Wednesday 23 February 2011

থামছে না শেয়ারবাজারের ধস : ক্ষুব্ধ বিনিয়োগকারীরা রাস্তায় : অর্থমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি, লেনদেন স্থগিত রাখার আহ্বান


অর্থনৈতিক রিপোর্টার

কোনো কিছুতেই পতন ঠেকানো যাচ্ছে না শেয়ারবাজারের। দরপতনের শিকার হয়ে কয়েক লাখ বিনিয়োগকারীর পথে বসার উপক্রম হয়েছে। পুঁজি হারিয়ে দিশেহারা হয়ে রাস্তায় নেমে আসছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। তারপরও পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হচ্ছে না। গতকাল বিরোধী দলের ডাকা হরতাল উপেক্ষা করে লেনদেন চালু রাখা হলেও শেয়ারবাজারে দরপতন ঠেকানো যায়নি। দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাধারণ মূল্য সূচকের পতন হয়েছে ৩২৪ পয়েন্টে। এ নিয়ে টানা তিন দিন বড় ধরনের দরপতন হয়েছে শেয়ারবাজারে। মাত্র তিন দিনের দরপতনে ডিএসই সাধারণ সূচকের পতন হয়েছে ১০১৫ পয়েন্টের। শেয়ারবাজারে ক্রমাগত দরপতনে গতকালও রাস্তায় নেমে এসে বিক্ষোভ করেছেন কয়েক হাজার সাধারণ বিনিয়োগকারী। তারা পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যর্থ হওয়ায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কড়া সমালোচনা ও তার পদত্যাগ দাবি করেন। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর, এসইসি চেয়ারম্যান ও ডিএসই প্রেসিডেন্টের পদত্যাগও দাবি করেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। বর্তমান পরিস্থিতিতে লেনদেন স্থগিত রাখারও আহ্বান জানান তারা। আগের দিনও দরপতনের প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছিলেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।
এদিকে শেয়ারবাজার পরিস্থিতি এবং বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে ৫টি ব্রোকারেজ হাউসের লেনদেন কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নিয়েছে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি)। আজ থেকে হাউসগুলো লেনদেন শুরু করতে পারবে। আগ্রাসী সেলের কারণে গত ২০ জানুয়ারি ৬টি ব্রোকারেজ হাউসের লেনদেন কার্যক্রমে এক মাসের স্থগিতাদেশ দিয়েছিল এসইসি। এর মধ্যে এনসিসি ব্যাংকের লেনদেন কার্যক্রম চালু করার অনুমতি দেয়া হলেও বন্ধ ছিল অপর ৫টি ব্রোকারেজ হাউসের। এ হাউসগুলো হলো—আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, অ্যালায়েন্স সিকিউরিটিজ অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট, ঢাকা ব্যাংক, পিএফআই সিকিউরিটিজ ও আইআইডিএফসি সিকিউরিটিজ হাউস। তবে লেনদেন কার্যক্রম চালু হলেও তাদের বিরুদ্ধে চলমান আইনি কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন কমিশনের মুখপাত্র এবং নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমান।
অপরদিকে গতকাল হরতাল সত্ত্বেও কোরাম পূর্ণ হওয়ায় শেয়ারবাজারে লেনদেন কার্যক্রম অব্যাহত ছিল। অন্যান্য সময়ে হরতালে শেয়ারবাজারে লেনদেন বন্ধ থাকলেও আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর লেনদেন কার্যক্রম চালু রাখার উদাহরণ তৈরি করা হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, রকিবুর রহমান ডিএসই প্রেসিডেন্ট থাকাকালে বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউসে চাপ সৃষ্টি করে হরতালে লেনদেন চালু রাখতে বাধ্য করেন। সরকারের কাছের লোক হিসেবে পরিচয় দেয়া রকিবুর রহমান নিজের সাফল্য হিসেবে তুলে ধরতে হরতালে লেনদেন চালু রাখেন। এরই ধারাবাহিকতায় লেনদেন চালু রাখার জন্য বিভিন্ন সদস্যের প্রতি চাপ প্রয়োগ করা হয়। হরতালের আগের দিন বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউসকে কোরাম সঙ্কট যাতে না হয় সেজন্য নির্দেশনা দেয়া হয়। অন্যথায় বিভিন্ন অজুহাতে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও হুশিয়ারি দেয়া হয়। তাই অনেকটা বাধ্য হয়েই ব্রোকারেজ হাউসগুলোকে লেনদেন চালু রাখতে হচ্ছে। গতকালও তার ব্যত্যয় ঘটেনি। তবে লেনদেন চালু হলেও শেয়ারবাজারের পতন বন্ধ করা যায়নি। ক্রমাগত দরপতনে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে যে আস্থার সঙ্কট তৈরি হয়েছে গতকালের দরপতনে তা আরও প্রকট আকার ধারণ করেছে। সংশ্লিষ্ট অনেকেই ধারণা করেছিলেন, হরতালে কৃত্রিম উপায়ে হলেও শেয়ারবাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করা হবে। সে চেষ্টাও ছিল। কিন্তু তাতেও শেষ রক্ষা হয়নি। লেনদেনের শুরুতেই অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ার দর হারায়। আর মাত্র ৫ মিনিটের মধ্যেই ডিএসই সূচকের পতন ঘটে ২৫০ পয়েন্টের। এ পতনের পর বাজারকে কিছুটা টেনে ধরার চেষ্টা চালানো হয়। বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ক্রয় করে বাজারকে টেনে ধরার নির্দেশনা দেয়া হয়। এর ফলে শেয়ারবাজারের সূচকে বড় ধরনের ঊর্ধ্বমুখী ধারা তৈরি হয়। কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কেনার সক্ষমতা শেষ হয়ে গেলে বাজারের পতন অনিবার্য হয়ে ওঠে। শুরু হয় দরপতন। এ দরপতনে আগের দিনের তুলনায় ডিএসই সাধারণ সূচক ২৭০ পয়েন্টের পতন হলে বিনিয়োগকারীরা বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউস থেকে রাস্তায় নেমে আসেন। বিনিয়োগকারীরা রাস্তায় নেমে আসার ফলে হরতালে বিক্ষিপ্তভাবে কিছু রিকশাসহ অন্যান্য যানবাহন চলাচল করলেও তা পুরো বন্ধ হয়ে যায়। বিএনপি আহূত হরতালে মতিঝিল এলাকায় কোনো পিকেটারের উপস্থিতি ছিল না। বিনিয়োগকারীরা রাস্তায় নেমে আসার ফলে ওই এলাকায় হরতালের পুরো আমেজ তৈরি হয়। সাধারণ বিনিয়োগকারীরা জানান, তারা কোনো দলের লোক নন এবং কারো কোনো রাজনৈতিক পরিচয় থাকলেও তা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। সাধারণ বিনিয়োগকারীরা তাদের পুঁজি হারিয়ে রাস্তায় নেমে আসতে বাধ্য হয়েছেন।
