Wednesday 21 December 2011

রাজশাহীতে আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি : ২০টি হত্যাকাণ্ডের ১৭টি গুপ্তহত্যা : গ্রেফতার হয়নি জড়িতরা, আতঙ্ক

রাজশাহী অফিস
রাজশাহীতে বেড়েছে গুপ্তহত্যার ঘটনা। গত সাড়ে তিন মাসে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে ২০টি। এর মধ্যে অপহরণ করে অথবা অজ্ঞাত স্থানে হত্যা করে অন্য স্থানে নিয়ে গিয়ে লাশ ফেলে দেয়া হয়েছে ১৭টি। তবে পুলিশ লাশ উদ্ধার করলেও এসব গুপ্ত হত্যাকাণ্ডের কারণ উদঘাটন করতে পারেনি। এখনও গ্রেফতার হয়নি হত্যাকাণ্ডের ঘটনার সঙ্গে জড়িতরা। এ নিয়ে রাজশাহীর জনমনে ব্যাপক আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে।
সর্বশেষ ১৫ ডিসেম্বর রাজশাহী পুঠিয়া উপজেলার জয়গিরপাড়া গ্রামে জোড়া খুনের ঘটনা ঘটে। পুলিশ এখনও এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। কেন এ নির্মম হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে তাও বের করতে পারেনি পুলিশ। ফলে এ নিয়ে উদ্বিগ্ন মানুষ। তবে পুলিশ বলছে এসব ঘটনার তদন্ত চলছে। খুব শিগগিরই খুনিদের আইনের আওতায় আনা হবে।
গত ১৫ ডিসেম্বর পুঠিয়া উপজেলার জয়গিরপাড়া গ্রামের নাসিরের ছেলে আলম এবং একই গ্রামের ভাদুর মেয়ে সাহারা ওরফে কালনীর লাশ কুড়েপুকুড়িয়া বাগান থেকে উদ্ধার করা হয়। তাদেরকে শ্বাসরোধ, জবাই ও পায়ের রগ কেটে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল।
কিন্তু পুলিশ এ জোড়া খুনের কারণ এখনও উদ্ধার করতে পারেনি। গ্রেফতারও করতে পারেনি কাউকে। এর আগে গত ৮ ডিসেম্বর নগরীর মতিহার থানার আবহাওয়া অফিসের পাশে আখক্ষেত থেকে আয়া নার্গিসের লাশ উদ্ধার করা হয়। তাকে অন্য কোথাও হত্যা করে সন্ত্রাসীরা লাশ সেখানে ফেলে গেছে বলে পুলিশের ধারণা। এছাড়াও এ এলাকা থেকে গত তিন মাসে ৪টি লাশ উদ্ধার করা হয়। অপরদিকে গত ৫ ডিসেম্বর নগরীর কেশবপুর এলাকায় শওকত হোসেন রোকন (২২) নামের এক কলেজ ছাত্র খুন হয়। ২৯ নভেম্বর দুর্গাপুর উপজেলার চকজয়নগর এলাকা থেকে অজ্ঞাত ব্যক্তির বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই ব্যক্তিকে হত্যার পর লাশ নদীর তীরে ফেলে রাখা হয় বলে পুলিশ জানায়। দুই মাস পেরিয়ে গেলেও পুলিশ ওই অজ্ঞাত ব্যক্তির পরিচয় উদ্ধার করতে পারেনি। গত ১৫ অক্টোবর নগরীর মতিহার এলাকায় এক নারীকে মোবাইলে ডেকে নিয়ে হত্যা করা হয়। পুলিশ এ ঘটনায় মামলা নিলেও কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। এছাড়া গত ২৯ অক্টোবর রাজপাড়া থানার কোর্ট যাত্রী ছাউনির পাশ থেকে অজ্ঞাত এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ২০ সেপ্টেম্বর নগরীর বোয়ালিয়া থানা এলাকায় যুবলীগ কর্মীদের হাতে খুন হন আওয়ামী লীগ নেতা পিন্টু। ২৪ নভেম্বর নগরীর গোরহাঙা মসজিদের পেছনের পুকুর থেকে অজ্ঞাত লাশ উদ্ধার করে বোয়ালিয়া থানা পুলিশ। চোর সন্দেহে তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয় বলে জানায় পুলিশ। ৪ ডিসেম্বর নগরীর রাজপাড়া থানার বুলনপুরে প্রতিপক্ষের ধারাল অস্ত্রের আঘাতে নিহত হন রোকন। ১১ নভেম্বর ইলিয়াস হোসেন মিন্টু নামের এক মাদরাসা ছাত্রকে হত্যা করা হয়। ২২ অক্টোবর পদ্মা নদীর চর থেকে রাবি সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষক শরীফুল ইসলামের ভাই ব্যবসায়ী তৌহিদুল ইসলামের লাশ উদ্ধার করে রাজপাড়া থানা পুলিশ। পরিকল্পিতভাবে নগরীর টি-বাঁধে নিয়ে গিয়ে তাকে হত্যা করা হয়। গত ৫ সেপ্টেম্বর হাতেম আলী নামে এক কৃষককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। ২১ সেপ্টেম্বরে চারঘাটে শহিদ আলী নামে এক প্রতিবন্ধী যুবককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। একই দিনে পুঠিয়ার ধোকড়াকুল এলাকার একটি আখক্ষেত থেকে অজ্ঞাত ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারের কমপক্ষে এক মাস আগে তাকে হত্যা করে লাশ পুঁতে রাখা হয়েছিল বলে পুলিশের ধারণা। বাগমারা বারনই নদী থেকে ৬ আগস্ট আরিফুল ইসলাম নামে একজনের হাত-পা বাঁধা ও ২৯ সেপ্টেম্বর ডাঙাপাড়া বিলের মধ্যে টুটুল নামে একজনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তবে এসব ঘটনার মোটিভ এখনও উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ।
সমপ্রতি রাজশাহী এলাকায় গুপ্তহত্যার ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় এবং পুলিশ এসব ঘটনার কোনো মোটিভ উদঘাটন বা খুনিদের গ্রেফতার না করতে পারার ঘটনায় রাজশাহীর মানুষ এখন চরম উদ্বিগ্ন বলে জানান রাজশাহীর জনসাধারণ। এ ব্যাপারে রাজশাহী পুলিশ সুপার এসএম রোকনউদ্দিন জানান, এসব ঘটনা তদন্ত চলছে। খুব শিগগিরই খুনিদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। এদিকে গত রোববার রাজশাহী জেলা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কমিটির জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এক সভায় উপস্থিত সদস্যরা এসব হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা বলেন, ২০ দিনের ব্যবধানে পাঁচটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা উদ্বেগের বিষয়। তারা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে গুপ্তহত্যাসহ অন্যান্য অপরাধ বন্ধে আরও সক্রিয় হওয়ার পরামর্শ দেন।
http://www.amardeshonline.com/pages/details/2011/12/21/123271

Friday 9 December 2011

সিলেটের জৈন্তাপুর ও গোয়াইনঘাটে মানববন্ধন : সারী নদীর উত্সমুখে ভারতের ড্যাম নিয়ে ফুঁসে উঠছে জনতা


জৈন্তাপুর প্রতিনিধি

সিলেটের সারী নদীর উত্সমুখে ভারত ড্যাম নির্মাণ করে পরীক্ষামূলকভাবে বিদ্যুত্ উত্পাদন করায় সারী নদী বাঁচাও সংগঠনের মাধ্যমে গতকাল নদীর তীরে এলাকাবাসীর উদ্যোগে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। সংগঠনের সভাপতি আবদুল্লাহর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক বোরহানের পরিচালনায় এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন জৈন্তাপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ জয়নাল আবেদীন। তিনি বলেন, আগামী ২-৩ বছরের মধ্যে সারী নদীর উজানে ভারতের বাঁধ নির্মাণ করে বিদ্যুত্ উত্পাদনের ফলে সিলেটবাসী মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হবে। নদী তীরবর্তীসহ দূরের এলাকার লোকজনের জীবন-জীবিকায় ও জীববৈচিত্র্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সারী নদীর জলজ সম্পদ নষ্টের পাশাপাশি বালু ও পাথর মহাল ধ্বংস হয়ে যাবে। শ্রমিক ও কৃষকরা বেকার হয়ে পড়বে, খরা, দুর্যোগ ও মঙ্গায় পরিণত হবে বৃহত্তর সিলেট।
ভারত প্রায় দেড় যুগ আগে টিপাই মুখে বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা করে তখন বাংলাদেশের জনগণ দলমত নির্বিশেষে ভারতের বিপক্ষে আন্দোলন সংগ্রাম গড়ে তুললে প্রতিবাদেরমুখে বাঁধ নির্মাণ
কিছুটা স্থবির হয়ে যায়। কিন্ু্ত ভারত আবার ফারাক্কার মতো সিলেট অঞ্চলকে মরুভূমিতে পরিণত করতে টিপাই মুখে বাঁধ নির্মাণ করতে মরিয়া হয়ে ওঠে।
সিলেট জৈন্তাপুর উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া সারী নদীকে বলা হয় লাইফ রিভার ও লাইফ লাইন। এ নদীর পানি দিয়ে এদেশের কৃষক কৃষিকাজ করে বিভিন্ন ফসল উত্পাদন করে দেশের খাদ্য ঘাটতি মেটাতে সহায়তা করছে। জীববৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে টিকিয়ে রেখেছে এ নদীটি। জৈন্তাপুর উপজেলার সারী নদীর পানি দেশ-বিদেশে ‘স্বচ্ছ নীল পানি’ নামে পরিচিত। সারী নদীটি গভীর হওয়ায় বিরল প্রজাতির মাছ যেমন বাঘমাছ, কালিয়ারা, বোয়াল, গাঘটসহ হাজারও প্রজাতির মাছের প্রজনন কেন্দ্র এ নদীটি। সারী নদীর বালু বুয়েটের পরীক্ষিত ও উন্নতমানের হওয়ায় দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে অট্টালিকা ও টাওয়ার নির্মাণকাজেও ব্যবহার করা হচ্ছে। সরকার এখান থেকে বছরে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব আয় করছে। এ বছর শুধু বালু থেকে ১ কোটি ৪৪ লাখ টাকা সরকার লিজ মানি পেয়েছে। সিলেটের জৈন্তাপুরের উজানে ভারত সেখানে ড্যাম নির্মাণ করে বিদ্যুত্ উত্পাদন শুরু করেছে।
ভারত এ ড্যাম ব্যবহার করে ১২৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুত্ কেন্দ্র স্থাপন করে। ২০০২ সালের ২৫ অক্টোবর ভারতের তত্কালীন রাষ্ট্রপতি এপিজে আবুল কালাম আন্তর্জাতিক নদী আইন তোয়াক্কা না করে এ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। সারী নদীর উজানে ভারত ড্যাম নির্মাণ করলেও এখন এ বিষয়েও বাংলাদেশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা অবগত নন।
সারী নদীরতীরবাসী ইউপি সদস্য আবদুস শুক্করসহ এলাকাবাসী জানান, সারী নদীর উজানে ভারতের বাঁধ নির্মাণের ফলে পানির স্তর নিচে নেমে যায়। এ নদীপথে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা লঞ্চ-স্টিমার, নৌকাযোগে পাথর-বালু, কয়লা ও চুনাপাথরসহ বিভিন্ন দ্রব্যসামগ্রী সরবরাহ করা হতো। পানির নাব্য কমে যাওয়ার ফলে গত কয়েক বছর থেকে এ নদীতে লঞ্চ-স্টিমার আসতে দেখা যায়নি। ড্যাম নির্মাণের খবর পেয়ে নদীতীরবর্তী ও দূরবর্তী অঞ্চলের লোকজন ক্ষোভে আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
মত্স্যজীবী সুরঞ্জিত দাস জানায়, সারী নদীর পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় দিন দিন মাছের প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে। হাজার হাজার মত্স্যজীবী শ্রমিকরা বেকার হয়ে পড়েছে। বালু ও পাথর শ্রমিকদের মধ্যে আবদুল মালেক জানান নদীতে স্রোত না থাকায় পর্যাপ্ত পরিমাণে বালু, পাথর আসছে না। যার ফলে শ্রমিক ও ব্যবসায়ীরা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কৃষিজীবী ময়নুল হোসেন, করিম, আবদুল জানান, বর্ষাকালে নদীতে ঢল না আসায় কৃষি জমিতে পলি মাটি না পড়ায় আগের তুলনায় ফসল ভালো হচ্ছে না।
মানববন্ধনে অন্যদের মধ্যে বক্তৃতা করেন জৈন্তাপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও ১নং জৈন্তাপুর নিজপাট ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল মালিক মানিক, উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল হাফিজ, বিএনপি নেতা ইলিয়াছ উদ্দিন লিপু, গোয়াইনঘাটের বিএনপি নেতা হাজী ফখরুল ইসলাম, গোয়াইনঘাটের যুবদল নেতা মাস্টার শফিকুর রহমান, জৈন্তাপুর উপজেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক বাহারুল আলম বাহার, জৈন্তাপুরের যুবদল নেতা লাল মিয়া, সমছির আহমদ, সরফ উদ্দিন, নুরুল ইসলাম, ছাত্রদল নেতা বুলবুল, বুরহান
I

