Sunday 27 March 2011

ইসলামী দলগুলোর বিক্ষোভে উত্তাল রাজধানী : ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ড প্রতিহতের ঘোষণা











স্টাফ রিপোর্টার
কোরআনবিরোধী নারীনীতি ও ফতোয়াবিরোধী আদালতের রায় বাতিল, ধর্মহীন শিক্ষানীতি সংশোধন ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ডিজিকে অপসারণের দাবিসহ সরকারের ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে গতকাল রাজধানীসহ সারাদেশে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে অধিকাংশ ইসলামী সংগঠন। অভিন্ন দাবিতে ইসলামী দলগুলোর পৃথক বিক্ষোভ সমাবেশে উত্তাল হয়ে ওঠে রাজধানীর মুক্তাঙ্গন। জুমার নামাজের পরপরই বিভিন্ন দাবিতে মুক্তাঙ্গন এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে মাওলানা মুহিউদ্দীন খানের নেতৃত্বাধীন সম্মিলিত ওলামা-মাশায়েখ পরিষদ, মুফতি ফজলুল হক আমিনীর নেতৃত্বাধীন ইসলামী আইন বাস্তবায়ন কমিটি এবং চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ বেশকিছু সংগঠন। বিক্ষোভ চলাকালে বেশ কয়েক ঘণ্টা মুক্তাঙ্গন ও পল্টন এলাকার সড়কগুলোতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় পানিকামান, রায়ট কার ও প্রিজনভ্যান নিয়ে ব্যাপক সংখ্যক পুলিশ অবস্থান নেয়।
এসব সমাবেশে বক্তারা বলেন, কোরআন ও সুন্নাহবিরোধী কোনো আইন না করার ওয়াদা করেও সরকার ক্ষমতায় এসে একের পর এক ইসলামবিরোধী পদক্ষেপ নিচ্ছে। ৯০ শতাংশ মুসলমানের এদেশে কোরআন-হাদিস বিরোধী বিভিন্ন আইন করায় বর্তমান সরকার ক্ষমতায় থাকার নৈতিক অধিকার হারিয়েছে। তারা বলেন, সরকারের ইসলাম বিরোধী কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে দেশের আলেম-ওলামা ও ধর্মপ্রাণ মানুষ ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে নেমেছে। অনৈসলামিক পদক্ষেপ থেকে সরে না আসা পর্যন্ত এ আন্দোলন চলতে থাকবে। জীবনের বিনিময়ে হলেও এদেশে ইসলামবিরোধী কোনো আইন করতে দেয়া হবে না। তারা বলেন, বর্তমান শেখ হাসিনার সরকার আমাদের ঈমান নিয়ে টানাটানি শুরু করেছে। তাই আমরাও তাকে গদি থেকে টেনে নামাবো। ঈমান ও কোরআন রক্ষার জন্য ৪ এপ্রিলের হরতাল বাস্তবায়নে কাফনের কাপড় পরে মাঠে নামার আহ্বান জানান ওলামারা। এছাড়া ১৪ মে পল্টনের মহাসমাবেশ সফলেরও আহ্বান জানান তারা।
সম্মিলিত ওলামা-মাশায়েখ পরিষদ : দেশব্যাপী পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল বাদ জুমা মুক্তাঙ্গনে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করে সম্মিলিত ওলামা-মাশায়েখ পরিষদ। পরিষদের সভাপতি ও মাসিক মদীনা সম্পাদক মাওলানা মুহিউদ্দীন খানের সভাপতিত্বে মিছিলপূর্ব সমাবেশে সংগঠনের প্রেসিডিয়াম সদস্য মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী, ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি মাওলানা মহিউদ্দীন রব্বানী, অধ্যক্ষ মাওলানা যাইনুল আবেদীন, জয়েন্ট সেক্রেটারি ড. মাওলানা খলিলুর রহমান মাদানী ও আলমগীর মজুমদার, অ্যাডভোকেট আবদুল মোবিন, আবুল খায়ের, মমতাজ চৌধুরী, শেখ আনোয়ারুল হক, ড. মাওলানা আবদুল কাইয়ূম, মাওলানা শাহ আরিফ বিল্লাহ সিদ্দিকী, মিরসরাইর পীর মাওলানা আবদুল মোমেন নাছেরী, মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী, অধ্যাপক আবদুস ছবুর মাতব্বর, মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, মাওলানা সালেহ সিদ্দিকী, মুফতি মাওলানা এনামুল হক মুসা, মাওলানা আহমাদুল্লাহ প্রমুখ।
সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে মাওলানা মুহিউদ্দীন খান বলেন, আমরা প্রাণ দেব তবু এদেশে ইসলামবিরোধী কোনো আইন করতে দেব না। আমাদের দাবি না মানা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। আগামীদিনে ওলামা পরিষদের সব কর্মসূচি সফলের জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান তিনি। অধ্যক্ষ যাইনুল আবেদীন বলেন, ৯০ ভাগ মুসলমানের এদেশে একটি গোষ্ঠী ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। কিন্তু ইসলাম, কোরআন, মুসলমানদের বিরুদ্ধে কোনো ষড়যন্ত্র বরদাশত করা হবে না। বুকের তাজা রক্ত দিয়ে হলেও তা প্রতিহত করা হবে।
মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী বলেন, ইসলামবিরোধী নারীনীতি, শিক্ষানীতি, ফতোয়াবিরোধী রায় ও ইফা ডিজিকে বহাল রাখা বর্তমান সরকারের পতনের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। তিনি বলেন, দীনদার মানুষের যে আন্দোলন শুরু হয়েছে তাতে শরিক না হলে সরকারকে আইয়ুব খানের মতো ভাগ্য বরণ করতে হবে। সময় থাকতে সরকারকে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। মাওলানা মহিউদ্দিন রব্বানী বলেন, দলমত নির্বিশেষে আলেমরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন। কঠোর কর্মসূচি দিয়ে ইসলামবিরোধী শক্তির মোকাবিলা করা হবে। ড. খলিলুর রহমান মাদানী বলেন, আমাদের দাবি না মানা পর্যন্ত ঘরে ফিরে যাব না। বক্তারা আগামী জুমাবার সারাদেশের বৃহত্তর জেলাগুলোতে বিক্ষোভ সমাবেশ এবং ১৪ মে পল্টনের মহাসমাবেশ সফল করার জন্য সবার প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান।
