Tuesday 31 May 2011

মধ্যে দাবি না মানলে হরতাল : চরমোনাই পীর











ইসলামী আন্দোলনের সমাবেশে পুলিশি হামলা : পল্টন রণক্ষেত্র : এক মাসের

স্টাফ রিপোর্টার
মে দিবস উপলক্ষে মুক্তাঙ্গনে আয়োজিত ইসলামী আন্দোলনের গণঅবস্থান ও দোয়া অনুষ্ঠানে পুলিশ এবং সরকারি দলের ক্যাডারদের অতর্কিত হামলায় রোববার সন্ধ্যায় পল্টন এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। পুলিশের বেপরোয়া লাঠিচার্জ, মুহুর্মুহু টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট এবং পানিকামান থেকে গরম পানি নিক্ষেপে দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও চরমোনাই পীরের বড় ভাইসহ শতাধিক নেতাকর্মী আহত হন। পুলিশের পাশাপাশি সরকারি দলের লোকেরাও লাঠিসোটা নিয়ে হামলায় অংশ নেয়। ঘটনাস্থল ও বিভিন্ন স্থান থেকে পুলিশ আটক করে দুই শতাধিক নেতাকর্মীকে। ঘটনার পর থেকে
পুরানাপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ঘেরাও করে রেখেছে পুলিশ। এছাড়া মুক্তাঙ্গনসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় ১৪৪ ধারা বহালসহ বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গতকাল সকাল থেকে ঘোষিত ৪৮ ঘণ্টার গণঅবস্থান কর্মসূচি স্থগিত করে ইসলামী আন্দোলন।
এদিকে পূর্বঘোষিত গণঅবস্থান কর্মসূচি বানচালে মুক্তাঙ্গনে সরকারের ১৪৪ ধারা জারি এবং মে দিবসের আলোচনা ও দোয়া অনুষ্ঠানে পুলিশের বর্বর হামলার তীব্র নিন্দা জানান দলের আমির মুফতি সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল করিম। গতকাল এক প্রেসব্রিফিংয়ে তিনি চলতি মাসের মধ্যে নারীনীতি বাতিল করার জন্য সরকারের প্রতি আল্টিমেটাম দেন। অন্যথায় হরতালসহ কঠোর কর্মসূচি দেয়ার হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন। এছাড়া ৪ মে সারাদেশে সব থানায় ও ৫ মে মুক্তাঙ্গনে প্রতিবাদ সমাবেশ ও মিছিল কর্মসূচির ঘোষণা দেন তিনি।
সংঘর্ষের সূত্রপাত যেভাবে : রোববার বিকাল ৪টায় পুরানাপল্টনের হাউস বিল্ডিং মোড়ে শ্রমিক সমাবেশ করে ইসলামী আন্দোলন। একই সময়ে মুক্তাঙ্গনে জাতীয় পার্টির সমাবেশ চলছিল। এই সমাবেশ শেষ হওয়ার পর ৬টায় চরমোনাই পীরের নেতৃত্বে ইসলামী আন্দোলনের সমাবেশরত নেতাকর্মীরা একটি মিছিল বের করে মুক্তাঙ্গনে জমায়েত হন। সেখানে মাগরিবের নামাজের পর মে দিবসের শহীদদের জন্য দোয়া ও মোনাজাত করার ঘোষণা দেয় সংগঠনটি। তবে তারা পরদিন ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে গণঅবস্থানের জন্য মু্ক্তাঙ্গন দখলে নিয়েছে, এমন সংবাদের ভিত্তিতে তাদের সেখানে জমায়েতে বাধা দেয় পুলিশ। তাদের দ্রুত স্থান ত্যাগ করার নির্দেশ দেয় পুলিশ কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ইসলামী আন্দোলনের নেতারা মাগরিবের পর দোয়া শেষেই স্থান ত্যাগ করার কথা জানান। এরই মধ্যে কয়েক হাজার নেতাকর্মী সেখানে মাগরিবের নামাজ আদায় করে দোয়া অনুষ্ঠানের অপেক্ষায় ‘আল্লাহু আল্লাহু, লা ইলাহা ইল্লাহ’ জিকির শুরু করেন।
