Wednesday 10 August 2011

নকল ও ভেজাল পণ্যে ঈদবাজার দখল : ক্রেতারা বিপাকে



ডেস্ক রিপোর্ট
এবার ঈদবাজার দখল করে নিয়েছে নকল ও ভেজাল পণ্য। চড়া দামে তা-ই কিনছেন ক্রেতারা। ঈদ সামনে রেখে বাজার ক্রমেই অস্থির হয়ে উঠছে। সময়ের গতির সঙ্গে বাড়ছে প্রতিটি পণ্যের দাম। একইসঙ্গে অসাধু ব্যবসায়ীরা নকল ও ভেজাল পণ্য দেদার বিক্রি করছেন। চড়া দামে ক্রেতারা এসব ভেজাল পণ্য কিনে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। বিস্তারিত খবর পাঠিয়েছেন আমাদের প্রতিনিধিরা :
মুক্তাগাছা : মুক্তাগাছায় গত রোববার নকল-ভেজাল সেমাই এবং ফল, শাকসবজিতে দেয়া বিষাক্ত কীটনাশক জব্দ করা ছাড়াও জড়িতদের কাছ থেকে জরিমানা আদায় করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। শহরের তামাকপট্টিতে বাবুল সাহা ও সোনার মদিনা সেমাই কারখানায় দুই লক্ষাধিক টাকার সেমাই জব্দ এবং ৫০ হাজার করে ১ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।
নীলফামারী : ঈদুল ফিতরে সেমাইয়ের কদর বাড়ে দ্বিগুণ। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সৈয়দপুর শহরের কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ভেজাল লাচ্ছা সেমাই তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।
রমজান মাস উপলক্ষে অনেক হোটেলেই বিভিন্ন রঙ মিশিয়ে তৈরি করা হচ্ছে ইফতার সামগ্রী। ভেজালবিরোধী অভিযানে প্রতিবছর তাদের হাজার হাজার টাকা জরিমানা হওয়ায় এবার তারা অনেকটাই সচেতন। শহর থেকে ২-৩ কিলোমিটার দূরে আত্মীয়-স্বজন এবং বন্ধুবান্ধবের বাড়ি ভাড়া নিয়ে অত্যন্ত গোপনে তৈরি করা হচ্ছে নিম্নমানের ভেজাল লাচ্ছা সেমাই। অস্বাস্থ্যকর নোংরা পরিবেশে বর্তমানে শহরে তৈরি হচ্ছে লাচ্ছা সেমাই। পরে এগুলো সুন্দর ঝকঝকে পলিথিন, কাগজ বা অন্য কোনো প্যাকেটে ভরে তাতে ঢাকা, রাজশাহীসহ দেশের অনেক বড় বড় নামকরা কোম্পানির নাম দেয়া হচ্ছে।
বানারীপাড়া : বানারীপাড়ায় বন্দরবাজারে চিনির সঙ্কট ও নিত্যপণ্যের অগ্নিমূল্য নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবুল কালাম আজাদ ও ওসি আবদুর রব হাওলাদার বাজারদর মনিটরিং করে চলে যাওয়ার পর আগের নিয়মেই চলছেন ব্যবসায়ীরা। গত রোববার সকাল ১০টায় তারা বন্দরবাজার ব্যবসায়ীদের কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি না করে সরকারের বেঁধে দেয়া নির্ধারিত মূল্যে পণ্য বিক্রি করার আহ্বান জানান। ওইদিন প্রশাসন চলে যাওয়ার পরই ব্যবসায়ীরা তাদের পুরনো নিয়মেই পণ্য বিক্রি করছেন বলে একাধিক ক্রেতা জানান। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ জানান, সতর্ক করে দেয়ার পর কোনো ব্যবসায়ী অসাধুতা করলে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
শরণখোলা (বাগেরহাট) প্রতিনিধি : বাগেরহাটের শরণখোলায় রমজান মাসে নিত্যপণ্যের দাম লাগামহীনভাবে বেড়ে চলেছে। চালের বাজার কিছুটা নিয়ন্ত্রণে থাকলেও রোজার শুরু থেকেই অন্যসব জিনিসের দাম কেজিপ্রতি দুই টাকা থেকে ১৫ টাকা বাড়িয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ফলে নিম্নআয়ের মানুষ ও শ্রমজীবীরা পড়েছেন সীমাহীন দুর্ভোগে। বিশেষ করে কাঁচামরিচ ৪০ টাকা থেকে হয়েছে ১০০ টাকা। পাইকারি মোকামে মূল্যবৃদ্ধির অজুহাত দেখিয়ে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে অতিরিক্ত মুনাফা। ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ তথ্য।
বেগমগঞ্জ (নোয়াখালী) : সরকারের বেঁধে দেয়া বাজারদর মুখ থুবড়ে পড়েছে নোয়াখালীতে। জেলার প্রধান বাণিজ্যিক শহর চৌমুহনীসহ প্রত্যন্ত অঞ্চলের কোথাও তা মানা হচ্ছে না। বাজার মনিটরিং কাজে প্রশাসনিক তদারকির কথা থাকলেও তা দেখা যাচ্ছে না। ফলে অসাধু ব্যবসায়ীরা বেপরোয়া হয়ে উঠছেন। দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিতে মানুষ দিশেহারা।