সমাবেশ শেষে বিশাল একটি মিছিল বের হয়ে মুক্তাঙ্গন, জিরো পয়েন্ট, তোপখানা, প্রেস ক্লাব,ও হাইকোর্ট ঘুরে বায়তুল মোকাররম হয়ে মতিঝিল শাপলা চত্বর গিয়ে শেষ হয়। মিছিলে ইসলামিক পার্টি, ন্যাপ ভাসানী, ভাসানী ফ্রন্ট, এনডিপি, জাতীয় ফতোয়া বোর্ড, খেলাফত মজলিস, ইছলাহুল মুসলেমীন, আইম্মাহ পরিষদ, আহকামে শরিয়া হেফাজত কমিটি, মাদ্রাসা ছাত্রকল্যাণ পরিষদসহ বিভিন্ন সংগঠন পৃথক ব্যানার নিয়ে যোগ দেয়। সারাদেশে বাদ জুমা একই ধরনের মিছিল সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
ইসলামী আইন বাস্তবায়ন কমিটি : বিভিন্ন দাবিতে ৪ এপ্রিল ঘোষিত হরতালকে কেন্দ্র করে ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল বাদ জুমা মুক্তাঙ্গনে বিক্ষোভ সমাবেশ করে ইসলামী আইন বাস্তবায়ন কমিটি। এতে কাফনের কাপড় পরে কর্মীরা অংশ নেন। মিছিলপূর্ব সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে সংগঠনের চেয়ারম্যান মুফতি ফজলুল হক আমিনী বলেন, ৪ এপ্রিলের হরতাল দেশের সব ওলামা, পীর-মাশায়েখের হরতাল। হরতাল সফল করতে স্কুল-কলেজ, ভার্সিটি, মাদ্রাসা, খানকা সবকিছু বন্ধ করে রাস্তায় নামতে হবে। এই হরতাল সফল হলে কোরআন ও ইসলাম রক্ষা হবে।
তিনি বলেন, যে কোর্ট কোরআন-হাদিস বিরোধী রায় দেবে, আমরা সেই কোর্ট মানি না। ধর্মনিরপেক্ষতা মানি না। আমরা কোরআনের রাজনীতি করব। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা নিজ হাতে কোরআনবিরোধী নারী নীতিমালায় স্বাক্ষর করেছেন। এই হাত ধ্বংস কামনা করে তিনি বলেন, শেখ হাসিনা ঈমান নিয়ে টানাটানি শুরু করেছেন। আমরা তাকে গদি থেকে টেনে নামাবো। তিনি বলেন, এবারের সংগ্রাম কোরআন প্রতিষ্ঠা, সংরক্ষণ এবং বাস্তবায়নের সংগ্রাম। হরতালের আগে প্রতিদিন কর্মসূচি চালানোর ঘোষণা দেন তিনি। সমাবেশে খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মুহাম্মদ ইসহাক বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের কাজই হলো ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে। মুফতি মোহাম্মদ ওয়াক্কাস বলেন, বর্তমানে দেশে কোনো সংবিধান নেই। অসাংবিধানিকভাবে সরকার দেশ চালাচ্ছে। মুফতি শহীদুল ইসলাম বলেন, আমরা বদরের মতো ৩১৩ জন কাফনের কাপড় পরে এই সমাবেশে এসেছি। এরপরও যদি সরকার ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ড থেকে না ফিরে আসে, তাহলে এমন সিদ্ধান্ত নেব যাতে তাদের ক্ষমতা নড়বড়ে হয়ে যায়।
সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী, মাওলানা জোনায়েদ আল হাবীব, মাওলানা শফিক উদ্দীন, মাওলানা নোমান মাজহারী প্রমুখ। সমাবেশ শেষে বিশাল একটি মিছিল পল্টন মোড়, নয়া পল্টন, ফকিরাপুল, দৈনিক বাংলা হয়ে বায়তুল মোকাররমের সামনে এসে শেষ হয়। দেশের বিভিন্ন স্থানে একই ধরনের কর্মসূচি পালিত হয় বলে জানা গেছে।
ইসলামী আন্দোলন : সরকারের ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে গতকাল বিকালে মুক্তাঙ্গনে বিশাল সমাবেশ ও মিছিল করেছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ঢাকা মহাগরী। মিছিলপূর্ব সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে অধ্যক্ষ মাওলানা এটিএম হেমায়েত উদ্দিন বিএনপি মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের ইন্তেকালে শোক প্রকাশ এবং আমার দেশ-এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের মুক্তিতে শুকরিয়া প্রকাশ করে বলেন, কলমযোদ্ধা মাহমুদুর রহমানকে এদেশের জাগ্রত জনতা যেভাবে সংগ্রাম করে মুক্ত করেছে, আমরাও সেভাবে সংগ্রামের মাধ্যমে আমাদের নেতাদের মুক্ত করব। যারা কোরআনের বিরুদ্ধে আইন করতে চায়, তাদের কালো হাত ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়ার ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, দ্রব্যমূল্য ও আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ এ সরকারের ক্ষমতায় থাকার নৈতিক অধিকার নেই। তিনি বলেন, সরকারের ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে যেভাবে জনতা ফুঁসে উঠছে তাতে তাদের আখের রক্ষা হবে না। আমরা ইসলামের জন্য জীবন দিতে প্রস্তুত। মুক্তাঙ্গন হবে ইসলামী আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু। রোববারের সমাবেশ থেকে মুক্তাঙ্গনকে ঢাকার তাহরির স্কয়ার ঘোষণা করা হবে বলে জানান তিনি।
সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক সৈয়দ বেলায়েত হোসেন, প্রচার সম্পাদক মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ুম, প্রশিক্ষণ সম্পাদক প্রিন্সিপাল মাওলানা মকবুল হোসাইন, অ্যাডভোকেট একেএম এরফান খান, নগর সহ-সভাপতি মাওলানা এবিএম জাকারিয়া, সেক্রেটারি মো. আবু সাঈদ সিদ্দিকী, মাওলানা আতাউর রহমান আরেফী, মুহাম্মদ মুনিরুল ইসলাম প্রমুখ। সমাবেশে রোববার প্রধান বিচারপতির কাছে স্মারকলিপি প্রদানপূর্ব মুক্তাঙ্গনে জমায়েত ও রায় ঘোষণার দিন হাইকোর্টের সামনে গণঅবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। সমাবেশ শেষে একটি বিশাল গণমিছিল পুরানা পল্টন মোড়, বিজয়নগর নাইটিংগেল মোড় হয়ে পুনরায় পল্টন, বায়তুল মোকাররম ও দৈনিক বাংলা মোড় ঘুরে বায়তুল মোকাররমে গিয়ে শেষ হয়।