Monday 5 December 2011

টিপাইমুখ বাঁধ : সিলেটে সম্মিলিত সংগ্রাম পরিষদের ২ মাসের কর্মসূচি

সিলেট অফিস

সিলেটের সর্বস্তরের পেশাজীবীদের নিয়ে গঠিত টিপাইমুখ বাঁধ প্রতিরোধ সম্মিলিত সংগ্রাম পরিষদ টিপাইমুখ বাঁধবিরোধী দুই মাসব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। সংগঠনের আহ্বায়ক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) জুবায়ের সিদ্দিকী গতকাল সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
যে কোনো মূল্যে সর্বনাশা মরণফাঁদ প্রস্তাবিত টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণ থেকে ভারত সরকারকে বিরত রাখতে সব শ্রেণীপেশার মানুষকে সঙ্গে নিয়ে দুই মাসব্যাপী শান্তিপূর্ণ ও নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে দেশে-বিদেশে গণসংযোগ, সর্বস্তরের জনতাকে সঙ্গে নিয়ে গণঅবস্থান, গণস্বাক্ষর সংগ্রহ অভিযান, গণসেমিনার এবং প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি পেশ।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) জুবায়ের সিদ্দিকী বক্তৃতায় বলেন, টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণের ফলে বাংলাদেশের ৩ কোটি মানুষ এবং দেশের এক-তৃতীয়াংশ কৃষিতে বিপর্যয়, বনাঞ্চল ধ্বংস, জীববৈচিত্র্য বিনষ্ট, বন্যা, নদী ভাঙন, ভূমিকম্প, ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়া এবং মেঘনা অববাহিকায় লবণাক্ততার অনুপ্রবেশসহ বিভিন্ন মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয় নেমে আসবে। ধীরে ধীরে এই অঞ্চলে মরুকরণ প্রক্রিয়া শুরু হবে। তাই দেশ-মাতৃকার এ আন্দোলনে দলমত নির্বিশেষে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে এবং আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে যেতে হলে আমাদের টিপাইমুখ বাঁধ প্রতিরোধ করতেই হবে। সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণের ফলে আসন্ন ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয়ের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলার লক্ষ্যে এ সংগঠনটি গঠন করা হয়।
কর্মসূচির মধ্যে আরও রয়েছে জাতিসংঘ, সার্ক, ইইউ, কমনওয়েলথ, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা, অর্থনৈতিক দাতা সংস্থাসহ ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি প্রদান। দেশের অভ্যন্তরে ব্যাপক গণসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে খুব দ্রুত সিলেটের সব জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও গ্রাম পর্যায়ে কমিটি গঠন করে আন্দোলনে সাধারণ মানুষকে সম্পৃক্ত করা। টিপাইমুখ বাঁধ এবং এর সম্ভাব্য পরিবেশ বিপর্যয়ের ওপর তথ্যসমৃদ্ধ বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় বুকলেট ছাপানো ও বিতরণ করা।
সংগঠনের আহ্বায়ক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) জুবায়ের সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব অধ্যক্ষ ইউসুফ জুলকারনাইন জায়গীরদারের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে আরও ছিলেন ভাষাসৈনিক অধ্যক্ষ মাসউদ খান, কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদ সিলেটের সভাপতি হারুনুজ্জামান চৌধুরী, সিলেট পৌর সভার সাবেক চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আফম কামাল, সিলেট প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি মুকতাবিস উন নূর, এমসি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর এমএএনএ মাহবুব আহমদ, বিএমএ সিলেটের সাবেক সেক্রেটারি ডা. শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরী, সাংবাদিক সেলিম আউয়াল, টিপাইমুখ বাঁধ প্রতিরোধ সম্মিলিত সংগ্রাম পরিষদের যুগ্ম সদস্য সচিব মো. মাহমুদুল হোসেন তোফা প্রমুখ।
সংগঠনের কার্যক্রমকে গতিশীল করার লক্ষ্যে এরই মধ্যে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) জুবায়ের সিদ্দিকীকে আহ্বায়ক করে একটি স্টিয়ারিং কমিটি গঠন করা হয়েছে।
বিভিন্ন স্থানে গণসংযোগ-লিফলেট বিতরণ : ভারত সরকারের একতরফা টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণের প্রতিবাদে জকিগঞ্জ অভিমুখে ৮ ডিসেম্বর সিলেট জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের আহ্বানে রোডমার্চ সফলের লক্ষ্যে গণসংযোগ, লিফলেট বিতরণ ও মতবিনিময় সভা অব্যাহত রয়েছে।
বালাগঞ্জ ওসমানী নগরে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গণসংযোগকালে পৃথক পৃথক পথসভায় বক্তৃতা করেন রোডমার্চ বাস্তবায়ন কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক মাওলানা মশাহিদ আলী। সিলেট জেলা যুব জমিয়তের সভাপতি ও রোডমার্চ বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য মাওলানা নজরুল ইসলামের পরিচালনায় আরও বক্তৃতা করেন জেলা জমিয়ত নেতা আবদুস সালাম রাশিদী, জেলা যুব জমিয়তের সাংগঠনিক সম্পাদক ডিএম মোহাম্মদ আলী, জেলা ছাত্র জমিয়তের যুগ্ম সম্পাদক মাওলানা কবির আহমদ, জেলা জমিয়ত সদস্য মাওলানা ইসমাইল, বালাগঞ্জ উপজেলা জমিয়ত নেতা মাওলানা আবদুস সালাম।
শ্রমিকদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে : বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও সিলেট মহানগর আমির অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেছেন, মরণফাঁদ টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণ করে ভারত সরকার বাংলাদেশকে অস্তিত্বের সঙ্কটে ফেলে দিতে উঠেপড়ে লেগেছে। টিপাইমুখ বাঁধ রুখতে শ্রমিক নেতাদের জনমত গঠনে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। এদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামসহ সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনে শ্রমিকদের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে।
তিনি গতকাল ভারত সরকারের টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সিলেট জামায়াত ঘোষিত পক্ষকালব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সিলেট মহানগর আয়োজিত সিলেটের বিভিন্ন ট্রেড ইউনিয়ন ও শ্রমিক সংগঠনের নেতার সঙ্গে মতবিনিময়কালে সভাপতির বক্তব্যে এ কথা বলেন।

Wednesday 23 November 2011

শেয়ারবাজারে দরপতন অব্যাহত : তিনদিনে ডিএসই’র সূচক পড়েছে ৫৬০ পয়েন্ট : বাংলাদেশ ব্যাংক ঘেরাও


অর্থনৈতিক রিপোর্টার

দরপতনের কবল থেকে বের হতে পারছে না শেয়ারবাজার। গতকালও দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচকের বড় ধরনের পতন হয়েছে। দিনশেষে ডিএসই সাধারণ সূচকের পতন হয়েছে ২২৮ পয়েন্ট। এ নিয়ে ঈদ-পরবর্তী তিন কার্যদিবসে ডিএসই সূচকের পতন হয়েছে ৫৬০ পয়েন্টের মতো। ঈদ-পরবর্তী প্রথম দুই দিন সূচকের পতন হয়েছিল প্রায় ১৬৬ পয়েন্ট করে। গতকাল পতন ২০০ পয়েন্ট ছাড়িয়ে গেছে। অব্যাহত দরপতনে শেয়ারবাজারের সূচক এখন মাত্র ৪ হাজার ৬৪৯ পয়েন্টে এসে দাঁড়িয়েছে। গত ডিসেম্বরে এ সূচক সর্বোচ্চ ৮ হাজার ৯১৮ পয়েন্টে উন্নীত হয়েছিল। মাত্র ১১ মাসের ব্যবধানে সূচকের এ মহাপতনে বিনিয়োগকারীদের পুঁজি হারানোর হাহাকারে প্রতিদিনই ভারী হয়ে উঠছে মতিঝিল এলাকা।
গতকালও পুঁজি হারানো বিনিয়োগকারীরা প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে। এই কর্মসূচি শুধু ডিএসই ভবন চত্বরে সীমাবদ্ধ ছিল না, বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশ ব্যাংক কার্যালয় ঘেরাও করে বিক্ষোভ ও সমাবেশ করেছে। এ সময় বিনিয়োগকারীরা শেয়ারবাজারের বর্তমান পরিস্থিতির জন্য অর্থমন্ত্রী ও বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নরকে দায়ী করে তাদের পদত্যাগের দাবিতে নানা সেম্লাগান দেয়।
গতকাল লেনদেন শুরুর প্রথম ১৫ মিনিট সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা থাকলেও এরপর শুরু হয় টানা পতন। পতনের ধারা অব্যাহত থাকায় ২২৮ পয়েন্ট কমে শেষ হয় দিনের লেনদেন। দরপতনের প্রতিবাদে বেলা ১২টা থেকে বিনিয়োগকারীরা ডিএসই ভবনের সামনের রাস্তায় বিক্ষোভ সমাবেশ শুরু করেন। বেলা ১টার দিকে মিছিল নিয়ে এসইসি কার্যালয়ে যেতে চাইলে পুলিশ শাপলা চত্বরের সামনে বাধা দেয়। বিনিয়োগকারীরা তখন বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে অবস্থান নেয় এবং রাস্তায় বসে পড়ে। এ সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান ফটক বন্ধ করে দেয়া হয়। বিনিয়োগকারীরা শেয়ারবাজারের চলমান মন্দার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নরকে দায়ী করে তার বিরুদ্ধে নানা সেম্লাগান দেন এবং তার পদত্যাগ দাবি করেন। এসময় হ্যান্ড মাইকে নিঃস্ব হয়ে যাওয়া বিনিয়োগকারীরা তাদের কষ্টের কথা বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন।
বাংলাদেশ ব্যাংক কার্যালয় ঘেরাও প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম শাহদাত উল্লাহ ফিরোজ বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের অসময়োচিত পদক্ষেপ এবং অতিমাত্রার তদারকির কারণে বাজারে পতন শুরু হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন সিদ্ধান্তের কারণে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বড় ধরনের আস্থার সঙ্কট তৈরি হয়েছে। এ সঙ্কটের কারণে নানা উদ্যোগ নেয়ার পরও বাজারের পতন ঠেকানো যাচ্ছে না। আমরা গভর্নরের অদূরদর্শী সিদ্ধান্তের শিকার হয়ে আজ পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছি। আগামীতে আরও কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা দেয়া হবে বলে জানান তিনি।
বিক্ষোভে অংশ নেয়া আবদুল রাজ্জাক নামের একজন বিনিয়োগকারী জানান, তিনি হাবিবুর রহমান সিকিউরিটিজে লেনদেন করেন। ২০১০ সালের নভেম্বরে তার বিনিয়োগ করা মূলধন ছিল ১ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। এক বছরের ব্যবধানে চলতি বছরের নভেম্বরে এসে তার মূলধন ৭০ লাখের নিচে নেমে এসেছে। এতে তিনি ৪০ শতাংশেরও বেশি বিনিয়োগ হারিয়েছেন। রাজ্জাক জমিজমা বিক্রি এবং অন্যান্য ব্যবসা বন্ধ করে জমানো সব টাকা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করেন এবং এ ব্যবসাকে কেন্দ্র করেই তার মূল আয়। পুঁজি হারিয়ে এখন আহাজারি, বিক্ষোভ আর বার বার আশায় বুক বেঁধে পতনের জালে পা দেয়া ছাড়া তার কিছুই করার নেই।
পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যাওয়া আরেক বিনিয়োগকারী হুমায়ুন কবির জানান, দীর্ঘদিন সৌদি আরবে ছিলেন। দেশে ফিরে জমানো সব টাকা নিয়ে ৮ হাজার সূচকে সিনহা সিকিউরিটিজের মাধ্যমে বাজারে বিনিয়োগ করেন। নিজের মূলধন ছিল ৫০ লাখ এবং ঋণসহ প্রায় ১ কোটি টাকারও বেশি তার বিনিয়োগ দাঁড়ায়। কিন্তু বিপর্যয়ের পর সূচক গতকাল সাড়ে চার হাজার পয়েন্টে এসে দাঁড়ায়। এ অবস্থায় তিনি মূল পুঁজি হারিয়ে এখন ব্রোকারেজ হাউসের কাছে ৩০ লাখ টাকা ঋণে রয়েছেন। শেয়ারাবাজারে বিনিয়োগ করে নিঃস্ব এ আহমেদ নামের একজন বিনিয়োগকারী বরিশাল থেকে গতকাল রাতে আমার দেশ কার্যালয়ে ফোন করে জানান, তিনি বিভিন্নভাবে ধার-দেনা করে শেয়ারবাজারে ৫৭ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন। বিনিয়োগের বিপরীতে তিনি মার্জিন লোনও নিয়েছিলেন। এখন তার পুঁজির পুরোটাই শেষ হয়ে গেছে। এখন ব্রোকারেজ হাউস উল্টো তার কাছে ২ লাখ টাকা পাওনা হয়েছে। তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমরা নিঃশেষ হয়ে গেছি, আমাদের বাঁচান। শেয়ারবাজারে দরপতনে এভাবে প্রতিদিনই বাড়ছে নিঃস্ব মানুষের সংখ্যা। আর তাদের কান্নার ধ্বনি প্রতিদিনই বাড়ছে।
গতকাল ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে মোট ২৪৮টি কোম্পানির ৪ কোটি ৮ লাখ ১৬ হাজার ২৬৮টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড ইউনিটের লেনদেন হয়েছে। মোট লেনদেনের পরিমাণ ২৫২ কোটি ৮৬ লাখ ৫৭ হাজার ৮৬২ টাকা, যা আগের দিনের চেয়ে ৬৮ কোটি ৮৭ লাখ টাকা কম। ডিএসইর সাধারণ মূল্যসূচক আগের দিনের চেয়ে ২২৮ দশমিক ২০ পয়েন্ট কমে ৪ হাজার ৬৪৯ দশমিক ৩৩ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে ডিএসই-২০ মূল্যসূচক আগের দিনের চেয়ে ১৪২ দশমিক ৬৬ পয়েন্ট কমে ৩ হাজার ৫৭৯ দশমিক ৯৫ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। লেনদেনকৃত ২৪৮টি কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ৮টির কমেছে ২৩৯টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১টি কোম্পানির দর।
আর্থিক লেনদেনের ভিত্তিতে প্রধান ১০টি কোম্পানি হলো— গ্রামীণফোন, বেক্সিমকো লিমিটেড, ফু-ওয়াং সিরামিকস্, ন্যাশনাল ব্যাংক, তিতাস গ্যাস, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ইউসিবিএল, এমআই সিমেন্ট, মার্কেন্টাইল ব্যাংক লি. ও স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যাল।