হেদায়েত উল্লাহ সিকিউরিটিজ হাউসে লেনদেন করা সুমন উদ্দিন নামে বিক্ষোভে অংশ নেয়া একজন বিনিয়োগকারী জানান, এখানে কোনো রাজনৈতিক কিছু নেই। সবার অস্তিত্বে আঘাত এসেছে। যারা রাস্তায় নেমে এসেছেন তারা সবাই সাধারণ বিনিয়োগকারী। হাফিজুর রহমান সবুজ নামে আরেকজন বিনিয়োগকারী জানান, সব শ্রেণীর লোক বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন। এখানে সরকার বা বিরোধী দল বলে কোনো কিছু নেই। যদি কিছু থেকে থাকে তা তাদের একান্ত নিজস্ব। মনিরুল ইসলাম নামে আরেকজন বিনিয়োগকারী বলেন, শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার ব্যর্থ হয়েছে। বিনিয়োগকারীরা পুঁজি হারিয়ে রাজপথে নেমে আসতে বাধ্য হয়েছেন। মিজানুর রহমান নামে একজন বিনিয়োগকারী কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমি ২০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছিলাম, কিন্তু এখন তা ৫ লাখে নেমে এসেছে। আমি সর্বস্বান্ত হয়ে গেছি। আমার আর কোনো কিছু অবশিষ্ট নেই।
বিনিয়োগকারীদের বিক্ষোভ : পুঁজিবাজারে দরপতনে বিনিয়োগকারীদের বিক্ষোভে আগের দিনের মতো গতকালও উত্তাল ছিল মতিঝিল এলাকা। বিনিয়োগকারীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল-সমাবেশ করে এবং পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান ফটকের সামনেও বিক্ষাভ প্রদর্শন করেন এবং গভর্নরের পদত্যাগ দাবি করেন। বিনিয়োগকারীরা বেলা সোয়া ৩টার দিকে বিভিন্ন অফিসে ইটপাটকেল ছুড়ে মারেন। এতে আইএফআইসি ব্যাংক, এনসিসি ব্যাংক, সিটি ব্যাংক এনএসহ বেশ কয়েকটি অফিসের কাচ ভেঙে যায়। এসব ভাংচুরের ঘটনায় কিছু টোকাইকে সক্রিয় অংশগ্রহণ করতে দেখা গেছে। জামা খুলে বিনিয়োগকারীদের প্রতিবাদ : শেয়ারবাজারে দরপতনে গায়ের জামা খুলে অভিনব পন্থায় প্রতিবাদ জানিয়েছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। পুঁজি হারানোর প্রতীকী প্রতিবাদ হিসেবে তারা জামা খুলে ফেলেন। তারা বলেন, শেয়ারবাজারে যেভাবে দরপতন হচ্ছে তাতে আমরা নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছি। তারই প্রতিবাদস্বরূপ আমরা আজ জামা খুলে ফেলেছি। এর পরও যদি সরকারের টনক না নড়ে তাহলে পরিস্থিতি আরও ভয়ানক আকার ধারণ করবে।
অর্থমন্ত্রীর বিরুদ্ধে বিনিয়োগকারীদের যত ক্ষোভ : গতকাল বিনিয়োগকারীদের সবচেয়ে বেশি ক্ষোভ ছিল অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের ওপর। বিভিন্ন সময়ে অর্থমন্ত্রীর দেয়া বক্তব্যকে দায়িত্বজ্ঞানহীন উল্লেখ করে তারা বলেন, শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থার সঙ্কট তৈরির পেছনে অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য অনেকাংশে দায়ী। শেয়ারবাজারকে ‘জুয়ার বাজার’ এবং অব্যাহত দরপতন হলেও এটিকে স্বাভাবিক বলে মন্তব্য করে মূলত তিনি বিনিয়োগকারীদের পথে বসাতে চাইছেন। গত এক মাস ধরে শেয়ারবাজারে ভয়াবহ বিপর্যয়ের পরও তিনি বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরতে পারে, এ ধরনের কোনো পদক্ষেপ নেননি। বরং বিভিন্ন সময়ে বিনিয়োগকারীদের নিয়ে উপহাস করেছেন। সরকারের ২৬টি কোম্পানির শেয়ার আনা যখন বাজারের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল তখন তিনি তা করতে পারেননি। তখন যদি তিনি ভূমিকা পালন করতেন তাহলে শেয়ারবাজারে এ ধরনের বিপর্যয় হতো না। লাখ লাখ বিনিয়োগকারীকে পথে বসতেও হতো না। শেয়ারবাজার পরিস্থিতি সামলানোর ক্ষেত্রে অর্থমন্ত্রীকে ব্যর্থ দাবি করে তারা অচিরেই তার পদত্যাগ দাবি করেন। তারা বলেন, অর্থমন্ত্রী পদত্যাগ করলেই বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরে আসবে। বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর, এসইসি চেয়ারম্যান ও ডিএসই প্রেসিডেন্টেরও পদত্যাগ দাবি করেন। ট্রেড বন্ধ রাখার আহ্বান : শেয়ারবাজারে ক্রমাগত দরপতনের কারণে লেনদেন বন্ধ রাখার জন্য সাধারণ বিনিয়োগকারীরা আহ্বান জানিয়েছেন। তারা বলেন, যেভাবে বাজারে দরপতন হচ্ছে তাতে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ক্রমেই নিঃস্ব হয়ে পড়ছেন। এ অবস্থায় লেনদেন কার্যক্রম বন্ধ রাখার আহ্বান জানিয়ে তারা বলেন, লেনদেন চালু রাখা হলে বিনিয়োগকারীরা তা বন্ধ করে দেবে। এজন্য বিনিয়োগকারীরা দায়ী থাকবে না।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য নিয়ে অসন্তোষ : শেয়ারবাজারে অস্থিরতার পেছনে বিরোধীদলের ভূমিকা রয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রী যে বক্তব্য দিয়েছেন তা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ ও ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। তারা বলেন, সরকার নিজের ব্যর্থতার দায় অন্যের ঘাড়ে চাপানোর জন্য অপচেষ্টা চালাচ্ছে।
ডিএসইর সঙ্গে তদন্ত কমিটির বৈঠক : ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) পরিচালনা পরিষদের সঙ্গে আজ শেয়ারবাজার কারসাজির ঘটনা তদন্তে গঠিত কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। গতকাল এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও বিএনপির ডাকা হরতালের কারণে তা এক দিন পিছিয়ে দেয়া হয়