বাংলাদেশ কওমি কাউন্সিল : এদিকে বিকালে ফটোজার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন মিলনায়তনে ‘অস্তিত্বের সঙ্কটে কওমি মাদ্রাসা : আমাদের করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বেফাক সিনিয়র সহ-সভাপতি শায়খুল হাদিস আল্লামা আশরাফ আলী বলেন, ঐতিহ্যবাহী কওমি শিক্ষাব্যবস্থার বিরুদ্ধে দেশি-বিদেশি নানা আগ্রাসনের কালো থাবা পড়ছে, যার অংশ হিসেবে ক্ষমতাসীন সরকার ধর্মহীন শিক্ষানীতি প্রণয়ন করে দেশকে ধর্মহীন করতে চায়। অতএব কওমি শিক্ষাব্যবস্থাকে রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে যা থামানোর ক্ষমতা বর্তমান সরকারের নেই। সভাপতির বক্তব্যে সংগঠনের চেয়ারম্যান প্রিন্সিপাল মাওলানা আবদুস সামাদ সরকারের প্রতি জোর দাবি জানিয়ে বলেন, বেফাক প্রস্তাবিত ১২ দফা দাবি মেনে নিতে হবে। অপরদিকে সরকারের ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ জানিয়েছে ইসলামী ছাত্র মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, জমিয়তে তালাবায়ে আরাবিয়া ইত্যাদি সংগঠন

সরকারের ইসলামবিরোধী কাণ্ড : ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের সিদ্ধান্ত সর্বদলীয় আলেমদের

স্টাফ রিপোর্টার

ধর্মহীন শিক্ষানীতি ও কোরআনবিরোধী নারীনীতি প্রণয়ন, ফতোয়া বন্ধের ষড়যন্ত্র এবং সংশোধনীর নামে ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধান চালুর উদ্যোগসহ সরকারের কোরআন-সুন্নাহবিরোধী সব কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে অবশেষে বৃহত্তর আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন দেশের সর্বদলীয় আলেমরা। ভবিষ্যত্ আন্দোলনের কর্মপন্থা ঠিক করতে ৪১ সদস্যের মজলিসে শূরা তথা জাতীয় পরামর্শ কমিটিও গঠিত হয়েছে। গতকাল রাজধানীর পীরজঙ্গি মাজার মাদ্রাসায় অনুষ্ঠিত সর্বদলীয় আলেমদের এক জরুরি সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। দেশের প্রবীণ আলেম, বেফাক
সভাপতি ও হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক আল্লামা আহমদ শফির আহ্বানে তার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় জামায়াতে ইসলামীর সমর্থক আলেমরা ছাড়াও ইসলামী আন্দোলন, ইসলামী ঐক্যজোট, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, নেজামে ইসলাম, ইসলামী আইন সংরক্ষণ কমিটি, সম্মিলিত উলামা মাশায়েখ পরিষদ, কওমি মাদ্রাসা বোর্ডসহ বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। সভায় উপস্থিত আলেমরা দেশের তৌহিদী জনতাকে সঙ্গে নিয়ে একমঞ্চে আল্লামা আহমদ শফির নেতৃত্বে আন্দোলনের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। তারা বলেন, সরকার দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও মুসলমানের চিন্তা-চেতনা এবং ঈমান নিয়ে হোলিখেলায় মেতে উঠেছে। ধর্মদ্রোহী সরকার চৌদ্দ কোটি মুসলমানের চোখ ফাঁকি দিয়ে দেশ থেকে কোরআন-সুন্নাহকে বিদায় করতে চায়। ইহুদি খ্রিস্টানদের পাতা ফাঁদে পা দিয়ে বাংলাদেশকে তুরস্ক বানানোর নীলনকশা প্রস্তুত করেছে। তারা বলেন, আকাশ, নৌ, রেল ও সড়কপথে অবরোধ, ধর্মঘট, মিছিল, বিক্ষোভ, লংমার্চ ও মহাসমাবেশ, প্রয়োজনে রক্তের সিঁড়ি বেয়ে সরকারের ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ড কঠোরহস্তে প্রতিহত করা হবে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তৌহিদী জনতা ঘরে ফিরে যাবে না। বৈঠক শেষে আল্লামা আহমদ শফিকে প্রধান করে ৪১ সদস্যবিশিষ্ট একটি সর্বদলীয় মজলিসে শূরার খসড়া করা হয়।
আল্লামা আহমদ শফি উদ্বোধনী ভাষণে বলেন, দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে আমাদের ঘরে বসে থাকার সুযোগ নেই। সরকার যদি আলেমদের দাবি সহজে মেনে না নেয় তাহলে দেশের ৪০ হাজার কওমি মাদ্রাসা সপ্তাহ-মাসব্যাপী ক্লাস বন্ধ রেখে নারীনীতি, শিক্ষানীতির গলদ তুলে ধরে দেশব্যাপী গণসংযোগ এবং ঢাকার রাজপথে কঠোর অবস্থান ধর্মঘট গড়ে তোলার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, বেফাক আহূত ২৭ এপ্রিলের মহাসমাবেশে জনস্রোতে ঢাকা অচল করে দেয়া হবে। তিনি এই মহাসমাবেশ সব আলেমের অংশগ্রহণে ঐক্যবদ্ধভাবে সফল করার আহ্বান জানান। সমাবেশ থেকে আলেমদের মতামত নিয়ে পরবর্তী কর্মপন্থা ঠিক করা হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
আল্লামা শফির বক্তব্যের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে সম্মিলিত উলামা-মাশায়েখ পরিষদের সভাপতি মাওলানা মুহিউদ্দীন খান বলেন, বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষিতে গণসংযোগের পাশাপাশি ময়দানে জোরালো কর্মসূচি থাকা দরকার। এতে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করা যাবে। তিনি উলামা পরিষদ আহূত ১৪ মে’র মহাসমাবেশ প্রয়োজনে এগিয়ে বা পিছিয়ে হলেও সর্বদলীয়ভাবে ব্যাপক আকারে করার প্রস্তাব রাখেন।
ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মুফতি ফজলুল হক আমিনী সপ্তাহ-মাসব্যাপী মাদ্রাসা বন্ধ রেখে রাজপথে ঈমান বাঁচাও আন্দোলনসহ বৈঠকের সব সিদ্ধান্তের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বলেন, বর্তমানে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন হওয়া দরকার। তিনি ৪এপ্রিলের হরতালে সবার সমর্থন কামনা করেন।
ইসলামী আন্দোলনের আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, এই বৈঠক দেখে মনে হচ্ছে, আলেম সমাজ যদি একমঞ্চে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলে তা হলে সরকারের ঘাড়ে চেপে থাকা ইসলামবিদ্বেষীরা কোমর সোজা করে দাঁড়াতে পারবে না। তিনি ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে তার দলের জনশক্তি নিয়ে অংশগ্রহণসহ প্রয়োজনীয় সবকিছু করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
