Tuesday 16 August 2011

ঈদ সামনে রেখে ভারত থেকে আসছে বিপুল পরিমাণ ফেনসিডিল ও ইয়াবা

জি. এম. বাবর আলী, বরিশাল
ঈদ সামনে রেখে ভারত থেকে অবৈধভাবে আনা হচ্ছে বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য। এরই মধ্যে নগরীতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে দুয়েকটি ছোটখাটো চালানের সঙ্গে ফেনসিডিলের বড় একটি চালানও আটক হয়েছে। চোরাইপথে ভারত থেকে বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য আসার ফলে এখন তা যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে এবং ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে মাদকসেবীর সংখ্যা। ফলে জনমনে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে। অবশ্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মাদকমুক্ত নগরী গড়তে সব শ্রেণীর মানুষের আন্তরিক সহযোগিতা প্রয়োজন বলে দাবি করে।
বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে ভারত থেকে চোরাইপথে বরিশালে বিপুল পরিমাণ ফেনসিডিল আনা হয়। মাঝে মাঝে র্যাব-পুলিশের হাতে ২/১ জন মাদক ব্যবসায়ী কিছু ফেনসিডিলসহ আটকও হয়। কিন্তু জামিনে মুক্তি পেয়ে আবারও শুরু করে মাদক ব্যবসা।
অপর দিকে মাদক ব্যবসার নেপথ্য গডফাদারের ভূমিকায় থাকা ব্যক্তিরা সাধারণত আটক হয় না। ফলে দিন দিন প্রসার হচ্ছে মাদক ব্যবসা। বাড়ছে মাদক বিক্রির স্থান ও মাদকসেবীর সংখ্যা।
এর আগে ভারত থেকে শুধু ফেনসিডিল আনা হলেও বর্তমানে এর সঙ্গে যোগ হয়েছে ইয়াবা। প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণ ইয়াবা আসছে বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। সূত্র জানায়, সাতক্ষীরা, বেনাপোল ও যশোর থেকে এসব মাদকদ্রব্য বরিশাল আনা হয়। আর ব্যবসায়ীদের নিরাপদ রুট হলো সড়কপথে যশোর, ফরিদপুর-টেকেরহাট হয়ে বরিশাল অথবা খুলনা-বাগেরহাট-পিরোজপুর হয়ে বরিশাল। আবার কখনও কখনও ঢাকা হয়ে লঞ্চযোগে বরিশালে আনা হয় এসব মাদকদ্রব্য।
সূত্র আরও জানায়, বর্তমানে বরিশালে এক বোতল ফেনসিডিল বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকায়। ঈদ ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে এর দামও বাড়তে থাকবে।
সাতক্ষীরা-বেনাপোল সীমান্ত এলাকা থেকে মাদক ব্যবসায়ীরা ২২০ টাকা দামে এ ফেনসিডিল ক্রয় করে। একইভাবে ওই এলাকা থেকে ১৬০ টাকা করে কেনা হয় ইয়াবা ট্যাবলেট। আর বরিশালে তা বিক্রি করা হয় ৩০০ থেকে সাড়ে ৩০০ টাকায়। নিরাপদে মাদকদ্রব্য বরিশালে পৌঁছতে ঘাটে ঘাটে বিভিন্ন সেক্টরে নিয়মিত অর্থ দিতে হয়। সে কারণে কয়েকগুণ দাম বেড়ে যায় বলে জানায় সূত্রটি।
ওই সূত্রমতে, বরিশালে ফেনসিডিলের বড় ধরনের ব্যবসায়ী রয়েছে ১০ থেকে ১৫ জন। আর সহজ ও নিরাপদ বহনযোগ্য হওয়ায় ইয়াবা বিক্রির সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীর সংখ্যা আরও অনেক বেশি বলে জানা যায়।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণে র্যাব নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করলেও পুলিশের ভূমিকা নিয়ে সবসময়ই প্রশ্ন উঠেছে। প্রায় প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও র্যাবের অভিযানে উদ্ধার হয় মাদকদ্রব্য। ঈদে অতিরিক্ত মাদকদ্রব্য চোরাইপথে আনা হচ্ছে বিষয়টি মাথায় রেখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তত্পর রয়েছে বলে দাবি করেছে সংশ্লিষ্ট মহল। গত মঙ্গলবার নগরীর লঞ্চঘাট এলাকা থেকে প্রায় ৬০০ বোতল ও কাশিপুর এলাকা থেকে ৩০ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করে পুলিশ। আগের দিন মাধবপাশা থেকে ৩০টি ইয়াবাসহ আটক করা হয় মনির নামের এক প্রভাষককে। র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে আটক মনির জানান, সাতক্ষীরা থেকে এ ইয়াবা ট্যাবলেট আনা হয়। গৌরনদীতে ছাত্রলীগের ছেলেরা মাদক ব্যবসায়ী যুবলীগ কর্মীদের কাছ থেকে উদ্ধার করে ফেনসিডিল। প্রতিদিনই বিভিন্ন এলাকা থেকে মাদকদ্রব্য উদ্ধারের ঘটনায় অনুমান করা যায়, কি পরিমাণ মাদকদ্রব্য আমদানি হচ্ছে বরিশালে। ফেনসিডিল ও ইয়াবার পাশাপাশি লক্ষ্মীপুরসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে আমদানি হচ্ছে বিপুল পরিমাণ গাঁজা।
কোতোয়ালি মডেল থানায় যোগদান করেই ওসি শাহেদুজ্জামান ফেনসিডিলের একটি বড় চালান আটক করতে সক্ষম হয়েছেন। গত বুধবার নগরীর লঞ্চঘাট এলাকায় অভিযান চালিয়ে একটি ট্রাক থেকে প্রায় ৬০০ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করেন তিনি। ওসি শাহেদ বলেন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণে পুলিশের যথার্থ ভূমিকা রয়েছে। এরই মধ্যে লঞ্চঘাট থেকে ফেনসিডিলের একটি বড় চালান আটক করা হয়েছে। এছাড়া নগরীর ৫/৭ জন বড় ধরনের মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে সন্দেহজনক ব্যক্তির গতিবিধির ওপর নজর রাখা হয়েছে।
বরিশালে সবচেয়ে বেশি মাদকদ্রব্য আটক হয় র্যাব-৮-এর অভিযানে। প্রায় প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও অভিযান চালিয়ে র্যাব উদ্ধার করে ফেনসিডিল, গাঁজা, ইয়াবা, হেরোইনসহ অন্যান্য মাদকদ্রব্য। চলতি বছর শুধু গাঁজাই উদ্ধার করা হয়েছে ৩ মণ ৭ কেজি। র্যাবের এসব অভিযান নিয়ে সিপিসি-১-এর অধিনায়ক মেজর রাশেদ বলেন, র্যাব-৮-এ যোগদান করার পর থেকে মাদকদ্রব্যের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে। যতদিন বরিশালে থাকব, ততদিন এ অভিযান অব্যাহত থাকবে। একই সঙ্গে তিনি পুরোপুরি মাদকমুক্ত নগরী গড়তে সব শ্রেণীর মানুষকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

No comments:

Post a Comment