Wednesday 23 November 2011

সূচক ৫ হাজার পয়েন্টের নিচে : বিনিয়োগকারীদের পুঁজি হাওয়া


অর্থনৈতিক রিপোর্টার

আনোয়ার হোসেন ২০০৯ সালে মিরপুরে নিজের ফ্ল্যাট বিক্রি করে ৩০ লাখ, নিজস্ব ব্যবসা ও আত্মীয়স্বজন থেকে ঋণ করে আরও ২৯ লাখ টাকাসহ মোট ৫৯ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছেন শেয়ারবাজারে। লাভের একটি অংশ দেয়া হবে—এ শর্তে আরও পাঁচ বন্ধুর পোর্টফোলিও ম্যানেজ করতেন তিনি। বাড়তি লাভের আশায় ব্রোকারেজ হাউস থেকে মার্জিন লোনও নিয়েছিলেন। সব মিলিয়ে তার বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ৪ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু শেয়ারবাজারের অব্যাহত ধসে আনোয়ার শুধু তার পুরো পুঁজিই হারাননি, উল্টো ব্রোকারেজ হাউস তার কাছে ৩০ লাখ টাকা পাবে। চোখের সামনেই হাওয়া হয়ে গেছে তার সব বিনিয়োগ। লাভের আশায় শুধু একজন আনোয়ার হোসেনই নন, এমন কয়েক লাখ বিনিয়োগকারী শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে আজ নিঃস্ব। শেয়ারবাজারের অব্যাহত ধসে প্রতিদিনই বাড়ছে আনোয়ার হোসেনের মতো সর্বহারা বিনিয়োগকারীর সংখ্যা। আর তাদের কান্নায় ভারী হয়ে উঠছে রাজধানীর মতিঝিল এলাকা। শেয়ারবাজারের ধস ঠেকাতে একের পর এক উদ্যোগ নেয়া হলেও তা কোনো কাজেই আসছে না। গতকালও দেশের শেয়ারবাজারে বড় ধরনের ধস নেমেছে। আগের দিনের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাধারণ সূচকের পতন হয়েছে ১৬৫ পয়েন্টের মতো। দিনশেষে ডিএসই সাধারণ সূচক গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৮৭৭ পয়েন্টে। ২০১০ সালের ১৭ জানুয়ারির পর এটিই ডিএসই সূচকের সর্বনিম্ন অবস্থান। ওইদিন ডিএসই সাধারণ সূচক ছিল ৪ হাজার ৮৭৬ পয়েন্ট। অর্থাত্ গত ২২ মাসের মধ্যে সূচকের অবস্থান সর্বনিম্নে চলে এসেছে।
ঈদের ছুটির পর শেয়ারবাজার পরিস্থিতি ভালো হবে—এমন আশায় ছিলেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। কিন্তু তাদের সে আশা দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। ঈদের ছুটির পর মাত্র দুই দিনের লেনদেনে ডিএসইর সাধারণ সূচকের পতন হয়েছে ৩৩১ পয়েন্ট। আর এ পতনের ফলে ডিএসই সাধারণ সূচক নেমে এসেছে ৫ হাজার পয়েন্টের নিচে। শেয়ারবাজারের সূচক ৫ হাজার পয়েন্টের নিচে নামতে দেয়া হবে না, বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এ ধরনের একটা ধারণা চালু ছিল। কিন্তু গতকাল তাদের সে ধারণা মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক আরও বেড়ে গেছে। গতকাল লেনদেন শুরুর মাত্র ৫ মিনিটের মাথায় ডিএসই সূচকের পতন ঘটে ১০০ পয়েন্টের মতো। সূচক ৫ হাজার পয়েন্টের নিচে নেমে আসে। উদ্বিগ্ন বিনিয়োগকারীরা ডিএসই ভবনের সামনে জড়ো হতে থাকেন। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সূচকের পতন অব্যাহত থাকলে ডিএসই ভবনের সামনে ক্ষুব্ধ বিনিয়োগকারীর উপস্থিতিও বাড়তে থাকে। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তারা বিক্ষোভ সমাবেশ শুরু করেন। বেলা ১১টা ৫৫ মিনিটে ডিএসই সূচকের ২৩৮ পয়েন্টের পতন হলে বিক্ষোভ সমাবেশ নতুন গতি লাভ করে। বেলা ১২টা থেকে সূচকে কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা দিলেও আগের দিনের তুলনায় ১৬৪ দশমিক ৭১ পয়েন্ট কমে দিনশেষে ডিএসই সাধারণ সূচক ৪ হাজার ৮৭৭ দশমিক ৫২ পয়েন্টে এসে দাঁড়ায়। ২০১০ সালের ৫ ডিসেম্বর ডিএসইর সাধারণ সূচক সর্বোচ্চ ৮ হাজার ৯১৮ পয়েন্টে উন্নীত হয়েছিল। সেই থেকে একের পর এক ধসের ঘটনা ঘটছে। অর্থাত্ মাত্র ১১ মাসের ব্যবধানে ডিএসইর সাধারণ সূচকের পতন হয়েছে ৪ হাজার ৪১ পয়েন্টের, শতাংশ হিসেবে এ পতনের হার ৪৫ ভাগেরও বেশি।