ইসলামী আইন সংরক্ষণ কমিটির আহ্বায়ক মুফতি শহীদুল ইসলাম আলেমদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে এখনই কিছু করার অনুরোধ করেন। বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সহ-সভাপতি মুফতি আবদুর রব ইউসুফী ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের ব্যাপারে পরামর্শ করার আহ্বান জানান।
সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বেফাক সহ-সভাপতি আল্লামা আশরাফ আলী, চট্টগ্রাম বাবুনগর মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল আল্লামা মহিবুল্লাহ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম সভাপতি শাইখ আবদুল মোমিন, খেলাফত আন্দোলনের আমির মাওলানা আহমদ উল্লাহ আশরাফ, নেজামে ইসলাম পার্টির সভাপতি মাওলানা আবদুর রকিব, বেফাক সহ-সভাপতি আল্লামা নূর হোসেন কাসেমী, মহাসচিব মাওলানা আবদুল জব্বার, আল্লামা মোস্তফা আজাদ, মধুপুরের পীর মাওলানা আবদুল হামিদ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহাসচিব মুফতি মোহাম্মদ ওয়াক্কাস, মুফতি শহিদুল ইসলাম, বেফাকের সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা নেজাম উদ্দিন, ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা ইউনুস আহমদ, সম্মিলিত উলামা মাশায়েখ পরিষদের মহাসচিব মাওলানা মহিউদ্দিন রাব্বানী, যুগ্ম মহাসচিব ড. খলিলুর রহমান মাদানী, খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা জাফর উল্লাহ খান প্রমুখ।

ইসলামী সংগঠনের বিক্ষোভে উত্তাল রাজধানী : কোরআনবিরোধী নারীনীতি প্রতিহত করার ঘোষণা













স্টাফ রিপোর্টার
কোরআনবিরোধী নারী উন্নয়ন নীতিমালা ও ফতোয়া নিষিদ্ধের রায় বাতিলসহ বর্তমান আওয়ামী সরকারের ইসলামবিরোধী বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে গতকাল বিক্ষোভে উত্তাল ছিল রাজধানী ঢাকা। পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী প্রায় সব ধর্মীয় সংগঠন ও মুসল্লির উদ্যোগে দিনব্যাপী চলে বিক্ষোভ। তবে বাদ জুমা বিভিন্ন মসজিদ থেকে মিছিল নিয়ে মুক্তাঙ্গন এলাকায় জড়ো হলে পল্টন ও আশপাশের এলাকা মিছিলের নগরীতে পরিণত হয়। একই সময় বিভিন্ন সংগঠনের বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিলে স্থবির হয়ে পড়ে এ এলাকার স্বাভাবিক কার্যক্রম। পল্টন থেকে জিরো পয়েন্ট, প্রেসক্লাব, নাইটিংগেল মোড়, দৈনিক বাংলাসহ বিভিন্ন সড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকে বেশ কয়েক ঘণ্টা। আগে থেকেই পল্টন এলাকায় পানিকামান, রায়ট কার ও প্রিজনভ্যান নিয়ে বিপুলসংখ্যক পুলিশ অবস্থান নিলেও তারা মিছিলকারীদের বাধা দেয়নি।
পৃথক বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে বক্তারা আওয়ামী সরকারের কোরআন ও ইসলামবিরোধী সব কর্মকাণ্ড প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়ে বলেন, এদেশ ৯০ শতাংশ মুসলমানের দেশ। এখানে কোরআন ও ইসলামবিরোধী কোনো আইন করতে দেয়া হবে না। জীবন দিয়ে হলেও এসব আইন প্রতিহত করা হবে। তারা বলেন, অবিলম্বে কোরআনবিরোধী নারী উন্নয়ন নীতিমালা, ফতোয়াবিরোধী রায়, ধর্মহীন শিক্ষানীতি বাতিল এবং ইমামদের সামনে নৃত্যানুষ্ঠান করার অপরাধে ইফা ডিজিকে অপসারণ করতে হবে। অন্যথায় ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের পতন ঘটানো হবে। তারা ৪ এপ্রিল ঘোষিত হরতাল
সফলের আহ্বান জানিয়ে বলেন, এই হরতালে সরকার বাধা দিলে মিসরের তাহরির স্কয়ারের মতো ঢাকা অবরোধ করা হবে। এদিকে রাজধানীর পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন স্থানে একই ধরনের বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে জানা গেছে।
সম্মিলিত উলামা-মাশায়েখ পরিষদ : গতকাল বাদ জুমা পল্টন এলাকায় সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে সম্মিলিত উলামা-মাশায়েখ পরিষদ। মুক্তাঙ্গনে মিছিলপূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক ড. খলিলুর রহমান মাদানী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার কোরআনবিরোধী যেসব আইন
করতে যাচ্ছে, এদেশের মানুষ বুকের তাজা রক্ত দিয়ে হলেও তা প্রতিহত করবে। উলামারা শহীদ হতে জানেন। ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে প্রয়োজনে এদেশে ইসলামী বিধান প্রতিষ্ঠিত করা হবে। তিনি অবিলম্বে কোরআনবিরোধী নারী উন্নয়ন নীতি খসড়া ও নাস্তিক্য শিক্ষানীতি বাতিলের দাবি করেন। অন্যথায় সরকার পতনের একদফার আন্দোলনে নামার ঘোষণা দেন তিনি। সমাবেশ থেকে আগামী মঙ্গলবার প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন এবং ১৮ মার্চ সারাদেশে সব মসজিদ থেকে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
মাওলানা মহিউদ্দীন রব্বানির সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন ইসলামিক পার্টির সভাপতি অ্যাডভোকেট আবদুল মোবিন, মুসলিম লীগ মহাসচিব কাজী আবুল খায়ের, ন্যাপ ভাসানী সভাপতি শেখ আনোয়ারুল হক, শর্ষিনার পীর শাহ আরিফ বিল্লাহ সিদ্দিকী, মাওলানা আহমেদ আলী কাসেমি, মমতাজ চৌধুরী প্রমুখ। সমাবেশ শেষে বিশাল একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে পল্টন, প্রেস ক্লাব, কদম ফোয়ারা মোড়, কাকরাইল হয়ে মালিবাগ মোড়ে গিয়ে শেষ হয়। এ মিছিলে আরও অংশ নেয় আহকামে শরিয়াহ হেফাজত কমিটি, মাদ্রাসা ছাত্র কল্যাণ পরিষদ, ইসলাহুল মুসলিমিন বাংলাদেশ, জাতীয় ফতোয়া বোর্ড, আইম্মাহ পরিষদ প্রমুখ সংগঠন। এদিকে দেশের সব বিভাগ এবং বড় জেলাতেও উলামা পরিষদের উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল-সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয় বলে জানা গেছে।