সূচক ৫ হাজার পয়েন্টের নিচে : বিনিয়োগকারীদের পুঁজি হাওয়া


অর্থনৈতিক রিপোর্টার

আনোয়ার হোসেন ২০০৯ সালে মিরপুরে নিজের ফ্ল্যাট বিক্রি করে ৩০ লাখ, নিজস্ব ব্যবসা ও আত্মীয়স্বজন থেকে ঋণ করে আরও ২৯ লাখ টাকাসহ মোট ৫৯ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছেন শেয়ারবাজারে। লাভের একটি অংশ দেয়া হবে—এ শর্তে আরও পাঁচ বন্ধুর পোর্টফোলিও ম্যানেজ করতেন তিনি। বাড়তি লাভের আশায় ব্রোকারেজ হাউস থেকে মার্জিন লোনও নিয়েছিলেন। সব মিলিয়ে তার বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ৪ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু শেয়ারবাজারের অব্যাহত ধসে আনোয়ার শুধু তার পুরো পুঁজিই হারাননি, উল্টো ব্রোকারেজ হাউস তার কাছে ৩০ লাখ টাকা পাবে। চোখের সামনেই হাওয়া হয়ে গেছে তার সব বিনিয়োগ। লাভের আশায় শুধু একজন আনোয়ার হোসেনই নন, এমন কয়েক লাখ বিনিয়োগকারী শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে আজ নিঃস্ব। শেয়ারবাজারের অব্যাহত ধসে প্রতিদিনই বাড়ছে আনোয়ার হোসেনের মতো সর্বহারা বিনিয়োগকারীর সংখ্যা। আর তাদের কান্নায় ভারী হয়ে উঠছে রাজধানীর মতিঝিল এলাকা। শেয়ারবাজারের ধস ঠেকাতে একের পর এক উদ্যোগ নেয়া হলেও তা কোনো কাজেই আসছে না। গতকালও দেশের শেয়ারবাজারে বড় ধরনের ধস নেমেছে। আগের দিনের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাধারণ সূচকের পতন হয়েছে ১৬৫ পয়েন্টের মতো। দিনশেষে ডিএসই সাধারণ সূচক গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৮৭৭ পয়েন্টে। ২০১০ সালের ১৭ জানুয়ারির পর এটিই ডিএসই সূচকের সর্বনিম্ন অবস্থান। ওইদিন ডিএসই সাধারণ সূচক ছিল ৪ হাজার ৮৭৬ পয়েন্ট। অর্থাত্ গত ২২ মাসের মধ্যে সূচকের অবস্থান সর্বনিম্নে চলে এসেছে।
ঈদের ছুটির পর শেয়ারবাজার পরিস্থিতি ভালো হবে—এমন আশায় ছিলেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। কিন্তু তাদের সে আশা দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। ঈদের ছুটির পর মাত্র দুই দিনের লেনদেনে ডিএসইর সাধারণ সূচকের পতন হয়েছে ৩৩১ পয়েন্ট। আর এ পতনের ফলে ডিএসই সাধারণ সূচক নেমে এসেছে ৫ হাজার পয়েন্টের নিচে। শেয়ারবাজারের সূচক ৫ হাজার পয়েন্টের নিচে নামতে দেয়া হবে না, বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এ ধরনের একটা ধারণা চালু ছিল। কিন্তু গতকাল তাদের সে ধারণা মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক আরও বেড়ে গেছে। গতকাল লেনদেন শুরুর মাত্র ৫ মিনিটের মাথায় ডিএসই সূচকের পতন ঘটে ১০০ পয়েন্টের মতো। সূচক ৫ হাজার পয়েন্টের নিচে নেমে আসে। উদ্বিগ্ন বিনিয়োগকারীরা ডিএসই ভবনের সামনে জড়ো হতে থাকেন। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সূচকের পতন অব্যাহত থাকলে ডিএসই ভবনের সামনে ক্ষুব্ধ বিনিয়োগকারীর উপস্থিতিও বাড়তে থাকে। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তারা বিক্ষোভ সমাবেশ শুরু করেন। বেলা ১১টা ৫৫ মিনিটে ডিএসই সূচকের ২৩৮ পয়েন্টের পতন হলে বিক্ষোভ সমাবেশ নতুন গতি লাভ করে। বেলা ১২টা থেকে সূচকে কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা দিলেও আগের দিনের তুলনায় ১৬৪ দশমিক ৭১ পয়েন্ট কমে দিনশেষে ডিএসই সাধারণ সূচক ৪ হাজার ৮৭৭ দশমিক ৫২ পয়েন্টে এসে দাঁড়ায়। ২০১০ সালের ৫ ডিসেম্বর ডিএসইর সাধারণ সূচক সর্বোচ্চ ৮ হাজার ৯১৮ পয়েন্টে উন্নীত হয়েছিল। সেই থেকে একের পর এক ধসের ঘটনা ঘটছে। অর্থাত্ মাত্র ১১ মাসের ব্যবধানে ডিএসইর সাধারণ সূচকের পতন হয়েছে ৪ হাজার ৪১ পয়েন্টের, শতাংশ হিসেবে এ পতনের হার ৪৫ ভাগেরও বেশি।
এদিকে শেয়ারবাজারে অব্যাহত পতনকে ব্যাখ্যাতীত বলে মন্তব্য করেছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও এসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম। তিনি বলেন, শেয়ারবাজারে কেন টানা দরপতন হচ্ছে, তার কোনো ব্যাখ্যা আমার কাছে নেই। টানা দরপতনের সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ নেই। তিনি আরও বলেন, দর কমতে কমতে এখন শেয়ারের দর অনেক নিচে নেমে এসেছে। এ অবস্থায় বিনিয়োগে ঝুঁকি নেই। তারপরও বিনিয়োগকারীরা কেন শেয়ার কিনছে না তা বুঝতে পারছি না। শেয়ারবাজারে অব্যাহত দরপতনের পেছনে কোনো কারসাজি রয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন বলে তিনি মন্তব্য করেন।
একের পর এক উদ্যোগ নেয়ার পরও ধস ঠেকাতে ব্যর্থ হওয়ায় বড় ধরনের চাপের মুখে পড়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি)। শেয়ারবাজারে কারসাজি রোধে ব্যর্থ হওয়ায় এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা হারানোর কারণে জিয়াউল হক খোন্দকারের নেতৃত্বে গঠিত কমিশনকে সরিয়ে দেয় সরকার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক ড. খায়রুল হোসেনকে চেয়ারম্যান করে কমিশনকে পুনর্গঠন করা হয়। গত মে মাসে কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে যোগ দেন খায়রুল হোসেন। চেয়ারম্যান হিসেবে যোগদানের দিনই তিনি বলেছিলেন, বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জন করে একটি শক্তিশালী, স্বচ্ছ ও স্থিতিশীল পুঁজিবাজার গড়ে তোলাই হবে কমিশনের লক্ষ্য। কিন্তু পুনর্গঠিত কমিশন বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জনে সফল হতে পারেনি। বিভিন্ন ক্ষেত্রে কমিশন বেশ ইতিবাচক পদক্ষেপ নিলেও সেগুলো বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সফলতা দেখাতে পারেনি। ফলে পুনর্গঠিত কমিশনের ওপর বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমতে শুরু করেছে। তবে অনেকেই মনে করছেন, পুরো কমিশন পুনর্গঠিত হওয়ার কারণে অভিজ্ঞতার বিষয়ে বড় ধরনের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। আর এ কারণে বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবিলায় যথার্থ পদক্ষেপ নিতে পারছে না কমিশন। ফলে কমিশনের ওপর চাপ প্রয়োগ করে বিভিন্ন গোষ্ঠী তাদের ফায়দা হাসিল করে নিচ্ছে, কিন্তু বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরে আসছে না। বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে কমিশনের ভিতরে দ্বন্দ্ব রয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। বিশেষ করে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের মতাদর্শে প্রকাশ্য সমর্থনকারী একজন সদস্য নানাভাবে কমিশনের ওপর প্রভাব বিস্তার করছেন বলে জোর গুজব রয়েছে। এ কারণে কমিশনের মধ্যে এক ধরনের অস্থিরতা রয়েছে। বাজারেও এর প্রভাব পড়ছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
ফোর্সড সেল বন্ধে এসইসির নির্দেশনা : শেয়ারবাজারে অব্যাহত দরপতনে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি বড় ধরনের আর্থিক ঝুঁকির মুখে পড়েছে মার্জিন ঋণ দেয়া ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো। আর্থিক ঝুঁকি কমাতে বাধ্য হয়েই তারা গ্রাহকের শেয়ার ফোর্সড সেল শুরু করেছেন। আগে থেকে কিছু কিছু ফোর্সড সেল হলেও গত দু’দিনে ফোর্সড সেলের পরিমাণ বেড়েছে। এরই প্রেক্ষিতে এসইসির পক্ষ থেকে বাজার পরিস্থিতি বিবেচনায় ফোর্সড সেল না করার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন এসইসির নির্বাহী পরিচালক ও দায়িত্বপ্রাপ্ত মুখপাত্র সাইফুর রহমান। তিনি বলেন, আমরা বেশ কিছু ফোর্সড সেলের অভিযোগ পেয়েছি। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা তাদেরকে ফোর্সড সেল না করার জন্য বলেছি। আশা করছি, বাজারের স্বার্থে তারা ফোর্সড সেল করবেন না। তবে এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করার বিষয়ে স্পষ্ট কিছু বলেননি তিনি। তিনি বলেন, এক্ষেত্রে আইন পরিবর্তনের প্রয়োজন হবে। কিন্তু এটি সময়সাপেক্ষ। সেজন্য কমিশনের পক্ষ থেকে আপাতত মৌখিক নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
আগামীকাল এবিবি’র সঙ্গে এসইসির বৈঠক : শেয়ারবাজারে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ এবং ৫ হাজার কোটি টাকার ‘স্টক মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড’ গঠনের বিষয়ে আগামীকাল অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সঙ্গে এসইসির বৈঠক হবে। বেলা ১১টায় এ বৈঠক হবে বলে এসইসি সূত্রে জানা গেছে।
বিনিয়োগকারীদের বিক্ষোভ : শেয়ারাবাজারে দরপতনের প্রতিবাদে গতকালও সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ডিএসই ভবনের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ করেছেন। বেলা সাড়ে ১১টা থেকে সাড়ে ৩টা পর্যন্ত ডিএসই ভবনের সামনের রাস্তায় অবস্থান নেন তারা। তারা এ সময় শেয়ারবাজারে ধস ঠেকাতে ব্যর্থ অর্থমন্ত্রী, অর্থ উপদেষ্টা, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের বিরুদ্ধে নানা সেম্লাগান দেন এবং তাদের পদত্যাগের দাবি জানান। বিক্ষোভের সময় মতিঝিলের শাপলা চত্বর থেকে ইত্তেফাকের মোড় পর্যন্ত সব ধরনের যানচলাচল বন্ধ ছিল। এদিকে গতকাল বিনিয়োগকারীদের একটি গ্রুপ বেলা ২টার দিকে এসইসি কার্যালয় ঘেরাও করে। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে এসইসির ফটক বন্ধ করে দেয়া হয়। পরে বিনিয়োগকারীদের একটি দল এসইসি চেয়ারম্যানের সঙ্গে সাক্ষাত্ করে বিভিন্ন দাবি-দাওয়া পেশ করে। তারা গত দু’দিনের ট্রেড বাতিল, শেয়ারবাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে না আসা পর্যন্ত লেনদেন বন্ধ, ফোর্সড সেল বন্ধে এসইসির প্রজ্ঞাপন জারিরও দাবি জানান। এসইসির চেয়ারম্যান তাদের দাবির বিষয়ে আইনি দিক খতিয়ে দেখা হবে বলে আশ্বাস দেন।
বাজার পরিস্থিতি : গতকাল ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেয়া ২৫২টি কোম্পানির মধ্যে মাত্র ১৫টির দর বেড়েছে। কমেছে ২৩৫টির এবং অপরিবর্তিত ছিল ২টির। ক্রেতার অভাবে অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারের দর কমেছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। তবে দর কমলেও আগের দিনের তুলনায় লেনদেনের পরিমাণ বেড়েছে। আগের দিন ডিএসইতে ২০৬ কোটি ৫৪ লাখ টাকার আর্থিক লেনদেন হলেও গতকাল তা ৩২১ কোটি ৭৪ লাখ টাকায় উন্নীত হয়েছে।
মূলধন আড়াই লাখ কোটি টাকার নিচে : অব্যাহত দরপতনে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের বাজার মূলধন আড়াই লাখ কোটি টাকার নিচে নেমে এসেছে। গতকাল দিনশেষে ডিএসইর বাজার মূলধন ২ লাখ ৪৬ হাজার ৪৭০ কোটি টাকায় এসে দাঁড়িয়েছে। আগের দিনের তুলনায় গতকাল বাজার মূলধন কমেছে ৬ হাজার ৪১০ কোটি টাকা। গত ৫ ডিসেম্বর ডিএসইর বাজার মূলধন সর্বোচ্চ ৩ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছিল। মাত্র ১১ মাসের ব্যবধানে বাজার মূলধন কমেছে ১ লাখ ২২ হাজার কোটি টাকা।
নিঃস্ব বিনিয়োগকারীর আর্তনাদ বাড়ছে : শেয়ারাবাজারে দরপতনে প্রতিদিনই নিঃস্ব বিনিয়োগকারীদের আর্তনাদ বাড়ছে। নিঃস্ব আনোয়ার হোসেন বলেন, গত তিন মাসে আমার সঙ্গে বাসার যোগাযোগ নেই। রাতে বন্ধু-বান্ধবের বাসায় থাকি। গত রোজার ঈদও বাইরে কাটিয়েছি, এবার কোরবানির ঈদও পরিবারের সঙ্গে করতে পারিনি। দুই ছেলে ও স্ত্রী নিয়ে সংসার কীভাবে চলছে, তার খোঁজ-খবর নিতে পারছি না। বাসাভাড়া দিতে পারছি না। আমি নিঃস্ব হয়ে গেছি। লক্ষ্মীপুর জেলার বিজয়নগর গ্রামের আনোয়ার হোসেন আরও বলেন, সরকার আমাদের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের জন্য আহ্বান জানিয়েছে। তাদের সে আহ্বানে সাড়া দিয়ে আজ আমরা সব হারিয়ে সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েছি। আনোয়ার হোসেন তার কষ্টের কথা বলতে গিয়ে বারবার বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ছিলেন।
ইকবাল খান রিপন নামে আরেক বিনিয়োগকারী বলেন, ২০১০ সালের আগস্ট মাসে তিনি শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করেন। তার মোট বিনিয়োগের পরিমাণ সাড়ে ৪৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে জমি বিক্রি করে ২১ লাখ, বাকি টাকা বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়স্বজন থেকে ধার করেছেন। ৪৩ লাখ টাকার বিপরীতে মার্জিন লোন নিয়েছেন ২৩ লাখ টাকা। কিন্তু পোর্টফোলিও এখন নেগেটিভ হয়ে গেছে। অর্থাত্ শেয়ার বিক্রি করে মার্জিন লোন শোধ করা সম্ভব হবে না। ইবিএল হাউসে লেনদেন করেন তিনি। তিনি বলেন, এখন একবেলা খেয়ে আরেক বেলা না খেয়ে চলছে জীবন। গত চার মাস বাসাভাড়া দিতে পারছি না। দুই সন্তানের মধ্যে বড় জন লেখাপড়া করছে; কিন্তু তার খরচও দিতে পারছি না। তিনি বলেন, মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছি। দুশ্চিন্তায় রাতে ঘুম হয় না।
গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার নুরুল ইসলাম জানান, তিনি জমি ও স্ত্রীর গয়না বিক্রি করে, নিজের জমানো টাকা, আত্মীয়স্বজন, বন্ধু-বান্ধবের কাছ থেকে ধার করে মোট ৩২ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন। এখন তার বিনিয়োগের পরিমাণ মাত্র ৮ লাখ টাকায় নেমে এসেছে। তিনি বলেন, বন্ধু-বান্ধবকে মুনাফা দেব—এ শর্তে টাকা ধার নিয়েছিলাম। প্রতি লাখে মাসে এক হাজার টাকা দেয়ার কথা বলে টাকা ধার নিয়ে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করেছিলাম। কিন্তু এখন পর্যন্ত কাউকে কোনো লাভ তো দূরের কথা, পুঁজিই হাওয়া হয়ে গেছে। যাদের কাছ থেকে ধার করেছি, তারা এখন আমার শত্রু হয়ে গেছে। স্ত্রীর সঙ্গেও টানাপড়েন চলছে। তিনি বলেন, শেয়ারবাজারের কারণে এখন জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, আমাদের টাকা লুটপাট করা হয়েছে। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারে এসে শেয়ারবাজারে লুটপাট করেছিল; এবার আবারও তারা লুটপাট করেছে।

