফুট। এর বিপরীতে সরবরাহ করা হচ্ছে ১ হাজার ৯৬০-৯৭০ মিলিয়ন অর্থাত্ ১৯৬ থেকে ১৯৭ কোটি ঘনফুট। ঘাটতি থাকছে ৫৩০ মিলিয়ন বা ৫৩ কোটি ঘনফুট গ্যাস। তিনি বলেন, শীতের মৌসুমে গ্যাসের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় নাগরিকরা গ্যাস সঙ্কটে ভুগছেন। এ সময় তাপমাত্রা কম থাকায় পানিসহ শিল্প-কারখানার মেশিনারিজ সামগ্রী গরম করতে বেশি গ্যাসের প্রয়োজন হয়। তাই সঙ্কট বেড়ে যায়। তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আবদুল আজিজ খান আমার দেশকে বলেন, চলতি শীত মৌসুমে গ্যাস সঙ্কটের সমাধান হবে বলে মনে হয় না। এজন্য ক্ষুদ্র কিছু উদ্যোগ নেয়া হলেও তা পর্যাপ্ত নয়। গ্যাসের চাপ বাড়ানোর জন্য কম্প্রেসর স্থাপন যতদিন পর্যন্ত করা না যাবে ততদিন অবস্থার উন্নতি হবে না। ২০১২ সালের শেষ নাগাদ অথবা ২০১৩ সালের প্রথমদিকে কম্প্রেসর স্থাপনের পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে। এ সময় পর্যন্ত সবাইকে অপেক্ষা করতে হবে। দৈনিক প্রায় ৫০ কোটি ঘনফুট গ্যাসের ঘাটতি রয়েছে বলে তিনি জানান।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানী ও আশপাশ এলাকায় তিতাসের আবাসিক সংযোগ রয়েছে ২০ লাখের কাছাকাছি। এছাড়া প্রায় ১৫ হাজার বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান তিতাসের গ্যাস ব্যবহার করে। গ্যাস সঙ্কটের কারণে এসব ব্যবহারকারী বিপাকে পড়েছেন। বিশেষ করে শিল্প-কারখানায় উত্পাদনে ধস নামছে। এ অবস্থায় রফদানীমুখী কারখানাগুলো নির্দিষ্ট সময়ে অর্ডার সরবরাহ করা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছে। বিকল্প হিসেবে তারা দিনের চেয়ে রাতে কারখানা চালু রাখছে। এতে শ্রমিকদের অতিরিক্ত পারিশ্রমিক দিয়ে কাজ করাতে হচ্ছে। এছাড়া তিতাসের বিকল্প হিসেবে এলপিজি গ্যাস ব্যবহারের দিকে ঝুঁকছেন অনেকেই। কিন্তু গত এক মাসে প্রতি সিলিন্ডার এলপিজি গ্যাসের দাম বেড়েছে ২০০-৬০০ টাকা পর্যন্ত। কোথাও কোথাও নির্দিষ্ট দামের চেয়ে ১ হাজার টাকা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এদিকে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাসের দাবিতে বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভের ঘটনা ঘটছে। গতকাল ঢাকার দক্ষিণ মুগদা ব্যাংক কলোনি এলাকার বাসিন্দারা বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে। জুমার নামাজের পর স্থানীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে জমায়েত হয়ে তারা এলাকায় অবিলম্বে গ্যাস সঙ্কট সমাধানের দাবি জানান। ব্যাংক কলোনি এলাকার বাসিন্দা আহমেদুল কবির জাকির জানান, গ্যাসের অভাবে এলাকার প্রায় ৯০টি বাড়ির ৬ হাজারের বেশি বাসিন্দা চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। প্রতি মাসে এসব বাড়ি থেকে ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা গ্যাস বিল দেয়া হচ্ছে। অথচ তারা দিনে এমনকি গভীর রাতেও গ্যাস সমস্যায় ভোগেন। গৃহিণীরা রাত জেগে ভোর রাতে রান্না করেন। এ সমস্যার প্রধান কারণ ১৯৮০ সালে স্থাপন করা একইঞ্চি পাইপলাইন। ওই সময় এলাকায় বাড়িঘর ছিল ১০-১২টি। এখন জনসংখ্যা ও বাড়ি বেড়েছে। কিন্তু লাইনের কোনো উন্নয়ন না হওয়ায় এলাকার মানুষ চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। সমস্যা সমাধানের জন্য ২০০৯ সালে তিতাস গ্যাস টিঅ্যান্ডডি কোম্পানি লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক বিপণন দক্ষিণ বরাবর আবেদন করেন এলাকাবাসী। কিন্তু এখন পর্যন্ত এ সমস্যা সমাধানে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। গতকাল আয়োজিত সমাবেশে স্থানীয় বাসিন্দারা অবিলম্বে গ্যাস সঙ্কট সমাধানের দাবি জানান। দাবি আদায়ের জন্য তারা সড়ক অবরোধসহ বিভিন্ন আন্দোলনের ঘোষণা দেন। মিরপুরের ১১ নম্বর সেকশনের সবুজ বাংলা আবাসিক এলাকায়ও বিক্ষোভ সমাবেশ হয়

সোমালিয়া ও আফগানে অপহৃতদের পরিবারে উদ্বেগ : নাগরিকদের নিরাপত্তা নিয়ে সরকার নির্লিপ্ত : দেলোয়ার

স্টাফ রিপোর্টার

বিএনপি মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন বলেছেন, দেশ-বিদেশে সর্বত্রই বাংলাদেশীদের জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে সরকার নির্লিপ্ত। নতজানু কূটনীতির কারণে যেমন আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশ দিন দিন গুরুত্বহীন হয়ে পড়ছে, তেমনি সম্প্রতি সোমালিয়া ও আফগানিস্তানে অপহৃত ৩৩ বাংলাদেশীকে উদ্ধারে সরকার কোনো উদ্যোগ নিতে পারছে না। অপহৃতদের পরিবারসহ দেশবাসী উদ্বিগ্ন হলেও সরকার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে যুক্ত করে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। তিনি গতকাল এক বিবৃতিতে অবিলম্বে অপহৃত জাহাজ ও বাংলাদেশীদের উদ্ধারে সরকারকে তত্পর হওয়ার আহ্বান জানান।
গত ৫ ডিসেম্বর সোমালীয় জলদস্যুদের হাতে ছিনতাই হওয়া বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজ এমভি জাহান মণিসহ জাহাজ থেকে আটককৃত ২৬ বাংলাদেশীর জীবন ও নিরাপত্তা বিপন্ন হওয়া এবং গত ১৭ ডিসেম্বর আফগানিস্তানে সামওয়ান কোম্পানির হয়ে চাকরিরত সাত বাংলাদেশীকে অপহরণ ও তাদের মধ্যে একজন নিহত হওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বিএনপি মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন এ বিবৃতি দেন। এই দুই আতঙ্কজনক ঘটনায় সরকারের নির্লিপ্ততা, উদাসীনতা এবং বিপন্নদের উদ্ধারে ব্যর্থতায় তিনি তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা প্রকাশ করেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, এক মাস হতে চলল অথচ এমভি জাহান মণি উদ্ধারে সরকার চরম উদাসীনতার পরিচয় দিয়েছে। ২৫ নাবিকসহ ২৬ বাংলাদেশীর জীবন নিয়ে সরকারের হেয়ালিপনা জনমনে দারুণ ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে যুক্ত করে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণে সরকারের শৈথিল্য প্রদর্শন জলদস্যুদের হাতে আটক বাংলাদেশীদের আত্মীয়স্বজনসহ দেশবাসীকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। সরকারের দায়িত্ববোধ থাকলে এবং কার্যকর সময়োচিত পদক্ষেপ গ্রহণ করলে অপহৃত এমভি জাহান মণি ও বাংলাদেশীদের উদ্ধার সম্ভব হতো।
খোন্দকার দেলোয়ার বলেন, আফগানিস্তানে অপহৃত সাত বাংলাদেশীর মধ্যে একজন নিহত হওয়ার পরও সরকারের টনক নড়েনি। সরকারের স্থবিরতা এবং কূটনৈতিক তত্পরতার অভাবে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে। অপহৃত বাংলাদেশীদের আত্মীয়স্বজনের পাশাপাশি দেশবাসী সরকারের দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণে ক্ষুব্ধ।
তিনি বলেন, এই দুই ঘটনায় আটক বাংলাদেশীদের উদ্ধারে অন্যান্য দেশের কূটনীতিকদের পরামর্শও সরকার আমলে নিচ্ছে না। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় দেশের ভেতরে এবং বিদেশে বাংলাদেশীদের জীবনের নিরাপত্তার বিষয়ে সরকার অমনোযোগী ও দায়িত্বহীন।
বিএনপি মহাসচিব সোমালীয় জলদস্যুদের হাতে বাংলাদেশী ছিনতাই হওয়া জাহাজ এমভি জাহান মণির ২৬ জন এবং আফগানিস্তানে অপহৃত পাঁচ বাংলাদেশীকে উদ্ধারে সরকারের গাছাড়া ভাবের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে তাদের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং ‘হেকটিক’ তত্পরতা চালিয়ে অপহৃত বাংলাদেশীদের উদ্ধারের ব্যবস্থা করার জোর দাবি জানান।