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ : কোরআনবিরোধী নারীনীতি বাতিলসহ বিভিন্ন দাবিতে মুক্তাঙ্গনে বিরাট সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল করে চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। বাদ জুমা সমাবেশ শুরু হয়ে বিকাল পর্যন্ত চলে। এতে ঢাকার আশপাশের এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে লোকজন যোগ দেয়। দলের ঢাকা মহানগর সভাপতি অধ্যাপক এটিএম হেমায়েত উদ্দিনের সভাপতিত্বে সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে দলের নায়েবে আমির মাওলানা ফয়জুল করিম বলেন, সম্পদ বণ্টনে নারী-পুরুষের সমানাধিকার বাস্তবায়ন হলে দেশের ঘরে ঘরে আগুন জ্বলে উঠবে। নারী অধিকার নিয়ে যারা কাজ করছেন, তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন— ঘরে কী আপনাদের স্বামীরা আপনাদের অধিকার দেয় না। যারা চিল্লাচ্ছেন, তাদের পরিবারে শান্তি নেই। তাদের স্বামীদের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই।
সমাবেশে ঢাকা মহানগর আমির অধ্যাপক এটিএম হেমায়েত উদ্দিন বলেন, সরকার নারীনীতি বাস্তবায়নের চেষ্টা করলে সংসদ, সচিবালয়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাও করা হবে।
ইসলামী আইন বাস্তবায়ন কমিটি : কোরআনবিরোধী নারী নীতিমালার প্রতিবাদে গতকাল রাজধানীসহ সব জেলা-উপজেলা পর্যায়ে পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে ইসলামী আইন বাস্তবায়ন কমিটি। কেন্দ্রীয়ভাবে বাদ জুমা মুক্তাঙ্গনে মিছিলপূর্ব সমাবেশে সভাপতির ভাষণে কমিটির আমির ও ইসলামী ঐক্যজোট চেয়ারম্যান মুফতি ফজলুল হক আমিনী বলেন, আগামী ৪ এপ্রিলের হরতাল হলো কোরআন রক্ষার হরতাল। হাইকোর্ট থেকে ফতোয়া নিষিদ্ধের বিরুদ্ধে জনগণের প্রতিবাদের হরতাল। এ হরতাল সফলে মাঠে নামা প্রত্যেক মুসলমানের ইমানি দায়িত্ব। তিনি বলেন, সুপ্রিমকোর্ট থেকে ফতোয়ার ব্যাপারে মতামত প্রদানের জন্য আলেম নির্বাচন করতে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে ইসলামী ফাউন্ডেশনের কবরপূজারি ডিজি শামিম মুহাম্মদ আফজালকে। আমরা তার এ নির্বাচনকে মানি না। কারণ সে কোরআনের দুশমন, ইসলামের দুশমন, রাসুলের দুশমন। সে ইমামদের সঙ্গে নর্তকী নাচিয়েছে। সমাবেশে অন্যান্যের মাঝে বক্তব্য রাখেন মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী, মুফতি মুহাম্মদ তৈয়্যেব, অধ্যাপক মাওলানা আবদুল করিম, মুফতি ফয়জুল্লাহ, মাওলানা আবুল কাশেম, মাওলানা আহলুল্লাহ ওয়াছেল প্রমুখ। সমাবেশ শেষে বিশাল মিছিল মুক্তাঙ্গন থেকে জিরো পয়েন্ট হয়ে প্রেস ক্লাবের সামনে গিয়ে শেষ হয়।
কওমী মাদ্রাসা বোর্ড : বিভিন্ন দাবিতে সকালে মুক্তাঙ্গনে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করে বাংলাদেশ কওমী মাদ্রাসা বোর্ড (বেফাক)। মিছিলপূর্ব সমাবেশে বক্তারা বলেন, সম্পদে নারী-পুরুষ সমান সুযোগের নীতি করেও জনগণকে ধোঁকা দেয়ার চেষ্টা করছে সরকার। গণমাধ্যমে ছলনাময় মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর গলাবাজি করছে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ লোকজন। নারী নীতিমালায় ১৯টি সমস্যা রয়েছে বলে উল্লেখ করেন তারা। সমাবেশে বিতর্কিত জাতীয় শিক্ষানীতির বিষয়ে বেফাকের ১২ দফা ও ফতোয়াবিরোধী হাইকোর্টের রায় প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়।
বেফাক সহ-সভাপতি আল্লামা আশরাফ আলীর সভাপতিত্বে মিডিয়া শাখার সমন্বয়ক হুমায়ুন আইয়ুবের পরিচালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সহ-সভাপতি মুফতি শহিদুল ইসলাম, মহাসচিব মাওলানা আবদুল জাব্বার, সহকারী মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক, আল্লামা আবদুল মালেক হালিম, মাওলানা নিজাম উদ্দিন, খেলাফত আন্দোলনের জাফরুল্লাহ খান, মাওলানা মজিবুর রহমান হামিদী, মুফতি মো. তৈয়ব, মুফতি বশির উল্লাহসহ প্রায় অর্ধশত মাদ্রাসা প্রতিনিধি।
খেলাফত মজলিস : বিক্ষোভ মিছিলপূর্ব সমাবেশে খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাক বলেন, কোরআন ও ইসলামের শত্রু বর্তমান সরকারের পতনই এখন একমাত্র বিকল্প। ক্ষমতায় এসে তারা একের পর এক কোরআন ও ইসলামের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করে যাচ্ছে। এ সরকারের হাতে দেশ, জনগণ ও ইসলাম নিরাপদ নয়।
দলের ঢাকা মহানগর সভাপতি মাওলানা নোমান মাজহারীর সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন মাওলানা শফিক উদ্দিন, শেখ গোলাম আসগর, অধ্যাপক মুহাম্মদ আবদুল জলিল প্রমুখ। সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিল বিজয়নগর, পল্টন, প্রেস ক্লাব এলাকা প্রদক্ষিণ করে।
মহিলা জামায়াত : বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী মহিলা বিভাগের সেক্রেটারি খোন্দকার আয়শা সিদ্দিকা বলেছেন, ইসলাম নারীকে যে সম্মান, মর্যাদা ও অধিকার দিয়েছে—তা আমাদেরকে যথাযথভাবে উপলদ্ধি করতে হবে। কোরআনে বর্ণিত উত্তরাধিকার আইন যথেষ্ট বাস্তব ও নারীর জন্য সম্মানজনক। তিনি গতকাল সংগঠনের ধানমন্ডিতে মহানগরী কার্যালয়ে আয়োজিত থানা সেক্রেটারি সম্মেলনে সভানেত্রীর বক্তব্যে এ কথা বলেন।