শেয়ারবাজারে অব্যাহত দরপতনে বিনিয়োগকারীদের ঘোষণা : দাবি পূরণ না হলে ৭ ডিসেম্বর মহাসমাবেশ


অর্থনৈতিক রিপোর্টার

শেয়ারবাজারে দরপতন অব্যাহত রয়েছে। গতকাল দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাধারণ সূচকের পতন হয়েছে ৪০ পয়েন্ট। ফলে দিনশেষে সূচক গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৩৬ পয়েন্টে। এ নিয়ে টানা ৪ দিন সূচকের পতন দিয়ে শেষ হয়েছে গতকালের লেনদেন। আর এ সময়ে ডিএসই সূচক হারিয়েছে ৪১৯ পয়েন্ট।
এদিকে শেয়ারবাজারে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার দাবিতে ৯ দফা দাবি জানিয়েছে বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদ। আগামী ৬ ডিসেম্বরের মধ্যে এসব দাবি মেনে নিয়ে শেয়ারবাজারের স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা না হলে আগামী ৭ ডিসেম্বর ঢাকায় বিনিয়োগকারীদের মহাসমাবেশ করা হবে বলে জানিয়েছেন পরিষদের নেতারা। গতকাল পরিষদের নিজস্ব কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ মহাসমাবেশের ঘোষণা দেয়া হয়। অবশ্য শেয়ারাবাজারে দরপতনের প্রতিবাদে গতকালও বিনিয়োগকারীরা ডিএসই ভবনের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে। গতকালের বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, সূচকের পতন দিয়ে শুরু হয় দিনের লেনদেন। লেনদেন শুরুর ১০ মিনিটে ডিএসই সূচকের পতন ঘটে ৩৫ পয়েন্টের মতো। এরপর সূচকে কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা দিলেও ১০ মিনিটের ব্যবধানেই ফের নিম্নমুখী ধারা দেখা দেয়। বেলা সাড়ে ১১টায় পতনমুখী ধারা থেকে বেরিয়ে আসে বাজার এবং বেলা ১২টা পর্যন্ত সূচকের একটানা বৃদ্ধি ঘটে। এসময় সূচক আগের দিনের তুলনায় ৬৮ পয়েন্ট বেড়ে যায়। কিন্তু এরপর টানা দরপতন শুরু হলে শেষ পর্যন্ত আগের দিনের তুলনায় ৪০ দশমিক ৬৩ পয়েন্টের পতন দিয়ে শেষ হয় দিনের লেনদেন। লেনদেনে অংশ নেয়া ২৪৯টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ৭৫টির, কমেছে ১৬৩টির এবং অপরিবর্তিত ছিল ১১টির। সূচক পতনের পাশাপাশি লেনদেনের পরিমাণও কমেছে। আগের দিনের তুলনায় ৪০ কোটি টাকা কমে দিনশেষে লেনদেন হয়েছে ২৯০ কোটি টাকা। বাজার সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা না থকার কারণে সামান্য দরবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গেই শেয়ার বিক্রির চাপ বেড়ে যায়। বিক্রি চাপ বেড়ে যাওয়ার কারণে দরপতনের ঘটনা ঘটছে। তারা আরও জানান, দরপতন ঠেকাতে হলে শেয়ারের চাহিদা তৈরি করতে হবে। কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা বাজারে সক্রিয় না হলে সে চাহিদা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। ব্যাংকগুলো বিনিয়োগের যে ঘোষণা দিয়েছে তার কোনো প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। অথবা বিনিয়োগ করলেও তা খুবই সামান্য আকারের। বর্তমানে বাজারে বিনিয়োগের অত্যন্ত অনুকূল পরিবেশ রয়েছে বলেও সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
বিনিয়োগকারীরা অভিযোগ করছেন, ঘোষণা দিলেও তারা এখন পর্যন্ত শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করেনি। ব্যাংকগুলো এ ধরনের ঘোষণা দিয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। এর আগে বাংলাদেশ ফান্ডের ৫ হাজার কোটি টাকা দিয়ে শেয়ারাবাজারের স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার ঘোষণা দেয়া হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে সে ফান্ডের কোনো প্রভাবই পড়েনি। কালোটাকা বিনিয়োগের সুযোগ দেয়া হলেও এ বিষয়ে সরকারের অস্পষ্ট অবস্থানের কারণে কালোটাকা বিনিয়োগ হচ্ছে না। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের বাজারে সক্রিয় হওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছিল। কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা আর বেশি নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে। বাজারের স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে এসইসি দফায় দফায় মার্চেন্ট ব্যাংক, অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি, ব্রোকারেজ হাউসের প্রতিনিধি, স্টক এক্সচেঞ্জের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছে। কিন্তু এসব বৈঠকের পরও বাজারে ধস থামছে না।
নানা উদ্যোগ নেয়ার পরও বাজারে দরপতনের পেছনে কারসাজি থাকতে পারে বলেও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ধারণা। তারা বলেন, দরপতন ঘটিয়ে কম দামে শেয়ার কেনার সুবিধা করে দেয়া হচ্ছে। কম দামে শেয়ার কেনার জন্যই এখন প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা নিষ্ক্রিয় হয়ে রয়েছে। দর আরও কমে গেলে তারা শেয়ার কিনতে শুরু করবে এবং তারা পরবর্তীতে দর বাড়িয়ে মুনাফা হাতিয়ে নেবে।
মহাসমাবেশের ঘোষণা : শেয়ারবাজারে স্থিতিশীলতা ফিরে না আসলে আগামী ৭ ডিসেম্বর মহাসমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদ। গতকাল মতিঝিলস্থ নিজস্ব কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির সভাপতি মিজানুর রশীদ চৌধুরী বলেন, আমরা সরকারকে ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় দিয়েছি। এ সময়ের মধ্যে যদি বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরে না আসে তাহলে আগামী ৭ ডিসেম্বর সারাদেশের বিনিয়োগকারীদের নিয়ে মহাসমাবেশ ডাকা হবে। এ মহাসমাবেশ থেকে বৃহত্তর আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। তিনি বলেন, আমাদের মহাসমাবেশ ডাক দিতে বাধ্য করবেন না। আমরা কোনো রাজনৈতিক দল করি না। আমরা সাধারণ বিনিয়োগকারী। পুঁজি হারিয়ে আমরা আজ আন্দোলনে নামতে বাধ্য হচ্ছি।
সমাবেশে লিখিত বক্তব্যে বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে শেয়ারবাজারের স্থিতিশীলতার জন্য ৯ দফা দাবি পেশ করা হয়। এগুলো হলো—ব্যাংকগুলোকে আগামীকাল (আজ) থেকে আমানতের ১০ শতাংশ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ শুরু, মার্চেন্ট ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বীমা কোম্পানিগুলোকে আইনি সীমার মধ্যে সর্বোচ্চ পরিমাণে বিনিয়োগে বাধ্য করা, মিউচুয়াল ফান্ডের মূলধনের ৮০ শতাংশ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগে বাধ্য করতে হবে, কোম্পানি আইন সংশোধন করে পরিচালকদের কমপক্ষে ৪০ থেকে ৫১ শতাংশ শেয়ার সংরক্ষণে বাধ্য করা, অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগে এনবিআর ও দুদকের পক্ষ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি, বৃহত্ পুঁজির বিনিয়োগকারীদের ভয় না দেখিয়ে তাদের বিনিয়োগে বাধ্য করা, আইসিবিকে শেয়ার ক্রয়ে বাধ্য করা, প্রিমিয়াম ছাড়াই আইপিওতে কোম্পানিকে শেয়ার ছাড়ার অনুমতি দেয়া, বিনিয়োগকারীদের বিরুদ্ধে সব মামলা প্রত্যাহার।
এ সময় পরিষদের সিনিয়র সহ-সভাপতি কাজী নজরুল ইসলাম, সহ-সভাপতি সেলিম চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে এম শাহদাত উল্লাহ ফিরোজ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
পরিষদের নেতারা বলেন, শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের নিয়ে প্রতারণা করা হচ্ছে। ব্যাংকগুলো বিনিয়োগে আসার ঘোষণা দিলেও তারা বিনিয়োগ করছে না। ব্যাংকগুলো যদি ৭ থেকে ১০ দিন পর্যন্ত বড় ফান্ড নিয়ে বাজারে বিনিয়োগ শুরু করতো তাহলে বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতো। কিন্তু তা হচ্ছে না। তারা আরও বলেন, ব্যাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি) ৫ হাজার কোটি টাকার ‘স্টক মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড’ গঠনের ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু আমরা ধারণা করছি, এ ধরনের ফান্ড গঠন করা সম্ভব হবে না। বাংলাদেশ ফান্ড গঠন করে বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে মনস্তাত্ত্বিক প্রতারণা করা হয়েছে বলে তারা জানান।

Monday 31 October 2011

ইসলামী সংগঠনের নেতাদের তীব্র প্রতিক্রিয়া : কুফরি বক্তব্যের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে তওবা করতে হবে