সরেজমিনে দেখা যায়, জেলার প্রধান বাণিজ্যিক শহর চৌমুহনীতে চিনি, ছোলা, সোয়াবিন, পেঁয়াজ, রসুন, মোসুর ডাল ও মসলা আইটেমসহ সব পণ্যের দাম লাগামহীনভাবেই বেড়ে চলছে।
অপরদিকে মাছ, মাংস, ফল-মূল, বেকারি পণ্য হোটেলের খাবারসহ সব জিনিস ভেজালে সয়লাব। মাছ ও ফল-মূলে রয়েছে বিষাক্ত ফরমালিন, মহিষের মাংসকে গরুর মাংস বলে বিক্রি হচ্ছে। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে নিম্নমানের ও পচা-বাসি খাওয়ার পরিবেশন করছে হোটেলগুলো। ক্ষতিকর ভেজাল ও বিভিন্ন রঙ মিশিয়ে তৈরি করা হচ্ছে ইফতার।
এ নিয়ে জানতে চাইলে চৌমুহনী সাধারণ ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ জানান, খোদ সরকারই বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খোন্দকার নুরুল হকের সঙ্গে আলাপ করলে তিনি আমার দেশকে জানান, খবর পেয়েছি পণ্যের অধিক দাম নেয়া হচ্ছে। আগামী দু-এক দিনের মধ্যে উপজেলা প্রশাসন বাজার তদারকি করবে।
বগুড়া : বগুড়ার ধুনটে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) দুই ডিলারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ডিলাররা মালামাল উত্তোলন না করায় ইউএনও তাদের ডিলারশিপ বাতিল করে নতুন ডিলার নিয়োগের জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে পত্র পাঠিয়েছেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ভোক্তাদের মাঝে ন্যায্য মূল্যে টিসিবির পণ্য বিক্রির জন্য দুই ডিলার নিয়োগ দেয়া হয়। এরা হলো মেসার্স হৃদয় অন্তর ট্রেডার্সের আতিকুল ইসলাম শামীম ও মেসার্স উত্তরবঙ্গ ট্রেডিং এজেন্সির রেজাউল ইসলাম রেজা। প্রত্যেক ডিলারের অনুকূলে ২০১১-১২ অর্থবছরে প্রথম কিস্তিতে চিনি ২ হাজার কেজি, সয়াবিন তেল ১ হাজার ২০০ লিটার, মসুর ডাল (দেশি) ১ হাজার কেজি, ছোলা ৫০০ কেজি, খেজুর (জাহেদি) ২৫০ কেজি ও খেজুর (সায়ের) ২৫০ কেজি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ওই পরিমাণ পণ্যের মূল্য বাবদ ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৮৫০ টাকার ডিডি/পে-অর্ডার টিসিবির রাজশাহী আঞ্চলিক কার্যালয়ের অনুকূলে জমা দিয়ে গত ৪ আগস্টের মধ্যে মালামাল উত্তোলনের সময় ছিল। বিভিন্ন পণ্যের মধ্যে চিনি ৫৮ টাকা, সয়াবিন তেল ১০২ টাকা (লিটারপ্রতি), মসুর ডাল ৬৮, ছোলা ৫৮, জাহেদী খেজুর ৫৫ ও সায়ের খেজুর ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রয়মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু ওই দুই ডিলার তাদের অনুকূলে বরাদ্দ করায় মালামাল উত্তোলন করেননি। ভোক্তাদের মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তদন্ত সাপেক্ষে দুই ডিলারের নিয়োগ বাতিলসহ নতুন ডিলার নিয়োগের জন্য ৭ আগস্ট জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে পত্র পাঠিয়েছেন।
ডিলার আতিকুল ইসলাম শামীম বলেন, টিসিবির বরাদ্দকৃত মালামাল অত্যন্ত নিম্নমানের হওয়ায় তা উত্তোলন করা হয়নি। নিম্নমানের পণ্যসামগ্রী লোকজন কিনতে চায় না।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আতাউল গনি বলেন, জনগণের মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে বিষয়টি তদন্ত করে দেখা গেছে ডিলাররা টিসিবির মালামাল উত্তোলন করেননি।
টিসিবির রাজশাহী আঞ্চলিক প্রধান জহুরুল ইসলাম বলেন, বগুড়ার অন্য ডিলাররা মালামাল উত্তোলন করে ভোক্তাদের মধ্যে ন্যায্য মূল্যে বিক্রি করছেন। কিন্তু আজও কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি

No comments:

Post a Comment