দুই বছরে ২৪ টাকার রসুন ২শ’ টাকা অন্যান্য মসলার দাম বেড়েছে তিনগুণ

সৈয়দ মিজানুর রহমান

২০০৯ সালের এই সময়ে বাজারে এক কেজি রসুনের খুচরা দর ছিল ২৪ থেকে ৩২ টাকা। এখন রসুন বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ২০০ টাকা কেজি দরে। দুই বছর আগে বাজারে এক কেজি হলুদের দাম ছিল ৯৫ থেকে ১১০ টাকা, যা বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৩২৫ থেকে ৩৫০ টাকা দরে। শুকনা মরিচের খুচরা মূল্য দুই বছর আগে যেখানে প্রতি কেজি ৯০ থেকে ১১০ টাকা ছিল, বর্তমানে তা বিক্রি হচ্ছে ১৯০ থেকে ২২০ টাকা কেজি। আদার দর দুই বছর আগে প্রতি কেজি ৪০ থেকে ৪২ টাকা ছিল। এখন আদা বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮৫ টাকা দরে।
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বাজারদর তথ্যে জানা গেছে, মসলার দর গত ২ বছর ধরেই ঊর্ধ্বমুখী। এ সময়ে দফায় দফায় মূল্যবৃদ্ধির কারণে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে মসলার বাজার। বাজার ঘুরে জানা গেছে, এলাচ, জিরা, ধনে, যত্রিক, কবাবচিনি ও অন্যান্য মসলার দামও এখন আকাশচুম্বী। গত দুই বছরে প্রকারভেদে কেজি প্রতি ১০০ টাকা থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত বেড়েছে এসব মসলার দাম।
মসলার বাজারে গত দুই বছরে দরবৃদ্ধির শীর্ষে আছে রসুন। ব্যবসায়ীরা বলেছেন, আমদানি ব্যয় বাড়ায় রসুনের দাম বেড়েছে। দেশি রসুনের দাম বাড়ার কারণ হিসেবে অনেক ব্যবসায়ী বলেছেন, একশ্রেণীর মজুতদার, আমদানিকারক, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের কারসাজিতেই ধাপে ধাপে রসুনের দাম বেড়েছে। দামের ব্যবধান কমিয়ে আনতে সরকারকে রসুন আমদানির পরামর্শ দিয়েছেন কেউ কেউ।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সাধারণত চীন ও ভারত থেকে আমদানি হয়ে থাকে রসুন। চীনে নতুন মৌসুমের রসুন বাজারে উঠতে শুরু করেছে। সে জন্য সেখানে দামও নিম্নমুখী। তবে অভ্যন্তরীণ বাজারে রসুনের দাম ঊর্ধ্বমুখী বলে জানিয়েছে টিসিবি। টিসিবির তথ্যমতে, গত দুই বছরে রসুনের দাম প্রায় তিনগুণ বেড়েছে। গত এক বছরের শতকরা হিসাবে রসুনের দাম বেড়েছে ৬১ শতাংশ। গত এক মাসে দরবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ৭ ভাগ। শ্যামবাজারের আড়তদার আবদুস সাত্তার জানিয়েছেন, স্থানীয়ভাবে উত্পাদন কমে যাওয়ায় রসুনের দাম বাড়ছেই। তিনি বলেন, দেশের ৫টি জেলায় বেশি রসুন উত্পাদিত হয়। এগুলো হলো নাটোর, ফরিদপুর, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও মানিকগঞ্জ। এর মধ্যে নাটোরে সবচেয়ে বেশি রসুন উত্পাদিত হয়।
রসুন আমদানিকারক আমজাদ হোসেন জানিয়েছেন, ভারত থেকে রসুন আমদানি প্রায় বন্ধ হওয়ার পথে। আমদানিতে কিছু জটিলতা তৈরি হওয়ায় ব্যবসায়ীরা এখন চীন থেকেই আমদানি করছেন। তবে চীন থেকে আমদানিতে সময় বেশি লাগে, পরিবহন খরচও বেশি। এ কারণে দাম ঊর্ধ্বমুখী। তিনি দাবি করেন, কিছু আড়তদার রসুনের মজুত গড়ে তুলছেন। এরা স্থানীয়ভাবে উত্পাদিত রসুন কৃষকদের কাছ থেকে সস্তায় কিনে থাকেন, সেগুলোও পরে চড়া দামে বিক্রি করছেন। বাজারে সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ না থাকার ফলেই ধাপে ধাপে রসুনের দাম বেড়ে যাচ্ছে বলে জানান তিনি।
হলুদের দামও গত দুই বছরে প্রায় তিনগুণ বেড়েছে। টিসিবির হিসাবে ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাজারে প্রতি কেজি হলুদ বিক্রি হয়েছে ৯৫ থেকে ১১০ টাকা। ২০১০ সালের ফেবু্রয়ারিতে হলুদ বিক্রি হয় ১৬০ থেকে ১৭৫ টাকা, যা গতকাল বাজারে বিক্রি হয় ২৮০ থেকে ৩২৫ টাকা কেজি দরে।
শুকনা মরিচের দাম ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে ছিল প্রতি কেজি ৯০ থেকে ১১০ টাকা। ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারিতে এসে শুকনা মরিচের দাম বেড়ে বিক্রি হয় ১২০ থেকে ১৫০ টাকা কেজি। গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে শুকনা মরিচ বিক্রি হয়েছে ১৯০ থেকে ২২০ টাকা কেজি। টিসিবির হিসাবে গত এক বছরে এর দাম প্রায় ৩৫ শতাংশ বেড়েছে।
বাজারে এক কেজি আদার দাম এখন ৭৫ থেকে ৮০ টাকা। তবে দুই বছর আগে আদার দাম ছিল প্রতি কেজি ৪০ থেকে ৪২ টাকা কেজি। গত বছর ফেব্রুয়ারিতেও আদা বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে।
বাজারে গত দুই বছর আগে ৫০ গ্রাম এলাচ বিক্রি হয়েছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকায়। কারওয়ান বাজারের মসলা বিক্রেতা কামাল হোসেন গতকাল আমার দেশকে জানিয়েছেন, বর্তমানে ৫০ গ্রাম এলাচ বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৭০ টাকায়। তিনি জানান, গত কোরবানি ঈদের আগে থেকে এলাচ, জিরা, যত্রিক, কবাবচিনি ও অন্যান্য মসলার দাম হঠাত্ বেড়ে যায়। সেই থেকে চড়া দামেই মসলা বিক্রি হচ্ছে। তিনি জানান, মাত্র এক বছর আগেও ১০০ গ্রাম জিরা বিক্রি হয়েছে ২০ থেকে ২৫ টাকায়। এখন তা বিক্রি হচ্ছে ১৫৫ থেকে ১৬০ টাকায়।
১০০ গ্রাম যত্রিক বিক্রি হতো দুই বছর আগে ১০০ টাকায়। এখন তা ২৫০ টাকা ছাড়িয়ে গেছে।
রাজধানীর মৌলভীবাজারের ব্যবসায়ীরা বলেছেন, গত প্রায় এক বছর ধরেই মসলার দাম চড়া। এর মধ্যে কয়েকদফা দাম বেড়েছে মসলার। তবে একসঙ্গে সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে গত কোরবানির ঈদের আগে। ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ জানিয়েছেন, মসলার ওপর সরকার শুল্ক বসিয়েছে। এ কারণে দাম বেড়ে গেছে। এ বিষয়ে মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি এনায়েতুল্লা জানান, শুল্ক বৃদ্ধির নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে মসলার বাজারে। দাম আরও বাড়তে পারে। তিনি বলেন, এতদিন এক টন মাল আমদানি করতে ১৮শ’ ডলার শুল্ক ধরা হতো। বর্তমানে ৩ হাজার ডলার শুল্ক ধরা হচ্ছে। সে হিসাবে এক টন মাল আমদানি করতে ৫২ হাজার টাকার বেশি শুল্ক দিতে হচ্ছে। তাই মালের দাম আরও বাড়তে পারে।