রকিবুল হক
গত বুধবার রাজধানীর একটি পূজামণ্ডপ পরিদর্শনকালে ‘গজে চড়ে মা দুর্গা আসায় ফসল ভালো হয়েছে’ বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে বক্তব্য দিয়েছেন তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিভিন্ন ইসলামী সংগঠনের নেতারা। পৃথক প্রতিক্রিয়ায় তারা বলেন, কোনো মুসলমান এ ধরনের বক্তব্য দিতে পারে না। প্রধানমন্ত্রী এ বক্তব্যের মাধ্যমে দুর্গাকে মহান আল্লাহর শরিক সাব্যস্ত করেছেন। কুফরি এই বক্তব্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী সারা বিশ্বের মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে চরম আঘাত এবং নিজে ইমান হারিয়েছেন। এ জন্য অবশ্যই তাকে তওবা করতে হবে বলেও মন্তব্য করেন ইসলামী ব্যক্তিত্বরা।
ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মুফতি ফজলুল হক আমিনী এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘গজে চড়ে মা দুর্গা আসায় ফসল ভালো হয়েছে’—দেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হিন্দুয়ানি এই বক্তব্য কোনো মুসলমানের পক্ষে উচ্চারণ করা হারাম। কোনো মুসলমান যদি বিশ্বাস নিয়ে এই কথা বলে এবং সে মনে করে মা দুর্গা বা অন্য কোনো মূর্তির কোনো ক্ষমতা রয়েছে, তাহলে তার ইমান থাকতে পারে না। তিনি বলেন, আমি আগে থেকেই বলে আসছি, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগ সরকার এ দেশ
থেকে কোরআন-হাদিস ধ্বংস করে অন্য ধর্মের আদর্শে বাংলাদেশ গড়তে চায়। দুর্গাপূজা উপলক্ষে শেখ হাসিনার এই বক্তব্যে এই সত্য আরও সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল করীম এক বিবৃতিতে গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুর্গা প্রসঙ্গে যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা যদি অন্তর থেকে দিয়ে থাকেন তাহলে তিনি কুফরি করেছেন। কোনো মুসলমান মা দুর্গা বলে স্বীকার করে নিলে সে বেইমান হয়ে যায়। ‘এবারের পূজা উত্সবে মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ সব ধর্মের মানুষ একাত্ম হয়েছে। এটা বাংলাদেশের জন্য বড় অর্জন।’ প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্য প্রসঙ্গে চরমোনাই পীর বলেন, দুর্গাপূজায় আওয়ামী লীগের মানুষ অংশগ্রহণ করেছে, এজন্য তাদের কাছে এটা বড় অর্জন হতে পারে, কিন্তু মুসলমানের জন্য পূজা কোনো অর্জন নয়। শেখ হাসিনা মা দুর্গাকে প্রভু হিসেবে মেনে নিলেও কোনো মুসলমান তা মানতে পারে না।
খেলাফত আন্দোলনের আমির মাওলানা শাহ আহমদুল্লাহ আশরাফ ও মহাসচিব মাওলানা জাফরুল্লাহ খান এক যুক্ত বিবৃতিতে বলেন, দুর্গা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে প্রমাণিত হয়, আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস বাদ দিয়ে দুর্গার প্রতি আস্থা স্থাপন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মাধ্যমে তিনি বেইমান হয়ে গেছেন। তারা বলেন, কোরআন-হাদিসের আকিদা অনুযায়ী সবকিছুর মালিক আল্লাহ। তার হুকুম ছাড়া কোনো কিছু পরিবর্তন হতে পারে না। মানুষের তৈরি প্রাণহীন মূর্তি কিছু পরিবর্তন করতে পারে, কেউ এ বিষয়ের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করলে সে মুশরিক হয়ে যায়। তার নামাজ-রোজা কিছুই কাজে আসে না, এমনকি তার ইমান থাকে না। প্রধানমন্ত্রী এ বক্তব্যের মাধ্যমে দেশের মুসলামানদের হিন্দু বানাতে উত্সাহী করেছেন। তারা অবিলম্বে তাকে তওবা করার আহ্বান জানান। অন্যথায় আল্লাহর গজবের জন্য প্রস্তুত থাকতে হুশিয়ার করেন।
তিনি বলেন, ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিদর্শনে তার প্রদত্ত বক্তব্য সম্পূর্ণ কুফরি। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী হজ করেন, তাহাজ্জুদ পড়েন এবং কোরআনও তেলাওয়াত করেন। এখন দেখা যায় তিনি পূজাও করেন! প্রধানমন্ত্রীকে স্পষ্ট করতে হবে, তিনি কোন ধর্মের অনুসারী?
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশের নায়েবে আমির মাওলানা আবদুর রব ইউসুফী এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, প্রধামন্ত্রীর এ বক্তব্যে হিন্দুধর্মে তার বিশ্বাস স্পষ্ট হয়ে গেছে। এ বক্তব্য প্রত্যাহার ও তওবা না করলে তিনি মুসলমান দাবি করতে পারেন না।
বাংলাদেশ জাতীয় ফতোয়া বোর্ডের পক্ষে অধ্যাপক ড. মাওলানা আবদুস সালাম মাদানী, অধ্যাপক ড. ইয়াহইয়ার রহমান, মাওলানা নুর হোসাইন আল কাসেমী, ড. খলিলুর রহমান মাদানী, মাওলানা আবুল বাশার প্রমুখ এক বিবৃতিতে বলেন, দুর্গা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য ইমান বিনষ্টকারী সর্বনাশা। কোনো মুসলিম নারীর মুখে এ বক্তব্য শোভা পায় না। ৯২ শতাংশ মুসলমানের এদেশে একজন মুসলিম প্রধানমন্ত্রীর মুখে এ বক্তব্য আশা করা যায় না। তারা বলেন, যে অশুভ শক্তি ও বামদের চাপে প্রধানমন্ত্রী এই ইমানবিধ্বংসী বক্তব্য দিয়ে মুসলিম মিল্লাতকে প্রশ্নবিদ্ধ ও বিশ্বের দরবারে দেশের ভাবমর্যাদা ক্ষুণ্ন করেছেন, সে সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর এখনই সতর্ক হওয়া জরুরি।
দেশের শীর্ষ ৫ হাজার আলেমের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, মুসলমান এক আল্লাহ ছাড়া কাউকে ক্ষমতার অধিকারী বিশ্বাস করলে তার ইমান থাকে না। প্রধানমন্ত্রী শেখা হাসিনা দুর্গা সম্পর্কে যে কথা বলেছেন, তাতে তিনি ইমান হারিয়েছেন। অবিলম্বে তওবার মাধ্যমে তাকে ইসলামে দাখিল করতে হবে, অন্যথায় তিনি মুসলিম থাকতে পারবেন না। বিবৃতিদাতারা হলেন—ড. মুফতি নিজামুদ্দিন, মাওলানা মুস্তাফিজুর রহমান, খাজা শাহ ওয়ালিউল্লাহ, মাওলানা মুহাম্মদ জাকির হোসাইন, মাওলানা আবদুল মান্নান মিঞা, মাওলানা আবদুল ওয়াজেদ প্রমুখ।
তাহফিজে হারামাইন পরিষদের সভাপতি মাওলানা সাদেক আহমদ সিদ্দিকী এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, প্রধানমন্ত্রী দুর্গাকে মহান আল্লাহর সঙ্গে শরিক করেছেন। এর মাধ্যমে তিনি মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়েছেন। তার এ কথার জন্য অবশ্যই তওবা করতে হবে।
উল্লেখ্য, গত বুধবার দুর্গোত্সব উপলক্ষে ঢাকেশ্বরী মন্দির ও রামকৃষ্ণ মিশনে পূজামণ্ডপ পরিদর্শনকালে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘আমরা জানি এবং শুনেছি মা দুর্গা প্রত্যেক বছর কোনো না কোনো বাহনে চড়ে আমাদের এ বসুন্ধরায় আসেন। এবার আমাদের দেবী এসেছেন গজে চড়ে। জানি, গজে চড়ে এলে এ পৃথিবী ধন-ধান্যে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে। তা আমরা দেখতেই পাচ্ছি। এবার ফসল ভালো হয়েছে। মানুষ সুখে-শান্তিতে আছে। দেশের জিডিপি বৃদ্ধি পেয়ে ৭ ভাগে দাঁড়িয়েছে।’

গজে চড়ে মা দুর্গা আসায় ফসল ভালো হয়েছে : শেখ হাসিনা



স্টাফ রিপোর্টার
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা জানি এবং শুনেছি মা দুর্গা প্রত্যেক বছর কোনো না কোনো বাহনে চড়ে আমাদের এ বসুন্ধরায় আসেন। এবার আমাদের দেবী এসেছেন গজে চড়ে। জানি, গজে চড়ে এলে এ পৃথিবী ধন-ধান্যে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে—তা আমরা দেখতেই পাচ্ছি। এবার ফসল ভালো হয়েছে। মানুষ সুখে-শান্তিতে আছে। দেশের জিডিপি বৃদ্ধি পেয়ে ৭ ভাগে দাঁড়িয়েছে।
গতকাল শারদীয় দুর্গোত্সব উপলক্ষে রাজধানীর ঢাকেশ্বরী মন্দির ও রামকৃষ্ণ মিশনে পূজামণ্ডপ পরিদর্শনকালে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। এবার ব্যাপক উত্সাহ-উদ্দীপনায় পূজা উদযাপন হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এর একটাই কারণ, দেশের মানুষ অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য শুনে উপস্থিত নারীরা উলুধ্বনি ও করতালি দিয়ে স্বাগত জানান।
বর্তমান সরকারের সময় দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও শান্তি বজায় রয়েছে দাবি করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও গণতন্ত্র বজায় থাকলে দেশের উন্নতি হয়। সরকার সে লক্ষ্যে কাজ করছে। সরকার সব ধর্মের মানুষের সমান অধিকার নিশ্চিত করতে সংবিধান সংশোধন করেছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, এবারের পূজা উত্সবে মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ সব ধর্মের মানুষ একাত্ম হয়েছে। এটা বাংলাদেশের জন্য বড় অর্জন। সবার অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ যে একটি অসাম্প্র্রদায়িক দেশ, এটা আবারও প্রমাণিত হয়েছে। আমরা সম্মিলিতভাবে দেশকে উন্নত ও স্বাবলম্বী করব। সবাই মিলে অসাম্প্রদায়িক চেতনা নিয়ে দেশ গড়ে তুলব।
সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় দেশ থেকে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, দুর্নীতি দূর করতে মহাজোট সরকার সক্ষম হয়েছে দাবি করে তিনি আরও বলেন, এসব নিয়ে আমাদের যে দুর্নাম ছিল তা আমরা ঘোচাতে সক্ষম হয়েছি। বিশ্বসভায় আমাদের মর্যাদা বৃদ্ধি পেয়েছে। এমডিজি অর্জনে বাংলাদেশ সম্মানিত হয়েছে।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিগত চারদলীয় জোট সরকারের সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, আমাদের আগে যে সরকার ছিল তাদের সময় বাংলাদেশ সাম্প্র্রদায়িক ও জঙ্গিবাদের দেশ হিসেবে বিশ্বে পরিচিতি পেয়েছিল। আমরা ক্ষমতায় এসে সে দুর্নাম ঘোচাতে পেরেছি। এখন আর বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক জঙ্গিবাদের দেশ নয়।
বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তোলার জন্য একসঙ্গে কাজ করে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার অসাম্প্র্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক। তার সরকার জনগণের ক্ষমতায়নে বিশ্বাস করে। জনগণই সব ক্ষমতার মালিক। সে লক্ষ্য নিয়ে আমরা কাজ করছি।
তিনি বলেন, সারাদেশে এবার ২৮ হাজার পূজামণ্ডপ তৈরি হয়েছে। ঢাকায় ১৯৬ পূজামণ্ডপ হয়েছে। কোথাও শান্তি-নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়নি। এজন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ধন্যবাদ।
এর আগে বেলা সোয়া ৩টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকেশ্বরী পূজামণ্ডপ পরিদর্শনে যান। সেখানে তাকে স্বাগত জানান আওয়ামী লীগ উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, স্থানীয় সংসদ সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, জাতীয় পূজা উদযাপন কমিটির উপদেষ্টা সিআর দত্ত, অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, প্রদীপ চক্রবর্তী, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া। পরে পূজা উদযাপন কমিটির পক্ষ থেকে শেখ হাসিনাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়। প্রধানমন্ত্রী পূজামণ্ডপ ঘুরে দেখেন। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, সিআর দত্ত, অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী।

Saturday 1 October 2011

ইসলামী শক্তি নির্মূলের খেলায় ধ্বংস হবে সরকার : আমিনী

স্টাফ রিপোর্টার
ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মুফতি ফজলুল হক আমিনী বলেছেন, জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে থাকবে, এই সেম্লাগান দিয়ে প্রধানমন্ত্রী নিজের ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা করে দেশে নজিরবিহীন মার্শাল ল’ জারি করে রেখেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মনে করেন, তিনি যা বলেন জনগণ তা-ই বিশ্বাস করে মেনে নেবে। জনগণ অন্তর দিয়ে যা বিশ্বাস করে তা হলো, শেখ হাসিনা গণতন্ত্রের নামে, জনগণের ক্ষমতায়নের নামে যে মার্শাল ল’ জারি করে রেখেছেন, বিগত চল্লিশ বছরে তার কোনো নজির নেই। এই শাসন শুধু স্বৈরাচারীই নয়, বরং ইসলামকে ধ্বংস করার শাসন। তিনি দেশ থেকে ইসলাম ধ্বংস করার এজেন্ডা নিয়ে কাজ করছেন। তিনি বলেন, ক্ষমতা চিরস্থায়ী করতে ইসলাম
নির্মূলের জন্য পাশ্চাত্য প্রভুদের শয়তানি মন্ত্র নিয়েই কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা। কিন্তু আওয়ামী সরকারের মনে রাখা উচিত, বাংলাদেশের মাটিতে যেখানে ৯০ ভাগ মুসলমান সেখানে ইসলাম ধ্বংসের রাজনীতি চলতে পারে না। সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদের অপবাদ দিয়ে ইসলামী শক্তি নির্মূল করার যে ভয়াবহ খেলা শেখ হাসিনার সরকার শুরু করেছে, এই খেলাতে তারাই ধ্বংস হয়ে যাবে।
গতকাল বিকেলে লালবাগস্থ কার্যালয়ে ইসলামী যুব মোর্চা কেন্দ্রীয় কমিটির নেতাদের সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় অন্যান্যের মাঝে উপস্থিত ছিলেন ইসলামী মোর্চার সভাপতি মাওলানা সাখাওয়াত হোসাইন, সহ-সভাপতি মাওলানা কাজী আজিজুল হক, মাওলানা সালমান, মাওলানা তাছলিম আহমদ, মাওলানা ইয়াকুব গাজী, মাওলানা মাকসুদুর রহমান, সেক্রেটারি মাওলানা জুনায়েদ গুলজার, মাওলানা মঞ্জুর মুজিব প্রমুখ।