Friday 7 January 2011

জবিতে ছাত্রলীগের দু’গ্রুপে সংঘর্ষে আহত ৬ : ইভটিজিংয়ে ৫ ছাত্রলীগকর্মী বহিষ্কার



জবি রিপোর্টার

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা সফরের কমিটি গঠন নিয়ে ছাত্রলীগের দু’গ্রুপে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া এবং সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয়পক্ষের ৬ জন আহত হয়েছে। আহত কয়েকজনকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে প্রাথমিক চিকিত্সা দেয়া হয়েছে।
অন্যদিকে ইভটিজিংয়ের প্রতিবাদ করায় ছাত্রলীগকর্মীরা এক ছাত্রকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে বাণিজ্য অনুষদের সব বিভাগের শিক্ষার্থী ক্লাস বর্জন করে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেছে। ইভটিজিংয়ের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ৫ ছাত্রলীগকর্মীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ২০০৫-০৬ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষা সফরের কমিটি গঠন নিয়ে ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক গ্রুপের কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের এ ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষ চলাকালে উভয় গ্রুপের কর্মীরা লাঠিসোটা নিয়ে একে অন্যের ওপর হামলা চালায়।
এতে উভয়পক্ষের ৬ জন আহত হয়। আহতরা হলো শফিক, জামান, নয়ন, রাসেল, হিরণ ও সবুজ। তাদের বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারে প্রাথমিক চিকিত্সা দেয়া হয়েছে। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের সপ্তম সেমিস্টারের এক ছাত্রীকে কয়েকদিন আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে উত্ত্যক্ত করে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি রিপন গ্রুপের কর্মী ও ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ষষ্ঠ সেমিস্টারের ছাত্র তমাল। এ সময় হিসাববিজ্ঞান বিভাগের সপ্তম সেমিস্টারের ছাত্র ও মেয়েটির বন্ধু রিফাত এর প্রতিবাদ করে। এ ঘটনার জের ধরে গতকাল সকালে ক্যাম্পাসের মূল গেটের সামনে তমাল ও তার বন্ধু জামাল, কামাল, বাবুসহ ৭-৮ জন রিফাতের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। তারা রিফাতকে বেধড়ক পিটিয়ে আহত করে। পরে সাধারণ শিক্ষার্থীরা রিফাতকে উদ্ধার করে ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। এ ঘটনার প্রতিবাদ এবং দোষীদের বিচারের দাবিতে বাণিজ্য অনুষদের ৪ বিভাগের শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে। সমাবেশে শিক্ষার্থীরা ছাত্রী উত্ত্যক্তকারী তমালসহ হামলায় জড়িত অন্য ছাত্রলীগকর্মীদেরও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে।
এর পরপরই বিশ্ববিদ্যালয় শৃঙ্খলা কমিটির এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকের সুপারিশের ভিত্তিতে ছাত্রীকে উত্ত্যক্ত ও সাধারণ শিক্ষার্থীকে মারধরের ঘটনায় ৫ ছাত্রলীগকর্মীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বহিষ্কৃতরা হলো ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ষষ্ঠ সেমিস্টারের ছাত্র তমাল ও সোহাগ, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ছাত্র জামাল (সপ্তম সেমিস্টার), প্রিন্স মাহমুদ (চতুর্থ সেমিস্টার) ও ফিন্যান্স বিভাগের ষষ্ঠ সেমিস্টারের ছাত্র কামাল হোসেন। এ ঘটনা তদন্তে বাণিজ্য অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোশারফ হোসেনকে আহ্বায়ক করে ৪ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কমিটিকে আগামী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে।
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর কাজী আসাদুজ্জামান বলেন, প্রাথমিক তথ্যের ভিত্তিতে ৫ ছাত্রকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর তাদের ব্যাপারে চূড়ান্ত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও তিনি জানান

গ্যাস-বিদ্যুত্ সঙ্কটে শিল্পে উত্পাদন ব্যাহত : বিসিআই

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

মহাজোট সরকারের আমলে গ্যাস-বিদ্যুতের চরম সঙ্কটের কারণে শিল্প উত্পাদন ব্যাহত হচ্ছে বলে মত প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) নবনির্বাচিত নেতারা। শ্রমমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের সময় বিসিআই নেতারা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, গ্যাস ও বিদ্যুত্ সঙ্কটের কারণে রফতানির লক্ষ্যমাত্রাও অর্জন করা সম্ভব হয়নি।
বর্তমান সরকারের দুই বছরে বিদ্যুত্ ও গ্যাস সঙ্কটের তীব্রতায় বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের উত্পাদন এবং বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে বলে জানান বিসিআই সভাপতি মোহাম্মদ ওয়াজিউল্যাহ।
তিনি বলেন, সরকারের গৃহীত শিল্পনীতি দ্রুত বাস্তবায়ন করা দরকার। শিল্প প্রতিষ্ঠানের সংগঠন বিসিআইকে সরকারের অনুদান এবং নিজস্ব ভবনের জন্য জায়গা বরাদ্দের দাবিও জানানো হয়। দেশে রেমিট্যান্স বৃদ্ধির লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক শ্রমবাজার ধরে রাখা এবং রফতানি বাড়াতে বিদেশে দূতাবাসগুলো কার্যকর করার জন্য সরকারকে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে নেতারা পরামর্শ দেন। শিল্প প্রতিষ্ঠান রক্ষা করতে সরকারকে গ্যাস ও বিদ্যুত্ উত্পাদনে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ারও দাবি জানান তারা।
নেতাদের দাবিতে বিসিআই’র সাবেক সভাপতি হিসেবে প্রতিষ্ঠানটির জন্য কাজ করতে আন্তরিক উল্লেখ করে শ্রমমন্ত্রী বলেন, বিদ্যুত্ সঙ্কট এমন বিষয়, যা রাতারাতি সমাধান সম্ভব নয়। বর্তমান সরকার এর সমাধানে সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছে। এরই মধ্যে ২ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত্ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করেছে সরকার। তাছাড়া বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নিয়েছে, যা আগামী তিন বছরের মধ্যে উত্পাদনে যাবে। জমি বরাদ্দের বিষয়টি সরকার গুরুত্ব দিয়েছে। শিগগিরই এটি চূড়ান্ত হবে বলে তিনি আশ্বাস দেন। মন্ত্রী বলেন, বিশ্বদরবারে আমরা আর দরিদ্র দেশ হিসেবে পরিচিত হতে চাই না। আমাদের বর্তমানে মাথাপিছু আয় ৭৫০ ডলার। আর ২শ’ ডলার বাড়াতে পারলে আমরা মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হতে পারবো। গার্মেন্ট শ্রমিক অসন্তোষের কথা উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সরকার শ্রমিকের সর্বনিম্ন বেতন নির্ধারণ করে দিয়েছে। এক্ষেত্রে যে শ্রমিক দশ বছর ধরে কাজ করছে তার জন্য এই সর্বনিম্ন বেতন প্রযোজ্য নয়। এ ব্যাপারে গার্মেন্ট মালিকদের আন্তরিক হতে হবে।
সরকার ২০০৬ সালের শ্রম আইন রিভিউ করছে। এ ব্যাপারে শিল্প প্রতিষ্ঠান মালিকদের মতামত দেয়ার আহ্বান জানান তিনি। এরই মধ্যে শ্রমনীতির খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। এটি মতামতের জন্য ওয়েবসাইটে দেয়া হবে বলে জানান শ্রমমন্ত্রী। এ সময় শ্রম সচিব নূরুল হক ও বিসিআই নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

আদমজী ইপিজেডে গার্মেন্ট বন্ধ করে মালিকের আত্মগোপন

সিদ্ধিরগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি

আদমজী ইপিজেডের একটি গার্মেন্ট বন্ধ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। শ্রমিকদের কিছু না জানিয়ে রাতের আঁধারে নোটিশ টাঙিয়ে আত্মগোপন করেছে গার্মেন্ট কর্তৃপক্ষ। আর এ কারণে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে গার্মেন্টের শ্রমিক-কর্মচারীরা। বেপজা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ তুলেছে গার্মেন্ট কর্তৃপক্ষ।
গতকাল হাইল্যান সুয়েটার ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের শ্রমিকরা কাজ করতে গিয়ে দেখতে পায় গার্মেন্ট বন্ধের নোটিশ। এতে তারা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। গার্মেন্টটিতে সাত শতাধিক শ্রমিক-কর্মচারী কর্মরত রয়েছে। পরবর্তী সময়ে বিক্ষুব্ধ শ্রমিক-কর্মচারীরা বিক্ষোভ মিছিল সহকারে আদমজী ইপিজেডের প্রধান ফটকের সামনে জড়ো হয়। এ সময় শ্রমিকরা নারায়ণগঞ্জ-শিমরাইল সড়কে অবরোধ করার চেষ্টা করে। খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের নারায়ণগঞ্জ-শিমরাইল সড়ক থেকে সরিয়ে দেয়। একপর্যায়ে তারা আদমজী ইপিজেড অফিসের সামনে গিয়ে জড়ো হয়। পরে পুলিশের মধ্যস্থতায় আদমজী ইপিজেড কর্তৃপক্ষ গার্মেন্ট মালিকপক্ষের সঙ্গে ফোনে আলোচনা করে। আগামী ১০ জানুয়ারি শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধের আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে শ্রমিকরা আদমজী ইপিজেড ত্যাগ করে। আদমজী ইপিজেডের কাউন্সিলর মোজাম্মেল হোসেন জানান, হাইল্যান সুয়েটার ফ্যাক্টরির কাছে আদমজী ইপিজেড কর্তৃপক্ষ ২ লাখ ৫২ হাজার মার্কিন ডলার পাওনা রয়েছে। বেপজা কর্তৃপক্ষ গার্মেন্ট কর্তৃপক্ষকে চাপ দিলেও মালিক বেপজার পাওনা পরিশোধ করেননি। এদিকে গার্মেন্ট কর্তৃপক্ষ তাদের নোটিশে উল্লেখ করে, তারা চলতি বছরে ২ লাখ ৪১ হাজার মার্কিন ডলার পরিশোধ করেছে। এমনকি ৫০ হাজার মার্কিন ডলার পরিশোধের মৌখিক আশ্বাসও দেয় গার্মেন্ট কর্তৃপক্ষ। তদুপরি বেপজা কর্তৃপক্ষ তাদের ফ্যাক্টরিকে টার্মিনেট (শেষ/বন্ধ) ঘোষণা করে। তাছাড়া বেপজা কর্তৃপক্ষের অসহযোগিতার ফলে গার্মেন্ট কর্তৃপক্ষ তাদের গার্মেন্টে কাঁচামাল প্রবেশ করাতে বা প্রস্তুতকৃত মালামাল রফতানি করতে পারেনি বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়। আর এ কারণে কর্তৃপক্ষ ফ্যাক্টরির যাবতীয় কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করতে বিশেষভাবে বাধ্য হয় বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়। এ ব্যাপারে আদমজী ইপিজেডের জিএমসহ অন্য কর্তাব্যক্তিরা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান। এ ব্যাপারে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি এসএম বদরুল আলম জানান, বেপজা কর্তৃপক্ষ টাকা পাওনা বিধায় হাইল্যান সোয়েটার ফ্যাক্টরির সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে দেয়। রাতে ফ্যাক্টরি কর্তৃপক্ষ একটি নোটিশ টাঙিয়ে গার্মেন্টে তালা লাগিয়ে পালিয়ে যায়।
সকালে ওই নোটিশ দেখে শ্রমিকরা ক্ষুব্ধ হয়ে পড়ে। পরে বেপজা কর্তৃপক্ষ ফোনে গার্মেন্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে আগামী ১০ জানুয়ারি শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ করার আশ্বাস দেয়।
১০ জানুয়ারি শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ না করলে ফ্যাক্টরির মালামাল বিক্রি করে তাদের টাকা পরিশোধ করা হবে বলে বেপজা কর্তৃপক্ষের আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে শ্রমিকরা শান্ত হয়ে চলে যায় বলে ওসি বদরুল আলম জানায়।