বিভিন্ন স্থানে যৌন নিপীড়নের ঘটনা বাড়ছে


ডেস্ক রিপোর্ট

বিভিন্ন স্থানে যৌন নিপীড়ন ও নির্যাতনের ঘটনা বাড়ছে। এসব যৌন নিপীড়নের অধিকাংশ ঘটনা স্থানীয় প্রভাবশালীরা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিস্তারিত খবর পাঠিয়েছেন আমাদের প্রতিনিধিরা।
ভাণ্ডারিয়া : ভাণ্ডারিয়ায় স্ত্রীকে অনৈতিক কাজে বাধ্য করানোর চেষ্টার অভিযোগে গতকাল পাষণ্ড স্বামী দেলোয়ার হোসেন ও খদ্দের মো. জিয়াদুল হক কাজীকে পুলিশে সোপর্দ করেছে স্থানীয়রা। এ ঘটনায় স্ত্রী তাসলিমা আক্তার বাদী হয়ে ভাণ্ডারিয়া থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করেছেন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ভাণ্ডারিয়া উপজেলার রাধানগর গ্রামের দেলোয়ার হোসেন ভাণ্ডারিয়া বাজারের টিএন্ডটি সড়কে দুই সন্তানসহ স্ত্রী তাসলিমাকে নিয়ে একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করত। ওই পাষণ্ড স্বামী দীর্ঘদিন ধরে স্ত্রীকে খদ্দের জিয়াদুলের কুপ্রস্তাবে রাজি হতে বলে। গত শুক্রবার রাতে তার স্বামী জিয়াদুলকে নিজ ঘরে পাঠিয়ে বাইরে পাহারায় থাকে। এ সময় স্ত্রী কৌশলে নিজেকে রক্ষা করে তার পিতাসহ আত্মীয়-স্বজনকে খবর দিলে তারা এসে হাতেনাতে ধরে গণপিটুনি দিয়ে উভয়কে পুলিশে সোপর্দ করে। ধৃত স্বামী দেলোয়ার হোসেন এ অভিযোগ অস্বীকার করে।
নাইক্ষ্যংছড়ি (বান্দরবান) : নাইক্ষ্যংছড়িতে রোহিঙ্গা নাগরিক কর্তৃক এক তরুণীকে শ্লীলতাহানির অভিযোগ উঠেছে। গত বুধবার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার দোছড়ি ইউনিয়নের তুলাতলী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, গত ২ ফেব্রুয়ারি তুলাতলী এলাকার মোহাম্মদ ইউনুছের বিয়ে উপযুক্ত কন্যা মিনারা বেগম প্রতিদিনের মতো নিজ বসত ঘরে ঘুমিয়ে পড়লে অবৈধ বসবাসকারী রোহিঙ্গা নাগরিক মোহাম্মদ জোহার রাতের আঁধারে বাড়িতে প্রবেশ করে মিনারা বেগমকে শ্লীলতাহানির চেষ্টা চালায়। এ ঘটনা এলাকায় জানাজানি হওয়ায় স্থানীয় সালিশি বৈঠকের কথা থাকলেও অভিযুক্ত ব্যক্তিরা বিচারে উপস্থিত না হয়ে উল্টো মিনারার পরিবারকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। এ ঘটনায় মিনারার পিতা বাদী হয়ে নাইক্ষ্যংছড়ি থানায় এজাহার দায়ের করেছে।
সিংড়া (নাটোর) : নাটোরের সিংড়া উপজেলার চৌগ্রামে ৯ম শ্রেণীর এক ছাত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টা ও লুটপাটের ঘটনায় ছাত্রীর পিতা জহুরুল ইসলাম বাদী হয়ে দুই যুবলীগ কর্মী শামীম হোসেন ও দুলাল হোসেনের নামে সিংড়া থানায় মামলা দায়ের করেছেন। শনিবার রাতে তিনি এ মামলা দায়ের করেন। এদিকে, সন্দেহজনকভাবে রামানন্দ খাজুরা ইউনিয়ন ভূমি অফিসের পিয়নসহ এক আওয়ামী লীগ কর্মীকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে রাতেই ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ। মামলার আসামি শামীম ও দুলাল যথাক্রমে মকবুল হোসেন এবং মৃত ঠুনা মিয়ার ছেলে।
মোরেলগঞ্জ (বাগেরহাট) : মোরেলগঞ্জ উপজেলার নিশানবাড়ীয়া ইউনিয়নের সোহরাব হোসেন বাচ্চুর বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে মামলা দায়ের করে নিরাপত্তাহীনতায় দিন কাটাচ্ছেন হরতকিতলা গ্রামের বকুল বেগম ও তার পরিবারের সদস্যরা। থানা পুলিশ এ ঘটনায় বাদীর কাছ থেকে ২টি অভিযোগ লিখিয়ে নিলেও অজ্ঞাত কারণে অভিযোগ দায়েরের ৫দিন পর মামলা রেকর্ড করে।
ভাঙ্গুড়া (পাবনা) : পাবনার ভাঙ্গুড়ায় বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে অবাধে দৈহিক মেলামেশা করার পর ৫ মাসের অন্তঃসত্ত্বা প্রেমিকা কলেজ ছাত্রীকে রেখে পালিয়ে বেড়াচ্ছে বখাটে প্রেমিক শিহাব। নির্যাতিতা ছাত্রী ভাঙ্গুড়া মহিলা কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী।
এ ঘটনায় তার বাবা বাদী হয়ে ভাঙ্গুড়া থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে। এদিকে ন্যক্কারজনক এ ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে উঠেপড়ে লেগেছে এলাকার প্রভাবশালী মহল।
আড়াইহাজার (নারায়ণগঞ্জ) : আড়াইহাজারের পৃথক দুটি স্থানে দুটি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। শনিবার রাতে উপজেলার কাদিরদিয়া ও জাঙ্গালিয়া গ্রামে ঘটনাগুলো ঘটে। পুলিশ জানায়, কাদিরদিয়া গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য জিয়াউদ্দীনের মেয়ে মাহমুদার সঙ্গে বিয়ে হয় গাইবান্ধা জেলার ছোটবালিয়া গ্রাামের নুরুল্লাহর ছেলে জালালের। দীর্ঘ ৮ বছর সংসার করার পর তাদের একটি সন্তান হয়। ঘরজামাই হিসেবে শ্বশুর বাড়িতেই থাকত জালাল। কিছুদিন আগে আগুয়ানদী গ্রামের লিয়াকতের ছেলে ফরিদ নামের এক যুবকের সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে মাহমুদা। এতে ক্ষোভে জালাল সবার অজান্তে শনিবার সন্ধ্যায় বিষপানে আত্মহত্যা করে। অপর দিকে উচিত্পুরা ইউনিয়নের জাঙ্গালিয়া গ্রামে প্রেমে ব্যর্থ হয়ে শনিবার গভীর রাতে রাশিদা নামের এক কিশোরী আত্মহত্যা করেছে। সে ওই গ্রামের মৃত সালামের মেয়ে।
কুলাউড়া : কুলাউড়ার সীমান্ত এলাকায় এক কিশোরীকে রাতের আঁধারে জোর করে ধর্ষণ করেছে এক যুবক। এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। মামলা ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার সীমান্ত এলাকা শরীফপুর ইউনিয়নের নিশ্চিন্তপুর গ্রামের আবদুস শহীদের কিশোরী মেয়েকে গত ৪ ফেব্রুয়ারি রাতে পৃথিমপাশার সম্মান গ্রামের মোহাম্মদ আলীর ছেলে নূর উদ্দিন বাড়িতে একা পেয়ে জোর করে ধর্ষণ করে পালিয়ে যায়। এ ব্যাপারে গত শনিবার রাত ১১টায় কুলাউড়া থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা হয়েছে। পুলিশ জানায়, ধর্ষিতাকে ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য মৌলভীবাজার সিভিল সার্জন অফিসে প্রেরণ করা হয়েছে।