Wednesday 21 September 2011

আজহারুলসহ ১৮৩ জামায়াত নেতা-কর্মীর ১৯ দিনের রিমান্ড


Tue 20 Sep 2011 6:49 PM BdST

rtnnঢাকা, ২০ সেপ্টেম্বর (আরটিএনএন ডটনেট)-- জামায়াতের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল আজহারুল ইসলাম, প্রচার সম্পাদক অধ্যাপক তসনীম আলম ও কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ইজ্জতউল্লাহ সহ ১৮৩ নেতা-কর্মীকে ১৯ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে।

পল্টন ও রমনা থানায় দায়ের করা পৃথক চারটি মামলায় পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার ঢাকা মূখ্যমহানগর আদালতের বিচারক সুনন্দ বাগচি শুনানি শেষে এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

এরআগে সোমবার কাকরাইল-বিজয়নগরে জামায়াত-পুলিশ সংঘর্ষের ঘটনায় আটক নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ৩৫ দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ।

পল্টন থানার উপ-পরিদর্শক কামারুজ্জামান পৃথক দুটি মামলায় ১০ দিন করে ২০ দিন এবং রমনা থানার উপ-পরিদর্শক অপর দুটি পৃথক মামলায় ১৫ দিনের রিমান্ড আবেদন করে।

বেলা তিনটার পর চারটি প্রিজন ভ্যানে করে গ্রেপ্তারকৃতদের আদালতে নেয়া হয়। কয়েদখানায় প্রায় দুই ঘণ্টা রাখার পর জামায়াতের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেলসহ তিন সিনিয়র নেতাকে আদালতে নেওয়া হয়।

আসামিপক্ষের আইনজীবীরা আদালতকে জানায়, সকল আসামিকে আদালতে উপস্থিত করা ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে রিমান্ড শুনানি আইনসম্মত নয়।

এ সময় আদালত প্রায় আধা ঘণ্টা মুলতবি করা হলে পুলিশ বেশ কয়েকজন আসামিকে আদালতে হাজির করে। কিন্তু ১৮৩ আসামির সবাইকে আদালতে হাজির না করায় শুনানি বর্জন করে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা।

আসামিপক্ষের আইনজীবী জানান, আইন অনুযায়ী রিমান্ড শুনানির আগে আসামিদের সবাইকে আদালতে হাজির করতে হয়। আদালত সন্তুষ্ট হয়ে রিমান্ড দেবে অথবা রিমান্ড না মঞ্জুর করবে।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, আদালতে ১৮৩ জন আসামি সবাইকে হাজির করা হয়নি। এছাড়া আদালতও আগে থেকেই রিমান্ড মঞ্জুর করার বিষয়টি স্থির করে রেখেছিলেন। এজন্য আসামিপক্ষে আইনজীবীরা শুনানি বর্জন করেছে।

এ সময় জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামকে ডিবি কার্যালয়ে অমানুষিক নির্যাতন করা হয় বলে তার আইনজীবীরা অভিযোগ করেন। নির্যাতনে পায়ে আঘাত পাওয়ায় তিনি হাঁটতে পারছিলেন না বলে তারা দাবি করেন।

তবে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, সব আইন মেনেই শুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে। এছাড়া সব আসামির উপস্থিতিতে আদালত চার মামলায় তাদের ১৯ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে।

এর আগে জামায়াত নেতাদের আদালতে নেয়ার আগে আশপাশের এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়। আদালত চত্বর থেকে সন্দেহভাজন লোকজনদের গ্রেপ্তার করতে দেখা যায় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের।

আরটিএনএন ডটনেট/এমএসআই/এসআই_ ২৩০৫ ঘ.

Tuesday 16 August 2011

ঈদ সামনে রেখে ভারত থেকে আসছে বিপুল পরিমাণ ফেনসিডিল ও ইয়াবা

জি. এম. বাবর আলী, বরিশাল
ঈদ সামনে রেখে ভারত থেকে অবৈধভাবে আনা হচ্ছে বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য। এরই মধ্যে নগরীতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে দুয়েকটি ছোটখাটো চালানের সঙ্গে ফেনসিডিলের বড় একটি চালানও আটক হয়েছে। চোরাইপথে ভারত থেকে বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য আসার ফলে এখন তা যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে এবং ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে মাদকসেবীর সংখ্যা। ফলে জনমনে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে। অবশ্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মাদকমুক্ত নগরী গড়তে সব শ্রেণীর মানুষের আন্তরিক সহযোগিতা প্রয়োজন বলে দাবি করে।
বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে ভারত থেকে চোরাইপথে বরিশালে বিপুল পরিমাণ ফেনসিডিল আনা হয়। মাঝে মাঝে র্যাব-পুলিশের হাতে ২/১ জন মাদক ব্যবসায়ী কিছু ফেনসিডিলসহ আটকও হয়। কিন্তু জামিনে মুক্তি পেয়ে আবারও শুরু করে মাদক ব্যবসা।
অপর দিকে মাদক ব্যবসার নেপথ্য গডফাদারের ভূমিকায় থাকা ব্যক্তিরা সাধারণত আটক হয় না। ফলে দিন দিন প্রসার হচ্ছে মাদক ব্যবসা। বাড়ছে মাদক বিক্রির স্থান ও মাদকসেবীর সংখ্যা।
এর আগে ভারত থেকে শুধু ফেনসিডিল আনা হলেও বর্তমানে এর সঙ্গে যোগ হয়েছে ইয়াবা। প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণ ইয়াবা আসছে বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। সূত্র জানায়, সাতক্ষীরা, বেনাপোল ও যশোর থেকে এসব মাদকদ্রব্য বরিশাল আনা হয়। আর ব্যবসায়ীদের নিরাপদ রুট হলো সড়কপথে যশোর, ফরিদপুর-টেকেরহাট হয়ে বরিশাল অথবা খুলনা-বাগেরহাট-পিরোজপুর হয়ে বরিশাল। আবার কখনও কখনও ঢাকা হয়ে লঞ্চযোগে বরিশালে আনা হয় এসব মাদকদ্রব্য।
সূত্র আরও জানায়, বর্তমানে বরিশালে এক বোতল ফেনসিডিল বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকায়। ঈদ ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে এর দামও বাড়তে থাকবে।
সাতক্ষীরা-বেনাপোল সীমান্ত এলাকা থেকে মাদক ব্যবসায়ীরা ২২০ টাকা দামে এ ফেনসিডিল ক্রয় করে। একইভাবে ওই এলাকা থেকে ১৬০ টাকা করে কেনা হয় ইয়াবা ট্যাবলেট। আর বরিশালে তা বিক্রি করা হয় ৩০০ থেকে সাড়ে ৩০০ টাকায়। নিরাপদে মাদকদ্রব্য বরিশালে পৌঁছতে ঘাটে ঘাটে বিভিন্ন সেক্টরে নিয়মিত অর্থ দিতে হয়। সে কারণে কয়েকগুণ দাম বেড়ে যায় বলে জানায় সূত্রটি।
ওই সূত্রমতে, বরিশালে ফেনসিডিলের বড় ধরনের ব্যবসায়ী রয়েছে ১০ থেকে ১৫ জন। আর সহজ ও নিরাপদ বহনযোগ্য হওয়ায় ইয়াবা বিক্রির সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীর সংখ্যা আরও অনেক বেশি বলে জানা যায়।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণে র্যাব নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করলেও পুলিশের ভূমিকা নিয়ে সবসময়ই প্রশ্ন উঠেছে। প্রায় প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও র্যাবের অভিযানে উদ্ধার হয় মাদকদ্রব্য। ঈদে অতিরিক্ত মাদকদ্রব্য চোরাইপথে আনা হচ্ছে বিষয়টি মাথায় রেখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তত্পর রয়েছে বলে দাবি করেছে সংশ্লিষ্ট মহল। গত মঙ্গলবার নগরীর লঞ্চঘাট এলাকা থেকে প্রায় ৬০০ বোতল ও কাশিপুর এলাকা থেকে ৩০ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করে পুলিশ। আগের দিন মাধবপাশা থেকে ৩০টি ইয়াবাসহ আটক করা হয় মনির নামের এক প্রভাষককে। র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে আটক মনির জানান, সাতক্ষীরা থেকে এ ইয়াবা ট্যাবলেট আনা হয়। গৌরনদীতে ছাত্রলীগের ছেলেরা মাদক ব্যবসায়ী যুবলীগ কর্মীদের কাছ থেকে উদ্ধার করে ফেনসিডিল। প্রতিদিনই বিভিন্ন এলাকা থেকে মাদকদ্রব্য উদ্ধারের ঘটনায় অনুমান করা যায়, কি পরিমাণ মাদকদ্রব্য আমদানি হচ্ছে বরিশালে। ফেনসিডিল ও ইয়াবার পাশাপাশি লক্ষ্মীপুরসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে আমদানি হচ্ছে বিপুল পরিমাণ গাঁজা।
কোতোয়ালি মডেল থানায় যোগদান করেই ওসি শাহেদুজ্জামান ফেনসিডিলের একটি বড় চালান আটক করতে সক্ষম হয়েছেন। গত বুধবার নগরীর লঞ্চঘাট এলাকায় অভিযান চালিয়ে একটি ট্রাক থেকে প্রায় ৬০০ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করেন তিনি। ওসি শাহেদ বলেন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণে পুলিশের যথার্থ ভূমিকা রয়েছে। এরই মধ্যে লঞ্চঘাট থেকে ফেনসিডিলের একটি বড় চালান আটক করা হয়েছে। এছাড়া নগরীর ৫/৭ জন বড় ধরনের মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে সন্দেহজনক ব্যক্তির গতিবিধির ওপর নজর রাখা হয়েছে।
বরিশালে সবচেয়ে বেশি মাদকদ্রব্য আটক হয় র্যাব-৮-এর অভিযানে। প্রায় প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও অভিযান চালিয়ে র্যাব উদ্ধার করে ফেনসিডিল, গাঁজা, ইয়াবা, হেরোইনসহ অন্যান্য মাদকদ্রব্য। চলতি বছর শুধু গাঁজাই উদ্ধার করা হয়েছে ৩ মণ ৭ কেজি। র্যাবের এসব অভিযান নিয়ে সিপিসি-১-এর অধিনায়ক মেজর রাশেদ বলেন, র্যাব-৮-এ যোগদান করার পর থেকে মাদকদ্রব্যের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে। যতদিন বরিশালে থাকব, ততদিন এ অভিযান অব্যাহত থাকবে। একই সঙ্গে তিনি পুরোপুরি মাদকমুক্ত নগরী গড়তে সব শ্রেণীর মানুষকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

Wednesday 10 August 2011

ঈদ সামনে রেখে দেশে চাঁদাবাজির মহোত্সব চলছে : ওবায়দুল কাদের

স্টাফ রিপোর্টার
ঈদকে সামনে রেখে দেশজুড়ে চাঁদাবাজির মহোত্সব চলছে বলে অভিযোগ করেছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, কাঁচাবাজার, ফুটপাত, লঞ্চঘাট থেকে শুরু করে সর্বত্রই ফ্রি-স্টাইলে চাঁদাবাজি চলছে। এ সত্যকে চাপা দিয়ে লাভ হবে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে এসব কঠোরহস্তে দমন করতে হবে।
গতকাল রাজধানীর মিরপুর বাঙলা কলেজে জাতীয় শোকদিবস উপলক্ষে কলেজ ছাত্রলীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। সভায় তিনি ছাত্রলীগের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডের কঠোর সমালোচনা করেন।
নিত্যদিনের বেড়ে চলা দুর্ভোগ ও সরকারের ভাবমর্যাদা নষ্ট করার পেছনে মন্ত্রী, ছাত্রলীগ ও প্রশাসনের ভূমিকাকে দায়ী করে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমাদের দক্ষ টিম লিডার আছেন। কিন্তু শক্তিশালী টিম নেই। জনদুর্ভোগ কমাতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সরকারের দায়িত্বশীলদের সমন্বয় নেই।
পুঁজিবাজারে বিক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীদের ফাটকাবাজ বলা বা রমজানে কম খেতে মন্ত্রীদের পরামর্শের সমালোচনা করে তিনি মন্ত্রীদের উদ্দেশে বলেন, ফ্রি-স্টাইলে কথা না বলে কাজের কাজ করুন। কম কথা বলে বেশি কাজ করুন। ভুক্তভোগী জনগণ এসবের সরব প্রতিবাদ না জানালেও আগামী নির্বাচনে নীরব ভোটে ক্ষমতাসীন দল এর জবাব পাবে। তিনি সরকারের ভাবমর্যাদা কতোটা খারাপ হয়ে উঠছে তা বিবেচনায় নিয়ে দায়িত্বশীলদের সতর্ক হওয়ার পরামর্শ
দেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, বিদ্যুতের উত্পাদন রেকর্ড ছাড়িয়েছে জানানো হলেও সাহরি ও ইফতারে লোডশেডিং কমেনি। সাম্প্রতিক সময়ে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের হাতে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের গণপিটুনি ও পুলিশের একের পর এক অঘটন সরকারের ভাবমর্যাদা ক্ষুণ্ন করছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
খালেদা বিচার ব্যবস্থাকে ধ্বংস করতে চায়
সকালে স্বাধীনতা চিকিত্সক পরিষদ (স্বাচিপ) আয়োজিত শোকদিবসের আলোচনায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা অভিযোগ করেছেন, বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া সুপরিকল্পিতভাবে বিচারব্যবস্থা ধ্বংস করতে চায়। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার কার্যকর, খালেদা জিয়ার বাড়ির রায়, তারেক-কোকোর মুদ্রা পাচার মামলা, যুদ্ধাপরাধ মামলা নিয়ে বেগম জিয়া উচ্চ আদালতের ওপর ক্ষুব্ধ। তাই তিনি উচ্চ আদালতকে সহ্য করতে পারেন না।
রাজধানীর জাতীয় জাদুঘরে অনুষ্ঠিত এ আলোচনা সভায় দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বঙ্গবন্ধু কখনও ক্ষমা করেননি। তাদের ক্ষমা করে এদেশে প্রতিষ্ঠিত করেছে জিয়াউর রহমান। তিনি কটাক্ষ করে বলেন, পাকিস্তানের প্রতি জিয়াউর রহমানের একটা ঋণ আছে। তার বাবা-মায়ের কবর পাকিস্তানে। তাই পাকিস্তানপ্রেমীদের তিনি খুব পছন্দ করতেন।
দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল আলম হানিফ বলেন, হাইকোর্ট ধ্বংস করার চেষ্টা থেকেই সেদিন আমিনীর নিজস্ব আইনজীবী থাকা সত্ত্বেও বিএনপির আইনজীবীরা আদালতে হট্টগোল পাকাতে গিয়েছিল।
তিনি প্রশ্ন রাখে, পাপিয়া উচ্চ আদালতের কোনো আইনজীবী না। তারপরও আদালতে তারা কেন গেলেন। বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া সুপরিকল্পিতভাবে বিচার ব্যবস্থাকে ধ্বংস করতে চায় বলেই তার দলের আইনজীবীরা সেদিন আদালতে গিয়ে হট্টগোল করে। মাহবুব-উল-হানিফ বলেন, মনে-প্রাণে খালেদা জিয়া এদেশের স্বাধীনতা চাননি। স্বাধীনতা চাইলে যে সংবিধানের জন্য ৩০ লাখ দেশপ্রেমিক শহীদ হয়েছে সেই সংবিধান ছুড়ে ফেলতে চাইতেন না।
স্বাচিপ সভাপতি স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. আ. ফ. ম. রুহুল হকের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি ডা. মাহমুদ হাছান, স্বাচিপের সাধারণ সম্পাদক ডা. ইকবাল আর্সালান, আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক ডা. বদিউজ্জামান ভুঁইয়া ডাব্লু। উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী মুজিবুর রহমান ফকির, বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত প্রমুখ।