বদলগাছীতে সন্ত্রাসীদের হাতে ছাত্রীর চাচা নিহত : রায়পুরার ঘটনায় ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা : ফরিদাবাদে কলেজ ছাত্রী ছুরিকাহত




ইভটিজিংয়ের বর্বরতা প্রতিদিন নতুন রূপ পাচ্ছে। শাস্তি, জরিমানা কোনোটাই বন্ধ করতে পারছে না এ ব্যাধিকে। ঘটেই চলেছে হতাহতের ঘটনা। সোমবার ঝরে গেছে আরেকটি তাজা প্রাণ। ঘটনাটি ঘটে নওগাঁ জেলার বদলগাছী উপজেলায়। সেখানে দীর্ঘদিন ধরে এক কলেজছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করে আসছিল এলাকার এক বখাটে। ওই ছাত্রীর বাবার অভিযোগ পেয়ে থানা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের আদালত এক বছরের কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানার আদেশ দিলে এতে ক্ষিপ্ত হয় বখাটে পরিবারের লোকজন। সোমবার আওয়ামী লীগ সমর্থিত ইউপি চেয়ারম্যানের সন্ত্রাসী বাহিনী ওই ছাত্রীর বাড়িতে হামলা চালিয়ে পরিবারের সদস্যদের পেটাতে থাকে। এ ঘটনায় নিহত হন ওই ছাত্রীর চাচা। ওদিকে রাজধানীর ফরিদাবাদে প্রেমে প্রত্যাখ্যাত হয়ে মিতা দেবী নামে এক কলেজ ছাত্রীকে ছুরিকাঘাত করেছে স্থানীয় বখাটে যুবক জামিল।
এদিকে সোমবার নরসিংদীর রায়পুরায় ইভটিজারদের হাত থেকে ছেলে ও ছেলের বউকে বাঁচাতে গিয়ে বাবা নিহত হওয়ার ঘটনায় ছয়জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। তবে পুলিশ এ পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে না পারায় স্থানীয় জনতার মধ্যে প্রচণ্ড ক্ষোভ বিরাজ করছে। বিস্তারিত প্রতিনিধিদের খবর :
বদলগাছী (নওগাঁ) : নওগাঁর বদলগাছীতে ইভটিজিংয়ের দায়ে এক বখাটের এক বছরের সাজা হওয়ার ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ সমর্থিত ইউপি চেয়ারম্যানের সন্ত্রাসী বাহিনীর পিটুনিতে নিহত হয়েছেন এক কলেজছাত্রীর চাচা। সোমবার উপজেলার জগন্নাথপুর গ্রামে ওই ঘটনা ঘটে।
জগন্নাথপুর গ্রামের শামসুল আলমের মেয়ে তাসনিয়া তাহরিনকে (২১) একই গ্রামের আ. সাত্তারের ছেলে ফজলে রাব্বী রিপন ওরফে ধলু (২২) কলেজে আসা-যাওয়ার পথে উত্ত্যক্ত করত। গত বুধবার সকালে তাসনিয়াদের বাড়িতে গিয়ে তার বাবা-মায়ের কাছে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। বিয়ে না দিলে মেয়েসহ বাবা-মাকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়। বিষয়টি বাবা শামসুল আলম ভ্রাম্যমাণ আদালতকে জানালে বৃহস্পতিবার বিকালে বদলগাছী থানার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. শফিউজ্জামান ভূঁইয়া ধলুর জবানবন্দি নিয়ে তাকে এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও ১০ হজার টাকা জরিমানা করেন। এতে ধলুর পরিবারের লোকজন ক্ষিপ্ত হয়। তারা আওয়ামী লীগ নেতা ও আধাইপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো. শামসুল আলমের কাছে এর বিচার চান। এর পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার চেয়ারম্যানের সন্ত্রাসী বাহিনী শামসুল আলমের বাড়িতে হামলা চালায় ও পরিবারের সদস্যদের পেটাতে থাকে। এতে তাসনিয়ার চাচা বাবুল আকতার (৪২) এবং ফুফু রেখা বানু গুরুতর আহত হন। আহতদের হাসপাতালে নিলে বাবুল আকতার রাতেই মারা যান।
নরসিংদী : জেলার রায়পুরায় ইভটিজারদের হাত থেকে ছেলে ও ছেলের বউকে বাঁচাতে গিয়ে বাবা খুন হওয়ার ঘটনায় ছয়জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে সংশ্লিষ্ট থানায়। নিহতের ছেলে আহত রবিন ভূঞা বাদী হয়ে বখাটে সোহেল মিয়া, রাজিব মিয়া, অরুণ মৃধা, জসিম উদ্দিন মৃধা, খোরশেদ মৃধা ও বাদল মিয়াসহ আরও অজ্ঞাত ৪-৫ জনকে আসামি করে এ মামলা করেন। তবে এফআইআরভুক্ত একজন আসামিকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। এ ঘটনায় পুরো জেলাব্যাপী পুলিশের ভূমিকা নিয়ে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে।
এদিকে গতকাল সদর হাসপাতালে নিহতের ময়নাতদন্ত শেষে বেলা ২টায় লাশ নিজ বাড়িতে নেয়া হলে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়।
পরে বাদ আসর জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা মোজাম্মেল হোসেনসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা জানাজায় শরিক হন। উপস্থিত সবাই এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান। তবে খুনিদের ব্যাপারে এ প্রতিবেদকের কাছে কথা বলতে রাজি না হলেও উঠতি বয়সের এক যুবক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানায়, খুনিদের মদতদাতা ও এলাকার অনেক চিহ্নিত অপরাধী আমাদের আশপাশে অবস্থান করছে। কে কী বলছে তীক্ষষ্টভাবে তা তারা পর্যবেক্ষণ করছে। সে কারণে অনেকেই মুখ খুলে কিছু বলতে সাহস পাচ্ছেন না।
এদিকে কেন আসামি গ্রেফতার করা গেল না এ ব্যাপারে থানায় যোগাযোগ করা হলে দায়িত্বপ্রাপ্ত এক কর্মকর্তা জানান, পুলিশ বসে নেই। সময় হলেই আসামি ধরা পড়বে। তবে ৩৬ ঘণ্টা পরও আবার কখন সময় হবে জানতে চাইলে এবপর্যায়ে তিনি চটে যান। উল্লেখ্য, ইভটিজারদের হাত থেকে ছেলে ও ছেলের বউকে বাঁচাতে গিয়ে সোমবার নিজ বাড়ির সামনে খুন হন বাবা রতন ভূঞা (৫০)। আহত হন নিহতের ছেলে রবিন ভূঞা।
ফরিদাবাদে কলেজছাত্রীকে
ছুরিকাঘাত বখাটে যুবকের
স্টাফ রিপোর্টার জানান, রাজধানীর ফরিদাবাদে প্রেমে প্রত্যাখ্যাত হয়ে জামিল আহমেদ ওরফে মিশু নামে এক বখাটে যুবক কলেজছাত্রী মিতা দেবীর (২২) মুখে ছুরিকাঘাত করেছে। গুরুতর আহত অবস্থায় মিতাকে পুরনো ঢাকার ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গতকাল দুপুরে যাত্রাবাড়ী থানাধীন ফরিদাবাদে এ ঘটনা ঘটে।
পুলিশ জানায়, মিতা দেবী পুরনো ঢাকার কবি নজরুল কলেজের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী। লেখাপড়ার পাশাপাশি সে বেসরকারি ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে টেলিফোন অপারেটর হিসেবে চাকরি করে। গতকাল বেলা ২টার দিকে মিতা কর্মস্থল থেকে তার বাবার সঙ্গে রিকশায় ফরিদাবাদ ব্যাংক কলোনির বাসায় ফিরছিল। বখাটে মিশু ফরিদাবাদ ফজলুল হক কলেজের সামনে তাদের রিকশার গতিরোধ করে। একপর্যায়ে জামিল ওই ছাত্রীর মুখে পরপর তিনবার ছুরিকাঘাত করে। এসময় ছাত্রীর বাবার চিত্কারে এলাকাবাসী এগিয়ে এলে বখাটে মিশু পালিয়ে যান।
গেণ্ডারিয়া থানার ওসি নুরুল মোত্তাকিন সাংবাদিকদের জানান, দেড় বছর ধরে মিশু মিতা দেবীকে প্রেম নিবেদন করে আসছিল। কিন্তু মিতা ওই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় মিশু ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে ছুরিকাঘাত করে। এ ব্যাপারে থানায় মামলা হয়েছে। আসামিকে গ্রেফতারের জন্য অভিযান চলছে।