এদিকে শেয়ারবাজারে অব্যাহত পতনকে ব্যাখ্যাতীত বলে মন্তব্য করেছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও এসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম। তিনি বলেন, শেয়ারবাজারে কেন টানা দরপতন হচ্ছে, তার কোনো ব্যাখ্যা আমার কাছে নেই। টানা দরপতনের সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ নেই। তিনি আরও বলেন, দর কমতে কমতে এখন শেয়ারের দর অনেক নিচে নেমে এসেছে। এ অবস্থায় বিনিয়োগে ঝুঁকি নেই। তারপরও বিনিয়োগকারীরা কেন শেয়ার কিনছে না তা বুঝতে পারছি না। শেয়ারবাজারে অব্যাহত দরপতনের পেছনে কোনো কারসাজি রয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন বলে তিনি মন্তব্য করেন।
একের পর এক উদ্যোগ নেয়ার পরও ধস ঠেকাতে ব্যর্থ হওয়ায় বড় ধরনের চাপের মুখে পড়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি)। শেয়ারবাজারে কারসাজি রোধে ব্যর্থ হওয়ায় এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা হারানোর কারণে জিয়াউল হক খোন্দকারের নেতৃত্বে গঠিত কমিশনকে সরিয়ে দেয় সরকার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক ড. খায়রুল হোসেনকে চেয়ারম্যান করে কমিশনকে পুনর্গঠন করা হয়। গত মে মাসে কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে যোগ দেন খায়রুল হোসেন। চেয়ারম্যান হিসেবে যোগদানের দিনই তিনি বলেছিলেন, বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জন করে একটি শক্তিশালী, স্বচ্ছ ও স্থিতিশীল পুঁজিবাজার গড়ে তোলাই হবে কমিশনের লক্ষ্য। কিন্তু পুনর্গঠিত কমিশন বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জনে সফল হতে পারেনি। বিভিন্ন ক্ষেত্রে কমিশন বেশ ইতিবাচক পদক্ষেপ নিলেও সেগুলো বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সফলতা দেখাতে পারেনি। ফলে পুনর্গঠিত কমিশনের ওপর বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমতে শুরু করেছে। তবে অনেকেই মনে করছেন, পুরো কমিশন পুনর্গঠিত হওয়ার কারণে অভিজ্ঞতার বিষয়ে বড় ধরনের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। আর এ কারণে বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবিলায় যথার্থ পদক্ষেপ নিতে পারছে না কমিশন। ফলে কমিশনের ওপর চাপ প্রয়োগ করে বিভিন্ন গোষ্ঠী তাদের ফায়দা হাসিল করে নিচ্ছে, কিন্তু বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরে আসছে না। বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে কমিশনের ভিতরে দ্বন্দ্ব রয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। বিশেষ করে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের মতাদর্শে প্রকাশ্য সমর্থনকারী একজন সদস্য নানাভাবে কমিশনের ওপর প্রভাব বিস্তার করছেন বলে জোর গুজব রয়েছে। এ কারণে কমিশনের মধ্যে এক ধরনের অস্থিরতা রয়েছে। বাজারেও এর প্রভাব পড়ছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