নকল ও ভেজাল পণ্যে ঈদবাজার দখল : ক্রেতারা বিপাকে



ডেস্ক রিপোর্ট
এবার ঈদবাজার দখল করে নিয়েছে নকল ও ভেজাল পণ্য। চড়া দামে তা-ই কিনছেন ক্রেতারা। ঈদ সামনে রেখে বাজার ক্রমেই অস্থির হয়ে উঠছে। সময়ের গতির সঙ্গে বাড়ছে প্রতিটি পণ্যের দাম। একইসঙ্গে অসাধু ব্যবসায়ীরা নকল ও ভেজাল পণ্য দেদার বিক্রি করছেন। চড়া দামে ক্রেতারা এসব ভেজাল পণ্য কিনে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। বিস্তারিত খবর পাঠিয়েছেন আমাদের প্রতিনিধিরা :
মুক্তাগাছা : মুক্তাগাছায় গত রোববার নকল-ভেজাল সেমাই এবং ফল, শাকসবজিতে দেয়া বিষাক্ত কীটনাশক জব্দ করা ছাড়াও জড়িতদের কাছ থেকে জরিমানা আদায় করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। শহরের তামাকপট্টিতে বাবুল সাহা ও সোনার মদিনা সেমাই কারখানায় দুই লক্ষাধিক টাকার সেমাই জব্দ এবং ৫০ হাজার করে ১ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।
নীলফামারী : ঈদুল ফিতরে সেমাইয়ের কদর বাড়ে দ্বিগুণ। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সৈয়দপুর শহরের কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ভেজাল লাচ্ছা সেমাই তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।
রমজান মাস উপলক্ষে অনেক হোটেলেই বিভিন্ন রঙ মিশিয়ে তৈরি করা হচ্ছে ইফতার সামগ্রী। ভেজালবিরোধী অভিযানে প্রতিবছর তাদের হাজার হাজার টাকা জরিমানা হওয়ায় এবার তারা অনেকটাই সচেতন। শহর থেকে ২-৩ কিলোমিটার দূরে আত্মীয়-স্বজন এবং বন্ধুবান্ধবের বাড়ি ভাড়া নিয়ে অত্যন্ত গোপনে তৈরি করা হচ্ছে নিম্নমানের ভেজাল লাচ্ছা সেমাই। অস্বাস্থ্যকর নোংরা পরিবেশে বর্তমানে শহরে তৈরি হচ্ছে লাচ্ছা সেমাই। পরে এগুলো সুন্দর ঝকঝকে পলিথিন, কাগজ বা অন্য কোনো প্যাকেটে ভরে তাতে ঢাকা, রাজশাহীসহ দেশের অনেক বড় বড় নামকরা কোম্পানির নাম দেয়া হচ্ছে।
বানারীপাড়া : বানারীপাড়ায় বন্দরবাজারে চিনির সঙ্কট ও নিত্যপণ্যের অগ্নিমূল্য নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবুল কালাম আজাদ ও ওসি আবদুর রব হাওলাদার বাজারদর মনিটরিং করে চলে যাওয়ার পর আগের নিয়মেই চলছেন ব্যবসায়ীরা। গত রোববার সকাল ১০টায় তারা বন্দরবাজার ব্যবসায়ীদের কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি না করে সরকারের বেঁধে দেয়া নির্ধারিত মূল্যে পণ্য বিক্রি করার আহ্বান জানান। ওইদিন প্রশাসন চলে যাওয়ার পরই ব্যবসায়ীরা তাদের পুরনো নিয়মেই পণ্য বিক্রি করছেন বলে একাধিক ক্রেতা জানান। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ জানান, সতর্ক করে দেয়ার পর কোনো ব্যবসায়ী অসাধুতা করলে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
শরণখোলা (বাগেরহাট) প্রতিনিধি : বাগেরহাটের শরণখোলায় রমজান মাসে নিত্যপণ্যের দাম লাগামহীনভাবে বেড়ে চলেছে। চালের বাজার কিছুটা নিয়ন্ত্রণে থাকলেও রোজার শুরু থেকেই অন্যসব জিনিসের দাম কেজিপ্রতি দুই টাকা থেকে ১৫ টাকা বাড়িয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ফলে নিম্নআয়ের মানুষ ও শ্রমজীবীরা পড়েছেন সীমাহীন দুর্ভোগে। বিশেষ করে কাঁচামরিচ ৪০ টাকা থেকে হয়েছে ১০০ টাকা। পাইকারি মোকামে মূল্যবৃদ্ধির অজুহাত দেখিয়ে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে অতিরিক্ত মুনাফা। ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ তথ্য।
বেগমগঞ্জ (নোয়াখালী) : সরকারের বেঁধে দেয়া বাজারদর মুখ থুবড়ে পড়েছে নোয়াখালীতে। জেলার প্রধান বাণিজ্যিক শহর চৌমুহনীসহ প্রত্যন্ত অঞ্চলের কোথাও তা মানা হচ্ছে না। বাজার মনিটরিং কাজে প্রশাসনিক তদারকির কথা থাকলেও তা দেখা যাচ্ছে না। ফলে অসাধু ব্যবসায়ীরা বেপরোয়া হয়ে উঠছেন। দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিতে মানুষ দিশেহারা।
সরেজমিনে দেখা যায়, জেলার প্রধান বাণিজ্যিক শহর চৌমুহনীতে চিনি, ছোলা, সোয়াবিন, পেঁয়াজ, রসুন, মোসুর ডাল ও মসলা আইটেমসহ সব পণ্যের দাম লাগামহীনভাবেই বেড়ে চলছে।
অপরদিকে মাছ, মাংস, ফল-মূল, বেকারি পণ্য হোটেলের খাবারসহ সব জিনিস ভেজালে সয়লাব। মাছ ও ফল-মূলে রয়েছে বিষাক্ত ফরমালিন, মহিষের মাংসকে গরুর মাংস বলে বিক্রি হচ্ছে। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে নিম্নমানের ও পচা-বাসি খাওয়ার পরিবেশন করছে হোটেলগুলো। ক্ষতিকর ভেজাল ও বিভিন্ন রঙ মিশিয়ে তৈরি করা হচ্ছে ইফতার।
এ নিয়ে জানতে চাইলে চৌমুহনী সাধারণ ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ জানান, খোদ সরকারই বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খোন্দকার নুরুল হকের সঙ্গে আলাপ করলে তিনি আমার দেশকে জানান, খবর পেয়েছি পণ্যের অধিক দাম নেয়া হচ্ছে। আগামী দু-এক দিনের মধ্যে উপজেলা প্রশাসন বাজার তদারকি করবে।
বগুড়া : বগুড়ার ধুনটে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) দুই ডিলারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ডিলাররা মালামাল উত্তোলন না করায় ইউএনও তাদের ডিলারশিপ বাতিল করে নতুন ডিলার নিয়োগের জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে পত্র পাঠিয়েছেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ভোক্তাদের মাঝে ন্যায্য মূল্যে টিসিবির পণ্য বিক্রির জন্য দুই ডিলার নিয়োগ দেয়া হয়। এরা হলো মেসার্স হৃদয় অন্তর ট্রেডার্সের আতিকুল ইসলাম শামীম ও মেসার্স উত্তরবঙ্গ ট্রেডিং এজেন্সির রেজাউল ইসলাম রেজা। প্রত্যেক ডিলারের অনুকূলে ২০১১-১২ অর্থবছরে প্রথম কিস্তিতে চিনি ২ হাজার কেজি, সয়াবিন তেল ১ হাজার ২০০ লিটার, মসুর ডাল (দেশি) ১ হাজার কেজি, ছোলা ৫০০ কেজি, খেজুর (জাহেদি) ২৫০ কেজি ও খেজুর (সায়ের) ২৫০ কেজি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ওই পরিমাণ পণ্যের মূল্য বাবদ ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৮৫০ টাকার ডিডি/পে-অর্ডার টিসিবির রাজশাহী আঞ্চলিক কার্যালয়ের অনুকূলে জমা দিয়ে গত ৪ আগস্টের মধ্যে মালামাল উত্তোলনের সময় ছিল। বিভিন্ন পণ্যের মধ্যে চিনি ৫৮ টাকা, সয়াবিন তেল ১০২ টাকা (লিটারপ্রতি), মসুর ডাল ৬৮, ছোলা ৫৮, জাহেদী খেজুর ৫৫ ও সায়ের খেজুর ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রয়মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু ওই দুই ডিলার তাদের অনুকূলে বরাদ্দ করায় মালামাল উত্তোলন করেননি। ভোক্তাদের মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তদন্ত সাপেক্ষে দুই ডিলারের নিয়োগ বাতিলসহ নতুন ডিলার নিয়োগের জন্য ৭ আগস্ট জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে পত্র পাঠিয়েছেন।
ডিলার আতিকুল ইসলাম শামীম বলেন, টিসিবির বরাদ্দকৃত মালামাল অত্যন্ত নিম্নমানের হওয়ায় তা উত্তোলন করা হয়নি। নিম্নমানের পণ্যসামগ্রী লোকজন কিনতে চায় না।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আতাউল গনি বলেন, জনগণের মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে বিষয়টি তদন্ত করে দেখা গেছে ডিলাররা টিসিবির মালামাল উত্তোলন করেননি।
টিসিবির রাজশাহী আঞ্চলিক প্রধান জহুরুল ইসলাম বলেন, বগুড়ার অন্য ডিলাররা মালামাল উত্তোলন করে ভোক্তাদের মধ্যে ন্যায্য মূল্যে বিক্রি করছেন। কিন্তু আজও কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি

ব্যর্থতার দায় নিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ করা উচিত : চরমোনাই পীর

স্টাফ রিপোর্টার
ইসলামী আন্দোলনের আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের কশাঘাতে জনজীবন চরম দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। জিনিসের মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় মানুষ অতিষ্ঠ। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। তিনি বলেন, বাণিজ্যমন্ত্রী সব ক্ষেত্রে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন। ব্যর্থতার দায়ভার নিয়ে তাকে পদত্যাগ করা উচিত। গতকাল এক বিবৃতিতে তিনি আরও বলেন, বাণিজ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের পরই জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যায়। বাণিজ্যমন্ত্রী কম খাওয়ার নসিহত করেন অথচ তিনি কি কম খান? জিনিসপত্রের দাম সরকারের মন্ত্রী-এমপিদের আয়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ানো হয়। কিন্তু নিম্ন ও মধ্যবিত্ত লোকের কথা কেউ চিন্তা করেন না।
বর্তমানে জিনিসপত্রের দাম যে হারে বেড়েছে, তাতে মানুষ না খেয়ে ও অর্ধাহারে থাকা ছাড়া কোনো উপায় নেই। দেশের সাধারণ মানুষের ওপর নির্ভর করে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম নির্ধারণ করা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন তিনি।

Monday 11 July 2011

পুলিশ ও র্যাবের পাহারায় আ’লীগ ক্যাডারদের হামলা : দাড়িটুপি দেখলেই পিটুনি, বাড়ি বাড়ি তল্লাশি