নেপথ্যে বিদেশি এনজিও’র ভূমিকাও কাজ করেছে - বিজিএমইএ সভাপতি : পোশাক খাতে শ্রমিক অসন্তোষ : বিদেশি ক্রেতারা আতঙ্কিত

সৈয়দ মিজানুর রহমান

পোশাক খাতে শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনা উদ্বেগজনক পর্যায়ে চলে গেছে। ২০০৯ সালে এ খাতে শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনা ছিল ১৯১টি, গেল বছর তা বেড়ে হয়েছে ৮৩৪টি। গেল দুই বছরে এ খাতে শ্রমিক অসন্তোষের সহস্রাধিক ঘটনা স্থানীয় উদ্যোক্তা ও বিদেশি ক্রেতাদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। স্থানীয় উদ্যোক্তারা বলছেন, কারণে-অকারণে যে হারে পোশাক কারখানায় ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট হচ্ছে, তা দেখে মনে হয় এখন এ খাত পুরোপুরি নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে আছে।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) গবেষণা সেল সূত্রে জানা গেছে, গত এক যুগের মধ্যে ২০১০ সালের জুনেই সবচেয়ে বেশি ভাংচুর ও লুটপাট হয়েছে পোশাক খাতে। এ সময়ে ৬০৪টি কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনা রেকর্ড করেছে বিজিএমইএ। বিজিএমইএ’র গবেষণা সেল শ্রমিক অসন্তোষের কারণ ক্ষতিয়ে দেখতে গিয়ে প্রমাণ পেয়েছে—এসব ঘটনার বেশিরভাগই গুজব ছড়িয়ে ঘটানো হয়েছে। এছাড়া প্রায় প্রতিটি ঘটনার নেপথ্যে কাজ করেছেন কিছু শ্রমিক নেতা। তাদের উস্কানিতেই ছোটখাটো বিষয়গুলোও পোশাক শিল্পের জন্য বড় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ঝুট ব্যবসার আধিপত্য নিয়েও কিছু সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। ২০০৬ সালে ন্যূনতম মজুরি ঘোষণার আগেও গোটা পোশাক খাতে শ্রমিক অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়েছিল। তবে সে বছর পোশাক শিল্পের ২৫৮টি কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দিয়েছিল।
গত এক যুগে এতসংখ্যক কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষের কারণ কী—জানতে চাইলে পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী আমার দেশকে বলেন, ‘গেল একটি বছর এ খাতের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। এ সময় যেমন স্থানীয় সমস্যা ছিল, তেমনি আন্তর্জাতিক বাজারেও মন্দার কারণে রফতানি মুখ থুবড়ে পড়েছিল। তবে এগুলোর সঙ্গে শ্রমিক অসন্তোষের কোনো সম্পর্ক নেই। শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনাগুলোর ৯০ ভাগই শ্রমিকদের উস্কে দিয়ে ঘটানো হয়েছে। কিন্তু ইন্ধনদাতারা ধরাছোঁয়ার বাইরেই রয়ে গেছে।’ বিজিএমইএ সভাপতি জানান, ২০১০ সালে মজুরি বেড়েছে ৮০ শতাংশ। তবে মজুরির দাবি নিয়ে শ্রমিক অসন্তোষ হয়েছে মাত্র ৫৭টি কারখানায়। বাকি ৭৩১টি কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষের নেপথ্যে ছিল কিছু শ্রমিক নেতানেত্রী। বিদেশি এনজিওদের ভূমিকাও কাজ করেছে বলে দাবি করেন তিনি। তবে বিজিএমইএ সভাপতি আশা করেন, শিল্প পুলিশের কার্যক্রম চালু হওয়ায় সামনে এ খাতে স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে।
তিনি বলেন, ২০০৯ সালের পহেলা জানুয়ারি থেকে গত ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১০২৫টি পোশাক কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দেয়। প্রায় প্রতিটি ঘটনার পর পরই সরকারের পুলিশ প্রশাসন তদন্ত করেছে। তদন্ত রিপোর্টও জমা পড়েছে সংশ্লিষ্ট দফতরে। তবে দায়ীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
বিজিএমইএ সূত্রে জানা গেছে, ২০০৬ সালে দেশের ২৫৮টি পোশাক কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দিয়েছিল। এ শ্রমিক অসন্তোষের পেছনে ১৩৫টি কারখানায় মজুরির জন্য এবং বাকি কারখানাগুলোয় অন্যান্য দাবিতে শ্রমিকরা কারখানায় অগ্নিসংযোগ, ভাংচুর ও লুটপাট করেছে।
২০০৭ সালে ২৬৬টি কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষ হয়েছে। এর মধ্যে মজুরি বাড়ানোর দাবিতে ১৪২টি কারখানায় ও অন্যান্য দাবিতে ১২৪টি কারখানায় অসন্তোষ হয়েছে।
২০০৮ সালে ২২৫টি গার্মেন্টস কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষ হয়। মজুরি সংক্রান্ত কারণে অসন্তোষ হয়েছে ৭৮টি কারখানায় এবং অন্যান্য দাবিতে ১৪৭টি কারখানায়।
২০০৯ সালে ১৯১টি পোশাক কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষ হয় বলে জানিয়েছে বিজিএমইএ। এর মধ্যে জানুয়ারিতে ১২টি, ফেবু্রয়ারিতে ১০টি, মার্চে ১৩টি, এপ্রিলে ২৩টি, মে মাসে ১৮টি, জুনে ১৮টি, জুলাইয়ে ২৫টি, আগস্টে ৩১টি, সেপ্টেম্বরে ১৮টি, অক্টোবরে ১২টি, নভেম্বরে ৮টি ও ২০০৯ সালের ডিসেম্বরে ৩টি শ্রম অসন্তোষের ঘটনা ঘটে বলে জানায় বিজিএমইএ। এসব ঘটনার মধ্যে মজুরি সংক্রান্ত কারণে ৮৮টি কারখানায় এবং অন্যান্য কারণে ১০৩টি কারখানায় হামলা ও ভাংচুর হয়েছে।
২০১০ সালের জানুয়ারিতে পোশাক খাতে শ্রম অসন্তোষ ঘটেছে ১২টি, ফেব্রুয়ারিতে ১৪টি, মার্চে ২৫টি, এপ্রিলে ৩০টি, মে মাসে ১৫টি, জুনে ৬০৪টি, জুলাইয়ে ১৬টি, আগস্টে ১২টি, সেপ্টেম্বরে ১১টি, অক্টোবরে ১২টি, নভেম্বরে ২৭টি ও ডিসেম্বর মাসে ৫৬টি শ্রম অসন্তোষের ঘটনা রেকর্ড করেছে বিজিএমইএ।
কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষ বিষয়ে বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ) সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, পোশাক খাতের সাধারণ শ্রমিকরা কারখানায় ভাংচুর ও লুটপাটে কমই জড়িত থাকে। এ ক্ষেত্রে কিছু শ্রমিক নেতার ইন্ধন বেশি দায়ী বলে মনে করেন তিনি। মোহাম্মদ হাতেম জানান, বিশ্ব মন্দার পর আমাদের অনেক সুযোগ তৈরি হয়েছে। তবে সুতার ভয়াবহ সঙ্কট, বন্দর জটিলতা, গ্যাস ও বিদ্যুত্ সঙ্কটের কারণে এ সম্ভাবনা খুব একটা কাজে লাগানো যাবে না।

শাসকদলের মন্ত্রী-এমপিদের কর্মকাণ্ডে বিব্রত ইসি : তিনজনকে সতর্ক করে চিঠি : মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা এলাকায় গিয়ে অপরাধ করেছেন : ছহুল



