Wednesday 29 June 2011

সংবিধান সংশোধন বিল : তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিল করে মন্ত্রিসভায় অনুমোদন











কাদের গনি চৌধুরী
তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের সুপারিশসহ সংবিধানে বেশ কিছু মৌলিক পরিবর্তন এনে সংবিধান সংশোধন কমিটির সুপারিশ সংবলিত প্রস্তাব গতকাল মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে অনুমোদিত হয়েছে। এটি বিল আকারে এখন সংসদে উত্থাপন করা হবে। সংশোধিত সংবিধানের প্রস্তাবনা থেকে সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস বাতিল করে ধর্মনিরপেক্ষতা পুনর্বহাল রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। সংবিধানের শুরুতে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম (দয়াময়, পরম দয়ালু আল্লাহর নামে) এর পরিবর্তে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম (দয়াময়, পরম দয়ালু আল্লাহর নামে)/পরম করুণাময় সৃষ্টিকর্তার নামে’ সংযোজন করার প্রস্তাবও গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া সংবিধানে শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার প্রস্তাবও রয়েছে। পাশাপাশি দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও অফিস-আদালতে সর্বত্র শেখ মুজিবের ছবি টানানো বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব অনুমোদন হয়। একই সঙ্গে অনুমোদন দেয়া হয়েছে জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংখ্যা ৫০টি করার প্রস্তাব। বর্তমানে জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংখ্যা ৪৫টি।সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে গতকাল মন্ত্রিসভার বৈঠকে সংবিধান সংশোধন সংক্রান্ত বিশেষ কমিটির সুপারিশ সংবলিত প্রস্তাবে চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়। বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, মন্ত্রিসভার বৈঠকে দীর্ঘ আলোচনার পর সংবিধান সংশোধন কমিটির সুপারিশ সংবলিত প্রস্তাব হুবহু অনুমোদন করা হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদে অনুমোদিত ‘সংবিধান (পঞ্চদশ সংশোধন) আইন, ২০১১’-এ আরও বলা হয়েছে, রাষ্ট্রধর্ম হবে ইসলাম, তবে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ অন্যান্য ধর্মপালনে রাষ্ট্র সমমর্যাদা ও সমঅধিকার নিশ্চিত করবে। ’৭২-এর সংবিধানের চার মূলনীতি জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা পুনঃপ্রবর্তন, জাতীয় পরিচয় ‘বাঙালি’ এবং নাগরিক হিসেবে ‘বাংলাদেশী’, অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকে রাষ্ট্রদ্রোহিতা হিসেবে চিহ্নিত করে সর্বোচ্চ শাস্তি, এছাড়া প্রধান নির্বাচন কমিশনার ছাড়া নির্বাচন কমিশনার চারজন করা, রাষ্ট্রপতির জারিকৃত জরুরি অবস্থার মেয়াদ ১২০ দিন নির্দিষ্টকরণ, যুদ্ধাপরাধে দণ্ডিতদের নির্বাচনে অযোগ্য ও ভোটার হতে না পারা, বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের ওপর রাখা, ৭০ অনুচ্ছেদ পরিবর্তন করে ’৭২-এর অনুরূপ করা, মুসলিম বিশ্বের সঙ্গে সংহতি রক্ষাসংবলিত ধারার বিলুপ্তি, সংবিধানে পঞ্চম, ষষ্ঠ ও সপ্তম তফসিল নামে নতুন তিনটি তফসিল সংযোজন করে সেখানে শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণ অন্তর্ভুক্ত, শেখ মুজিবের ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের মধ্যরাত শেষে অর্থাত্ ২৬ মার্চের প্রথম দিকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা এবং ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল মুজিবনগর সরকারের জারিকৃত স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে সংবিধানে।মুন সিনেমার মামলায় সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর বেশ কিছু অংশ বাতিল ও পরবর্তী সময়ে শর্তসাপেক্ষে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল সংবলিত রায়ের আলোকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলসহ ৫১টি সুপারিশ সংবলিত একটি প্রতিবেদন গত ৮ জুন জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করে সংবিধান সংশোধনে গঠিত বিশেষ কমিটি। স্পিকার তা পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর নির্দেশ দেন। পরে তা আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। আইন মন্ত্রণালয় বিল আকারে তৈরি করে ভেটিং শেষে গতকাল তা মন্ত্রিপরিষদের সভায় উপস্থাপন করে।প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দল সংবিধান সংশোধনের বিরুদ্ধে, বিশেষ করে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিলের বিরুদ্ধে তীব্র আপত্তি জানিয়ে আসছে। এরই মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিলের বিপক্ষে কঠোর অবস্থান নিয়েছে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া কোনো দলীয় সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে না বলে দলটি সাফ জানিয়ে দিয়েছে। প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলের মতামত উপেক্ষা করে সংবিধান সংশোধনের একতরফা সিদ্ধান্তে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন। এরই মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বহাল রাখাসহ বিভিন্ন দাবিতে চলতি মাসে দুই দফায় ৪৮ ঘণ্টা হরতাল কর্মসূচি পালন করেছে বিরোধী দলগুলো।বৈঠক সূত্রে জানা যায়, বিলে বলা হয়, সংবিধানের প্রস্তাবনার প্রথম অনুচ্ছেদে (১) ‘জাতীয় স্বাধীনতার জন্য ঐতিহাসিক যুদ্ধের’ শব্দগুলোর পরিবর্তে ‘জাতীয় মুক্তির জন্য ঐতিহাসিক সংগ্রামের’ শব্দগুলো প্রতিস্থাপিত হবে। (২) প্রস্তাবনার দ্বিতীয় অনুচ্ছেদের পরিবর্তে প্রতিস্থাপিত হবে—‘আমরা অঙ্গীকার করিতেছি যে, যে সকল মহান আদর্শ আমাদের বীর জনগণকে জাতীয় মুক্তি সংগ্রামে আত্মনিয়োগ ও বীর শহীদদিগকে প্রাণোত্সর্গ করিতে উদ্বুদ্ধ করিয়াছিল—জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার সেই সকল আদর্শ এ সংবিধানের মূলনীতি হইবে।’সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৪-এ নতুন দফা (৫) সংযোজন করা হয়েছে—‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, প্রধান বিচারপতির কার্যালয় এবং সকল সরকারি ও আধাসরকারি অফিস, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষের প্রধান ও শাখা কার্যালয়, সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশের দূতাবাস ও মিশনসমূহে সংরক্ষণ ও প্রদর্শন করিতে হইবে।’অনুচ্ছেদ ৬-এর পরিবর্তে ‘৬ (১) বাংলাদেশের নাগরিকত্ব আইনের দ্বারা নির্ধারিত ও নিয়ন্ত্রিত হইবে।’ সংবিধানের ৭ অনুচ্ছেদের পর দুটি নতুন অনুচ্ছেদ (৭ক ও ৭খ) সন্নিবেশ করা হয়। সংবিধান বাতিল, স্থগিতকরণ ইত্যাদি অপরাধ বিষয়ে ৭ক অনুচ্ছেদে বলা হয়, ‘কোনো ব্যক্তি শক্তি প্রদর্শন বা শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে বা অন্য কোনো অসাংবিধানিক পন্থায় এই সংবিধান বা ইহার কোনো রদ, বাতিল বা স্থগিত করিলে কিংবা উহা করিবার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ বা ষড়যন্ত্র করিলে কিংবা এই সংবিধান বা ইহার কোনো বিধানের প্রতি নাগরিক আস্থা, বিশ্বাস বা প্রত্যয় পরাহত করিলে কিংবা উহা করিবার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ বা ষড়যন্ত্র করিলে তাহার এই কার্য রাষ্ট্রদ্রোহিতা হইবে এবং ঐ ব্যক্তি রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধে দোষী হইবেন। দোষী ব্যক্তি সংসদের আইন দ্বারা ও অন্যান্য আইন দ্বারা অন্যান্য অপরাধের জন্য নির্ধারিত দণ্ডের মধ্যে সর্বোচ্চ দণ্ডে দণ্ডিত হইবে।’