Sunday 27 March 2011

সরকারের ইসলামবিরোধী কাণ্ড : ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের সিদ্ধান্ত সর্বদলীয় আলেমদের

স্টাফ রিপোর্টার

ধর্মহীন শিক্ষানীতি ও কোরআনবিরোধী নারীনীতি প্রণয়ন, ফতোয়া বন্ধের ষড়যন্ত্র এবং সংশোধনীর নামে ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধান চালুর উদ্যোগসহ সরকারের কোরআন-সুন্নাহবিরোধী সব কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে অবশেষে বৃহত্তর আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন দেশের সর্বদলীয় আলেমরা। ভবিষ্যত্ আন্দোলনের কর্মপন্থা ঠিক করতে ৪১ সদস্যের মজলিসে শূরা তথা জাতীয় পরামর্শ কমিটিও গঠিত হয়েছে। গতকাল রাজধানীর পীরজঙ্গি মাজার মাদ্রাসায় অনুষ্ঠিত সর্বদলীয় আলেমদের এক জরুরি সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। দেশের প্রবীণ আলেম, বেফাক
সভাপতি ও হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক আল্লামা আহমদ শফির আহ্বানে তার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় জামায়াতে ইসলামীর সমর্থক আলেমরা ছাড়াও ইসলামী আন্দোলন, ইসলামী ঐক্যজোট, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, নেজামে ইসলাম, ইসলামী আইন সংরক্ষণ কমিটি, সম্মিলিত উলামা মাশায়েখ পরিষদ, কওমি মাদ্রাসা বোর্ডসহ বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। সভায় উপস্থিত আলেমরা দেশের তৌহিদী জনতাকে সঙ্গে নিয়ে একমঞ্চে আল্লামা আহমদ শফির নেতৃত্বে আন্দোলনের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। তারা বলেন, সরকার দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও মুসলমানের চিন্তা-চেতনা এবং ঈমান নিয়ে হোলিখেলায় মেতে উঠেছে। ধর্মদ্রোহী সরকার চৌদ্দ কোটি মুসলমানের চোখ ফাঁকি দিয়ে দেশ থেকে কোরআন-সুন্নাহকে বিদায় করতে চায়। ইহুদি খ্রিস্টানদের পাতা ফাঁদে পা দিয়ে বাংলাদেশকে তুরস্ক বানানোর নীলনকশা প্রস্তুত করেছে। তারা বলেন, আকাশ, নৌ, রেল ও সড়কপথে অবরোধ, ধর্মঘট, মিছিল, বিক্ষোভ, লংমার্চ ও মহাসমাবেশ, প্রয়োজনে রক্তের সিঁড়ি বেয়ে সরকারের ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ড কঠোরহস্তে প্রতিহত করা হবে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তৌহিদী জনতা ঘরে ফিরে যাবে না। বৈঠক শেষে আল্লামা আহমদ শফিকে প্রধান করে ৪১ সদস্যবিশিষ্ট একটি সর্বদলীয় মজলিসে শূরার খসড়া করা হয়।
আল্লামা আহমদ শফি উদ্বোধনী ভাষণে বলেন, দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে আমাদের ঘরে বসে থাকার সুযোগ নেই। সরকার যদি আলেমদের দাবি সহজে মেনে না নেয় তাহলে দেশের ৪০ হাজার কওমি মাদ্রাসা সপ্তাহ-মাসব্যাপী ক্লাস বন্ধ রেখে নারীনীতি, শিক্ষানীতির গলদ তুলে ধরে দেশব্যাপী গণসংযোগ এবং ঢাকার রাজপথে কঠোর অবস্থান ধর্মঘট গড়ে তোলার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, বেফাক আহূত ২৭ এপ্রিলের মহাসমাবেশে জনস্রোতে ঢাকা অচল করে দেয়া হবে। তিনি এই মহাসমাবেশ সব আলেমের অংশগ্রহণে ঐক্যবদ্ধভাবে সফল করার আহ্বান জানান। সমাবেশ থেকে আলেমদের মতামত নিয়ে পরবর্তী কর্মপন্থা ঠিক করা হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
আল্লামা শফির বক্তব্যের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে সম্মিলিত উলামা-মাশায়েখ পরিষদের সভাপতি মাওলানা মুহিউদ্দীন খান বলেন, বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষিতে গণসংযোগের পাশাপাশি ময়দানে জোরালো কর্মসূচি থাকা দরকার। এতে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করা যাবে। তিনি উলামা পরিষদ আহূত ১৪ মে’র মহাসমাবেশ প্রয়োজনে এগিয়ে বা পিছিয়ে হলেও সর্বদলীয়ভাবে ব্যাপক আকারে করার প্রস্তাব রাখেন।
ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মুফতি ফজলুল হক আমিনী সপ্তাহ-মাসব্যাপী মাদ্রাসা বন্ধ রেখে রাজপথে ঈমান বাঁচাও আন্দোলনসহ বৈঠকের সব সিদ্ধান্তের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বলেন, বর্তমানে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন হওয়া দরকার। তিনি ৪এপ্রিলের হরতালে সবার সমর্থন কামনা করেন।
ইসলামী আন্দোলনের আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, এই বৈঠক দেখে মনে হচ্ছে, আলেম সমাজ যদি একমঞ্চে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলে তা হলে সরকারের ঘাড়ে চেপে থাকা ইসলামবিদ্বেষীরা কোমর সোজা করে দাঁড়াতে পারবে না। তিনি ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে তার দলের জনশক্তি নিয়ে অংশগ্রহণসহ প্রয়োজনীয় সবকিছু করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
ইসলামী আইন সংরক্ষণ কমিটির আহ্বায়ক মুফতি শহীদুল ইসলাম আলেমদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে এখনই কিছু করার অনুরোধ করেন। বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সহ-সভাপতি মুফতি আবদুর রব ইউসুফী ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের ব্যাপারে পরামর্শ করার আহ্বান জানান।
সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বেফাক সহ-সভাপতি আল্লামা আশরাফ আলী, চট্টগ্রাম বাবুনগর মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল আল্লামা মহিবুল্লাহ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম সভাপতি শাইখ আবদুল মোমিন, খেলাফত আন্দোলনের আমির মাওলানা আহমদ উল্লাহ আশরাফ, নেজামে ইসলাম পার্টির সভাপতি মাওলানা আবদুর রকিব, বেফাক সহ-সভাপতি আল্লামা নূর হোসেন কাসেমী, মহাসচিব মাওলানা আবদুল জব্বার, আল্লামা মোস্তফা আজাদ, মধুপুরের পীর মাওলানা আবদুল হামিদ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহাসচিব মুফতি মোহাম্মদ ওয়াক্কাস, মুফতি শহিদুল ইসলাম, বেফাকের সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা নেজাম উদ্দিন, ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা ইউনুস আহমদ, সম্মিলিত উলামা মাশায়েখ পরিষদের মহাসচিব মাওলানা মহিউদ্দিন রাব্বানী, যুগ্ম মহাসচিব ড. খলিলুর রহমান মাদানী, খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা জাফর উল্লাহ খান প্রমুখ।

No comments:

Post a Comment