সন্ধ্যা ৭টায় পুলিশ হঠাত্ তাদের ওপর আক্রমণ চালায়। তারা পানিকামান দিয়ে গরম পানি নিক্ষেপ, বেশ কয়েক রাউন্ড টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপের পাশাপাশি বেপরোয়া লাঠিচার্জ শুরু করলে মুক্তাঙ্গন-পল্টনসহ গোটা এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। বন্ধ হয়ে যায় যানচলাচল। চরমোনাই পীরসহ দলের কেন্দ্রীয় নেতারাও এসময় হামলার শিকার হন। তীব্র আক্রমণের মধ্যেও ইসলামী আন্দোলন কর্মীরা উচ্চস্বরে জিকির করতে থাকেন এবং গাছের ডাল ও ইটপাটকেল নিয়ে পুলিশের আক্রমণের পাল্টা প্রতিরোধ করে বেশ কিছুক্ষণ রাস্তায় অবস্থান নেন। একপর্যায়ে পুলিশের হামলায় তারা পিছু হটতে বাধ্য হন। এসময় দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও চরমোনাই পীরের বড় ভাই সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল-মাদানী এবং পুলিশ ও সাংবাদিকসহ ২ শতাধিক নেতাকর্মী আহত হন। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ দুই শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে শাহবাগ, পল্টনসহ বিভিন্ন থানায় নিয়ে যায়। এদের মধ্য থেকে অনেককে গভীর রাতে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়। এদিকে পল্টন ও বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেট এলাকা বিপুলসংখ্যক পুলিশ কর্ডন দিয়ে রাখায় বিক্ষোভকারীরা সেদিকে যেতে পারেননি। পুলিশের ধাওয়ায় তারা জিরো পয়েন্ট হয়ে গুলিস্তানের দিকে গেলে সেখানে আওয়ামী লীগের ক্যাডাররা লাঠিসোটা নিয়ে আরেক দফা হামলা চালায়। এতে গুরুতর আহত কয়েকজনসহ বেশকিছু নেতাকর্মী আহত হন। হামলার পর আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ কর্মীরা মুক্তাঙ্গন এলাকায় খণ্ড খণ্ড মিছিলও করে। হাতে ও পায়ে আঘাতপ্রাপ্ত মোসাদ্দেক বিল্লাহ মাদানীকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেলে ও পরে একটি ক্লিনিকে নেয়া হয়। আহত অন্যান্য নেতাকর্মীদেরও ঢাকা মেডিকেলসহ বিভিন্ন ক্লিনিক ও কেন্দ্রীয় অফিসে প্রাথমিক চিকিত্সা দেয়া হয়। মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত ১০-১২ জনের অবস্থা গুরুতর বলে জানা গেছে।
এদিকে সংঘর্ষের পর ব্যাপক পুলিশ ইসলামী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় অফিস ঘেরাও করে রাখে। রাতে সেখানে কাউকে ঢুকতে দেয়া তো দূরের কথা, অবস্থানরত আহত নেতাকর্মীদের বের করে দেয়া হয় বলে কেন্দ্রীয় নেতা আহমদ আবদুল কাইয়ুম জানান।