কাজী জেবেল

পৌরসভা নির্বাচনী এলাকায় শাসকদলের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, হুইপ ও সংসদ সদস্যদের বিতর্কিত এবং প্রচারণামূলক কর্মকাণ্ডে বিব্রত নির্বাচন কমিশন। এমনকি প্রধান নির্বাচন কমিশন ড. এটিএম শামসুল হুদা এ নিয়ে ময়মনসিংহে জনসম্মুখে বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন। তফসিল ঘোষিত পৌর এলাকায় এসব ব্যক্তিকে না যেতে কমিশন থেকে বারবার অনুরোধ জানানো হয়। এর পরও আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীদের জেতানোর জন্য প্রশাসনের কর্মকর্তা ও ভোটারদের প্রভাবিত করতে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও সমমর্যাদার ব্যক্তিরা বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকায় সফর করছেন। তারা উন্নয়নমূলক কাজের উদ্বোধন ও ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করছেন। পাশাপাশি সরকারি দলের প্রার্থীকে ভোট দেয়ার জন্য ভোটারদের উদ্বুদ্ধ করতে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। এ ছাড়া সরকারি দলের কয়েকজন সংসদ সদস্য প্রশাসনের কর্মকর্তা ও ভোটারদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন বলেও বিস্তর অভিযোগ পেয়েছে কমিশন। ক্ষমতাসীন দলের মন্ত্রী-এমপিদের এ ধরনের কর্মকাণ্ডে অনেকটা অসহায় নির্বাচন কমিশন।
নির্বাচন কমিশনের জনবল স্বল্পতা ও প্রয়োজনীয় ক্ষমতা না থাকায় ক্ষমতাধর এসব ব্যক্তির বিরুদ্ধে কঠোর কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না কমিশন। তবে নির্বাচনকে প্রভাবিত করার অভিযোগের ব্যাখ্যা চেয়ে এ পর্যন্ত তিনজনকে সতর্ক করে চিঠি দেয়া হয়েছে। এসব ঘটনায় নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। খবর নির্ভরযোগ্য সূত্রের।
এ প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ ছহুল হোসাইন আমার দেশকে বলেন, ‘কমিশনের অনুরোধ উপেক্ষা করে যেসব মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী বা তাদের সমমর্যাদার ব্যক্তি নির্বাচনী এলাকায় গিয়েছেন, আইন অনুযায়ী তারা অপরাধ করেছেন। তাদের মতো উচ্চপর্যায়ের ব্যক্তিদের আইন অমান্য করে এভাবে নির্বাচনী এলাকায় যাওয়া উচিত হয়নি। আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে আমরা দু’তিনজনকে সতর্ক করে চিঠি দিয়েছি। এর পরও তারা একই ধরনের কাজ করলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হব। তবে আমরা হার্ডলাইনে যেতে চাই না। তিনি আরও বলেন, আইনে সংসদ সদস্যদের নির্বাচনী এলাকায় যাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো বাধা নেই। এ সুযোগ নিয়ে কোনো কোনো সংসদ সদস্য ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন। এসব বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’
জানা গেছে, আইনে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের নির্বাচনী এলাকায় যাওয়ার ওপর বিধিনিষেধ রয়েছে। পৌরসভা (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালা-২০১০-এর ৬ নম্বর ধারার ১৫-এর(ক) ধারায় বলা হয়েছে, জাতীয় সংসদের স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, চিফ হুইপ এবং সরকারের কোনো মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী বা তাদের সমপদমর্যাদার সরকারি সুবিধাভোগী কোনো ব্যক্তি, নির্বাচনপূর্ব সময়ে নির্বাচনী প্রচারণায় বা নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, তফসিল ঘোষণার পর থেকে বেশ কয়েকটি নির্বাচনী এলাকায় মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীরা ভ্রমণ করছেন। এ নিয়ে কমিশনে অসংখ্য অভিযোগ এসেছে। শ্রম ও কর্মসংস্থান এবং প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন গত শনিবার ফরিদপুর যান। সেখানে তিনি আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী সুবল সাহার পক্ষে নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশ নিতে দলীয় কর্মী ও ভোটারদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান। পৌর এলাকা থেকে দুই কিলোমিটার দূরে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় মন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দেন, সুবল সাহা নির্বাচিত হলে ফরিদপুরে ‘ওয়ান্ডারল্যান্ড’র মতো একটি অত্যাধুনিক শিশুপার্ক নির্মাণ করা হবে। তিনি বলেন, সুবল সাহা নির্বাচিত হলে আমার সাহায্য পাওয়া যাবে। ফরিদপুর মহাবিদ্যালয়ের কাছে পৌরসভার যে চার একর জমি আছে, সেখানে একটি অত্যাধুনিক শিশুপার্ক নির্মাণ করে দেয়া হবে। স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. ক্যাপ্টেন (অব.) মজিবুর রহমান গত ৩০ ও ৩১ ডিসেম্বর ময়মনসিংহের গৌরীপুর পৌর এলাকায় অবস্থান করেন। ওই পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী শফিকুল ইসলাম হবিকে সঙ্গে নিয়ে স্থানীয় লোকদের মধ্যে ২৬০টি শীতবস্ত্র বিতরণ করেন। কলতাপাড়া হাফেজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানার উদ্যোগে আয়োজিত ইসলামী সম্মেলনে অতিথি হিসেবে যোগ দেন। এ ছাড়া শালিয়হর বধ্যভূমির ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন, বিনামূল্যে চক্ষুচিকিত্সার ৭ দিনব্যাপী কার্যক্রমের উদ্বোধন, কৃতী ছাত্র সংবর্ধনা, গৌরিপুর পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের স্কাউট সমাবেশে যোগদান এবং স্থানীয় আওয়ামী, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ সহযোগী সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শাজাহান মিয়া নির্বাচন প্রভাবিত করতে গত ৮ ডিসেম্বর যান বলে কমিশনে অভিযোগ এসেছে। এতে বলা হয়েছে, পটুয়াখালী পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী ও ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর ছেলে তারিকুজ্জামান মনির পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়েছিলেন। তিনি ১১ দিনের সফরে পটুয়াখালী যান। কিন্তু কমিশনের পক্ষ থেকে তাকে নোটিশ করা হলে তিনি একদিন অবস্থান করে ৯ ডিসেম্বর ঢাকায় ফেরেন। অবশ্য পরে মনি তার প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেন। আওয়ামী লীগদলীয় হুইপ শেখ আবদুল ওহাব নির্বাচনী প্রচারণা চালানো, ডাকবাংলো ব্যবহার এবং দলীয় প্রার্থীকে পরিচয় করিয়ে দেন। আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগের ব্যাখ্যা চেয়ে তাকে চিঠি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এ ছাড়াও বেশ কয়েকজন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী নির্বাচনী আচরণবিধিমালা ভঙ্গ করেছেন বলে কমিশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানান।
পৌর এলাকায় সংসদ সদস্যদের যেতে কোনো আইনি বাধা নেই। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে বেশকিছু পৌর এলাকায় মহাজোটের সংসদ সদস্যরা নির্বাচন, নির্বাচনী কর্মকর্তা এবং প্রশাসনের কর্মকর্তাকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছেন বলে জানা গেছে। কয়েকজন সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে কমিশনে গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। নড়াইল-১ আসনের সংসদ সদস্য কবিরুল হকের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘন তদন্তের জন্য জেলা নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাকে চিঠি দেয়া হচ্ছে। ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, কালিয়া পৌরসভায় মেয়র পদে কবিরুল হকের ভাই ইকরামুল হক টুকু প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ওই এলাকায় কবিরুল হক ও তার বাহিনীর সদস্যরা বৈধ ও অবৈধ অস্ত্র নিয়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে ভোট দেয়ার জন্য ভোটারদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করছে। তারা নির্বাচনী এলাকায় মোটরসাইকেল মহড়া ও নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করছে। পুলিশ চাকরি হারানোর ভয়ে নীরব ভূমিকা পালন করছে। তদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পর তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার হবে বলে জানা গেছে। ভোলা-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও ইব্রাহিম হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি নূরুন্নবী চৌধুরী শাওন লালমোহন পৌরসভায় উপস্থিত থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এমদাদুল হক তুহিনের পক্ষে ভোট চাইছেন। ওই এলাকায় তার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, পথসভার নামে জনসভা, গণসংযোগের নামে মিছিল-মিটিংসহ একাধিক আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে।
নির্বাচন কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আইনি বাধ্যবাধকতার কারণে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা ঢালাওভাবে নির্বাচনী এলাকায় যেতে পারছেন না। কিন্তু সংসদ সদস্যদের ক্ষেত্রে কোনো বাধানিষেধ না থাকায় তারা দলীয় প্রার্থীদের জেতাতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। এ কারণে বিভিন্ন স্থানে সহিংস ঘটনা ঘটছে এবং তাতে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে

বিভিন্ন সংগঠনের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ : বর্তমান সরকারের আমলেই গুপ্তহত্যার শিকার হচ্ছেন আলেমরা

স্টাফ রিপোর্টার

পুলিশ অফিসার্স কোয়ার্টার জামে মসজিদের ইমাম হাফেজ মাওলানা ইসহাকের হত্যাকারীদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। সংগঠনের নেতারা বলেন, বর্তমান সরকার গত দুই বছর সম্পূর্ণ ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। এ সরকারই সবচেয়ে বেশি দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও ইসলামী মূল্যবোধের ওপর আঘাত এনেছে। আর এ সরকারের আমলেই আলেম-উলামারাও গুপ্তহত্যার শিকার হচ্ছে।
বাংলাদেশ যুব ন্যাপ : যুব ন্যাপ চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি বলেছেন, বর্তমান সরকারের দুই বছর পূর্ণ হচ্ছে ব্যর্থতার ষোলকলা পূরণের মাধ্যমে। তারা সবচেয়ে বেশি আঘাত করেছে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও ইসলামী মূল্যবোধের ওপর। এ সরকারের আমলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির এতটাই অবনতি ঘটেছে যে, এখন আলেম-উলামারাও গুপ্তহত্যার শিকার হচ্ছেন। তিনি রমনা থানা কমপ্লেক্সে মসজিদের ইমাম হাফেজ মাওলানা ইসহাকের গুপ্তহত্যার রহস্য উদ্ঘাটনে বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানান। গতকাল দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বাংলাদেশ যুব ন্যাপ আয়োজিত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন দলের সমন্বয়কারী বাহাদুর শামীম আহমেদ পিন্টু। বক্তব্য রাখেন ভাইস চেয়ারম্যান সুব্রত বারুরী, যুগ্ম মহাসচিব স্বপন কুমার সাহা প্রমুখ।
বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন : খেলাফত আন্দোলনের প্রধান আমির মাওলানা শাহ আহমাদুল্লাহ আশরাফ, মহাসচিব মাওলানা মুহাম্মদ জাফরুল্লাহ খান এক যুক্ত বিবৃতিতে হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ ইসহাককে অপহরণ করে হাত-পায়ে শিকল বেঁধে হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তারা বলেন, এই হত্যাকাণ্ড প্রমাণ করে যে দেশের জনগণের জানমালের কোনো নিরাপত্তা নেই।
খেলাফত মজলিস : খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাক ও মহাসচিব অধ্যাপক আহমদ আবদুল কাদের এক যুক্ত বিবৃতিতে ইমাম হাফেজ মাওলানা ইসহাকের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। তারা বলেন, আলেম-ওলামারাও আজ গুপ্তহত্যার শিকার হচ্ছেন। সরকার দেশের মানুষের জানমাল ও ইজ্জতের নিরাপত্তা দিতে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে।
সম্মিলিত উলামা মাশায়েখ পরিষদ : পরিষদের নেতারা হাফেজ মাওলানা ইসহাকের হত্যাকাণ্ড ও আইনশৃঙ্খলার উদাসীনতার জন্য উলামা মাশায়েখ পরিষদ তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করে। অনতিবিলম্বে হত্যাকারীকে শনাক্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করা হয়।