মানবাধিকার কমিশন চেয়ারম্যান : আড়িয়ল বিলে সহিংসতার জন্য সরকার দায়ী


স্টাফ রিপোর্টার

আড়িয়ল বিলে গণবিস্ফোরণ, পরবর্তী সময়ে ওই এলাকার ৩ থেকে ৫ হাজার মানুষের ওপর নেমে আসে মামলা, নির্যাতন। ঘটে এলাকার অধিবাসীদের বাড়িঘর তছনছের ঘটনাও। এসব ঘটনার জন্য সরকারই দায়ী। এ অভিমত জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমানের। আড়িয়ল বিলের ঘটনা সম্পর্কে ড. মিজানুর রহমান বলেন, সরকার কোনো অবস্থায়ই এ ঘটনার দায় এড়াতে পারে না। ঘটনার পরে হাজার হাজার লোকের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের ঘটনা মানবাধিকারের লঙ্ঘন। মানবাধিকার কমিশনের মতো পরিবেশ বিষয়ক একটি স্বাধীন কমিশন থাকলে আড়িয়ল বিলে পুলিশের ওপর হামলার এ ঘটনা ঘটত না। পরিবেশ কমিশন কখনোই আড়িয়ল বিলে বিমানবন্দর নির্মাণের জন্য সরকারকে ছাড় দিত না। গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) আয়োজিত বৈশ্বিক অভিজ্ঞতার আলোকে বাংলাদেশের পরিবেশ আইন ও পরিবেশ আদালতের আইনের সাম্প্রতিক সংস্কার শীর্ষক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।
পবা চেয়ারম্যান আবু নাসের খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সেমিনারে ‘বৈশ্বিক অভিজ্ঞতার আলোকে বাংলাদেশের পরিবেশ আইন ও আদালত সংস্কার ভাবনা’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক আবু নাসের মো. ওয়াহিদ। মূল প্রবন্ধের ওপর বক্তব্য রাখেন জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ সংক্রান্ত সর্বদলীয় সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান সাবের হোসেন চৌধুরী, আইন কমিশনের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অধ্যাপক শাহ আলম, পরিবেশবাদী সংগঠন বেলার নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, পরিবেশ অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক আবদুস সোবহান প্রমুখ। প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. মিজানুর রহমান আরও বলেন, আড়িয়ল বিলের দুঃখজনক ঘটনার পর কয়েক হাজার অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা করা মানবাধিকারের লঙ্ঘন। এ মামলা দায়েরে পুলিশকে অসীম ক্ষমতা দেয়ার কোনো যৌক্তিকতা থাকতে পারে না। এ ধরনের মামলায় মানবাধিকারের লঙ্ঘন হয়। দাবি আদায়ের জন্য আন্দোলনকারীদের ওপর এ ধরনের নির্যাতন কোনো সভ্য দেশ কিংবা সভ্য সমাজ গ্রহণ করে না। সবকিছুতেই একটি নিয়মতান্ত্রিক পন্থা থাকে। অনিয়মতান্ত্রিক ও অগণতান্ত্রিক কোনো কিছুই দেশের জন্য কল্যাণকর নয়। বিমানবন্দর নির্মাণ বন্ধ ও মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে যে হরতাল আহ্বান করা হয়েছে সেটিকেও আমি যৌক্তিক বলে মনে করি না। কেননা, হরতাল দাবি আদায়ের কোনো উপায় হতে পারে না। দাবি আদায়ের জন্য হরতালেরও বিকল্প কর্মসূচি গ্রহণ করা যায়। গণতান্ত্রিক দাবি গণতান্ত্রিক পন্থায় আদায় করতে হবে। হরতাল দিয়ে দাবি আদায় করা সমীচীন নয়।
পরিবেশ আইন সম্পর্কে ড. মিজানুর রহমান বলেন, প্রচলিত আইন দিয়ে পরিবেশ সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। এ জন্য একটি স্বাধীন পরিবেশ কমিশন প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব পেশ করা যেতে পারে। আজকে পরিবেশ কমিশন থাকলে আড়িয়ল বিলে প্রস্তাবিত বিমানবন্দর নির্মাণের জন্য সরকার পদক্ষেপ নিতে পারত না। তিনি বলেন, ১৯৯৫ সালে প্রণীত পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ২০০২ ও ২০১০ সালে সংশোধিত হয়। ২০০০ সালে এই আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করার জন্য পরিবেশ আদালত গঠিত হয়। কিন্তু প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই এ আদালত একটি অকার্যকর আদালত হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। পরিবেশ আইনের সফল বাস্তবায়ন, পরিবেশ বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও সংশ্লিষ্ট সবার জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার স্বার্থে বাংলাদেশে স্বাধীন পরিবেশ কমিশন গঠন জরুরি।
ড. শাহআলম বলেন, পরিবেশ সংক্রান্ত সব আইনকে সমন্বিত করে একটি বিস্তৃত আইন প্রণয়ন করা দরকার। উল্লেখ্য, মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরের আড়িয়ল বিলে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণ নিয়ে সোমবার স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে সংঘর্ষে এক পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হওয়ার পর ২১ হাজার লোককে আসামি করে চারটি মামলা করা হয়। এর মধ্যে একটি মামলায় বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াসহ ৩ হাজার লোককে আসামি করা হয়। এর প্রতিবাদে বিএনপি আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে

আড়িয়ল বিল রক্ষায় গণবিস্ফোরণ সংঘর্ষে এসআই নিহত, ম্যাজিস্ট্রেট সাংবাদিক পুলিশসহ আহত শতাধিক, ফাঁড়িতে আগুন


মাহবুবুর রহমান ও শফিকুল ইসলাম, শ্রীনগর থেকে

মুন্সীগঞ্জের আড়িয়ল বিলে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর করার সরকারি উদ্যোগের প্রতিবাদ জানাতে সমবেত হাজার হাজার লোকের সঙ্গে গতকাল দিনভর পুলিশের সংঘর্ষে শ্রীনগরের হাঁসাড়া পয়েন্ট রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এ সময় ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশ ও বিলবাসীর মধ্যে দফায় দফায় ব্যাপক সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, পুলিশ ফাঁড়িতে অগ্নিসংযোগ, গাড়ি ভাংচুর এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।
হাজার হাজার নারী-পুরুষের বিশাল সমাবেশ ও সড়ক অবরোধ কর্মসূচি জোর করে পণ্ড করতে চাইলে আড়িয়ল বিলবাসীর সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ বেধে যায়। পুলিশ গুলি, টিয়ারশেল, জলকামান দিয়ে জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে চাইলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। হাজার হাজার নারী-পুরুষ গাছের ডাল, গুলতি, লাঠি, দা ও ইটপাটকেল নিয়ে পুলিশকে মোকাবিলা করে। দু’পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের একপর্যায়ে জনতার ঘেরাওয়ের মধ্যে পুলিশের একটি গাড়ি নষ্ট হয়ে যায়। ক্ষুব্ধ জনতা গাড়িতে আক্রমণ চালালে ৬/৭ জন পুলিশ আহত হয়। এদের মধ্যে একজন এসআই মতিউর রহমান হাসপাতালে নেয়ার পর মারা যান। এছাড়া সংঘর্ষে ম্যাজিস্ট্রেট, সাংবাদিকসহ শতাধিক লোক আহত হয়েছেন। তারা বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিত্সাধীন রয়েছেন। পুলিশ বিলবাসীকে ছত্রভঙ্গ করতে দফায় দফায় গুলি ও টিয়ারশেল ছোড়ে। সংঘর্ষের জের ধরে এলাকায় গণবিস্ফোরণ সৃষ্টি হলে পুলিশ একপর্যায়ে নিজেদের গুটিয়ে নিয়ে পিছু হটে। ক্ষুব্ধ জনতা একপর্যায়ে হাঁসাড়া পুলিশ ফাঁড়িটিও জ্বালিয়ে দেয়। টানা ৯ ঘণ্টা সংঘর্ষের পর বিকাল ৪টার দিকে যানবাহন চলাচল শুরু হলেও এলাকায় উত্তেজনা ও থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
আড়িয়ল বিলে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণের সরকারি সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে আন্দোলনরত হাজার হাজার জনতার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের এবং গত ২৬ জানুয়ারি ঢাকার মুক্তাঙ্গনে বিল রক্ষা কমিটি আহূত ও অনুমোদিত শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনে বাধা দেয়ার প্রতিবাদে পূর্বঘোষণা অনুযায়ী গতকাল ঢাকা-মাওয়া মহাসড়ক অবরোধ এবং বিক্ষোভ সমাবেশ করতে গেলে পুলিশের সঙ্গে এই রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ বাধে।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে জেলা প্রশাসক আজিজুল আলম ও পুলিশ সুপার শফিকুল ইসলাম ছুটে যান। ৮ ঘণ্টা পর পরিস্থিতি প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে বিল রক্ষা কমিটির কর্মসূচির ফলে বাড়তি সতর্কতার জন্য প্রশাসন মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার কুচিয়ামোড়া থেকে লৌহজংয়ের মাওয়া পর্যন্ত সড়কে সকাল ৭টা থেকে সবধরনের যান চলাচল বন্ধ করে দেয়। ফলে দুদিকে ভয়াবহ যানজটের সৃষ্টি হয়। যাত্রীরা পড়েন চরম দুর্ভোগে। পরে বিকাল সাড়ে তিনটার দিকে পুলিশ ব্যাপক বলপ্রয়োগ করে আন্দোলনরত বিলবাসীকে মহাসড়ক থেকে সরিয়ে দিতে সক্ষম হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা দাবি করেছেন, আড়িয়ল বিল রক্ষা কমিটির ব্যানারে প্রায় ৪০ হাজার নারী-পুরুষের জমায়েত হয়েছে ঢাকা-মাওয়া-খুলনা মহাসড়কের হাঁসাড়া পয়েন্টে। বিভিন্ন ধরনের ফেস্টুন, ব্যানার, প্ল্যাকার্ড নিয়ে নারী-পুরুষ এ কর্মসূচিতে অংশ নেয়। এছাড়া তাদের হাতে লাঠিসোটা দেখা গেছে।
এদিকে আড়িয়ল বিল রক্ষা কমিটির নেতারা দাবি করেছেন, পুলিশের নির্বিচার গুলিবর্ষণ ও হামলার ঘটনায় ২০ মহিলা ও শিশুসহ শতাধিক বিক্ষোভকারী মারাত্মক আহত হয়েছেন। তাদের অনেকের শরীরেই গুলিবিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও পুলিশ তাদের হাসপাতালে পাঠাতে অমানবিকভাবে বাধা দিয়েছে।
আড়িয়ল বিল রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক শাজাহান বাদল বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের ওপর জোর দিয়েছি। সরকার আমাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে বাধা দিলে বিপর্যয় দেখা দেবে। আমরা আমাদের বাপ-দাদার সম্পত্তি আড়িয়ল বিল রক্ষা করব। এদিকে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মুন্সীগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. শফিকুল ইসলাম।