উল্লেখ্য নারীনীতি, শিক্ষানীতি ও ফতোয়াবিরোধী হাইকোর্টের রায় বাতিলসহ বিভিন্ন দাবিতে বেশ কিছু দিন আগে ২ ও ৩ মে মুক্তাঙ্গনে গণঅবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দেয় চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ ইসলামী আন্দোলন। এ উপলক্ষে কয়েক লাখ লোক সমাগমের প্রস্তুতি নিয়ে সারাদেশে ব্যাপক প্রচারণা চালায় দলটি। কিন্তু দু’দিন আগে শনিবার সন্ধ্যায় একই স্থানে আরও দুটি সংগঠনের কর্মসূচি দেয়ার অজুহাতে গতকাল সকাল ৬টা থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র মুক্তাঙ্গন ও আশপাশের এলাকায় সব ধরনের সভা-সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ। এ ঘোষণা সত্ত্বেও শনিবার সন্ধ্যায় এক জরুরি বৈঠক করে ২ ও ৩ মে মুক্তাঙ্গনের কর্মসূচি বাস্তবায়নের ঘোষণা দেয় ইসলামী আন্দোলন। এ নিয়ে চরম উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। গতকাল শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি বহাল ছিল।
প্রেস ব্রিফিংয়ে চরমোনাই পীর : মুক্তাঙ্গনে ১৪৪ ধারা জারি ও মে দিবসের আলোচনা ও দোয়া অনুষ্ঠানে পুলিশের বর্বরোচিত হামলার প্রতিবাদে গতকাল দুপুরে পুরানাপল্টনে দলীয় কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিং করেন ইসলামী আন্দোলনের আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল করিম। এসময় তিনি সরকার ও পুলিশের বর্বর আচরণের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, বর্তমান সরকার তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে বলেছিল, ক্ষমতায় গেলে কোরআন-সুন্নাহবিরোধী কিছু করবে না। কিন্তু ক্ষমতায় আসার পরপরই ইসলামবিরোধী যেসব কার্যক্রম হাতে নিয়েছে তাতে প্রমাণিত হয়, নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল ভোট নেয়ার মোনাফেকি কৌশল। ইসলামকে তারা ক্ষমতায় যাওয়ার সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করেছে। ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে ধর্মীয় বিভিন্ন বিষয়ে বিধিনিষেধ দুঃসাহসের ব্যাপার। তিনি বলেন, আমরা বর্তমান সরকারের কোরআনবিরোধী নারীনীতি, ইসলামী শিক্ষাবিরোধী জাতীয় শিক্ষানীতি, ফতোয়াবিরোধী রায় বাতিল এবং সংবিধানকে ধর্মনিরপেক্ষ করা, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও সন্ত্রাস-দুর্নীতির প্রতিবাদে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছি। এসব দাবিতে আমরা জেলা প্রশাসক, স্পিকার, প্রধান বিচারপতি, প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছি। সর্বশেষ ২ ও ৩ মে মুক্তাঙ্গনে গণঅবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। কিন্তু এতে ১৪৪ ধারা জারি করে সরকার সংবিধানবিরোধী অবস্থান এবং গণতন্ত্র কেড়ে নিয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের মহাসচিব মাওলানা ইউনূস আহমাদ, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ বেলায়েত হোসেন ও মহানগর আমির অধ্যাপক এটিএম হেমায়েত উদ্দিন প্রমুখ।
নারায়ণগঞ্জে মহাসড়ক অবরোধ : এদিকে মুক্তাঙ্গনে পুলিশি হামলার প্রতিবাদে নারায়ণগঞ্জে ইসলামী আন্দোলনের কর্মীরা গতকাল বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে এবং সকাল সাড়ে ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত তারা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে। এ সময় সড়কে যানচলাচল বন্ধ থাকে। এতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে র্যাব ও পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে ইসলামী আন্দোলন কর্মীরা প্রতিবাদ মিছিল ও সমাবেশ করেছে বলে বলে জানা গেছে