সংবিধানের মৌলিক কাঠামো সংক্রান্ত বিধানাবলী সংশোধন অযোগ্য করার জন্য নতুন অনুচ্ছেদ ৭(খ)-তে বলা হয়, ‘এ সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদে যাহাই কিছু থাকুক না কেন, সংবিধানের প্রস্তাবনা, প্রথম ভাগের সকল অনুচ্ছেদ, দ্বিতীয় ভাগের সকল অনুচ্ছেদ, নবম ক-ভাগে বর্ণিত অনুচ্ছেদসমূহের বিধানাবলী সাপেক্ষে তৃতীয় ভাগের সকল অনুচ্ছেদ এবং একাদশ ভাগের অনুচ্ছেদ ১৫০-সহ সংবিধানের অন্যান্য মৌলিক কাঠামো সংক্রান্ত অনুচ্ছেদগুলোর বিধানাবলী সংযোজন, পরিবর্তন, প্রতিস্থাপন, রহিতকরণ কিংবা অন্য কোনো পন্থায় সংশোধনের অযোগ্য হইবে।’অনুচ্ছেদ-৮-এর রাষ্ট্রীয় মূলনীতির দফা ১ ও ১(ক)-এর পরিবর্তে ‘(১) জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা এ নীতিসমূহ এবং তত্সহ এ নীতিসমূহ হইতে উদ্ভূত এই ভাগে বর্ণিত অন্য সকল নীতি রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি বলিয়া পরিগণিত হইবে’, প্রতিস্থাপন করা হয়।বাঙালি জাতীয়তাবাদ বিষয়ে অনুচ্ছেদ ৯-এ প্রতিস্থাপন করা হয়, ‘ভাষাগত ও সংস্কৃতিগত একক সত্তাবিশিষ্ট যে বাঙালি জাতি ঐক্যবদ্ধ ও সংকল্পবদ্ধ সংগ্রাম করিয়া জাতীয় মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব অর্জন করিয়াছেন, সেই বাঙালি জাতির ঐক্য ও সংহতি হইবে বাঙালি জাতীয়তাবাদের ভিত্তি।’ অনুচ্ছেদ ১০-এ প্রতিস্থাপিত হয়, ‘সমাজতন্ত্র ও শোষণমুক্তি—মানুষের উপর মানুষের শোষণ হইতে মুক্ত ন্যায়ানুগ ও সাম্যবাদী সমাজলাভ নিশ্চিত করিবার উদ্দেশ্যে সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা হইবে।’ ধর্মনিরপেক্ষতা বাস্তবায়নের জন্য ‘(ক) সর্বপ্রকার সাম্প্রদায়িকতা, (খ) রাষ্ট্র কর্তৃক কোনো ধর্মকে রাজনৈতিক মর্যাদাদান, (গ) রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ধর্মীয় অপব্যবহার ও (ঘ) কোনো বিশেষ ধর্ম পালনকারী ব্যক্তির প্রতি বৈষম্য বা তাহার উপর নিপীড়ন-বিলোপ করা হইবে’, প্রতিস্থাপন করা হয়। অনুচ্ছেদ ১৮-এর পর নতুন অনুচ্ছেদ ১৮(ক) সন্নিবেশন করা হয় । এতে বলা হয়, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ সন্নিবেশিত হবে। এতে বলা হয়, ‘পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও উন্নয়ন-রাষ্ট্র বর্তমান ও ভবিষ্যত্ নাগরিকদের জন্য পরিবেশ সংরক্ষণ ও উন্নয়ন করিবে এবং প্রাকৃতিক সম্পদ, জীববৈচিত্র্য, জলাভূমি, বন ও বন্যপ্রাণীর নিরাপত্তা বিধান করিবে।’জাতীয় জীবনের সর্বস্তরে মহিলাদের অংশগ্রহণ ও সুযোগের সমতা রাষ্ট্র নিশ্চিত করিবেন মর্মে অনুচ্ছেদ ১৯-এর দফা (৩) সংযোজন করা হয়। উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃ-গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের ঐতিহ্য সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও বিকাশ নামে ২৩ (ক) নতুন অনুচ্ছেদ সংযোজন করা হয়। এতে বলা হয়, ‘রাষ্ট্র বিভিন্ন উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃ-গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের অনন্য বৈশিষ্ট্যপূর্ণ আঞ্চলিক সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও বিকাশের ব্যবস্থা গ্রহণ করিবে।’অনুচ্ছেদ ৩৮-এর পরিবর্তে প্রতিস্থাপিত হবে, ‘সংগঠনের স্বাধীনতা—(১) জনশৃঙ্খলা ও নৈতিকতার স্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত বাধা-নিষেধ সাপেক্ষে সমিতি বা সংঘ গঠন করিবার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকিবে : তবে শর্ত থাকে যে, কোনো ব্যক্তির উক্তরূপ সমিতি বা সংঘ গঠন করিবার কিংবা উহার সদস্য হইবার অধিকার থাকিবে না, যদি (ক) উহা নাগরিকদের মধ্যে ধর্মীয়, সামাজিক এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করিবার উদ্দেশ্যে গঠিত হয়; (খ) উহা ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী-পুরুষ, জন্মস্থান বা ভাষার ক্ষেত্রে নাগরিকদের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি করিবার উদ্দেশ্যে গঠিত হয়; উহা রাষ্ট্র বা নাগরিকদের বিরুদ্ধে কিংবা অন্য কোনো দেশের বিরুদ্ধে জঙ্গি কার্য পরিচালনার উদ্দেশ্যে গঠিত হয়; বা উহার গঠন ও উদ্দেশ্য এ সংবিধানের পরিপন্থী হয়।’সুপ্রিমকোর্টের বিচারক নিয়োগ বিষয়ে অনুচ্ছেদ ৯৫-এর পরিবর্তে ‘৯৫(১) প্রধান বিচারপতি রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত হইবেন এবং প্রধান বিচারপতির সঙ্গে পরামর্শ করিয়া রাষ্ট্রপতি অন্যান্য বিচারককে নিয়োগদান করিবেন’ প্রতিস্থাপিত হবে। বাহাত্তরের সংবিধানের আলোকে এ অনুচ্ছেদে ২ ও ৩ দফাও প্রতিস্থাপিত হবে।অবসরপ্রাপ্ত বিচারকদের বিচার বিভাগীয়/আধা বিচার বিভাগীয় পদে নিয়োগের বিষয়ে অনুচ্ছেদ ৯৯-এ বলা হয়, তারা প্রজাতন্ত্রের কোনো লাভজনক পদে নিয়োগ লাভের যোগ্য হবেন না। তবে আপিল বিভাগে ওকালতি বা কার্য করতে পারবেন।সংবিধানের ১০০ অনুচ্ছেদ ‘সুপ্রিমকোর্টের আসন—রাজধানীতে সুপ্রিমকোর্টের স্থায়ী আসন থাকিবে, তবে রাষ্ট্রপতির অনুমোদন লইয়া প্রধান বিচারপতি সময়ে সময়ে অন্য যে কোনো স্থান বা স্থানসমূহ নির্ধারণ করিবেন, সেই স্থান বা স্থানসমূহে হাইকোর্ট বিভাগের অধিবেশন অনুষ্ঠিত হইতে পারিবে’ প্রতিস্থাপন করা হয়।অনুচ্ছেদ ১১৬-এ অধস্তন আদালতসমূহের নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলা বিষয়ে প্রতিস্থাপিত করা হয়েছে বিচার-কর্মবিভাগে নিযুক্ত ব্যক্তিদের এবং বিচার বিভাগীয় দায়িত্ব পালনে রত ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়ন্ত্রণ রাষ্ট্রপতির ওপর ন্যস্ত থাকবে এবং সুপ্রিমকোর্টের পরামর্শক্রমে তা প্রযুক্ত হবে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অনধিক চারজন নির্বাচন কমিশনার নিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠিত হবে বলে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১১৮-এর দফা ১-এ তা প্রতিস্থাপন করা হয় ।ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তির যোগ্যতা সংক্রান্ত ১২২ অনুচ্ছেদের দফা ২-এ সংশোধনী এনে (গ), (ঘ) ও (ঙ) বলা হয়, ‘তিনি ১৯৭২ সালের বাংলাদেশ যোগসাজশকারী (বিশেষ ট্রাইব্যুনাল) আদেশের অধীন কোনো অপরাধের জন্য দণ্ডিত না হইয়া থাকেন’ প্রতিস্থাপন করা হবে।নির্বাচনের মেয়াদ অনুষ্ঠানের সময় সংক্রান্ত সংবিধানের ১২৩ অনুচ্ছেদে দফা ৩-এর পরিবর্তে ‘(৩) সংসদ সদস্যের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইবে—(ক) মেয়াদ অবসানের কারণে সংসদ ভাঙ্গিয়া যাইবার ক্ষেত্রে ভাঙ্গিয়া যাইবার পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে এবং (খ) মেয়াদ অবসান ব্যতীত অন্য কোনো কারণে সংসদ ভাঙ্গিয়া যাইবার ক্ষেত্রে ভাঙ্গিয়া যাইবার পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে; তবে শর্ত থাকে যে, এই দফার (ক) উপদফা অনুযায়ী অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে নির্বাচিত ব্যক্তিগণ উক্ত উপদফায় উল্লিখিত মেয়াদ সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত সংসদ সদস্যরূপে কার্যভার গ্রহণ করিবেন না।’ সংশোধিত সংবিধানে জরুরি অবস্থার মেয়াদ ‘অনধিক একশত কুড়ি দিন’ ধার্য করে দেয়া হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা, উপদেষ্টা পদ সংক্রান্ত ১৪৭ অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত হবে। সেই সঙ্গে এ অনুচ্ছেদ সংশোধনের সুপারিশ রয়েছে। অনুচ্ছেদ ১৫২-এর উপদেষ্টা, প্রধান উপদেষ্টা অভিব্যক্তির সংজ্ঞা বিলুপ্ত হবে। এ অনুচ্ছেদে সংশোধনীর সুপারিশ রয়েছে।৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ, ২৬ মার্চের স্বাধীনতা ঘোষণার টেলিগ্রাম এবং ১০ এপ্রিল মুজিবনগর সরকারের জারিকৃত স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র (অনুচ্ছেদ ১৫০ (২)—চতুর্থ তফসিলের পর ‘সংবিধানের পঞ্চম তফসিল, ষষ্ঠ তফসিল ও সপ্তম তফসিল’ সংযোজন করা হয়েছে বিলে

আ’লীগ ও জাপা ছাড়া সব দল তত্ত্বাবধায়ক সরকার চায়











বাছির জামাল ও জাকির হোসেন
আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি ছাড়া দেশের প্রায় সব রাজনৈতিক দল তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বহাল থাকুক—তা চায়। এ ব্যাপারে তাদের সুনির্দিষ্ট বক্তব্য হচ্ছে, বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। আলোচনা সভা, নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপ ও আমার দেশ-এর সঙ্গে প্রতিক্রিয়ায় দলগুলো এই মত প্রকাশ করে। এসব দলের মধ্যে দেশের রাজনীতিতে সক্রিয় রয়েছে এমন ৩০টিরই এ মত। দলগুলোর মধ্যে যেমন রয়েছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটের ১৩ শরিক ও সমমনা দল, তেমনি রয়েছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের ১৩ শরিক দল। এই ৩০টি সক্রিয় দল হচ্ছে মহাজোটের শরিক জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি, ন্যাপ, ১১ দলের বিভিন্ন দল, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি এবং বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের জামায়াতে ইসলামী, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি), ইসলামী ঐক্যজোট, খেলাফত মজলিস, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি, বাংলাদেশ লেবার পার্টি, বাংলাদেশ ন্যাপ, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, ন্যাপ ভাসানী এবং বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বিকল্প ধারা বাংলাদেশ, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ ও লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি প্রমুখ। রাজনৈতিক দলগুলো মনে করে, দেশের রাজনৈতিক দলুগুলোর পরস্পরের মধ্যে এখনও বিশ্বাস ও আস্থা সৃষ্টি হয়নি। নির্বাচন কমিশনও শক্তিশালী নয়। এ অবস্থায় কোনো রাজনৈতিক দলের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। রাজনীতিবিদদের মধ্যে ঝগড়া, ফ্যাসাদ না কমা পর্যন্ত এবং বর্তমান রাজনৈতিক সংস্কৃতি পরিবর্তন না হওয়া পর্যন্ত তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা রাখার পক্ষে মত দিয়েছেন তারা।তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা নিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার একটি মীমাংসিত বিষয়। এর অধীনে ৩টি নির্বাচন হয়েছে। জাতি এ ব্যবস্থাকে মেনে নিয়েছে। এখন আওয়ামী লীগ নিজের স্বার্থে একে সংবিধান থেকে উঠিয়ে দিতে চায়। একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা রাখতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের নেত্রী সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বহাল রাখলে এর অন্যান্য বিষয় নিয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনা হতে পারে। আমাদের নেত্রীর এই প্রস্তাবের পর ‘বল’ এখন তাদের (সরকার) কোর্টে। এ ব্যাপারে তাদেরই পদক্ষেপ নেয়ার পালা। জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলাম তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার পক্ষে অবস্থান নিয়ে বলেন, আমরাই প্রথম এ ব্যবস্থার দাবি করেছিলাম। এরপর অনেক আন্দোলন-সংগ্রামের পর এর বাস্তবায়ন হয়। আমাদের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার কোনো বিকল্প নেই। তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার বহাল রাখলে একে আরও কীভাবে উন্নত করা যায়, সংশোধন-বিয়োজন ও সুন্দর করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হতে পারে। কিন্তু এ ব্যবস্থা যদি বাতিল করে দেয়, তাহলে তো আর আলোচনার কোনো সুযোগ থাকে না। ইসলামী ঐক্যজোট চেয়ারম্যান মুফতি ফজলুল হক আমিনী বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার প্রয়োজন রয়েছে। আমাদের বর্তমান অসহিষ্ণু রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে। আমরা মনে করি, সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি যেভাবে রয়েছে, এর কোনো পরিবর্তন করা যাবে না। এই সরকারের বর্তমান কাঠামো ঠিক রাখলে, প্রধান উপদেষ্টার নিয়োগ বলুন, আর নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করার কথাই বলুন— এসব নিয়ে আমরা আলোচনায় বসতে পারি। কিন্তু উচ্চ আদালতের রায়ের অজুহাতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে দেয়া মানা যায় না। সাবেক রাষ্ট্রপতি বিকল্পধারা বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেন,তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন হতে হবে। রাজনীতিবিদদের মধ্যে ঝগড়া-ফ্যাসাদ না কমা পর্যন্ত এবং রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন না হওয়া পর্যন্ত তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা রাখতে হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। কোনো রাজনৈতিক দলের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দেশের সাধারণ মানুষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা নিয়ে নতুন জটিলতা সৃষ্টি হোক এটা চায় না। তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক একটি গণতান্ত্রিক সরকারের জন্য মস্তবড় কলঙ্ক। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় এটা না থাকাই বাঞ্ছনীয়। তবে ক্ষমতায় থাকার জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের পাঁয়তারা অযৌক্তিক। কোর্ট সংবিধান বাতিল কিংবা বহাল করতে পারেন না বা করেনও না। তারা সংবিধানের ব্যাখ্যা দেন। সংবিধান সম্পর্কে কোনো ষড়যন্ত্র হলে তার বিচার করেন। বর্তমানে সুপ্রিমকোর্টের রায়ের সত্যিই অপব্যাখ্যা হচ্ছে। কোর্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল বা বহাল কোনোটাই করেননি। সংসদকে সিদ্ধান্ত নিতে শুধু মনে করিয়ে দিয়েছেন। ক্ষমতাসীন মহাজোটের অন্যতম শরিক বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, দেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় আগামী দুই নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে করা উচিত। এ বিষয়ে সব দলের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করি। মহাজোটের আরেক শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের পর এখন একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান দরকার। এটা একতরফাভাবে কারও করা উচিত নয়। সব দলের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে এটা ঠিক করা উচিত। তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাঠামোর মধ্যে কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি আছে। সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্যে এর সংশোধন এবং সংযোজন প্রয়োজন। সংবিধান সংশোধন সংক্রান্ত বিশেষ কমিটির পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আমরা কোনো প্রস্তাব দিইনি। এ ব্যাপারে আলোচনার পথ সম্পূর্ণ খোলা রাখা হয়েছে। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি সাধারণ সম্পাদক মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, আদালতের রায় অনুযায়ী আরও দুই মেয়াদ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হওয়া উচিত। তবে নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য কমিশনকে আরও শক্তিশালী ও নির্বাচনে কালো টাকার খেলা বন্ধ করা উচিত। এটাই হলো আসল কাজ। বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কোনো বিকল্প নেই। যদিও এ সরকারে যারা থাকেন তারা ফেরেশতা নন। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করার মতো কোনো পরিস্থিতি আমাদের দেশে এখনও সৃষ্টি হয়নি। তাই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মধ্যে যে ত্রুটি-বিচ্যুতি আছে এগুলো সংশোধন করে আগামী কয়েক মেয়াদের জন্য এ ব্যবস্থা বহাল রাখা উচিত। বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি) চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন আশা করা যায় না। বর্তমান সরকার তত্ত্বাবধায়ক পদ্ধতি মেনে নিলেই কেবল এই পদ্ধতিকে আরও কীভাবে ভালো ও টেকসই করা যায়, তা নিয়ে আমরা আলোচনা করতে পারি। তাছাড়া নয়। তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা একটি মীমাংসিত বিষয়। জাতি এ ব্যবস্থাকে মেনে নিয়েছে। এর অধীনে ৩টি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এক-এগারো তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার মাপকাঠি হতে পারে না। এই একটি খারাপ দৃষ্টান্তের জন্য গোটা ব্যবস্থাই খারাপ হতে পারে না। খেলাফত মজলিস আমির অধ্যক্ষ মাওলানা মুহাম্মদ ইসহাক বলেন, বর্তমান উত্তপ্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে কোনো দলীয় সরকারের অধীনে কেবল নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। এ জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা থাকতে হবে। বর্তমান সংবিধানে যেভাবে এই সরকারের কাঠামো রয়েছে, সেই কাঠামো হুবহু বহাল রেখে নির্বাচন করতে হবে। এর অন্যথা আমরা মানব না