ইভটিজিং : রায়পুরায় ছেলে ও ছেলের বউকে বাঁচাতে গিয়ে বাবা খুন : ফরিদপুরে ছাত্রীর আত্মহত্যা

ডেস্ক রিপোর্ট

দেশব্যাপী ইভটিজিংয়ের ভয়াবহতা বাড়ছেই। ইভটিজিং প্রতিরোধে সরকার কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা দিলেও বন্ধ করা যাচ্ছে না সামাজিক এ ব্যাধি। গতকাল ও শনিবার রাতে পৃথক ইভটিজিংয়ের ঘটনায় ঝরে গেল আরও দুটি তাজা প্রাণ। তবে একটি বখাটের পিটুনিতে মৃত্যু অপরটি আত্মহত্যার মাধ্যমে বখাটের প্রতিনিয়ত উত্ত্যক্তের কারণে দুর্বিষহ হয়ে ওঠা জীবন থেকে মুক্তির। মৃত্যুর ঘটনাটি ঘটেছে নরসিংদীর রায়পুরায়। আর আত্মহত্যার ঘটনাটি ঘটেছে ফরিদপুর উপজেলায়। প্রথম খুনের ঘটনাটি ঘটে বখাটেদের হাত থেকে ছেলে ও ছেলের বউকে বাঁচাতে গিয়ে। আর দ্বিতীয়টি ঘটে স্কুলে আসা-যাওয়ার পথে প্রতিনিয়ত উত্ত্যক্ত করা শেষে বখাটের কাছে শ্লীলতাহানির অপমানের কারণে। বিস্তারিত প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর :
নরসিংদী : নরসিংদীর রায়পুরায় ইভটিজারদের হাত থেকে ছেলে ও ছেলের বউকে বাঁচাতে গিয়ে খুন হয়েছেন এক ব্যবসায়ী। তার নাম রতন ভূঞা (৫০)। বাড়ি উপজেলার রহিমাবাদ গ্রামে। তার নির্মম মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তবে পুলিশ এ ঘটনায় কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি।
নিহত রতন ভূঞার ছেলে রবিনের স্ত্রী সোনিয়া আক্তার আদীয়াবাদ কলেজের প্রথমবর্ষের ছাত্রী। গতকাল সকালে সোনিয়া তার সহপাঠী শান্তা, হনুফা, মিতু ও সেলিনাসহ হাসনাবাদ বাজারে অলিউল্লাহ স্যারের কাছে প্রাইভেট পড়ে বাড়ি ফিরছিল। রবিনের দোকানের সামনে পৌঁছলে আগে থেকে ওঁত্ পেতে থাকা বখাটে যুবক সোহেল, জসিম উদ্দিন ও রাজিব তাদের গতিরোধ করে। একপর্যায়ে তাদের যৌন হয়রানির চেষ্টা চালায়।
এ সময় স্ত্রীকে চোখের সামনে উত্ত্যক্ত করতে দেখে রবিন প্রতিবাদ করলে বখাটেরা তাকে পেটাতে শুরু করে। তাদের চিত্কারে আশপাশের লোকজনসহ বাবা রতন ভূঞা ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। তিনি ছেলেকে বাঁচাতে চেষ্টা চালান। এ সময় বখাটেরা তাকেও এলোপাতাড়ি পেটাতে থাকে। ভয়ে আশপাশের লোকজন দৌড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে পালিয়ে যায়। ইভটিজারদের বেধড়ক পিটুনিতে একপর্যায়ে রতন ভূঞা মাটিতে লুটে পড়েন। পরে বখাটেরা মৃত ভেবে পালিয়ে যায়। এলাকাবাসী রতন ভূঞাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় প্রথমে নরসিংদী সদর হাসপাতাল ও পরে ঢাকা নেয়ার পথে বিকালে তিনি মারা যান। এ ঘটনায় জেলাব্যাপী তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। তবে পুলিশ এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। রায়পুরা থানার পুলিশ ইন্সপেক্টর মোমিন মিয়া ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে টেলিফোনে বলেন, অপরাধীদের আটক করতে পুরো এলাকায় তল্লাশি চলছে। নিহতের ছেলে রবিন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, পাশের আদীয়াবাদ গ্রামেই বর্তমান সরকারের ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী রাজি উদ্দিন আহমেদ রাজুর গ্রামের বাড়ি। আমার বিশ্বাস তিনি পুলিশ প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দ্রুত অ্যাকশনে যাওয়ার নির্দেশ দেবেন। এ ঘটনায় পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
ফরিদপুর : মধুখালীর চাপা রানীর রক্তের দাগ শুকানোর আগেই বখাটের কারণে পালিয়ে থেকেও মুক্তি মিলল না ফরিদপুরের স্কুলছাত্রী মুক্তি রানী মণ্ডলের (১৩)। উত্ত্যক্তের যন্ত্রণা সইতে না পেরে শনিবার রাতে আত্মহত্যা করে সে। মামার বাড়ি পালিয়ে থেকেও নিজেকে রক্ষা করতে পারেনি মেধাবী ছাত্রী মুক্তি। সে গাজনা উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী ছিল। দুই বছর ধরে বখাটে সুব্রত দাস তাকে উত্ত্যক্ত করে আসছিল। ঘটনাটি ঘটেছে শনিবার রাতে। মুক্তির মৃত্যুর পর উত্ত্যক্তকারী সুব্রত ও তার পরিবারের সদস্যরা পালিয়ে বেড়াচ্ছে।
ফরিদপুর সদর উপজেলার বিষ্ণুদিয়া গ্রামের শ্রীকান্ত মণ্ডলের মেয়ে মুক্তি রানীকে দুই বছর ধরে উত্ত্যক্ত করে আসছিল একই গ্রামের সুব্রত দাস। মুক্তিদের বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে বন্ধুদের নিয়ে সে তাকে বিরক্ত করত। এলাকার প্রভাশালী মহলের ছত্রছায়ায় থাকার কারণে তাকে কেউ কিছু বলতে পারত না। তারপরও স্থানীয় চেয়ারম্যান ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের কাছে নালিশ দিয়েছিলেন মুক্তির বাবা; কিন্তু তাতেও শেষ রক্ষা হলো না। সম্প্রতি বখাটে সুব্রত তার উত্ত্যক্ততার মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। এ কারণে তাকে তার মামার বাড়ি মধুখালী উপজেলার ব্যাসদিয়া গ্রামে পাঠিয়ে দেয়া হয়; কিন্তু সুব্রত সেখানে গিয়েও তাকে বিরক্ত করা শুরু করে। এরপর তাকে বাড়ি ফিরিয়ে আনা হয়। শুক্রবার রাতে সে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে ঘরের বাইরে গেলে আগে থেকে ওঁত্ পেতে থাকা সুব্রত তাকে ঝাপটে ধরে ধর্ষণের চেষ্টা চালায়। মুক্তির চিত্কারে বাড়ির লোকজন এসে তাকে উদ্ধার করে। এ সময় বখাটে সুব্রত দৌড়ে পালিয়ে যায়। পরদিন মুক্তিকে আবার তার মামাবাড়িতে পাঠানো হয়; কিন্তু শনিবার রাতে অপমান সহ্য করতে না পেরে সে বিষপান করে। বিষয়টি টের পেয়ে তাকে হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। লাশের ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল মুক্তির লাশ দাহ করা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছে কোতোয়ালি থানার ওসি নূরে আলম সিদ্দিকী।
ইভটিজিং : ৬ মাসে দেশে খুন হয়েছেন ৩০ জন, আহত একশ’
বরিশাল অফিস জানায়, গত ৬ মাসে ইভটিজিংয়ের শিকার হয়ে ও প্রতিবাদ করতে গিয়ে সারাদেশে ৩০ জন খুন হয়েছেন। গুরুতর আহত ও পঙ্গু হয়েছেন শতাধিক। ‘ইভটিজিং রোধে আমরা সচেতন’— এ স্লোগান নিয়ে বরিশালে অনলাইন সংবাদ সংস্থা বাংলা নিউজ ডটকম আয়োজিত এক মানববন্ধনে বক্তারা এ তথ্য জানান। বক্তারা আরও বলেন, ইভটিজিংয়ের জন্য শুধু ছেলেমেয়েরাই দায়ী নয়, ইভটিজিং বন্ধে বাবা-মা, অভিভাবককেও সচেতন হতে হবে। বর্তমানে দেশজুড়ে ব্যাপক আকার ধারণ করা ইভটিজিং সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমেই রোধ করা সম্ভব।
গতকাল সকাল ১১টায় নগরীর অশ্বিনীকুমার টাউন হল চত্বরে দৈনিক বিপ্লবী বাংলাদেশের সম্পাদক নূরুল আলম ফরিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে অন্যদের মধ্যে বক্তৃতা করেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. হানিফ, মানবাধিকার জোটের জেলা সভাপতি ডা. সৈয়দ হাবিবুর রহমান, চেম্বার অব কমার্সের জেলা সভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু, প্রেস ক্লাবের সাবেক সম্পাদক মুরাদ আহম্মেদ, ডা. মিজানুর রহমান প্রমুখ।
এবার চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রী ইভটিজিংয়ের কবলে
বিয়ানীবাজার (সিলেট) প্রতিনিধি জানান, এবার চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রীও ইভটিজিংয়ের কবলে পড়েছে। শুধু তাই নয়, বখাটে ইভটিজার ওই ছাত্রীর বসতবাড়িতেও নিয়মিত ঢিল ছুড়ে মারছে। বিয়ানীবাজার পৌর শহরের নয়াগ্রামে এ ধরনের ঘটনায় থানায় এজাহার দেয়া হয়েছে। পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে। তবে এজাহারটি এখন পর্যন্ত মামলা হিসেবে নথিভুক্ত হয়নি বলে জানান বাদী। একই গ্রামের আবদুল মালিকের ছেলে ইভটিজার হোসেন আহমদ (২২) পলাতক রয়েছে। স্থানীয় পৌর কমিশনারও ইভটিজার হোসেন আহমদকে নিবৃত্ত করতে পারেননি।
নয়াগ্রামের আবদুল হেকিমের বাড়িতে ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করেন নুরু মিয়া। তার চতুর্থ শ্রেণীপড়ুয়া মেয়েকে প্রায়ই উত্ত্যক্ত করে হোসেন। এমনকি সে তাদের বসতঘরে ঢিল ছুড়ে মারে। সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত সে নিয়মিত নুরু মিয়ার বাসায় ঢিল ছোড়ে। ভাড়াটিয়াকে নিরাপত্তা দিতে মালিক আবদুল হেকিম এসব ঘটনার প্রতিবাদ করলে বখাটে হোসেন তাকেও গালাগাল শুরু করে। বিষয়টি আবদুল হেকিম পৌরসভার প্রশাসক তফজ্জুল হোসেনকে অবহিত করেন। কিন্তু তিনিও হোসেনের অপকর্ম বন্ধ করতে পারেননি। উপায়ান্তর না দেখে আবদুল হেকিম বাদী হয়ে বিয়ানীবাজার থানায় এজাহার দায়ের করেন। থানার এএসআই আরিফ অভিযোগ পেয়ে তাত্ক্ষণিক তদন্তে গিয়ে এর সত্যতা পান। তিনি জানান, পৌর কমিশনারও হোসেনকে ইভটিজিং থেকে নিবৃত্ত করতে পারেননি। সে বর্তমানে পলাতক রয়েছে