টিএইচ খান ও রফিক-উল হক : ফতোয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলার এখতিয়ার আদালতের নেই

স্টাফ রিপোর্টার
ফতোয়া নিষিদ্ধ করে হাইকোর্টের দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে আপিল শুনানিতে অ্যামিকাস কিউরির মতামতে প্রবীণ আইনজীবী টিএইচ খান ও ব্যারিস্টার রফিক-উল হক বলেন, ফতোয়া হচ্ছে পবিত্র কোরআন, হাদিস ও ইসলামী শরিয়াভিত্তিক অভিমত বা উপদেশ। কাজেই ফতোয়াকে নিষিদ্ধ করে রায় দেয়া তো দূরের কথা, এ নিয়ে কোনো ধরনের প্রশ্ন তোলারও এখতিয়ার কোনো আদালতের নেই। দেশের প্রচলিত আইন ও সংবিধানের আলোকেও ফতোয়া বৈধ বলে মত দেন তারা। ফতোয়া দেয়া ও নেয়া সংবিধানস্বীকৃত মৌলিক অধিকারের অন্তর্ভুক্ত। প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের নেতৃত্বে গঠিত আপিল বিভাগের ফুল বেঞ্চে গতকাল তারা এ অভিমত পেশ করেন।
উল্লেখ্য, ২০০১ সালে বিচারপতি গোলাম রব্বানীর নেতৃত্বে হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চ কোনো অভিযোগ বা মামলা ছাড়াই স্বপ্রণোদিত হয়ে ফতোয়া নিষিদ্ধ করে রায় দেন। রায়ের বিরুদ্ধে দুটি আপিল করা হয়। বর্তমানে আপিল বিভাগের ফুল বেঞ্চে এ আপিল দুটির শুনানি একযোগে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ফতোয়ার বিষয়ে মতামত দেয়ার জন্য আদালত সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও সিনিয়র আইনজীবী বিচারপতি টিএইচ খান এবং সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল ও সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল হকসহ ১০ বিশিষ্ট আইনজীবীকে অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে নিয়োগ দেন।
ব্যারিস্টার রফিক-উল হক : গতকাল ফতোয়া নিয়ে আপিলের শুনানি শুরু হলে ব্যারিস্টার রফিক-উল হক সংবিধান, বিভিন্ন আইন, বিভিন্ন মামলার নজির ও বিভিন্ন দেশের রেফারেন্স তুলে ধরে আদালতে বলেন, ফতোয়া হচ্ছে সংবিধানস্বীকৃত একটি মৌলিক অধিকার। ফতোয়া নিষিদ্ধ করে হাইকোর্ট যে রায় দিয়েছেন, তা আদৌ সঠিক নয়। এ ধরনের রায় দেয়ার এখতিয়ার হাইকোর্টের নেই। তিনি বলেন, ফতোয়া হচ্ছে ব্যক্তিগত অভিমত। এ অভিমতের ভিত্তিতেই আমাদের সমাজ ও পারিবারিক শৃঙ্খলা টিকে রয়েছে। অভিমত বা মতামত দেয়ার অধিকার সবার রয়েছে। এটা সাংবিধানিক অধিকারও। তবে কোনো নির্বাহী আদেশ নয়, কেউ ইচ্ছে করলে এটা গ্রহণ করতে পারে আবার নাও করতে পারে। তবে আমাদের দেশে প্রত্যন্ত অঞ্চলের সাধারণ মানুষ ফতোয়াকে বাধ্যবাধকতা বলে মনে করে। এজন্য সাধারণ মানুষকে সচেতন করে তুলতে হবে। তিনি বলেন, ফতোয়ার অপব্যবহার হচ্ছে। এটা অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই। আমাদের দেশে প্রায় সব আইনেরই যেমন ব্যবহার রয়েছে, তেমনিভাবে এর অপব্যবহার আছে। মূল কথা হলো অপব্যবহার বন্ধ করতে হবে। এটা করতে গিয়ে যে একেবারে আইনটিই নিষিদ্ধ করে দিতে হবে, এমনটি নয়। তিনি বলেন, কেউ যদি ফতোয়ার নামে কাউকে শাস্তি দেন, তবে সেটি অপরাধ। এ অপরাধের বিরুদ্ধে ফৌজদারি আইনে আদালত ব্যবস্থা নিতে পারেন।