তত্ত্বাবধায়ক ছাড়া নির্বাচন মানবেন না বলেছিলেন শেখ হাসিনা : দাবি আদায়ে করেছিলেন ৯৬ দিন হরতাল : অবরোধ ও অসহযোগ
















জাকির হোসেন
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা এখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের পক্ষে দৃঢ়ভাবে অবস্থান নিলেও এক সময় তিনিই বলেছিলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও বিরোধীদলবিহীন কোনো নির্বাচন জনগণ মেনে নেবে না। নির্বাচনের নামে যে কোনো প্রহসনের নির্বাচন জনগণ প্রতিরোধ করবে। একই সঙ্গে তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় পার্টিকে নিয়ে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন। এই তিন দলের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিল পাস এবং বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাফল্য কামনা করে বলেছিলেন, জনগণের অপরিসীম ত্যাগ ও তিন দলের আন্দোলনের ফলে বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার দাবি মানতে বাধ্য হয়েছে। বাঙালি জাতি আরেকবার প্রমাণ করেছে, জনতার ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামের কাছে কোনো স্বৈরাচারী শক্তিই টিকে থাকতে পারে না। ন্যায় ও সত্যের সংগ্রাম সব সময় জয়ী হয়। এর আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে ’৯৪, ’৯৫ ও ’৯৬ সালের আন্দোলনে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি এবং জামায়াতে ইসলামী অভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে মোট ৯৬ দিন হরতাল, অবরোধ এবং অসহযোগ কর্মসূচি পালন করে। এর মধ্যে ৭০ দিন হরতাল-অবরোধ এবং ২৬ দিন অসহযোগ। এসব কর্মসূচিতে সকাল-সন্ধ্যা হরতালের পাশাপাশি একটি লাগাতার ৯৬ ঘণ্টা, ২টি ৭২ ঘণ্টা এবং ৫টি ৪৮ ঘণ্টার হরতাল ডাকা হয়। ’৯৬ সালের ৩ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আয়োজিত এক জনসভায় বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ভেবেছেন রোজার মাসে হরতাল হবে না। ইচ্ছেমতো ভোট চুরি করে একদলীয় নির্বাচন করিয়ে নেবেন। কিন্তু তিনি জানেন না, রোজার মাসেও যুদ্ধ হয়েছিল।আন্দোলনের এক পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে টার্গেট করে হরতালের কর্মসূচি দিয়েছিল আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াত। এক্ষেত্রে ’৯৬ সালের নির্বাচেন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া যেখানেই নির্বাচনী সফরে গিয়েছিলেন সে জেলাতেই হরতাল ডেকেছিল আওয়ামী লীগ, জামায়াত ও জাতীয় পার্টি। এসব কর্মসূচিতে ব্যাপক ভাংচুর, বোমাবাজি, ককটেল নিক্ষেপ, অগ্নিসংযোগ এবং গোলাগুলির ঘটনা ঘটে এবং সহিংসতায় নিহত হয় অর্ধশতাধিক মানুষ, আহত হয় সহস্রাধিক। ’৯৬ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি দৈনিক সংবাদে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, শুধু ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের দিন হরতাল ও গণকারফিউ কর্মসূচিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষে ১৫ জন নিহত এবং আহত হয় আরও ছয় শতাধিক মানুষ।এসব ঘটনা ওই সময়ের বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশিত হয়। এ বিষয়ে দৈনিক ইনকিলাবে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন এবং ’৯৪, ’৯৫ ও ’৯৬ সালে আওয়ামী লীগ, জামায়াত ও জাতীয় পার্টির অভিন্ন কর্মসূচি হিসেবে পালিত হরতাল, অবরোধ ও অসহযোগ বিষয়ে দৈনিক আমার দেশ-এর গবেষণা ইউনিটের কিছু তথ্য তুলে ধরা হলো— তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও বিরোধী দলবিহীন নির্বাচন জনগণ মেনে নেবে না —শেখ হাসিনা স্টাফ রিপোর্টার : মহানগর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় গতকাল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও বিরোধী দলবিহীন কোনো নির্বাচন জনগণ মেনে নেবে না। নির্বাচনের নামে যে কোনো প্রহসনের নির্বাচন জনগণ প্রতিরোধ করবে। আমি একটি অর্থবহ নির্বাচন চাই। তিনি বলেন, এক ব্যক্তির ক্ষমতার মোহই দেশকে সংঘাত ও সন্ত্রাসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। ভোটচুরি আমরা বরদাশত করতে পারি না। জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যই আমরা নিরপেক্ষ নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করছি। এই দাবি মেনে না নিলে যদি দেশে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় তবে তার দায়ভার সরকারকেই নিতে হবে। দাবি না মানলে প্রধানমন্ত্রীর যে পরিণতি হবে তার জন্য আওয়ামী লীগ দায়ী থাকবে না। শেখ হাসিনা আজকের অবরোধ কর্মসূচি ও আগামী ৩ ও ৪ জানুয়ারি ৪৮ ঘণ্টার হরতালকে সফল করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, দাবি আদায় না করে ঘরে ফিরবেন না। সবাই মাঠে নেমে পড়ুন, যে কোনো ত্যাগ স্বীকারের জন্য প্রস্তুত থাকুন।... তিনি বলেন, বিরোধী দলের আন্দোলনের সাথে জড়িত কেউ যদি মোনাফেকি করে সরকারের সাথে নির্বাচনে যায়, তবে তার সম্পর্কে আপনারা যা খুশি তাই ব্যবস্থা নেবেন। ... শেখ হাসিনা বিরোধী দলের দাবি নিয়ে জনগণের কাছে যাবার জন্য দলীয় নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেন এবং বলেন, কেন আমরা তত্ত্বাবধায়ক সরকার চাই, সরকার কিভাবে বিরোধী দলের দাবি নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে তা জনগণকে বুঝাতে হবে। মহিলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ নেতৃবৃন্দকেও জনগণের কাছে যেতে হবে। (দৈনিক ইনকিলাব : ৩০ ডিসেম্বর শনিবার, ১৯৯৫) তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠায় আওয়ামী লীগ, জামায়াত ও জাতীয় পার্টির অভিন্ন কর্মসূচি হিসেবে ’৯৪, ’৯৫ ও ’৯৬ সালে ডাকা হরতাল, অবরোধ এবং অসহযোগের কিছু চিত্র— ১৯৯৪ সাল : ২৬ এপ্রিল ( হরতাল), ১০ সেপ্টেম্বর (অবরোধ), ১১, ১২ ও ১৩ সেপ্টেম্বর (হরতাল), ২৭ সেপ্টেম্বর (অবরোধ), ৩০ নভেম্বর (অবরোধ), ৭ ও ৮ ডিসেম্বর (হরতাল), ২৪ ডিসেম্বর (অবরোধ), ২৯ ডিসেম্বর (অবরোধ)। ১৯৯৫ সাল : ২, ৩ ও ৪ জানুয়ারি (হরতাল), ১৯ জানুয়ারি (অবরোধ), ২৪ ও ২৫ জানুয়ারি (হরতাল), ১২ ও ১৩ মার্চ (লাগাতার ৪৮ ঘণ্টা হরতাল), ২৮ মার্চ (ঢাকা অবরোধ), ৯ এপ্রিল (৫ বিভাগে হরতাল), ২ ও ৩ সেপ্টেম্বর (লাগাতার ৩২ ঘণ্টা হরতাল), ৬ সেপ্টেম্বর (সকাল-সন্ধ্যা হরতাল), ১৬, ১৭, ১৮ সেপ্টেম্বর (লাগাতার ৭২ ঘণ্টা হরতাল), ৭ এবং ৮ অক্টোবর (পাঁচ বিভাগে লাগাতার ৩২ ঘণ্টা হরতাল), ১৬, ১৭, ১৮ এবং ১৯ অক্টোবর (লাগাতার ৯৬ ঘণ্টা হরতাল), ৬ নভেম্বর (ঢাকা অবরোধ), ১১, ১২, ১৩, ১৪, ১৫ এবং ১৬ নভেম্বর ( প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যা হরতাল), ৯, ১০ এবং ১১ ডিসেম্বর (লাগাতার ৭২ ঘণ্টা হরতাল), ১৭ ডিসেম্বর (সকাল-সন্ধ্যা হরতাল), ৩০ ডিসেম্বর (দেশব্যাপী অবরোধ)। ১৯৯৬ সাল : ৩ ও ৪ জানুয়ারি (লাগাতার ৪৮ ঘণ্টা হরতাল), ৮ ও ৯ জানুয়ারি (লাগাতার ৪৮ ঘণ্টা হরতাল), ১৭ জানুয়ারি (সকাল-সন্ধ্যা হরতাল), ২৪ জানুয়ারি (সিলেটে ১১ ঘণ্টা হরতাল), ২৭ জানুয়ারি (খুলনায় সকাল-সন্ধ্যা হরতাল), ২৮ জানুয়ারি (খুলনায় অর্ধদিবস হরতাল), ২৯ জানুয়ারি (ঢাকায় সকাল-সন্ধ্যা হরতাল), ৩০ জানুয়ারি (চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল), ১ ফেব্রুয়ারি (বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় হরতাল), ৩ ফেব্রুয়ারি (অর্ধদিবস হরতাল), ৭ ফেব্রুয়ারি ফেনীতে (সকাল ৬টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত হরতাল), ৮ ফেব্রুয়ারি (ফেনীতে হরতাল), ১০ ফেব্রুয়ারি (রাজশাহীতে হরতাল), ১১ ফেব্রুয়ারি (সিরাজগঞ্জে হরতাল), ১৩ ফেব্রুয়ারি (দেশব্যাপী অবরোধ), ১৪ এবং ১৫ ফেব্রুয়ারি (দেশব্যাপী ৪৮ ঘণ্টা লাগাতার হরতাল), ২৪, ২৫, ২৬ ও ২৭ ফেব্রুয়ারি লাগাতার অসহযোগ), ৯ মার্চ থেকে ৩০ মার্চ পর্যন্ত লাগাতার ২২ দিন অসহযোগ