ফোর্সড সেল বন্ধে এসইসির নির্দেশনা : শেয়ারবাজারে অব্যাহত দরপতনে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি বড় ধরনের আর্থিক ঝুঁকির মুখে পড়েছে মার্জিন ঋণ দেয়া ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো। আর্থিক ঝুঁকি কমাতে বাধ্য হয়েই তারা গ্রাহকের শেয়ার ফোর্সড সেল শুরু করেছেন। আগে থেকে কিছু কিছু ফোর্সড সেল হলেও গত দু’দিনে ফোর্সড সেলের পরিমাণ বেড়েছে। এরই প্রেক্ষিতে এসইসির পক্ষ থেকে বাজার পরিস্থিতি বিবেচনায় ফোর্সড সেল না করার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন এসইসির নির্বাহী পরিচালক ও দায়িত্বপ্রাপ্ত মুখপাত্র সাইফুর রহমান। তিনি বলেন, আমরা বেশ কিছু ফোর্সড সেলের অভিযোগ পেয়েছি। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা তাদেরকে ফোর্সড সেল না করার জন্য বলেছি। আশা করছি, বাজারের স্বার্থে তারা ফোর্সড সেল করবেন না। তবে এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করার বিষয়ে স্পষ্ট কিছু বলেননি তিনি। তিনি বলেন, এক্ষেত্রে আইন পরিবর্তনের প্রয়োজন হবে। কিন্তু এটি সময়সাপেক্ষ। সেজন্য কমিশনের পক্ষ থেকে আপাতত মৌখিক নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
আগামীকাল এবিবি’র সঙ্গে এসইসির বৈঠক : শেয়ারবাজারে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ এবং ৫ হাজার কোটি টাকার ‘স্টক মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড’ গঠনের বিষয়ে আগামীকাল অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সঙ্গে এসইসির বৈঠক হবে। বেলা ১১টায় এ বৈঠক হবে বলে এসইসি সূত্রে জানা গেছে।
বিনিয়োগকারীদের বিক্ষোভ : শেয়ারাবাজারে দরপতনের প্রতিবাদে গতকালও সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ডিএসই ভবনের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ করেছেন। বেলা সাড়ে ১১টা থেকে সাড়ে ৩টা পর্যন্ত ডিএসই ভবনের সামনের রাস্তায় অবস্থান নেন তারা। তারা এ সময় শেয়ারবাজারে ধস ঠেকাতে ব্যর্থ অর্থমন্ত্রী, অর্থ উপদেষ্টা, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের বিরুদ্ধে নানা সেম্লাগান দেন এবং তাদের পদত্যাগের দাবি জানান। বিক্ষোভের সময় মতিঝিলের শাপলা চত্বর থেকে ইত্তেফাকের মোড় পর্যন্ত সব ধরনের যানচলাচল বন্ধ ছিল। এদিকে গতকাল বিনিয়োগকারীদের একটি গ্রুপ বেলা ২টার দিকে এসইসি কার্যালয় ঘেরাও করে। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে এসইসির ফটক বন্ধ করে দেয়া হয়। পরে বিনিয়োগকারীদের একটি দল এসইসি চেয়ারম্যানের সঙ্গে সাক্ষাত্ করে বিভিন্ন দাবি-দাওয়া পেশ করে। তারা গত দু’দিনের ট্রেড বাতিল, শেয়ারবাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে না আসা পর্যন্ত লেনদেন বন্ধ, ফোর্সড সেল বন্ধে এসইসির প্রজ্ঞাপন জারিরও দাবি জানান। এসইসির চেয়ারম্যান তাদের দাবির বিষয়ে আইনি দিক খতিয়ে দেখা হবে বলে আশ্বাস দেন।
বাজার পরিস্থিতি : গতকাল ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেয়া ২৫২টি কোম্পানির মধ্যে মাত্র ১৫টির দর বেড়েছে। কমেছে ২৩৫টির এবং অপরিবর্তিত ছিল ২টির। ক্রেতার অভাবে অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারের দর কমেছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। তবে দর কমলেও আগের দিনের তুলনায় লেনদেনের পরিমাণ বেড়েছে। আগের দিন ডিএসইতে ২০৬ কোটি ৫৪ লাখ টাকার আর্থিক লেনদেন হলেও গতকাল তা ৩২১ কোটি ৭৪ লাখ টাকায় উন্নীত হয়েছে।
