Wednesday 23 February 2011

দেশজুড়ে মাদকের নীল দংশন



ডেস্ক রিপোর্ট

সীমান্তপথে দেদার মাদকদ্রব্য আসার সহজলভ্য হয়ে উঠেছে মাদকদ্রব্য। এতে করে দিন দিন বিস্তৃতি ঘটছে মাদক ব্যবসার। বাড়ছে মাদকাসক্তের সংখ্যা। আর এ মাদক ব্যবসাকে কেন্দ্র করে বাড়ছে অপরাধ প্রবণতা। বিস্তারিত খবর পাঠিয়েছেন প্রতিনিধিরা
পাবনা : পাবনা জেলার ৯টি উপজেলাসহ আশপাশের শহর-বন্দর ও গ্রাম এলাকায় মাদকদ্রব্যে ছেয়ে গেছে। হাত বাড়ালেই অবাধে পাওয়া যাচ্ছে হেরোইন, গাঁজা, ফেনসিডিল, চরস, নেশার ট্যাবলেট ও ইনজেকশন। সীমান্তের ওপাড় ভারত থেকে চোরাপথে এই মাদক আসছে। গত ৬ মাসে পুলিশ ও র্যাব লক্ষাধিক বোতল ফেনসিডিলসহ বিভিন্ন মাদক উদ্ধার করেছে। গ্রেফতার করেছে অন্তত ৫০ মাদকাসক্ত ও ব্যবসায়ীকে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পাবনা জেলার ৯টি উপজেলাসহ আশপাশের শহর-বন্দর ও গ্রাম এলাকায় প্রায় ৫০ হাজার ব্যক্তি বিভিন্ন মাদকে আসক্ত। গত ১০ বছরে শতাধিক মাদকাসক্তের মৃত্যু হয়েছে। নেশা ছাড়া এদের কোনো গতি নেই। নেশার টাকা যোগাড় করতে এরা বিভিন্ন অপরাধের পথ বেছে নিচ্ছে। পরিবার থেকেও এরা বিচ্ছিন্ন। আসক্তদের অধিকাংশই যুবক, ছাত্র ও শ্রমিক শ্রেণীর।
সূত্র জানায়, উত্তরাঞ্চল সড়ক-মহাসড়ক মাদক পাচারের নিরাপদ রুট। নির্বিঘ্নে যাচ্ছে বাসে, ট্রাকের অন্যান্য মালামালের সঙ্গে। উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ১০ লাখ বোতল ফেনসিডিল আসে; আসে হেরোইন এবং নেশা জাতীয় ট্যাবলেট, ইনজেকশন। মাদকদ্রব্যের অবাধ বাণিজ্যে উত্তর জনপদের পাবনাসহ অন্যান্য জেলায় মাদকাসক্তের সংখ্যা দিন দিন বেড়ে চলেছে। মাদকাসক্তের সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিও ক্রমাবনতি ঘটছে। চুরি, ডাকাতি, রাহাজানি, ছিনতাইয়ের ঘটনাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশকে হিমশিম খেতে হয়। সূত্র আরও জানায়, মাদকদ্রব্য চোরাচালানির সঙ্গে জড়িত রয়েছে ৩ শতাধিক নারী, পুরুষ ও শিশু। সীমান্তের ওপার থেকে মাদকদ্রব্য, ফেনসিডিল বহন করে এসে বিভিন্ন গোপন স্থানে জমা করে আবার তা পৌঁছে দেয় পাবনাসহ উত্তরাঞ্চলের শহর-বন্দরে। পৌঁছে দেয় বাসের যাত্রী সেজে।
পাবনার পুলিশ সুপার বলেন, পাবনায় মাদকাসক্তের প্রভাব দীর্ঘদিনের। তবে আগের চেয়ে পুলিশি অ্যাকশন এখন অনেক বেশি। গত কয়েক মাসে পুলিশ ও র্যাব প্রায় ৪০ হাজার বোতল ফেন্সিডিল, কয়েক মণ গাঁজা, মদসহ অন্যান্য মাদক উদ্ধার করেছে। গ্রেফতার করা হয়েছে অন্তত ৫০ জন মাদকাসক্ত ও ব্যবসায়ীকে।
নবাবগঞ্জ (দিনাজপুর) : দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ থানা পুলিশ চোলাই মদসহ এক মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করেছে। নবাবগঞ্জ থানার এএসআই মিজানুর রহমান গত বুধবার রাতে উপজেলার মাহমুদপুর ইউনিয়নের চকনওদা গ্রামের মৃত লুবিস হাসদার ছেলে বিনেস হাসদার বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ২০ লিটার চোলাই মদসহ বিনেসকে গ্রেফতার করে।