খেলাফত মজলিস : বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমির মাওলানা আবদুর রব ইউসুফী বলেন, ফতোয়া আছে, থাকবে। এর বিরুদ্ধে যারাই কথা বলবে, তাদের ব্যাপারে এদেশের ওলামায়ে কেরাম ও ইসলামপ্রিয় তাওহিদি জনতা সিদ্ধান্ত নেবে। গতকাল বাদ জুমা মুক্তাঙ্গন থেকে বিক্ষোভ মিছিল-পরবর্তী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। মজলিসের নগর সভাপতি প্রিন্সিপাল মাওলানা আবদুস সামাদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন মাওলানা আতাউল্লাহ আমিন, মাওলানা আজিজুর রহমান হেলাল, মাওলানা এনামুল হক মুসা, এম ছালেহ আহমদ, হাফেজ শামসুল আলম, নোমান উদ্দিন প্রমুখ।
জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম : জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম নেতারা বলেন, ইসলামবিদ্বেষী সাম্রাজ্যবাদীদের দালাল ধর্মহীন আওয়ামী সরকার এদেশ থেকে কোরআন-হাদিস ও ইসলামী আকিদা-বিশ্বাস নির্মূলের যে নীল নকশা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে—তার বিরুদ্ধে সম্মিলিত প্রতিরোধ গড়ে তোলা প্রত্যেক মুসলমানের ইমানি দায়িত্ব।
মাদ্রাসা ছাত্রকল্যাণ পরিষদ : সরকারের কোরআনবিরোধী নারীনীতি অনুমোদন এবং মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণের প্রতিবাদে বাংলাদেশ মাদ্রাসা ছাত্রকল্যাণ পরিষদ বাদ জুমা বায়তুল মোকাররম উত্তর গেট থেকে এক বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি পল্টন-প্রেস ক্লাব-কাকরাইল হয়ে মালিবাগ মোড়ে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়

বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ : ফতোয়া নিষিদ্ধের ষড়যন্ত্রকারীরা ধ্বংস হবে : ফতোয়া বোর্ড

স্টাফ রিপোর্টার

ফতোয়া নিষিদ্ধের চক্রান্তের প্রতিবাদে গতকাল রাজধানীতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে বাংলাদেশ জাতীয় ফতোয়া বোর্ড। দুপুরে মুক্তাঙ্গনে মিছিলপূর্ব সমাবেশে বক্তারা সরকারকে হুশিয়ার করে বলেন, ফতোয়া বন্ধের চক্রান্ত করার দুঃসাহস দেখাবেন না। কারণ ফতোয়া ইসলামী বিধান; এটি আল কোরআন কর্তৃক আবশ্যিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ফতোয়া কোরআন, সুন্নাহ, ইজমা, কিয়াস দ্বারা প্রতিষ্ঠিত ইসলামী আইন। অতএব এই ফতোয়া বন্ধ বা নিষিদ্ধ করার এখতিয়ার ও ক্ষমতা কোনো ব্যক্তি, সংস্থা বা সরকারের নেই। ফতোয়া নিয়ে যারা ষড়যন্ত্র করছে, তাদের ধিক্কার ও নিন্দা জানান তারা এবং সব ইসলামবিরোধী তত্পরতা বন্ধ ও ফতোয়া নিষিদ্ধের ষড়যন্ত্রকারীদের এখনই থামিয়ে দিতে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান। অন্যথায় এদেশের সর্বস্তরের আলেম-উলামা ও পীর-মাশায়েখকে সঙ্গে নিয়ে ইসলামী অধিকার আদায় করেই ছাড়া হবে। তারা বলেন, এ ফতোয়া নিয়ে যারাই ষড়যন্ত্র করবে, তারাই আল্লাহর গজবে ধ্বংস ও তাদের সব ষড়যন্ত্র নস্যাত্ হবেই ইনশাল্লাহ।
ড. আবদুল কাইয়ুম আল-আজহারির সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন মুফতি আবদুর রহমান, অধ্যক্ষ মুফতি মোশাররফ হাসাইন, আবু হানিফ নেসারী প্রমুখ। সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল মুক্তাঙ্গন থেকে বের হয়ে পল্টন, প্রেসক্লাব এলাকা প্রদক্ষিণ করে বিজয়নগরে এসে শেষ হয়। জাতীয় ফতোয়া বোর্ডের বিক্ষোভ মিছিলপূর্ব সমাবেশে নেতারা একথা বলেন।
এদিকে অপর এক বিবৃতিতে জাতীয় ফতোয়া বোর্ডের মুফতিরা বলেন, ফতোয়া হচ্ছে ইসলামী জীবনব্যবস্থা। ফতোয়া ছাড়া কোনো মুসলমান চলতে পারেন না। এটি মুসলমানদের ধর্মীয় অধিকার। দেশের বিভিন্ন জায়গায় ফতোয়ার নামে গ্রাম্য সালিশের ঘটনাগুলোকে যেভাবে ফলাও করে ফতোয়া বলে চালানো হচ্ছে, এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা বৈ অন্য কিছু নয়। বিষয়টি যথাযথ তদন্তের দাবি রাখে। তারা ফতোয়া নিষিদ্ধের চক্রান্ত থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান।
বিবৃতিদাতারা হলেন প্রফেসর মুফতি ড. ইয়াহইয়ার রহমান, প্রফেসর মুফতি ড. আবদুল মা’বুদ, প্রফেসর ড. মুফতি মাওলানা আবদুস সালাম মাদানী, মুফতি ড. মাওলানা খলিলুর রহমান মাদানী, মুফতি মাওলানা আবুল বাশার, মুফতি মাওলানা শাহ আরিফ বিল্লাহ, অধ্যাপক মুফতি মাওলানা আ.ন.ম. রফিকুর রহমান মাদানী, মুফতি ড. সিকান্দার আলী মাদানী, মুফতি ড. তরিকুল ইসলাম মাদানী, মুফতি মাওলানা লুত্ফর রহমান আল-মাদানী, মুফতি মাওলানা নুরুল্লাহ আল-মাদানী, মুফতি মাওলানা মোহাম্মদ ইউসুফ আল-মাদানী, ড. মুফতি নিজামুদ্দিন, মুফতি আবুল কালাম পাটোয়ারী, ড. মুফতি মাওলানা আবু ইউসুফ খান, মুফতি ড. মানজুর-এ-ইলাহী আল-মাদানী, প্রফেসর মুফতি ড. আবুল কালাম আজাদ আল মাদানী (লন্ডন) প্রমুখ।

খেলাফত আন্দোলনের কোরআন মিছিল : ফতোয়ার ওপর হাত দিলে সারাদেশে আগুন জ্বলবে











স্টাফ রিপোর্টার
বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের আমির মাওলানা শাহ আহমদুল্লাহ আশরাফ বলেছেন, ফতোয়া হচ্ছে ইসলামী জীবনব্যবস্থা। মুসলমানদের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক লেনদেনসহ প্রতিটি ক্ষেত্রেই শরীয়তের বিধান জানা ও ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা ফতোয়ার সঙ্গে যুক্ত। কোরআন-সুন্নাহ, ইজমা-কিয়াসের আলোকে নাগরিকদের কোনো জটিল সমস্যার ধর্মীয় সমাধানের নামই ফতোয়া। ফতোয়া ছাড়া কোনো মুসলমান চলতে পারে না। এটা মুসলমানদের সাংবিধানিক ও ধর্মীয় অধিকার। ফতোয়াতে বাধা দেয়ার অর্থ ইসলাম ধর্ম পাালনে বাধা দেয়া। এটা ধর্মপ্রাণ জনতা বরদাশত করবে না। কোরআনের বিরুদ্ধে মতামত দেয়ার অধিকার কারও নেই। সংবিধানের দোহাই দিয়ে ফতোয়া এবং ইসলামী রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হবে কোরআনকে নিষিদ্ধ করার শামিল। ফতোয়ার ওপর হস্তক্ষেপ হলে সারাদেশে আগুন জ্বলে উঠবে। সরকার পতনের একদফার আন্দোলন শুরু হয়ে যাবে।