মজুরি বাড়ানোর দাবিতে আশুলিয়ায় এক গার্মেন্টে শ্রমিক বিক্ষোভ : দুই কর্মকর্তা আহত

সাভার প্রতিনিধি

মজুরি বাড়ানোর দাবিতে গতকাল সকালে সাভারের আশুলিয়ায় জামগড়া এলাকার ইউনিভার্স নিটিং নামের একটি গার্মেন্টে শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেছে। বিক্ষোভ চলাকালে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা ওই কারখানার দুই কর্মকর্তাকে পিটিয়ে আহত করেছে।
কারখানা কর্তৃপক্ষ ও শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল সকালে ওই কারখানার দুই হাজার শ্রমিক কর্মস্থলে যোগ দিয়ে উত্পাদন শুরু করে। পরে কারখানা কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের চলমান কাজের মজুরি প্রতিপিস ৪১ টাকা নির্ধারণ করে।
এ খবর শ্রমিকদের মাঝে ছড়িয়ে পড়লে তিনটি বিভাগের প্রায় ২ হাজার শ্রমিক মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে কাজ বন্ধ করে কারখানার ভেতরে বিক্ষোভ করতে থাকে। এসময় ওই কারখানার ইনচার্জ মোহাম্মদ হোসেন ও ইলেকট্রিক ইনচার্জ আব্বাস উদ্দিন শ্রমিকদের কাজে যোগদানের জন্য বললে শ্রমিকরা ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের মারপিট করে। তাদের আহত অবস্থায় স্থানীয় একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। শ্রমিক বিক্ষোভের খবর পেয়ে আশুলিয়া থানা ও শিল্প পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মালিক-শ্রমিকদের আলোচনার পরিবেশ সৃষ্টি করে দেয়। পরে আলোচনায় বিকাল ৪টার দিকে পিসরেট ৩ টাকা বাড়িয়ে ৪৪ টাকা নির্ধারণ করা হলে শ্রমিকরা শান্ত হয়ে বাড়ি চলে যায়।
ওই কারখানার একাধিক শ্রমিক অভিযোগ করে বলেন, কারখানা কর্তৃপক্ষ চলমান কাজের জন্য প্রতিপিস ৪৫ টাকা নির্ধারণের কথা ছিল। কিন্তু বর্তমানে তারা জানিয়েছে, ওই কাজের জন্য ৪১ টাকা নির্ধারণ করা হবে। এর প্রতিবাদে শ্রমিকরা সকাল থেকে কাজ বন্ধ করে বিক্ষোভ করতে থাকে। আশুলিয়া থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক বিল্লাল হোসেন জানান, মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে ওই কারখানার শ্রমিকরা বিক্ষোভ করতে থাকে। পরে কারখানা কর্মকর্তাদের সঙ্গে শ্রমিকদের আলোচনায় বিষয়টি সমঝোতা হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে কারখানার সামনে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়।

ইসলামী আন্দোলনের সভা : ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ড বন্ধ না হলে সরকার পতনের আন্দোলন

স্টাফ রিপোর্টার

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ঢাকা মহানগর সভাপতি অধ্যাপক হাফেজ মাওলানা এটিএম হেমায়েত উদ্দীন বলেছেন, ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার শাহজালালসহ (রহ.) অসংখ্য পীর-আউলিয়ার এদেশ থেকে ইসলামকে নির্মূল করার নীলনকশা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। বিশেষ করে ২০১০ সালে সরকার দেশ থেকে ইসলামকে নির্বাসনে পাঠানোর সব আয়োজন চূড়ান্ত করেছে। ১৯৯৬-২০০১-এর মতো আবারও দেশকে দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন বানানোর কাজ করেছে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে ইসলামের ওপর আঘাত আসে, মসজিদ-মাদ্রাসা-ইসলামী পুস্তক অঘোষিতভাবে নিষিদ্ধ হয়, মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিন, মাদ্রাসার শিক্ষকদের খুনের ঘটনা, ইভটিজিংসহ নারী নির্যাতন ও যৌন হয়রানির ঘটনা বৃদ্ধি পায়, দুর্নীতিবাজরা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে এবং দেশ দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়।
গতকাল রাজধানীর পুরানা পল্টন দলের মহানগর কার্যালয়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ঢাকা মহানগরী নির্বাহী কমিটির নিয়মিত মাসিক সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এতে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন মহানগর সহ-সভাপতি মোহাম্মাদ আলতাফ হোসেন, মাওলানা এবিএম জাকারিয়া, সেক্রেটারি মুহাম্মাদ আবু সাঈদ সিদ্দিকী, আহমদ আবদুল কাইয়ুম, মোহাম্মাদ ফজলুল হক মৃধা, শহিদুল ইসলাম কবির, এইচএম সাইফুল ইসলাম, মাওলানা নজরুল ইসলাম, মুহাম্মাদ আবদুল আউয়াল, হাবিবুর রহমান, ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল আলম, অ্যাডভোকেট মোহাম্মাদ মানিক মিয়া, মোস্তফা কামাল, মুহাম্মাদ নুরুজ্জামান সরকার, মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, মোহাম্মাদ জহিরুল ইসলাম প্রমুখ।
মাওলানা এটিএম হেমায়েত উদ্দীন আরও বলেন, বর্তমান সরকার নতুন শিক্ষানীতি অনুমোদনের মাধ্যমে ইসলামী শিক্ষার ফরজ বিধানকে ঐচ্ছিক করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ইসলামী শিক্ষা বিতাড়িত করার আয়োজন সম্পন্ন করেছে। সরকার আল্লাহর হুকুম পর্দাকে ঐচ্ছিক করে ইভটিজিংকে উস্কে দিচ্ছে, সংবিধান থেকে আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস উঠিয়ে দিয়ে মুসলিম দেশের সংবিধানকে কলঙ্কিত করেছে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ইমাম প্রশিক্ষণে মার্কিন তরুণ-তরুণীদের অশ্লীল উদর নৃত্যের আয়োজন করে রাষ্ট্রীয় একমাত্র ইসলামী প্রতিষ্ঠানকে কলঙ্কিত করেছে। শাহরুখ খানকে দেশে এনে অপসংস্কৃতিকে উস্কে দিচ্ছে এবং ইভটিজিং ও ব্যভিচারকে জাতীয়করণ করেছে। তিনি বলেন, সরকার এসব ইসলাম ও সমাজবিরোধী কর্মকাণ্ড পরিহার না করলে দেশপ্রেমিক জনগণ ‘জাগো মুসলমান-বাঁচাও ঈমান, বাঁচাও দেশ’ স্লোগান দিয়ে সরকার পতনের একদফা আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবে। সভায় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, নগরজুড়ে অসহনীয় যানজট, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি এবং রমনা থানা মসজিদের ইমাম খুনের ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়। এছাড়া শীতার্ত মানুষের সহায়তায় একটি শীতবস্ত্র বিতরণ সেল গঠন করে এতে শীতবস্ত্র বা মুক্তহস্তে অর্থ দান করতে নগরের সামর্থ্যবানদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।