তত্ত্বাবধায়ক ইস্যুতে উত্তপ্ত রাজনীতি : দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব : প্রধানমন্ত্রী















সংসদ রিপোর্টার
প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন, ত্রয়োদশ সংশোধনী অবৈধ ও অসাংবিধানিক ঘোষণা করে সুপ্রিমকোর্টের রায়ের পর সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা রাখার আর সুযোগ নেই। তিনি বলেন, সরকার কিংবা আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেনি, সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে বাতিল হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সরকারের করণীয় কিছু নেই। আর সুপ্রিমকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ার কোনো সুযোগ সাংবিধানিকভাবে কারও নেই। আইনের শাসন মানতে হলে সর্বোচ্চ আদালতের রায় মানতেই হবে। বিদায়ী সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ইঙ্গিত দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীন ও শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা করবে, সরকার থেকে কোনো প্রভাব বিস্তার করা হবে না।নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করার ওপর গুরুত্ব দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন পরিচালনার জন্য নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করা হবে। সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে নির্বাচন কমিশন কাজ করবে। ‘ওয়ান ম্যান ওয়ান ভোট’ নিশ্চিত করতে ও কারচুপি ঠেকাতে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং পদ্ধতি চালু, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স প্রবর্তন, ছবিসহ ভোটার তালিকা এবং আইডি কার্ড চালু করা হবে। আলোচনার মাধ্যমে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করা হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে বিরোধী দলের মতামত অবশ্যই গ্রহণ করা হবে। আলোচনার মাধ্যমে কমিশন গঠন করা যেতে পারে।দলীয় সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন হবে কি-না প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কোনো সরকার নির্বাচন পরিচালনা করবে না। সংসদীয় গণতন্ত্রে যেভাবে নির্বাচন সম্পন্ন হয় ঠিক সেভাবেই নির্বাচন কমিশন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন করবে। ছবিসহ ভোটার তালিকা এবং স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স রয়েছে। এখন ইলেক্ট্রনিক ভোটিং সিস্টেম চালু করতে চাই। এ তিনটি কাজ হলে নির্বাচনে কোনো প্রকার কারচুপির সুযোগ থাকবে না। বিরোধী দলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ষড়যন্ত্র, হত্যা ও উস্কানীর রাজনীতি বন্ধ করে সংসদে এসে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রশ্নে মতামত জানান।সংবিধান সংশোধনে গঠিত সংসদীয় কমিটির সঙ্গে বৈঠকে আদালতের রায় অনুযায়ী তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্তের একদিন পর গতকাল বিকালে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংসদ নেতা শেখ হাসিনা নিজেই এর কারণ ব্যাখ্যা করেন। বিরোধী দল বিএনপির মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবিকে ‘অযৌক্তিক’ ও দেশে অরাজকতা সৃষ্টির পাঁয়তারা অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন রাখেন তারা মধ্যবর্তী নির্বাচন চান, কিন্তু কেন? মধ্যবর্তী নির্বাচন কখন হয়? সংবিধান অনুযায়ী একমাত্র সরকারি দল সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারালেই মধ্যবর্তী নির্বাচনের প্রয়োজন পড়ে। সরকারি দল আওয়ামী লীগ কী সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছে? আর খালেদা জিয়া ও তার দলও কী এখন নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত আছে? মধ্যবর্তী নির্বাচন হলেও গ্যারান্টি কি যে তিনিই (খালেদা জিয়া) জিতবেন। বিরোধী দলের প্রতি হুশিয়ারি উচ্চারণ করে তিনি বলেন, অহেতুক দাবি তুলে দেশে অরাজক পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা যদি কেউ করতে চায়, তাহলে আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে। সম্প্রতি তুরস্ক, ফ্রান্স ও সুইজারল্যান্ড সফর নিয়ে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হলেও শেষ পর্যন্ত এতে জাতীয় রাজনীতি, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যু এবং আগামী নির্বাচন নিয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের খোলামেলা উত্তর দেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি, স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. আ ফ ম রুহুল হক, বন ও পরিবেশ প্রতিমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতির বিলুপ্তি প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের একাধিক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার বা আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার বিরুদ্ধে কোনো অবস্থান নেয়নি। সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে অবৈধ ও অসাংবিধানিক ঘোষণা করেছে। একটি মহল দুরভিসন্ধিমূলকভাবে এ দায় আমার কাঁধে চাপানোর চেষ্টা করছে। আদালতের রায় অনুযায়ী এ ব্যবস্থা অবৈধ হয়ে গেছে, এখানে আমাদের করার কিছু নেই। গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে একটি মহল পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র করছে এমন অভিযোগ তুলে শেখ হাসিনা বলেন, দেশে কিছু লোক আছে যাদের দল ও রাজনীতির মাধ্যমে কষ্ট করার ইচ্ছা নেই, কিন্তু ক্ষমতার উচ্চ আসনে বসার লোভ রয়েছে। এসব লোক দেশে গণতন্ত্র থাকলে মূল্যহীন থাকেন, অসাংবিধানিক সরকার ক্ষমতায় এলে তাদের মূল্য অনেক বাড়ে। বর্তমান গণতান্ত্রিক সরকারের আমলে এই শ্রেণীর মানুষের দুঃখ-বেদনা সবচেয়ে বেশি। তারা ‘মোচে তা’ দিচ্ছে কবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসবে, তাদের গুরুত্ব বাড়বে। এরা মুখে গণতন্ত্রের কথা বললেও নিজেদের অবস্থা পরিবর্তনে অগণতান্ত্রিক পথই খুঁজে বেড়ায়। তাদের যদি সত্যিই রাজনীতি করার ইচ্ছা থাকে তবে তাদের বলব জনগণের কাছে গিয়ে আস্থা অর্জন করে নির্বাচনে জিতে আসুন। তখন বড় বড় কথা বলুন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, সংবিধান সংশোধন বিষয়ে একটি বিশেষ সংসদীয় কমিটি কাজ করছে। সুপ্রিমকোর্টের রায়ের প্রেক্ষিতে সেখানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতির বিষয়টিও আলোচনায় চলে এসেছে। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী গত কয়েকটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে বলেন, ১৯৯৪ সালের ২০ মার্চ মাগুরা উপ-নির্বাচনে নজিরবিহীন ভোট কারচুপির প্রেক্ষাপটে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি ওঠে। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বিএনপি ভোটারবিহীন নির্বাচন করে। পরে জনগণের আন্দোলনের মুখে বিএনপি সরকার ১৯৯৬ সালের ২৫ মার্চ মধ্যরাতে কারও সঙ্গে আলোচনা না করেই সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করে। ভোটারবিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত বিএনপি সরকার ৩০ মার্চ পদত্যাগে বাধ্য হয়, তাদের পতন ঘটে। যে প্রেক্ষাপটে সে সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি উঠেছিল, তা এখন আর নেই বলেও প্রধানমন্ত্রী মন্তব্য করেন।দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব দাবি করে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বর্তমান সরকারের আমলে যতগুলো নির্বাচন হয়েছে, সবগুলোই অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠুভাবে হয়েছে। সংসদের বেশ কয়েকটি উপ-নির্বাচন এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। হবিগঞ্জ উপনির্বাচনে মাগুরা উপ-নির্বাচনের মতো ঘটনা ঘটেনি। আওয়ামী লীগ কোন নির্বাচনেই প্রভাব বিস্তার করেনি। তিনি দাবি করেন, আওয়ামী লীগ প্রমাণ করেছে সরকার আন্তরিক ও গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হলে দলীয় সরকারের আমলেও অবাধ, নিরপেক্ষ এবং সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব। তিনি বলেন, সুপ্রিমকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ার কোনো সুযোগ সাংবিধানিকভাবে নেই। অষ্টম সংশোধনী বাতিলের উদাহরণ আমাদের সামনে রয়েছে। সংসদে আইন পাস করেও সেই সংশোধনী টেকেনি। তিনি বলেন, সংবিধান সংশোধনের জন্য আমরা একটি সর্বদলীয় সংসদীয় কমিটি গঠন করেছি। বিএনপি সেই কমিটিতে কোনো প্রতিনিধি দেয়নি। এসব সংশোধনী চূড়ান্ত করার জন্য সমাজের সব স্তরের মানুষের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। বিএনপিকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে কিন্তু তারা আসেনি। তিনি বলেন, সংসদে এ বিষয়ে আরও আলোচনা হবে। তাই বিএনপির প্রতি অনুরোধ জানাব, সংসদে এসে তাদের মতামত জানানোর। বাংলাদেশের সংবিধানে অতীতে ১৪টি সংশোধনী হয়েছে। কিন্তু অতীতে কোনো সংশোধনী নিয়েই এত বিশদ আলোচনা করা হয়নি। তিনি বলেন, আমরা গণতন্ত্রকে সুসংহত করতে চাই। কারণ গণতন্ত্র ছাড়া দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, জনগণের কল্যাণ এবং সরকারের জবাবদিহিতা নিশ্চিত হয় না। সমঝোতা ছাড়া একতরফাভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিলুপ্ত করা হলে দেশ সংঘাত-সংঘর্ষের দিকে ধাবিত হবে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী পাল্টা প্রশ্ন রেখে বলেন, অতীতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় সংঘাত-সংঘর্ষ হয়নি? আর বিরোধী দল তো সবকিছুতেই বিরোধিতা করছে। একবার বলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার চাই, তবে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হককে মানব না। অন্যজনকে করা হলে তখনও বলবে মানব না। আসলে তারা কী চায় তা জাতির সামনে স্পষ্ট করতে হবে। ক্ষমতা হস্তান্তর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, একমাত্র আওয়ামী লীগ ছাড়া অতীতে কোনো দলই শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করেনি। সংসদীয় পদ্ধতির সরকার অনুযায়ী নির্বাচনের পর ক্ষমতা হস্তান্তরের যে বিধান রয়েছে তাই করা হবে।বিরোধী দলের কঠোর সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সম্প্রতি যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র সফরে গিয়ে বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া দেশ সম্পর্কে বিভিন্ন ধরনের অসত্য তথ্য তুলে ধরে আমাদের উন্নয়ন সহযোগীদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছেন। আড়াই বছর পর বিরোধী দলের নেতার মনে হয়েছে, আমরা নাকি ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছি! কোথায়-কীভাবে ইঞ্জিনিয়ারিং হলো তা খালেদা জিয়াকে দেশবাসীর সামনে স্পষ্ট করে বলতে হবে। ২০০৮ সালের নির্বাচনকে আন্তর্জাতিক মহল বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং অবাধ বলে রায় দিয়েছে।শেখ হাসিনা অভিযোগ করেন, বিরোধীদলীয় নেতার যাতনা আমরা বুঝি। তিনি (খালেদা জিয়া) দেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হোক, সম্পদ লুণ্ঠনকারীদের বিচার হোক তা চান না। তাদের এক নেতা তো দাবিই তুলেছেন, বিরোধী দলের নেতা এবং তার দুই ছেলের বিরুদ্ধে মামলা তুলে নিলে তারা নাকি সংসদে যোগ দেবেন! অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলেও রাজনৈতিক সংঘাত হয়েছে। অ্যাম্বুলেন্সে অস্ত্র এনে বৃষ্টির মতো গুলি করেছে। এছাড়া বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া অতীতে বলেছেন, পাগল এবং শিশু ছাড়া কেউ নিরপেক্ষ নয়। এখন তিনি কোন পাগলের অধীনে নির্বাচন করতে চান তা জানাতে হবে। তিনি বলেন, যখন কোনো রাজনৈতিক দল ক্ষমতার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে তখন সংঘাত হয়। আওয়ামী লীগ ক্ষমতার জন্য কখনও মরিয়া ছিল না। আগামীতেও আওয়ামী লীগে ক্ষমতার লোভ থাকবে না। জনগণ যাকে ভোট দেবে সেই সরকার গঠন করবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করতে প্রয়োজনে সংবিধানে সংশোধনী আনা যেতে পারে। নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ নিয়ে ভবিষ্যতে যাতে কোনো বিতর্ক না হয় সেজন্য এক্ষেত্রে স্বচ্ছতা আনা হবে। প্রয়োজনে সব রাজনৈতিক দলের মতের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ করা হবে। পরবর্তী ২ মেয়াদে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য সুপ্রিমকোর্টের পরামর্শ সম্পর্কে শেখ হাসিনা বলেন, সুপ্রিমকোর্টের রায়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিল হয়েছে। এটা অবশ্য মানতে হবে। আর ২ মেয়াদে নির্বাচনের পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন। পর্যবেক্ষণ অবশ্য পালনীয় নয়। এছাড়া সুপ্রিমকোর্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতির সঙ্গে বিচার বিভাগকে সম্পৃক্ত না করার পরামর্শ দিয়েছেন

রোববার হরতাল : তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিলের প্রতিবাদে বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা কর্মসূচি ঘোষণা

স্টাফ রিপোর্টার
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের সরকারি সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে আগামী ৫ জুন রোববার সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন বিরোধী জোট ও সমমনা দলগুলো। গতকাল পৃথক সংবাদ সম্মেলনে হরতালের এ ঘোষণা দেয়া হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বহাল রাখার সুযোগ নেই বলে মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার প্রেক্ষিতে বিরোধী দলের পক্ষ থেকে হরতালের মতো কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হলো। বিএনপি ছাড়াও পৃথকভাবে হরতালের ঘোষণা দিয়েছে চারদলীয় ঐক্যজোটের শরিক দল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি), ইসলামী ঐক্যজোট, খেলাফত মজলিস, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা), বাংলাদেশ লেবার পার্টি, বাংলাদেশ ন্যাপ, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি), বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ-ভাসানী) ও ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (এনডিপি)।