গুরুতর আহত অবস্থায় এসআই মতিউর রহমানকে মিডফোর্ড হাসপাতালে ভর্তির পর কর্তব্যরত চিকিত্সকরা বেলা আড়াইটার দিকে তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তিনি রাজারবাগ পুলিশ লাইনের দাঙ্গা বিভাগে কর্মরত ছিলেন বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে। সংঘর্ষে আহত আরও ৭ পুলিশ সদস্যের মধ্যে ৪ জনকে মিটফোর্ড এবং ৩ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এদের মধ্যে ৪ জনের অবস্থা গুরুতর। মিটফোর্ডে চিকিত্সাধীন পুলিশ সদস্যরা হচ্ছেন হালিম (২৮), আবদুল হক (৩৫), রাজিউল ইসলাম (৩৫) এবং শাহাবউদ্দিন (৩৫)। ঢামেকে চিকিত্সাধীন রয়েছেন আনোয়ার হোসেন (৩২), মুনির হোসেন (৩৯) এবং কামাল হোসেন (৩০)। এ ঘটনায় কর্তব্যরত ম্যাজিস্ট্রেট শাফিউল ইসলাম, বাংলাদেশ ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শফিউদ্দিন বিটু, দৈনিক ইত্তেফাকের ফটোসাংবাদিক সাজেদ হোসেনসহ আহত হয়েছেন শতাধিক লোক। আহত ম্যাজিস্ট্রেটকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
পূর্বঘোষণা অনুযায়ী গতকাল সোমবার ভোর থেকেই আড়িয়ল বিল রক্ষা কমিটির ডাকে প্রায় ৪০ হাজার লোক মুন্সীগঞ্জ সংলগ্ন ঢাকা-মাওয়া সড়কের ষোলঘর এলাকায় প্রায় ৮ কিলোমিটার সড়কে গাছ ফেলে অবরোধ সৃষ্টি করে। এতে ঢাকা-মাওয়া সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
এদিকে ঢাকার জুরাইন থেকে মাওয়াগামী পোস্তগোলা সংলগ্ন বুড়িগঙ্গা ব্রিজে কোনো যানবাহন উঠতে দেয়নি পুলিশ। বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ আবুল বাশার বলেন, কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা যেন না ঘটে, সেজন্য ব্রিজের আশপাশে ৩ প্লাটুন পুলিশ পাহারা বসানো হয় এবং সবধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়।
মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর থানার ওসি শাখাওয়াত হোসেন জানান, গতকাল সকাল থেকেই বাড়ৈখালী, নবাবগঞ্জ ও দোহার এলাকার বহু লোক বিমানবন্দরের বিপক্ষে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের কাছে জড়ো হয়। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে লোকজন ছনবাড়ি থেকে কুচিয়ামোড় পর্যন্ত মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেন।
আহত পুলিশ সদস্যরা জনতার সঙ্গে সংঘর্ষের সময় ঘেরাওয়ের মধ্যে পড়ে গণপিটুনির শিকার হয়েছেন বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।
এলাকা ঘুরে এসে আমাদের মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি মো. মাহবুবুর রহমান ও শ্রীনগর প্রতিনিধি শফিকুল ইসলাম জানান, দুপুর ১২টার দিকে ছনবাড়ি থেকে একটি বিক্ষুব্ধ মিছিল শ্রীনগর বাজারের দিকে এগুতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। এতে পুলিশ-বিলবাসীর মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। পুলিশকে লক্ষ্য করে বিলবাসীরা ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। এ সময় পুলিশ লাঠিচার্জ, রাবার বুলেট, টিয়ারশেল ও জলকামানের সাহায্যে বিক্ষুব্ধ জনতাকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পরে বিতাড়িত জনতা ষোলঘরে এসে জড়ো হয়। পুলিশের হামলার খবর শুনে উত্তেজিত জনতা হাঁসাড়া পুলিশ ফাঁড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়। আবার হাঁসাড়ার কালিকিশোর উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে পুলিশের গাড়ি ভাংচুর করে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে। এদিকে মহাসড়কের হাঁসাড়া পুলিশ ফাঁড়ি থেকে ২০০ গজের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়।
বিক্ষুব্ধ জনতা মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে ৫-৭টি প্রাইভেট গাড়ি ভাংচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয়। তারা স্থানীয় এমপি সুকুমার রঞ্জন ঘোষের ছবি সংবলিত ৭/৮টি তোরণ পুড়িয়ে ফেলে।
উল্লেখ্য, আড়িয়ল বিল ঢাকা জেলা, মুন্সীগঞ্জ জেলা ও পদ্মা নদীর মাঝখানে একটি ছিটমহলসম জলাভূমি অঞ্চল। এককালে এলাকাটি বিক্রমপুর নামেই পরিচিত ছিল। এটি দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিল। এ বিলের দৈর্ঘ্য ২৬ মাইল এবং প্রস্থ ১০ মাইল। বিলটিতে গড়ে উঠেছে অসংখ্য জনবসতি, শস্যক্ষেত, মাছেভরা জলাশয় এবং রয়েছে নানা প্রজাতির অসংখ্য পাখির বিচরণক্ষেত্র। তবে সরকার কোনো ধরনের সমীক্ষা ছাড়াই বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের জন্য ১০ হাজার একর এবং বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট নগরীর জন্য ১৫ হাজার একর জমি অধিগ্রহণের উদ্যোগ নেয়ার পর থেকে আড়িয়ল বিলবাসী প্রতিদিন বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে আসছে। এই বিলে বিমানবন্দর হলে প্রায় ১০ লাখ লোক ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
প্রস্তাবিত ২৫ হাজার একর জমি অধিগ্রহণ করা হবে শ্রীনগর উপজেলার ১৪ মৌজা, নবাবগঞ্জ উপজেলার ১৮ মৌজা এবং দোহার উপজেলার ৭টি মৌজা থেকে। বিল রক্ষা কমিটি দাবি করেছে, এ বিলে বছরে ধান ৪০ হাজার টন, মাছ ৭শ’ টন ও সবজি উত্পাদন হয় ১০ হাজার টন।