বিচারপতি টিএইচ খান : ফতোয়া নিষিদ্ধ করার অধিকার কোনো আদালতের নেই বলে উল্লেখ করে সিনিয়র আইনজীবী বিচারপতি টিএইচ খান বলেন, যারা ফতোয়া নিষিদ্ধ করে অতি-উত্সাহী রায় দিয়েছেন তারা কি একবার ভেবে দেখেছেন, ফতোয়া নিষিদ্ধ হলে এর পরিণাম কত ভয়ঙ্কর হবে? তারা হয়তো না বুঝেই এটা করেছেন। কিন্তু ফতোয়া নিষিদ্ধ করার এখতিয়ার তাদের ছিল না। তারা এখতিয়ারবহির্ভূত কাজটি করে সমাজকে একটি চরম বিশৃঙ্খল অবস্থার দিকে ঠেলে দিচ্ছিলেন। তিনি বলেন, সংবিধান অনুযায়ীই ফতোয়া বৈধ এবং ফতোয়া দেয়া ও গ্রহণ করা সাংবিধানিক অধিকার। ফতোয়ার নামে যদি কোথাও কোনো অপরাধ হয়, সেটা প্রতিরোধ বা প্রতিকারের জন্য আমাদের দেশে প্রচলিত আইন রয়েছে। তবে এখন কেউ কেউ গ্রাম্য সালিশকেও ফতোয়া হিসেবে চিহ্নিত করে এর বিরুদ্ধে লেগেছেন। এটাও ঠিক নয়। ফতোয়া নিষিদ্ধ হলে আমাদের সামাজিক কাঠামো ভেঙে পড়বে। সমাজে চরম বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে। যৌতুকপ্রথা বেড়ে যাবে। সেইসঙ্গে ইভটিজিংসহ নারী নির্যাতনও বেড়ে যাবে। সামাজিক শৃঙ্খলার জন্যই ফতোয়ার বিষয়টিকে টিকিয়ে রাখতে হবে। সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদ, ৪১ অনুচ্ছেদ থাকলে ধর্মীয় স্বাধীনতাও থাকবে। আর ধর্মীয় স্বাধীনতা থাকলে মুসলমানদের ফতোয়া দেয়া ও নেয়ার অধিকারও থাকবে। ফতোয়ার নামে যদি কেউ এর অপব্যবহার করে, তার জন্য ইসলামের এই অবিচ্ছেদ্য বিধান অবৈধ ঘোষণা করার কোনো আইনি বা যৌক্তিক ভিত্তি নেই।
বিচারপতি গোলাম রব্বানী কোনো অভিযোগ কিংবা মামলা ছাড়াই নিজ উদ্যোগে ফতোয়াকে অবৈধ ও নিষিদ্ধ ঘোষণা করে ২০০১ সালে রায় দেন। অবসর নেয়ার পর নাস্তিক ও ভারতপন্থী হিসেবে বিচারপতি গোলাম রব্বানী তথাকথিত ঘাদানি কমিটিসহ ইসলামবিরোধী বিভিন্ন সংগঠনের উপদেষ্টার পদ নেন এবং তাদের অনুষ্ঠানগুলোতে যোগ দিয়ে ফতোয়াসহ ইসলামী বিধানের বিরুদ্ধে বক্তব্য দেয়া অব্যাহত রাখেন। স্বপ্রণোদিত হয়ে ফতোয়া নিষিদ্ধ করে তার দেয়া ওই রায়ের বিরুদ্ধে ২০০১ সালেই মুফতি মো. তৈয়ব ও মাওলানা আবুল কালাম আজাদ আপিল বিভাগে পৃথকভাবে দুটি আপিল করেন। আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায়ের কার্যকারিতা স্থগিত করেন। বর্তমানে ওই আপিলের শুনানি চলছে। আদালত দশজন অ্যামিকাস কিউরি নিয়োগ করে মতামত নেন। এ ছাড়াও দেশের খ্যাতিমান পাঁচ আলেমকে তাদের মতামত দেয়ার জন্য বলেছেন। গত ২০ মার্চ লিখিতভাবে তারা তাদের মতামত পেশ করেন। পাঁচ আলেমসহ অ্যামিকাস কিউরিদের প্রায় সবাই ফতোয়ার বিধান বহাল রাখা এবং হাইকোর্টের রায় বাতিলের পক্ষে মত দেন।