মঙ্গলবার দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্তের ধারাবাহিকতায় গতকাল দুপুরে নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। মগবাজারে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে হরতালের ঘোষণা দেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলাম। জোটগতভাবে বিরোধী দলের এটিই প্রথম হরতাল। এর আগে বিএনপি আরও ৪টি হরতালের কর্মসূচি দেয়। গত বছরের ২৭ জুন হরতালের প্রথম কর্মসূচি দেয় দলটি। এরপর গত বছরের ১৪ নভেম্বর, ৩০ নভেম্বর ও চলতি বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি হরতাল পালন করে বিএনপি। সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল বলেন, আগামী নির্বাচনে সাফল্য লাভ করতে পারবে না নিশ্চিত হয়েই দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করে কৌশলে কারচুপির মাধ্যমে ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিল করতে চাচ্ছে সরকার। আমরা সরকারের এহেন সিদ্ধান্ত ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করে হরতালের কর্মসূচি ঘোষণা করছি।সংবিধান সংশোধন প্রক্রিয়ায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা না রাখার পক্ষে অবস্থানের কথা এরই মধ্যে জানিয়েছে সরকারি দল। মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আদালতের রায়ের পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা রাখার আর সুযোগ নেই। সরকারি দলের অবস্থান জানার পর মঙ্গলবারই দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। এরপর চারদলীয় জোট শরিকদের সঙ্গেও কথা বলেন তিনি। এরপর বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান সাংবাদিকদের বলেন, সরকারের এ সিদ্ধান্ত গণতন্ত্র ধ্বংস করার এক মহাপরিকল্পনা। এটি প্রকৃতপক্ষে একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠার নীল নকশা। এর ফলে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা বহুগুণ বেড়ে যাবে।মির্জা ফখরুল ৫ জুন সরকারি-বেসরকারি অফিস, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং যান চলাচল বন্ধ রেখে হরতাল কর্মসূচি সফল করার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, আওয়ামী লীগের অধীনে অতীতে কোনো নির্বাচন নিরপেক্ষ হয়নি, ভবিষ্যতেও হবে না। আওয়ামী লীগের অধীনে কোনো জাতীয় নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি। মির্জা ফখরুল সরকারকে হুশিয়ার করে বলেন, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের পথে এগুলে বিএনপি কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলবে। বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী মানুষ চিরকাল অন্যায় ও স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে বিজয় অর্জন করেছে। এবারও সত্য-ন্যায় ও গণতন্ত্রের বিজয় অবশ্যম্ভাবী ইনশাল্লাহ। তিনি মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংবাদ সম্মেলনের কথা উল্লেখ করে বলেন, এর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি কলঙ্কময় অধ্যায়ের সূচনা করলেন। মাত্র চার সপ্তাহ আগে ২৭ এপ্রিল নিজে সংবিধান সংশোধনে গঠিত সংসদীয় বিশেষ কমিটির কাছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষে মত দিয়েছিলেন। চার সপ্তাহ পর নিজের অবস্থান থেকে একেবারে ইউ টার্ন করে সাবেক প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সুর মিলিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে ‘অবৈধ ও অসাংবিধানিক’ বললেন এবং ‘এই ব্যবস্থা বহাল রাখার আর কোনো সুযোগ নেই’ বলে সিদ্ধান্ত দিলেন। সরকারের এ সিদ্ধান্ত দেশকে চরম রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক সঙ্কটে ফেলে দেবে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, এতে দেশে অর্থনৈতিক ও নৈরাজ্য সৃষ্টি হলে তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। অনিশ্চয়তা, অস্থিতিশীলতা দেশের গণতন্ত্র ও অর্থনৈতিক উন্নয়নকে বিপন্ন করবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের ব্যাপারে আপিল বিভাগ যে রায় দিয়েছেন, তা দ্বিধাবিভক্ত ছিল বলে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা একটি মীমাংসিত বিষয়। এ নিয়ে কোনো বিতর্ক ছিল না। এই মীমাংসিত রাজনৈতিক ইস্যুতে রায় দেয়ার এখতিয়ার আদালতের আছে কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি। সুপ্রিমকোর্টের এ রায় জনগণ ও সংসদ মানতে বাধ্য নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা নিয়ে মামলার শুনানিকালে দেশের প্রবীণ আইনজীবীরা এ ব্যবস্থা রাখার পক্ষে মত দিয়েছেন। দেশের বিশিষ্ট নাগরিক, সুশীল সমাজের সদস্য, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, সম্পাদক ও সাংবাদিকরাও তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা রাখার পক্ষে সংসদীয় কমিটির কাছে মত দিয়েছিলেন। তিনি বলেন, জনগণের সমস্যার ন্যূনতম সমাধান করতে ব্যর্থ হয়েছে সরকার। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদিসহ বিদ্যুত্, গ্যাস ও তেলের দাম বেড়েই চলেছে। তারপরও গ্যাস, বিদ্যুত্ ও পানির অভাব চারদিকে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। ঢাকায় যানজট চরম আকার ধারণ করেছে। চাকরি নেই, কাজ নেই, পুঁজিবাজারে চরম ধস নেমেছে। ৩৩ লাখ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী নিঃস্ব হয়েছে। ব্যাংকে তারল্য সঙ্কট তীব্র আকার ধারণ করেছে। সাধারণ মানুষের জীবন দুঃসহ হয়ে পড়েছে। কাটা-ছেঁড়া করে সংবিধান তছনছ করা হয়েছে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী নিজে ’৯৬ সালে জাতীয় পার্টি, জামায়াতে ইসলামীসহ অন্য দলগুলোকে নিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে একটি ইস্যু তৈরি করে বলেছিলেন, এ ব্যবস্থা ছাড়া ভোট ও ভাতের অধিকার রক্ষা করা যাবে না। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে বহু রক্তপাত হয়েছে, সম্পদ বিনষ্ট হয়েছে। আজ তিনিই তার অবস্থান থেকে সরে এসে জাতিকে অনিশ্চয়তা, অস্থিতিশীলতা, সংঘাত ও সংঘর্ষের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন। মির্জা ফখরুল জানান, অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার ব্রিগেড, খাবার দোকান, ওষুধের দোকান ও হাসপাতালসহ যেসব এলাকায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন হচ্ছে, সেসব এলাকা হরতালের আওতামুক্ত থাকবে। সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, সহ-সভাপতি আবদুল্লাহ আল নোমান, যুগ্ম মহাসচিব আমানুল্লাহ আমান, রুহুল কবির রিজভী, বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক, ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি এমপি, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নাজিম উদ্দিন আলম, যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম নীরব, স্ব্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেল, নিলুফার চৌধুরী মনি এমপি, সহ-দফতর সম্পাদক আবদুল লতিফ জনি, কৃষিবিদ শামিমুর রহমান শামীম, আসাদুল করিম শাহীন, ছাত্রদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু প্রমুখ। জামায়াতে ইসলামী : তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের সরকারি ঘোষণার প্রতিবাদে আগামী ৫ জুন দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা হরতালের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। গতকাল মগবাজার কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দলের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলাম এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘সুপ্রিমকোর্টের রায়ে অবৈধ ঘোষণার পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বহাল রাখার আর কোনো সুযোগ নেই’ মর্মে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে স্পষ্ট হয়ে গেছে, সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা আর থাকছে না। প্রধানমন্ত্রীর এ ঘোষণা দেশবাসী প্রত্যাখ্যান করেছে। তিনি বলেন, দলীয় সরকারের অধীনে অতীতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ না হওয়ার কারণেই ১৯৮০ সালের ৭ ডিসেম্বর জামায়াতে ইসলামীর তত্কালীন ভারপ্রাপ্ত আমির মরহুম আব্বাস আলী খান এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফর্মুলা পেশ করেন। ১৯৮৩ সালের ১৯ নভেম্বর তিনি বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেটে আয়োজিত এক বিরাট জনসভায় এ ফর্মুলা আবার তুলে ধরেন। পরবর্তীতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবি গণদাবিতে পরিণত হয়। তিনি বলেন, স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে বিএনপির নেতৃত্বে ৭ দল, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৫ দল এবং জামায়াতে ইসলামীর যুগপত্ আন্দোলন প্রচণ্ড রূপ ধারণ করলে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর স্বৈরশাসনের পতন হয় এবং ওইদিন তত্কালীন প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হয়। সে সরকারের অধীনে ১৯৯১ সালে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এরপর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবিধানে অন্তর্ভুক্তির জন্য জামায়াত, আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি আন্দোলন শুরু করে। আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবিধানে সন্নিবেশিত হয়। তারপর থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচন দেশ-বিদেশে ব্যাপকভাবে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। তিনি বলেন, দলীয় সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন না হওয়ার প্রেক্ষাপটেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা চালু হয়। এ অবস্থা এখনও বিরাজ করছে। তাই এর প্রয়োজনীয়তা এখনও শেষ হয়ে যায়নি। এ ব্যবস্থা সংবিধানে রাখার ব্যাপারে জাতি আজও ঐক্যবদ্ধ। সংসদীয় বিশেষ কমিটি সংবিধান সংশোধনের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পরামর্শ গ্রহণের জন্য যেসব বুদ্ধিজীবী ও সাংবাদিককে ডেকেছিল, তারাও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ব্যবস্থা সংবিধানে বহাল রাখার পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার আদালতের কাঁধে বন্দুক রেখে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করার ঘোষণা দিয়েছে। দেশের জনগণ এখনও বিশ্বাস করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার কোনো বিকল্প নেই। কোনো দলীয় সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ নির্বাচন সম্ভব নয়। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ সরকার প্রশাসন, পুলিশ ও বিচার বিভাগকে যেভাবে দলীয়করণ করেছে, তাতে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ কোনো নির্বাচন হতেই পারে না। জাতি তাই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিধান সংবিধানে বহাল রাখা হোক—তা আন্তরিকভাবে কামনা করে।এটিএম আজহার বলেন, আওয়ামী লীগ ফখরুদ্দীন-মইনুদ্দিনের জরুরি সরকারের নীল নকশার ডিজিটাল কারচুপির মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছে। তারা কোনো নির্বাচনী ওয়াদা ও জনসমস্যার সমাধান করতে পারেনি। সবক্ষেত্রে ব্যর্থতার কারণে সরকার জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। তাই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে গণবিচ্ছিন্ন এই সরকার ক্ষমতায় আসতে পারবে না বুঝতে পেরেই দলীয় সরকার ও আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচন করে ষড়যন্ত্রের পথে পুনরায় ক্ষমতায় আসার পাঁয়তারা করছে। তারা এ উদ্দেশ্যেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের ঘোষণা দিয়েছে। জাতি তাদের এ ঘোষণা কখনও মেনে নেবে না। পরে তিনি ৫ জুন হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করেন। তবে যেসব এলাকায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, তা হরতালের আওতামুক্ত থাকবে বলে জানান। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন দলের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান, কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক অধ্যাপক মো. তাসনীম আলম, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের, মাওলানা এটিএম মাসুম, মুহাম্মাদ আবদুর রব, ঢাকা মহানগরী সেক্রেটারি হামিদুর রহমান আযাদ এমপি, কেন্দ্রীয় সহকারী প্রচার সম্পাদক মতিউর রহমান আকন্দ ও ঢাকা মহানগরী নেতা ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ।বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি) : বিজেপি চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ ও মহাসচিব শামীম আল মামুন গতকাল এক যুক্ত বিবৃতিতে ৫ জুন ঢাকাসহ সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল আহ্বান করেন। তারা হরতাল কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের জন্য দলের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীসহ জনগণের প্রতি আহ্বান জানান। খেলাফত মজলিস : খেলাফত মজলিসের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গতকাল বিজয়নগরে অনুষ্ঠিত সংগঠনের নির্বাহী কমিটির সভায় আগামী ৫ জুন ঢাকাসহ সারাদেশে হরতাল আহ্বানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন দলের আমির অধ্যক্ষ মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাক। জাগপা : বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) মুহাম্মদপুরের দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে আগামী ৫ জুন ঢাকাসহ সারাদেশে হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করে। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠন সভাপতি শফিউল আলম প্রধান। উপস্থিত ছিলেন সাধারণ সম্পাদক খন্দকার লুত্ফর রহমান ও ঢাকা মহানগর সভাপতি আসাদুর রহমান খান। বাংলাদেশ ন্যাপ : বাংলাদেশ ন্যাপ তার নয়াপল্টনের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে ৫ জুন ঢাকাসহ সারাদেশে হরতাল আহ্বান করে। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের মহাসচিব এম গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া। বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি। সংগঠনটি আজ ঢাকা মহানগরের উদ্যোগে বিক্ষোভ সমাবেশ, ৩ জুন জেলায় জেলায় সমাবেশ ও ৪ জুন হরতারের সমর্থনে সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করে।
বাংলাদেশ লেবার পার্টি : সংগঠনটি তার ফকিরাপুলের কার্যালয়ে নির্বাহী কমিটির সভা করে আগামী ৫ জুন ঢাকাসহ সারাদেশে হরতালের কর্মসূচি ঘোষণা করে। এতে সভাপতিত্ব করেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান।
ন্যাপ (ভাসানী) : সংগঠনটির চেয়ারম্যান শেখ আনোয়ারুল হক ও মহাসচিব হাসরাত খান ভাসানী গতকাল এক বিবৃতিতে আগামী ৫ জুন ঢাকাসহ সারাদেশে হরতালের কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
বাংলাদেশ মুসলিম লীগ : সংগঠনটির স্থায়ী কমিটির এক জরুরি সভায় আগামী ৫ জুন ঢাকাসহ সারাদেশে হরতাল কর্মসূচির ঘোষণা দেয়া হয়। গতকাল বনানীর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনটির সভাপতি জিএ খান অ্যাডভোকেট।
এনপিপি : সংগঠনটির প্রেসিডিয়ামের এক জরুরি বৈঠকে আগামী ৫ জুন ঢাকাসহ সারাদেশে হরতালের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। গতকাল কাকরাইলের দলীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন দলটির চেয়ারম্যান শেখ শওকত হোসেন নিলু