দেশজুড়ে মাদকের নীল দংশন



ডেস্ক রিপোর্ট

সীমান্তপথে দেদার মাদকদ্রব্য আসার সহজলভ্য হয়ে উঠেছে মাদকদ্রব্য। এতে করে দিন দিন বিস্তৃতি ঘটছে মাদক ব্যবসার। বাড়ছে মাদকাসক্তের সংখ্যা। আর এ মাদক ব্যবসাকে কেন্দ্র করে বাড়ছে অপরাধ প্রবণতা। বিস্তারিত খবর পাঠিয়েছেন প্রতিনিধিরা
পাবনা : পাবনা জেলার ৯টি উপজেলাসহ আশপাশের শহর-বন্দর ও গ্রাম এলাকায় মাদকদ্রব্যে ছেয়ে গেছে। হাত বাড়ালেই অবাধে পাওয়া যাচ্ছে হেরোইন, গাঁজা, ফেনসিডিল, চরস, নেশার ট্যাবলেট ও ইনজেকশন। সীমান্তের ওপাড় ভারত থেকে চোরাপথে এই মাদক আসছে। গত ৬ মাসে পুলিশ ও র্যাব লক্ষাধিক বোতল ফেনসিডিলসহ বিভিন্ন মাদক উদ্ধার করেছে। গ্রেফতার করেছে অন্তত ৫০ মাদকাসক্ত ও ব্যবসায়ীকে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পাবনা জেলার ৯টি উপজেলাসহ আশপাশের শহর-বন্দর ও গ্রাম এলাকায় প্রায় ৫০ হাজার ব্যক্তি বিভিন্ন মাদকে আসক্ত। গত ১০ বছরে শতাধিক মাদকাসক্তের মৃত্যু হয়েছে। নেশা ছাড়া এদের কোনো গতি নেই। নেশার টাকা যোগাড় করতে এরা বিভিন্ন অপরাধের পথ বেছে নিচ্ছে। পরিবার থেকেও এরা বিচ্ছিন্ন। আসক্তদের অধিকাংশই যুবক, ছাত্র ও শ্রমিক শ্রেণীর।
সূত্র জানায়, উত্তরাঞ্চল সড়ক-মহাসড়ক মাদক পাচারের নিরাপদ রুট। নির্বিঘ্নে যাচ্ছে বাসে, ট্রাকের অন্যান্য মালামালের সঙ্গে। উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ১০ লাখ বোতল ফেনসিডিল আসে; আসে হেরোইন এবং নেশা জাতীয় ট্যাবলেট, ইনজেকশন। মাদকদ্রব্যের অবাধ বাণিজ্যে উত্তর জনপদের পাবনাসহ অন্যান্য জেলায় মাদকাসক্তের সংখ্যা দিন দিন বেড়ে চলেছে। মাদকাসক্তের সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিও ক্রমাবনতি ঘটছে। চুরি, ডাকাতি, রাহাজানি, ছিনতাইয়ের ঘটনাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশকে হিমশিম খেতে হয়। সূত্র আরও জানায়, মাদকদ্রব্য চোরাচালানির সঙ্গে জড়িত রয়েছে ৩ শতাধিক নারী, পুরুষ ও শিশু। সীমান্তের ওপার থেকে মাদকদ্রব্য, ফেনসিডিল বহন করে এসে বিভিন্ন গোপন স্থানে জমা করে আবার তা পৌঁছে দেয় পাবনাসহ উত্তরাঞ্চলের শহর-বন্দরে। পৌঁছে দেয় বাসের যাত্রী সেজে।
পাবনার পুলিশ সুপার বলেন, পাবনায় মাদকাসক্তের প্রভাব দীর্ঘদিনের। তবে আগের চেয়ে পুলিশি অ্যাকশন এখন অনেক বেশি। গত কয়েক মাসে পুলিশ ও র্যাব প্রায় ৪০ হাজার বোতল ফেন্সিডিল, কয়েক মণ গাঁজা, মদসহ অন্যান্য মাদক উদ্ধার করেছে। গ্রেফতার করা হয়েছে অন্তত ৫০ জন মাদকাসক্ত ও ব্যবসায়ীকে।
নবাবগঞ্জ (দিনাজপুর) : দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ থানা পুলিশ চোলাই মদসহ এক মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করেছে। নবাবগঞ্জ থানার এএসআই মিজানুর রহমান গত বুধবার রাতে উপজেলার মাহমুদপুর ইউনিয়নের চকনওদা গ্রামের মৃত লুবিস হাসদার ছেলে বিনেস হাসদার বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ২০ লিটার চোলাই মদসহ বিনেসকে গ্রেফতার করে।
গোদাগাড়ী (রাজশাহী) : রাজশাহীর গোদাগাড়ী সীমান্তে মাদক চোরাচালান বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিদিন কয়েক কোটি টাকার হেরোইনসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য আসলেও তেমন উদ্ধার হচ্ছে না। সীমান্ত রক্ষায় নিয়োজিত বিজিবি সদস্যরা মাঝে-মধ্যে হেরোইন-ফেনসিডিল উদ্ধার করে মাদক ব্যবসায়ীদের নামে মামলা দায়ের করলেও পুলিশি তদন্তে মাদক ব্যবসায়ীরা পার পেয়ে যাচ্ছে। ফলে নতুন মাদক ব্যবসায়ীর সংখ্যাও বাড়ছে।
সিদ্ধিরগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) : ২৫০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেটসহ এক মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-১০ সদস্যরা। সোমবার বিকালে সিদ্ধিরগঞ্জের মৌচাক বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে রেজাউল করিম (৪০) নামে মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করে র্যাব। এ সময় তার কাছ থেকে ২৫০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয় বলে র্যাব জানায়।
নোয়াখালী : নোয়াখালীর মাইজদী শহরে হোটেল লিটন নামীয় একটি আবাসিক হোটেল থেকে ২০টি ইয়াবা ট্যাবলেট, ৪টি বিদেশি ফেনসিডিলের বোতল ও হিরোইনের ব্যবহার সামগ্রীসহ বুধবার রাতে ৩ ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে সুধারাম থানা পুলিশ।
গ্রেফতারকৃতরা হলো এলজিইডির স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম, কুমিল্লার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী সফিকুল ইসলাম ও সিরাজুল ইসলাম সিরাজ। গ্রেফতারকৃত প্রকৌশলীর বাড়ি গাজীপুরের কাপাসিয়া থানায়। অপর দু’জনের বাড়ি কুমিল্লার শুভপুর গ্রামে। সুধারাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোশারেফ হোসেন তরফদার জানান, বুধবার গভীর রাতে গোপন সূত্রে খবর পেয়ে এএসপি সদর (সার্কেল) আ ফ ম নিজাম উদ্দিন ও সুধারামের ওসি মোশারফ হোসেন তরফদারের নেতৃত্বে একদল পুলিশ আবাসিক হোটেলের ২১৩ নং কক্ষে অভিযান চালিয়ে ২০টি ইয়াবা ট্যাবলেট, কয়েক বোতল ফেনসিডিলসহ ৩ ব্যক্তিকে হাতেনাতে আটক করে।
শরণখোলা (বাগেরহাট) : শরণখোলা থানাপুলিশ মাদকদ্রব্য মামলায় সাজাপ্রাপ্ত ও একটি হত্যা মামলার অন্যতম আসামি মোহিদুল হাওলাদারকে গ্রেফতার করেছে। বুধবার দুপুরে উপজেলার পশ্চিম রাজাপুর গ্রাম থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
শ্রীবরদী (শেরপুর) : শ্রীবরদী থানা পুলিশ গত মঙ্গলবার রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে আধা কেজি গাঁজাসহ চারজনকে আটক করেছে। উপজেলার ভায়াডাঙ্গা বাজার থেকে ফকির আলী, শহিদুল, শাহ আলী ও উজ্জ্বল নামে চারজনকে আটক করে কোর্টে প্রেরণ করেছে পুলিশ