দু’বছরে ইসলামের ওপর বেশি আঘাত করেছে সরকার : মুফতি আমিনী

স্টাফ রিপোর্টার

ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মুফতি ফজলুল হক আমিনী বলেছেন, বিগত ২ বছর ছিল বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের ব্যর্থতার ষোলকলা পূর্ণ হওয়ার সময়। তারা সবচেয়ে বেশি আঘাত করেছে ইসলাম ও মুসলমানদের ওপর। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির এত অবনতি হয়েছে যে, এখন সাধারণ মানুষ দূরের কথা, দেশের শ্রদ্ধাভাজন আলেম-ওলামাও গুপ্তহত্যার শিকার হচ্ছেন। রমনা থানা কমপ্লেক্স মসজিদের ইমাম হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ ইসহাকের নিখোঁজ হওয়া এবং পরে মিরপুর থেকে তার গলিত লাশ উদ্ধারের ঘটনা একটি অশনি সংকেত বহন করছে। তিনি অবিলম্বে এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা এবং এই ইমাম হত্যাকাণ্ডে যথার্থ ক্ষতিপূরণ দাবি করেন।
তিনি বলেন, এই সরকারের আমলে ইসলামের বিরুদ্ধে এমন জঘন্যতম অনাচার হয়েছে, অতীতে যা কল্পনাও করা যায়নি। সরকারি পর্যায়ে একমাত্র ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ইসলামিক ফাউন্ডেশনে ইমামদের ডেকে এনে তাদের সামনে অশ্লীল নৃত্য পরিবেশন করা হয়েছে। যে ডিজির নির্দেশে এই জঘন্যতম ঘটনাটি ঘটেছে এখনও সে স্বপদে বহাল রয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে হাস্যরত অবস্থায় পত্র-পত্রিকায় তাকে দেখা যাচ্ছে। বিদেশি নর্তকীদের আমদানি করে আর্মি স্টেডিয়ামে অশ্লীলতা প্রদর্শন করা হয়েছে। আবার শোনা যাচ্ছে আগামী মার্চে নাকি বিশ্ববেহায়া সাকিরাকে আমদানি করা হবে। আমরা পরিষ্কারভাবে বলছি, আগামীতে বাংলার মাটিতে এই ধরনের অশ্লীল কনসার্ট ও নগ্নতার প্রদর্শনী যে কোনো মূল্যে প্রতিহত করা হবে। তিনি বলেন, এই আওয়ামী সরকার আর কিছুদিন ক্ষমতায় থাকলে দেশে ইসলাম থাকবে না, দেশের স্বাধীনতাও বিক্রি হয়ে যাবে।
গতকাল বাদ আসর লালবাগস্থ কার্যালয়ে ইসলামী ঐক্যজোট মজলিসে শূরার সভায় সভাপতির বক্তব্যে মুফতি আমিনী এসব কথা বলেন। এতে আরও উপস্থিত ছিলেন মহাসচিব মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী, যুগ্ম মহাসচিব মুফতি তৈয়্যেব, সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতি ফয়জুল্লাহ, মাওলানা আবুল কাশেম, প্রচার সম্পাদক মাওলানা আহলুল্লাহ ওয়াছেল, মাওলানা শেখ লোকমান হোসাইন, মাওলানা যোবায়ের আহমদ, মাওলানা জসিম উদ্দীন, মাওলানা ফজলুর রহমান, মাওলানা আহমদ আলী, মাওলানা অধ্যাপক এহতেশাম সরওয়ার, অধ্যাপক আবদুল করীম, মাওলানা শওকত আমীন, মাওলানা ফারুক আহমদ প্রমুখ।
সভায় জাতীয় শিক্ষানীতি বাতিলের দাবি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে উদ্বেগ প্রকাশ ও সরকারের ইসলামবিরোধী ভূমিকার তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ করা হয়।

নয়া দিগন্তের গোলটেবিলে বক্তারা : নতুন বছরে ধর্মকে কলঙ্কের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা হবে

স্টাফ রিপোর্টার

নতুন বছরে গণতন্ত্রের সঠিক প্রয়োগ ঘটুক। প্রতিহিংসার ধারা থেকে বেরিয়ে এসে ক্ষমতাসীনদের মধ্যে উদয় হোক শুভবুদ্ধি। সুশাসন ও জননিরাপত্তা প্রতিষ্ঠাসহ দেশের বৃহত্তর স্বার্থে প্রতিষ্ঠিত হোক জাতীয় ঐকমত্য।
গতকাল নিজস্ব সম্মেলন কক্ষে দৈনিক নয়া দিগন্ত আয়োজিত ‘২০১১ : কেমন বাংলাদেশ চাই’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে দেশের খ্যাতনামা শিক্ষাবিদ, আইনজ্ঞ, সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা এই মতামত তুলে ধরেন। তারা আরও বলেন, নতুন বছরে ধর্মহীনতা বাড়বে। ধর্মকে একটি কলঙ্কের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা হবে।
নয়া দিগন্ত সম্পাদক আলমগীর মহিউদ্দিনের সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ, রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সাবেক সচিব আসাফ্উদ্দৌলাহ্, সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী, সাংবাদিক কলামিস্ট শফিক রেহমান, কলামিস্ট ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক ফরহাদ মজহার, সাংবাদিক মোহাম্মদ মাহফুজ উল্লাহ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনৈতিক রাজনীতি বিষয়ক অধ্যাপক ড. পিয়াস করীম, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব অধ্যাপক আসমা আব্বাসী, মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের সেক্রেটারি আদিলুর রহমান খান, বিশেষজ্ঞ চিকিত্সক ডা. আবদুল বায়েস ভূঁইয়া এবং এফবিসিসিআই পরিচালক ও বাংলাদেশ লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প মালিক সমিতির সভাপতি আবদুর রাজ্জাক।
অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, নতুন বছরে গণতন্ত্রের সঠিক প্রয়োগ ঘটুক, ব্যক্তির বদলে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হোক, সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হোক। কারণ এসবই একসূত্রে গাঁথা। আর এজন্য যে নীতিই প্রণীত হবে, তা হতে হবে সুস্পষ্ট, সবার কাছে গ্রহণযোগ্য। তিনি বলেন, নতুন বছরে প্রতিহিংসার আবহাওয়া থেকে মুক্ত হয়ে ক্ষমতা প্রয়োগকারীদের মধ্যে শুভ বুদ্ধির উদয় হোক। ব্যক্তিস্বার্থ বাদ দিয়ে জাতীয় স্বার্থে ক্ষমতাসীনরা মনোযোগ দিক, এটাই সবার প্রত্যাশা।
আসাফ্উদ্দৌলাহ্ বলেন, ২০১১ সালেও আমাদের অবস্থার কোনো পরিবর্তন হবে না। র্যাব-পুলিশ হবে আরও নৃশংস, রাজনীতিবিদরা হবে অভদ্র। নতুন বছরে ধর্মহীনতা বাড়বে। ধর্মকে একটি কলঙ্কের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা হবে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের সংস্কৃতি দ্রুত বদলে যাচ্ছে। গ্রামাঞ্চলে আজ অনেকেই হিন্দি বোঝে। এই বিজাতীয় সংস্কৃতি বন্ধ করতে হলে কেবল রক্ষণাত্মক কৌশল নিলেই হবে না, আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে।
আবুল হাসান চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের জন্য কূটনৈতিক সম্পর্কের দিকটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দাবি-দাওয়া পূরণে সরকার ও বিরোধী দলে ঐক্য স্থাপন করতে হবে।
শফিক রেহমান বলেন, ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে সমালোচনা করা যেতে পারে। কিন্তু তার নোবেল প্রাইজ নিয়ে দেশের সব মিডিয়া সরকার ও প্রধানমন্ত্রীর ইন্ধনে যেভাবে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, এটি সবচেয়ে বড় বিস্ময়। মুসা ইব্রাহীম দেশের আসল বিস্ময় নয়।
তিনি বলেন, যে কোনোভাবেই হোক এ দেশের মিডিয়ায় বর্তমানে সরকারের চাপ আছে।
ফরহাদ মজহার বলেন, নতুন বছরে আমি ভালো কিছুর প্রত্যাশা করতে পারছি না। কারণ আমরা একটি অরক্ষিত দেশে বাস করছি। বিডিআরের ঘটনা এবং পিস মিশনের কারণে আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর বিজাতীয়করণ ঘটেছে।

ইভটিজারকে গ্রেফতার করেনি পুলিশ : নেত্রকোনায় শরীরে আগুন দিয়ে ছাত্রীর আত্মহত্যা

নেত্রকোনা প্রতিনিধি

ইভটিজিংয়ের অপমান সইতে না পেরে অবশেষে নিজ শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে অগ্নিদগ্ধ হয়ে গুরুতর আহত অবস্থায় এসএসসি পরীক্ষার্থী হাফসা আক্তার দিপু ঢাকা মেডিকেল কলেজ বার্ন ইউনিটে গতকাল দুপুর ২টায় মৃত্যুবরণ করেছে।
জানা যায়, নেত্রকোনা জেলার আটপাড়া উপজেলার বাকরপুর গ্রামের দেলোয়ার হোসেনের কন্যা বানিয়াজান সিটি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী হাফসা আক্তার দিপু স্কুলে এবং কোচিংয়ে যাওয়া-আসার পথে মাসুম নামে এক বখাটে তাকে উত্ত্যক্ত করত। গত ২১ ডিসেম্বর দুপুরে বখাটে মাসুম স্কুল থেকে ফেরার পথে দিপুকে টানাহেঁচড়া করে পরিত্যক্ত এক বন্যা আশ্রয় শিবিরে নিয়ে শ্লীলতাহানি করে। এ অপমান সইতে না পেরে দিপু গত ২২ ডিসেম্বর সকালে নিজ শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে আত্মহননের চেষ্টা চালায়। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে ওই দিনই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ১১ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে গতকাল দুপুরে সে মারা যায়। এ খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে সহপাঠী ও এলাকাবাসীর মাঝে শোকের ছায়া নেমে আসে।
এ ব্যাপারে অগ্নিদগ্ধ ছাত্রী দিপুর পিতা দরিদ্র কৃষক দেলোয়ার হোসেন বাদী হয়ে ইভটিজার মাসুমকে আসামি করে গত ২৫ ডিসেম্বর আটপাড়া থানায় মামলা দায়ের করলেও পুলিশ এখনও তাকে গ্রেফতার
করতে পারেনি। উল্লেখ্য, মাসুম ছাত্রলীগের একজন ক্যাডার বলে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করছে না বলে হাফসার বাবার অভিযোগ।