গোদাগাড়ী (রাজশাহী) : রাজশাহীর গোদাগাড়ী সীমান্তে মাদক চোরাচালান বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিদিন কয়েক কোটি টাকার হেরোইনসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য আসলেও তেমন উদ্ধার হচ্ছে না। সীমান্ত রক্ষায় নিয়োজিত বিজিবি সদস্যরা মাঝে-মধ্যে হেরোইন-ফেনসিডিল উদ্ধার করে মাদক ব্যবসায়ীদের নামে মামলা দায়ের করলেও পুলিশি তদন্তে মাদক ব্যবসায়ীরা পার পেয়ে যাচ্ছে। ফলে নতুন মাদক ব্যবসায়ীর সংখ্যাও বাড়ছে।
সিদ্ধিরগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) : ২৫০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেটসহ এক মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-১০ সদস্যরা। সোমবার বিকালে সিদ্ধিরগঞ্জের মৌচাক বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে রেজাউল করিম (৪০) নামে মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করে র্যাব। এ সময় তার কাছ থেকে ২৫০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয় বলে র্যাব জানায়।
নোয়াখালী : নোয়াখালীর মাইজদী শহরে হোটেল লিটন নামীয় একটি আবাসিক হোটেল থেকে ২০টি ইয়াবা ট্যাবলেট, ৪টি বিদেশি ফেনসিডিলের বোতল ও হিরোইনের ব্যবহার সামগ্রীসহ বুধবার রাতে ৩ ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে সুধারাম থানা পুলিশ।
গ্রেফতারকৃতরা হলো এলজিইডির স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম, কুমিল্লার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী সফিকুল ইসলাম ও সিরাজুল ইসলাম সিরাজ। গ্রেফতারকৃত প্রকৌশলীর বাড়ি গাজীপুরের কাপাসিয়া থানায়। অপর দু’জনের বাড়ি কুমিল্লার শুভপুর গ্রামে। সুধারাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোশারেফ হোসেন তরফদার জানান, বুধবার গভীর রাতে গোপন সূত্রে খবর পেয়ে এএসপি সদর (সার্কেল) আ ফ ম নিজাম উদ্দিন ও সুধারামের ওসি মোশারফ হোসেন তরফদারের নেতৃত্বে একদল পুলিশ আবাসিক হোটেলের ২১৩ নং কক্ষে অভিযান চালিয়ে ২০টি ইয়াবা ট্যাবলেট, কয়েক বোতল ফেনসিডিলসহ ৩ ব্যক্তিকে হাতেনাতে আটক করে।
শরণখোলা (বাগেরহাট) : শরণখোলা থানাপুলিশ মাদকদ্রব্য মামলায় সাজাপ্রাপ্ত ও একটি হত্যা মামলার অন্যতম আসামি মোহিদুল হাওলাদারকে গ্রেফতার করেছে। বুধবার দুপুরে উপজেলার পশ্চিম রাজাপুর গ্রাম থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
শ্রীবরদী (শেরপুর) : শ্রীবরদী থানা পুলিশ গত মঙ্গলবার রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে আধা কেজি গাঁজাসহ চারজনকে আটক করেছে। উপজেলার ভায়াডাঙ্গা বাজার থেকে ফকির আলী, শহিদুল, শাহ আলী ও উজ্জ্বল নামে চারজনকে আটক করে কোর্টে প্রেরণ করেছে পুলিশ

No comments:

Post a Comment