গতকাল রাজধানীর মুক্তাঙ্গনে কোরআন-সুন্নাহর বিধান ফতোয়া এবং ইসলামী রাজনীতি বন্ধ করার পাঁয়তারার প্রতিবাদে খেলাফত আন্দোলন ঢাকা মহানগর আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিলপূর্ব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। মহানগর আমির মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদীর সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন দলের মহাসচিব মাওলানা মুহাম্মদ জাফরুল্লাহ খান, মুহাম্মদ আ’জম খান, মাওলানা সাজেদুর রহমান ফয়েজী, মাওলানা ফখরুল ইসলাম ও খেলাফত ছাত্র আন্দোলনের সভাপতি মাওলানা সুলতান মহিউদ্দিন প্রমুখ। সমাবেশ শেষে ফতোয়া ও ইসলামী রাজনীতি বন্ধ করার পাঁয়তারার প্রতিবাদে রাজধানীতে একটি পবিত্র কোরআন হাতে নিয়ে গণমিছিল বের করা হয়। মিছিলটি জিরো পয়েন্ট, জাতীয় প্রেস ক্লাব, পল্টন মোড় হয়ে বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে এসে সমাপ্ত হয়।
মুফতি আমিনী : এদিকে ইসলামী আইন বাস্তবায়ন কমিটির আমির ও ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মুফতি ফজলুল হক আমিনী বলেছেন, ইসলাম, ফতোয়া, কোরআন নিয়ে সরকার যে সর্বনাশা খেলায় মেতে উঠেছে তা অত্যন্ত ভয়াবহ। এদেশকে স্পেন বানানোর পদক্ষেপ স্পষ্ট হচ্ছে। ওলামা মাশায়েখ ও দ্বীনদাররা মিলে যদি এই সর্বনাশা খেলা বন্ধ করা না যায় তাহলে আমাদের ও দেশের ভাগ্যে বড় দুর্দিন অপেক্ষা করছে। বড় ধরনের প্রতিরোধ ছাড়া এই সর্বনাশা ও ধ্বংসাত্মক খেলা বন্ধ করা যাবে না। প্রয়োজনে লাগাতার হরতাল ডেকে এই ইসলাম বিধ্বংসী ষড়যন্ত্র বন্ধ করতে হবে। তিনি গতকাল খুলনা নিরালার আল মারকাজুল ফিকহী ইসলামী প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত এক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
নেজামে ইসলাম পার্টি : নেজামে ইসলাম পার্টির সভাপতি মাওলানা আবদুর রকিব অ্যাডভোকেট ও মহাসচিব মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী এক বিবৃতিতে বলেন, ইসলাম সম্পর্কিত যাবতীয় জিজ্ঞাসার উত্তর ফতোয়া সম্পর্কে একশ্রেণীর মানুষের নেতিবাচক মনোভাব সংবিধান পরিপন্থী। কারণ সংবিধান ধর্ম পালনে সবাইকে অধিকার দিয়েছে।
খেলাফত মজলিস : খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা শফিক উদ্দিন বলেছেন, ইসলামী জীবন বিধানের অবিচ্ছেদ্য অংশ ফতোয়া নিষিদ্ধ করার ক্ষমতা কারও নেই। আওয়ামী লীগ আদালতের ঘাড়ে বন্দুক রেখে ফতোয়া নিষিদ্ধের চেষ্টা করলে সর্বস্তরের মানুষ একদফার আন্দোলন শুরু করতে বাধ্য হবে

দু’বছর আগে বিও অ্যাকাউন্টের সংখ্যা দ্বিগুণ করার কথা বলেছিলেন অর্থমন্ত্রী : বিনিয়োগকারীদের ‘ফটকাবাজ’ আখ্যা দেয়ায় ক্ষোভ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

দু’বছর আগে শেয়ারবাজারে বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) একাউন্টের সংখ্যা দ্বিগুণ করার কথা বলেছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। ২০০৯ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি এসইসি কার্যালয় পরিদর্শন শেষে অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, বর্তমানে যে পরিমাণ বিও একাউন্ট রয়েছে শিগগিরই সে সংখ্যা দ্বিগুণ করা হবে। অর্থমন্ত্রী যখন বিও একাউন্টের সংখ্যা দ্বিগুণ করার কথা বলেছিলেন তখন সে সংখ্যা ছিল ১৯ লাখ। কিন্তু দুই বছর পরও বিও একাউন্টের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়নি। সেন্ট্রাল ডিপোজেটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী বিও একাউন্টের সংখ্যা ৩৩ লাখ ৯৭ হাজার ৬৭৪টি। অর্থমন্ত্রীর সে ঘোষণা অনুযায়ী বিও একাউন্টধারীর সংখ্যা দ্বিগুণ হতে এখনও আরও ৪ লাখ বিও একাউন্ট খোলা বাকি রয়েছে। অথচ এরই মধ্যে অর্থমন্ত্রী পুঁজিবাজারের নতুন বিনিয়োগকারীদের ‘ফটকাবাজি’ করে লাভবান হতে বাজারে আসছে বলে মন্তব্য করেছেন। পতনমুখী বাজারে আসা নতুন বিনিয়োগকারীদের শাস্তি পেতে হবেই বলে হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন তিনি। অর্থমন্ত্রীর এ ধরনের বক্তব্যে পুঁজিবাজার সম্পর্কে অভিজ্ঞরা রীতিমতো অবাক হয়েছেন। অর্থমন্ত্রীর এ ধরনের বক্তব্যকে দায়িত্বজ্ঞানহীন এবং অবিবেচনাপ্রসূত বলে মন্তব্য করেছেন তারা। সাধারণ বিনিয়োগকারীরাও অর্থমন্ত্রীর এ ধরনের বক্তব্যে যারপর নাই বিস্মিত। প্রসঙ্গত, গত রোববার অর্থমন্ত্রী সংসদে বলেন, শেয়ারবাজারে দরপতনের পরও নতুন এক লাখ বিনিয়োগকারী ঢুকেছে। তারা ফটকাবাজি করে লাভবান হতে চাচ্ছে। তাদের শাস্তি পেতে হবেই। বর্তমানে শেয়ারবাজারে ফটকাবাজির সঙ্গে জড়িতদের কোনো ধরনের শাস্তির আইন নেই বলে উল্লেখ করে মন্ত্রী জানান, সংসদের চলতি অধিবেশনে এ সংক্রান্ত একটি আইন উপস্থাপন করা হবে। অবশ্য অর্থমন্ত্রীর এ বক্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করেন তার দলের সংসদ সদস্যরাও।