মূলধন আড়াই লাখ কোটি টাকার নিচে : অব্যাহত দরপতনে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের বাজার মূলধন আড়াই লাখ কোটি টাকার নিচে নেমে এসেছে। গতকাল দিনশেষে ডিএসইর বাজার মূলধন ২ লাখ ৪৬ হাজার ৪৭০ কোটি টাকায় এসে দাঁড়িয়েছে। আগের দিনের তুলনায় গতকাল বাজার মূলধন কমেছে ৬ হাজার ৪১০ কোটি টাকা। গত ৫ ডিসেম্বর ডিএসইর বাজার মূলধন সর্বোচ্চ ৩ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছিল। মাত্র ১১ মাসের ব্যবধানে বাজার মূলধন কমেছে ১ লাখ ২২ হাজার কোটি টাকা।
নিঃস্ব বিনিয়োগকারীর আর্তনাদ বাড়ছে : শেয়ারাবাজারে দরপতনে প্রতিদিনই নিঃস্ব বিনিয়োগকারীদের আর্তনাদ বাড়ছে। নিঃস্ব আনোয়ার হোসেন বলেন, গত তিন মাসে আমার সঙ্গে বাসার যোগাযোগ নেই। রাতে বন্ধু-বান্ধবের বাসায় থাকি। গত রোজার ঈদও বাইরে কাটিয়েছি, এবার কোরবানির ঈদও পরিবারের সঙ্গে করতে পারিনি। দুই ছেলে ও স্ত্রী নিয়ে সংসার কীভাবে চলছে, তার খোঁজ-খবর নিতে পারছি না। বাসাভাড়া দিতে পারছি না। আমি নিঃস্ব হয়ে গেছি। লক্ষ্মীপুর জেলার বিজয়নগর গ্রামের আনোয়ার হোসেন আরও বলেন, সরকার আমাদের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের জন্য আহ্বান জানিয়েছে। তাদের সে আহ্বানে সাড়া দিয়ে আজ আমরা সব হারিয়ে সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েছি। আনোয়ার হোসেন তার কষ্টের কথা বলতে গিয়ে বারবার বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ছিলেন।
ইকবাল খান রিপন নামে আরেক বিনিয়োগকারী বলেন, ২০১০ সালের আগস্ট মাসে তিনি শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করেন। তার মোট বিনিয়োগের পরিমাণ সাড়ে ৪৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে জমি বিক্রি করে ২১ লাখ, বাকি টাকা বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়স্বজন থেকে ধার করেছেন। ৪৩ লাখ টাকার বিপরীতে মার্জিন লোন নিয়েছেন ২৩ লাখ টাকা। কিন্তু পোর্টফোলিও এখন নেগেটিভ হয়ে গেছে। অর্থাত্ শেয়ার বিক্রি করে মার্জিন লোন শোধ করা সম্ভব হবে না। ইবিএল হাউসে লেনদেন করেন তিনি। তিনি বলেন, এখন একবেলা খেয়ে আরেক বেলা না খেয়ে চলছে জীবন। গত চার মাস বাসাভাড়া দিতে পারছি না। দুই সন্তানের মধ্যে বড় জন লেখাপড়া করছে; কিন্তু তার খরচও দিতে পারছি না। তিনি বলেন, মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছি। দুশ্চিন্তায় রাতে ঘুম হয় না।
গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার নুরুল ইসলাম জানান, তিনি জমি ও স্ত্রীর গয়না বিক্রি করে, নিজের জমানো টাকা, আত্মীয়স্বজন, বন্ধু-বান্ধবের কাছ থেকে ধার করে মোট ৩২ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন। এখন তার বিনিয়োগের পরিমাণ মাত্র ৮ লাখ টাকায় নেমে এসেছে। তিনি বলেন, বন্ধু-বান্ধবকে মুনাফা দেব—এ শর্তে টাকা ধার নিয়েছিলাম। প্রতি লাখে মাসে এক হাজার টাকা দেয়ার কথা বলে টাকা ধার নিয়ে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করেছিলাম। কিন্তু এখন পর্যন্ত কাউকে কোনো লাভ তো দূরের কথা, পুঁজিই হাওয়া হয়ে গেছে। যাদের কাছ থেকে ধার করেছি, তারা এখন আমার শত্রু হয়ে গেছে। স্ত্রীর সঙ্গেও টানাপড়েন চলছে। তিনি বলেন, শেয়ারবাজারের কারণে এখন জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, আমাদের টাকা লুটপাট করা হয়েছে। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারে এসে শেয়ারবাজারে লুটপাট করেছিল; এবার আবারও তারা লুটপাট করেছে।

No comments:

Post a Comment