স্টাফ রিপোর্টার
পুলিশ ও র্যাবের পাহারায় গতকাল ওলামা-মাশায়েখ ও মাদরাসা ছাত্রদের ওপর সশস্ত্র হামলা চালিয়ে রক্ত ঝরিয়েছে সরকারি দলের ক্যাডাররা। নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ওলামা-মাশায়েখরা যখন আল্লাহ আল্লাহ জিকিরে মিছিল করছিলেন ঠিক তখনি সকাল সোয়া ৯টায় পুলিশ ও র্যাব সঙ্গে নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের ক্যাডাররা। মুহূর্তের মধ্যে শুরু হয় দৌড়াদৌড়ি। সরকারি দলের ক্যাডাররা ২৮ অক্টোবরের লগি-বৈঠা দিয়ে পিটিয়ে মানুষ হত্যার মতো লাঠিপেটা করে অনেককে অর্ধমৃত অবস্থায় রাস্তার পাশে ফেলে রাখে, কারও মাথা ফেটে রক্ত গড়িয়ে পড়ছিল। পিচঢালা কালো রাস্তার অনেক স্থান তৌহিদী জনতার রক্তে লালে লাল হয়ে যায়। মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিন থেকে শুরু করে মাদরাসা শিক্ষক কেউ রেহাই পাননি এ নৃশংসতা থেকে। আশপাশের বাড়ি ও দোকানে ঢুকে দাড়িটুপিধারী লোকদের বেধড়ক পেটায় তারা। ময়লার সুয়ারেজ-নর্দমায় ঝাঁপ দিয়ে কিংবা ঝোপঝাড়ে পালিয়েও রেহাই পাননি তারা। তাদের ধরে এনে বেধড়ক পিটুনির পর পুলিশের হাতে তুলে দেয় সরকারি দলের ক্যাডাররা। হামলার পর ইন্টারপোলের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী ও স্থানীয় শ্রমিক লীগ নেতা নূর হোসেন বাহিনীর ক্যাডাররা পুলিশের সামনেই লাঠি উঁচিয়ে উল্লাস প্রকাশ করে। তবে এ হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘শান্তিকামী জনগণ হরতালকারীদের হটিয়ে দিয়েছে। সাধারণ মানুষ বিশৃঙ্খলা চায় না। তাই তারা পিকেটারদের রাজপথ থেকে তাড়িয়ে দিয়েছেন।’ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সামনে সশস্ত্র ব্যক্তিরা কারও ওপর হামলা চালালে সেটা শান্তির জন্য ইতিবাচক কিনা সাংবাদিকরা এমন প্রশ্ন করলে এ পুলিশ কর্মকর্তা ক্ষেপে যান। তিনি বলেন, ‘জনগণ যেটা চেয়েছে, সেটা করেছে। এটা নিয়ে আপনারা বাড়াবাড়ি করছেন কেন?’সংবিধান থেকে আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস তুলে দিয়ে ধর্মনিরপেক্ষতা পুনঃস্থাপনের প্রতিবাদ এবং কোরআনবিরোধী শিক্ষা ও নারীনীতি বাতিলসহ বিভিন্ন দাবিতে ইসলামী ও সমমনা ১২টি দল সারাদেশে গতকাল সকাল ৬টা থেকে লাগাতার ৩০ ঘণ্টার হরতাল পালন করছে। একই দাবিতে পৃথকভাবে গতকাল সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালন করে চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। হরতাল সমর্থকদের অভিযোগ, পুলিশের প্রকাশ্য ছত্রছায়ায় এলাকার ইন্টারপোলের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী ও ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়ন সিংড়াইল শাখার সভাপতি নূর হোসেন বাহিনীর ক্যাডাররা এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়েছে। পুলিশ সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে ৬ জনকে গ্রেফতার করেছে। গতকাল সকাল ৬টা থেকে হরতাল সমর্থকরা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে। চরমোনাই পীর সমর্থিত ইসলামী আন্দোলনের কয়েক হাজার নেতাকর্মী প্রথমে রাস্তায় জিকির মিছিল করলেও পুলিশি বাধা পেয়ে সড়কে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করেন। সমাবেশ শেষে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে হরতাল সমর্থকরা চিটাগাং রোডের দিকে অগ্রসর হয়। এদিকে চিটাগাং রোড এলাকায় যুবলীগ ও ছাত্রলীগের কয়েকশ’ নেতাকর্মী হরতালবিরোধী মিছিল বের করে। পৌনে ৯টার দিকে ইসলামিক দলগুলোর মিছিল চিটাগাং রোডে পৌঁছলে হরতালবিরোধী মিছিলের মুখোমুখি হয়। এ সময় দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। প্রথমে সরকারি দলের ক্যাডাররা ধাওয়া খেয়ে পালিয়ে যায়। ওলামা-মাশায়েখরা আবার রাস্তায় বসে জিকির-মিছিল করছিলেন। ঠিক তখনি পুলিশ টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ আর স্থানীয় সরকারদলীয় চিহ্নিত সন্ত্রাসী নূর হোসেন বাহিনীর ক্যাডাররা লাঠিসোঁটা ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। সামনে লাঠি, ধারালো অস্ত্রসহ সরকারদলীয় ক্যাডাররা আর পেছনে কয়েকশ’ পুলিশের টিয়ারশেল নিক্ষেপে হরতাল সমর্থকরা পিছু হটে। হামলার তোপে টিকতে না পেরে তারা সড়ক ছেড়ে আশপাশ এলাকার বাড়ি ও ঝোপঝাড়ে গিয়ে আশ্রয় নেয়। অনেকে পাশের ময়লার সুয়ারেজে লাফিয়ে পড়ে। তাদের ওপরও হামলা চলতে থাকে। শ্রমিকলীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ ক্যাডাররা বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে হামলা চালায়। টিনশেড ঘরে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও লাঠির আঘাতের শব্দে শিশু-নারীরা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। পুরুষ সদস্যরা বাইরে বের হলে দাড়িটুপিধারীদের ওপর হামলা চালায় সশস্ত্র ক্যাডাররা। ঝোপঝাড়, ঘর, অলিগলি থেকে দাড়িটুপিধারীদের ধরে এনে গণপিটুনি দেয় তারা। ২৮ অক্টোবরের মতো একজনের ওপর ১০/১২ জন মিলে হামলা চালানো হয়। রক্তাক্ত মাদরাস ছাত্র ও শিক্ষকদের পুলিশ ও র্যাবের হাতে তুলে দেয় সরকারি দলের ক্যাডাররা। পুলিশ ও সরকারি দলের ক্যাডাররা এলোপাতাড়ি গুলি চালালে তোফায়েল (২২) নামের এক যুবক গুলিবিদ্ধ হন। তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। তোফায়েল মাদানীনগর মাদরাসায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পাঞ্জাবি তৈরির দোকানে কাজ করেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার এক অধিবাসী বলেন, ‘পুলিশ ও সাদা পোশাকধারী ব্যক্তি লাঠি হাতে হামলা চালায়। আধাঘন্টা আগে মূল সড়কে দুটি মিছিল দেখে এসেছি। বাসায় ফিরে খেতে বসেছি। এরমধ্যে মানুষের চিত্কার শুনে বাইরে এসে দেখি কিছু হুজুর দৌড়ে বাসার দিকে ঢুকছেন। পেছনে লাঠি নিয়ে তাদের তাড়ানো হচ্ছে। দাড়িটুপিধারী কয়েকজনকে ধরে নিয়ে গণপিটুনি দিয়েছে তারা।

Saturday 9 July 2011

কাল থেকে দেশব্যাপী ৩০ ঘণ্টার হরতাল : ইমান রক্ষার দাবিতে রাজপথে সক্রিয় থাকার ঘোষণা ১২ দলের












রকিবুল হক
আগামীকাল থেকে সারাদেশে একটানা ৩০ ঘণ্টার হরতাল শুরু হচ্ছে। সংবিধান থেকে আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস তুলে দিয়ে ধর্মনিরপেক্ষতা পুনঃস্থাপনের প্রতিবাদ, ইসলামবিরোধী শিক্ষানীতি এবং কোরআনবিরোধী নারীনীতি বাতিলসহ বিভিন্ন দাবিতে ইসলামী ও সমমনা ১২টি দল কাল সকাল ৬টা থেকে ১১ জুলাই দুপুর ১২টা পর্যন্ত এই হরতালের ডাক দেয়। একই দাবিতে পৃথকভাবে ১০ তারিখে সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালন করবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। ইমান রক্ষার দাবিতে ঘোষিত এই হরতালে সক্রিয় থাকার ঘোষণা দিয়েছে সংশ্লিষ্ট দলগুলো। যে কোনো মূল্যে কর্মসূচি সফল করতে দেশব্যাপী ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে তারা। এদিকে বিএনপি-জামায়াতসহ চারদলীয় জোট ও সমমনা অন্য দলগুলোও ৩০ ঘণ্টার এই হরতালে পূর্ণ সমর্থন দিয়েছে।গত ৩০ জুন আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস বাদ দিয়ে ধর্মনিরপেক্ষতা পুনঃস্থাপন সংবলিত সংবিধান জাতীয় সংসদে পাস হওয়ার প্রতিবাদে ইসলামী এবং সমমনা ১২টি দল এক বৈঠক করে ১০ ও ১১ জুলাই ৩০ ঘণ্টার হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করে। দলগুলো হচ্ছে—বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, নেজামে ইসলাম পার্টি, ইসলামী ঐক্য আন্দোলন, সম্মিলিত উলামা-মাশায়েখ পরিষদ, জাগপা, ইসলামিক পার্টি, মুসলিম লীগ, বাংলাদেশ ন্যাপ, ন্যাপ ভাসানী, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও এনডিপি। এর আগে একই ইস্যুতে ১০ জুলাই দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ঘোষণা করে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। এদিকে গতকাল পৃথক সংবাদ সম্মেলন করে ইসলামী ও সমমনা দলগুলোর ডাকা ৩০ ঘণ্টার হরতালের প্রতি পূর্ণ সমর্থন ঘোষণা করেছে বিএনপি-জামায়াতসহ চারদলীয় জোট এবং সমমনা বিভিন্ন দল। ১২ দলের হরতালে আরও সমর্থন দিয়েছে—বাংলাদেশ ওলামা পরিষদ, জাতীয় ফতোয়া বোর্ড, আহকামে শরিয়াহ হেফাজত কমিটিসহ বেশকিছু ধর্মীয় সংগঠন।৩০ ঘণ্টার এই হরতাল সফলের জন্য সংশ্লিষ্ট দলগুলো এরই মধ্যে মিছিল-সমাবেশ, পোস্টারিং, হ্যান্ডবিল বিলিসহ ব্যাপক কর্মসূচি পালন করেছে। গতকাল হরতালের সমর্থনে রাজধানীতে মিছিল-সমাবেশ এবং প্রচারপত্র বিলি করেছে দলগুলো। পুলিশি অবস্থান উপেক্ষা করে হরতালে সক্রিয় থাকার জন্য কেন্দ্রীয়ভাবে রাজধানীতে দফায় দফায় বৈঠক করছেন নেতারা। রাজপথে পিকেটিং ও মিছিল-সমাবেশ করার কৌশল নেয়া হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।হরতালের প্রস্তুতি বিষয়ে ১২ দলের সমন্বয়কারী ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমির মুফতি আবদুর রব ইউসুফী বলেন, হরতাল সফলের জন্য জনসচেতনতা সৃষ্টিতে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালাচ্ছি। সারাদেশে সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোর মধ্যে সমন্বয় করছি। ঢাকায় নেতাদের নিয়ে কলাকৌশল নির্ধারণে বার বার বৈঠক করা হচ্ছে। হরতালে রাজধানীসহ সারাদেশে পিকেটিং করা হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ঢাকায় পিকেটিংয়ের জন্য থানায় থানায় দায়িত্ব ও স্পট ভাগ করে দেয়া হয়েছে। কিছু জায়গায় সম্মিলিতভাবে, আবার কোথাও আলাদাভাবে দলগুলো পিকেটিং ও মিছিল করবে। তিনি বলেন, আমরা হরতালে তেমন কঠোর হতে না পারলেও সরকার যদি আমাদের সঙ্গে অন্য দলগুলোর মতো আচরণ করে বা হরতালে বাধা দেয়, তাহলে আন্দোলন কঠিন রূপ ধারণ করতে পারে। এক্ষেত্রে হরতাল আরও বাড়িয়ে দেয়া হবে বলেও হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন তিনি। সম্মিলিত উলামা-মাশায়েখ পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক ড. খলিলুর রহমান মাদানী বলেন, হরতালে গোটা রাজধানীজুড়ে পিকেটিং করা হবে। ১২ দলের পক্ষ থেকে আলাদাভাবে এবং কিছু জায়গায় সমন্বিতভাবে এই পিকেটিং করা হবে। যেভাবেই হোক, দাবি আদায়ে আরও সক্রিয় আন্দোলন করার ইঙ্গিত দেন তিনি।ইসলামী আন্দোলনের ঢাকা মহানগর সভাপতি অধ্যাপক এটিএম হেমায়েত উদ্দিন বলেন, আমরা হরতালে অভ্যস্ত নই। তবুও এ সরকারের ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে ইমানের দাবিতে হরতাল ডাকতে বাধ্য হয়েছি। তিনি বলেন, চরমোনাই পীরের ঘোষণা অনুযায়ী গণতান্ত্রিক অধিকার হিসেবে আমরা ১০ তারিখে শান্তিপূর্ণ সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালন করব। এজন্য সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সারাদেশে সংগঠনের নেতাকর্মীদের সংগঠিত করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। হরতাল উপলক্ষে রাজধানীসহ সারাদেশে মিছিল-সমাবেশ, হ্যান্ডবিল ও পোস্টার দিয়ে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। হরতাল সফলে কাল রাজপথে সাংগঠনিক শক্তি প্রয়োগ এবং শক্ত পিকেটিং করার কথা জানান তিনি। এর আগে তিনি এক সমাবেশে বলেছিলেন, ১০ তারিখের হরতালে চরমোনাই পীরের শক্তি ও ভক্তদের পরীক্ষা হবে। হরতালের মাধ্যমে সারা দেশ অচল করে দেয়া হবে। এতে সরকার বাধা দিলে প্রয়োজনে লাগাতার হরতাল দেয়ার হুমকি দেন তিনি