ফটকাবাজি করে নতুন বিনিয়োগকারীরা কিভাবে লাভবান হবেন তা তারা উপলব্ধি করতে পারছেন না। বরং বিনিয়োগকারীরা অভিযোগ করে বলেন, ঊর্ধ্বমুখী শেয়ারবাজার থেকে চিহ্নিত এবং সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে এমন লোকজনই কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে সরকার কোনো কথা না বলে এখন নতুন বিনিয়োগকারীদের ওপর দায় চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে। এর আগে ১৯৯৬ সালেও সরকারের ঘনিষ্ঠ লোকেরা শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত ছিল। তাদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের আইনি ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এখন বলা হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে কোনো সাক্ষী খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এবারও শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির সঙ্গে তারাই জড়িত। তাদের কারণেই লাখ লাখ বিনিয়োগকারী আজ নিঃস্ব হয়েছে। অর্থমন্ত্রীর ব্যর্থতা এবং প্রভাবশালী মহলের কারসাজিতে লাখ লাখ বিনিয়োগকারী সর্বস্বান্ত হলেও সরকারের শীর্ষ মহল থেকে এজন্য বিরোধী দলকে দায়ী করা হয়। এখন আবার নতুন বিনিয়োগকারীদের ওপর দায় চাপানোর চেষ্টা চলছে। বিনিয়োগকারীরা অর্থমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে অবিলম্বে তার পদত্যাগ দাবি করেন। কামরুল হুদা নামের একজন বিনিয়োগকারী বলেন, আমরা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করতে এসেছি। বর্তমানে বাজারে বিনিয়োগের পরিবেশ তৈরি হয়েছে বলে বিভিন্ন মহল থেকে বলা হয়েছে। অব্যাহত দরপতনের কারণে অধিকাংশ মৌলভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানির শেয়ারের দর ক্রয়ানুকূলে রয়েছে এবং বিনিয়োগের জন্য এখনই উপযুক্ত সময় বলে সরকারসহ স্টক এক্সচেঞ্জের নেতৃবৃন্দের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। কিন্তু এখন বিনিয়োগকারীদের ফটকাবাজ বলে শাস্তির ভয় দেখানো হচ্ছে। এতে করে ধারণা করা হচ্ছে, সরকার চাইছে না নতুন করে কোনো বিনিয়োগকারী বাজারে আসুক। কিন্তু বিনিয়োগকারী আসতে পারবে না বা আসা উচিত হবে না—এ ধরনের কোনো কথা আমরা শুনিনি। তাহলে কেন অর্থমন্ত্রী এ ধরনের বক্তব্য দিয়েছেন এমন প্রশ্ন রেখে কামরুল হুদা বলেন, অর্থমন্ত্রী এর আগেও বিনিয়োগকারীদের নিয়ে নানা ধরনের উপহাসমূলক বক্তব্য রেখেছেন। বিনিয়োগকারীদের ‘স্টুপিড’ বলে আখ্যা দিয়েছিলেন। এখন আমাদের ফটাকাবাজ বলা হচ্ছে। এ ধরনের অর্থমন্ত্রী দিয়ে পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতা আশা করা যায় না।
এদিকে বাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, বর্তমান পতনমুখী বাজারে নতুন বিনিয়োগকারীর আগমন একটি ভালো সংবাদ। বাজারে একের পর এক দরপতনে অনেক বিনিয়োগকারী যেখানে বাজার থেকে বেরিয়ে যেতে চাইছেন সেখানে নতুন বিনিয়োগকারীর আগমন বাজারের জন্য স্বস্তিদায়ক খবর। বর্তমান অধিকাংশ বিনিয়োগকারীর ক্রয়ক্ষমতা প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে আসায় শেয়ারের চাহিদা কমে গেছে। নতুন বিনিয়োগকারীর আগমনের ফলে বাজারে চাহিদা তৈরি হবে এবং বাজারে চলমান তারল্য সঙ্কট কাটানোর ক্ষেত্রেও ভূমিকা পালন করবে। তারা মনে করেন, এখন বাজারে নতুন বিনিয়োগকারীদের স্বাগত জানানো উচিত। তবে একই সঙ্গে নতুন বিনিয়োগকারীরা যাতে পুঁজিবাজার সম্পর্কে সঠিক ধারণা পেতে পারেন সে জন্য পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নিতে হবে।
অর্থমন্ত্রীর মন্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে বাজার বিশ্লেষক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক সালাহউদ্দিন আহমেদ খান বলেন, বাজারে বর্তমানে সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে তারল্য সঙ্কট। এ কারণে বাজারে শেয়ারের চাহিদা কমে গেছে। বর্তমানে বেশিরভাগ বিনিয়োগকারীর শেয়ার কেনার ক্ষমতা নেই। এ অবস্থায় নতুন বিনিয়োগকারীর বাজারে আগমনের ফলে শেয়ারের চাহিদা তৈরি হবে এবং বাজার স্থিতিশীল হওয়ার ক্ষেত্রে সহায়ক হবে। নতুন বিনিয়োগকারীর আগমনকে স্বাগত জানানো উচিত বলে তিনি মন্তব্য করেন।
ডিএসইর বেশ ক’জন সদস্যের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা বলেন, বর্তমানে শেয়ার ক্রয়ের জন্য অর্থমন্ত্রী বিভিন্ন ব্যাংকের কর্মকর্তাদের বাজারে বিনিয়োগের জন্য নির্দেশ দিচ্ছেন। আইসিবিকে শেয়ার কেনার জন্য ফান্ড দেয়া হচ্ছে। তাহলে কেন এতসব করা হচ্ছে? এখন যদি সাধারণ বিনিয়োগকারী শেয়ার কিনে ‘ফটকাবাজি’ করে থাকে তাহলে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে দিয়ে সরকার কি ফটকাবাজি করছে না? আর এসব প্রতিষ্ঠানকে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করতে যে টাকা দেয়া হচ্ছে তা জনগণের টাকা। এখন এ জনগণের টাকা দিয়ে সরকারকে ফটকাবাজি করার অধিকার কে দিয়েছে? সাধারণ বিনিয়োগকারীরা যদি বিনিয়োগ না করেন তাহলে শেয়ারবাজারে কারা লেনদেন করবে—অর্থমন্ত্রীকে তা স্পষ্ট করতে হবে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডিএসইর একজন সদস্য বলেন, শেয়ারবাজারে নতুন বিও একাউন্ট খোলা যাবে না, সরকারের পক্ষ থেকে এ ধরনের কোনো নিষেধাজ্ঞাও জারি করা হয়নি। ফলে শেয়ারবাজারে নতুন বিনিয়োগকারীদের আগমন বন্ধ রাখার কোনো সুযোগ নেই। তিনি বলেন, যদি একটি ব্রোকারেজ হাউস কোনো ধরনের যৌক্তিক কারণ ব্যতীত বিও একাউন্ট খুলতে অপারগতা প্রকাশ করে থাকে তাহলে তাকে এসইসির কাছে জবাবদিহি করতে হতো। এমনকি তার বিরুদ্ধে নোটিশ জারি করা হতো। তিনি অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যকে কাণ্ডজ্ঞানহীন এবং অবিবেচনাপ্রসূত বলে মন্তব্য করেন।