Wednesday 23 November 2011

শেয়ারবাজারে অব্যাহত দরপতনে বিনিয়োগকারীদের ঘোষণা : দাবি পূরণ না হলে ৭ ডিসেম্বর মহাসমাবেশ


অর্থনৈতিক রিপোর্টার

শেয়ারবাজারে দরপতন অব্যাহত রয়েছে। গতকাল দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাধারণ সূচকের পতন হয়েছে ৪০ পয়েন্ট। ফলে দিনশেষে সূচক গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৩৬ পয়েন্টে। এ নিয়ে টানা ৪ দিন সূচকের পতন দিয়ে শেষ হয়েছে গতকালের লেনদেন। আর এ সময়ে ডিএসই সূচক হারিয়েছে ৪১৯ পয়েন্ট।
এদিকে শেয়ারবাজারে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার দাবিতে ৯ দফা দাবি জানিয়েছে বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদ। আগামী ৬ ডিসেম্বরের মধ্যে এসব দাবি মেনে নিয়ে শেয়ারবাজারের স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা না হলে আগামী ৭ ডিসেম্বর ঢাকায় বিনিয়োগকারীদের মহাসমাবেশ করা হবে বলে জানিয়েছেন পরিষদের নেতারা। গতকাল পরিষদের নিজস্ব কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ মহাসমাবেশের ঘোষণা দেয়া হয়। অবশ্য শেয়ারাবাজারে দরপতনের প্রতিবাদে গতকালও বিনিয়োগকারীরা ডিএসই ভবনের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে। গতকালের বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, সূচকের পতন দিয়ে শুরু হয় দিনের লেনদেন। লেনদেন শুরুর ১০ মিনিটে ডিএসই সূচকের পতন ঘটে ৩৫ পয়েন্টের মতো। এরপর সূচকে কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা দিলেও ১০ মিনিটের ব্যবধানেই ফের নিম্নমুখী ধারা দেখা দেয়। বেলা সাড়ে ১১টায় পতনমুখী ধারা থেকে বেরিয়ে আসে বাজার এবং বেলা ১২টা পর্যন্ত সূচকের একটানা বৃদ্ধি ঘটে। এসময় সূচক আগের দিনের তুলনায় ৬৮ পয়েন্ট বেড়ে যায়। কিন্তু এরপর টানা দরপতন শুরু হলে শেষ পর্যন্ত আগের দিনের তুলনায় ৪০ দশমিক ৬৩ পয়েন্টের পতন দিয়ে শেষ হয় দিনের লেনদেন। লেনদেনে অংশ নেয়া ২৪৯টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ৭৫টির, কমেছে ১৬৩টির এবং অপরিবর্তিত ছিল ১১টির। সূচক পতনের পাশাপাশি লেনদেনের পরিমাণও কমেছে। আগের দিনের তুলনায় ৪০ কোটি টাকা কমে দিনশেষে লেনদেন হয়েছে ২৯০ কোটি টাকা। বাজার সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা না থকার কারণে সামান্য দরবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গেই শেয়ার বিক্রির চাপ বেড়ে যায়। বিক্রি চাপ বেড়ে যাওয়ার কারণে দরপতনের ঘটনা ঘটছে। তারা আরও জানান, দরপতন ঠেকাতে হলে শেয়ারের চাহিদা তৈরি করতে হবে। কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা বাজারে সক্রিয় না হলে সে চাহিদা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। ব্যাংকগুলো বিনিয়োগের যে ঘোষণা দিয়েছে তার কোনো প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। অথবা বিনিয়োগ করলেও তা খুবই সামান্য আকারের। বর্তমানে বাজারে বিনিয়োগের অত্যন্ত অনুকূল পরিবেশ রয়েছে বলেও সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
বিনিয়োগকারীরা অভিযোগ করছেন, ঘোষণা দিলেও তারা এখন পর্যন্ত শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করেনি। ব্যাংকগুলো এ ধরনের ঘোষণা দিয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। এর আগে বাংলাদেশ ফান্ডের ৫ হাজার কোটি টাকা দিয়ে শেয়ারাবাজারের স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার ঘোষণা দেয়া হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে সে ফান্ডের কোনো প্রভাবই পড়েনি। কালোটাকা বিনিয়োগের সুযোগ দেয়া হলেও এ বিষয়ে সরকারের অস্পষ্ট অবস্থানের কারণে কালোটাকা বিনিয়োগ হচ্ছে না। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের বাজারে সক্রিয় হওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছিল। কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা আর বেশি নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে। বাজারের স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে এসইসি দফায় দফায় মার্চেন্ট ব্যাংক, অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি, ব্রোকারেজ হাউসের প্রতিনিধি, স্টক এক্সচেঞ্জের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছে। কিন্তু এসব বৈঠকের পরও বাজারে ধস থামছে না।
নানা উদ্যোগ নেয়ার পরও বাজারে দরপতনের পেছনে কারসাজি থাকতে পারে বলেও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ধারণা। তারা বলেন, দরপতন ঘটিয়ে কম দামে শেয়ার কেনার সুবিধা করে দেয়া হচ্ছে। কম দামে শেয়ার কেনার জন্যই এখন প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা নিষ্ক্রিয় হয়ে রয়েছে। দর আরও কমে গেলে তারা শেয়ার কিনতে শুরু করবে এবং তারা পরবর্তীতে দর বাড়িয়ে মুনাফা হাতিয়ে নেবে।
মহাসমাবেশের ঘোষণা : শেয়ারবাজারে স্থিতিশীলতা ফিরে না আসলে আগামী ৭ ডিসেম্বর মহাসমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদ। গতকাল মতিঝিলস্থ নিজস্ব কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির সভাপতি মিজানুর রশীদ চৌধুরী বলেন, আমরা সরকারকে ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় দিয়েছি। এ সময়ের মধ্যে যদি বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরে না আসে তাহলে আগামী ৭ ডিসেম্বর সারাদেশের বিনিয়োগকারীদের নিয়ে মহাসমাবেশ ডাকা হবে। এ মহাসমাবেশ থেকে বৃহত্তর আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। তিনি বলেন, আমাদের মহাসমাবেশ ডাক দিতে বাধ্য করবেন না। আমরা কোনো রাজনৈতিক দল করি না। আমরা সাধারণ বিনিয়োগকারী। পুঁজি হারিয়ে আমরা আজ আন্দোলনে নামতে বাধ্য হচ্ছি।
সমাবেশে লিখিত বক্তব্যে বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে শেয়ারবাজারের স্থিতিশীলতার জন্য ৯ দফা দাবি পেশ করা হয়। এগুলো হলো—ব্যাংকগুলোকে আগামীকাল (আজ) থেকে আমানতের ১০ শতাংশ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ শুরু, মার্চেন্ট ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বীমা কোম্পানিগুলোকে আইনি সীমার মধ্যে সর্বোচ্চ পরিমাণে বিনিয়োগে বাধ্য করা, মিউচুয়াল ফান্ডের মূলধনের ৮০ শতাংশ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগে বাধ্য করতে হবে, কোম্পানি আইন সংশোধন করে পরিচালকদের কমপক্ষে ৪০ থেকে ৫১ শতাংশ শেয়ার সংরক্ষণে বাধ্য করা, অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগে এনবিআর ও দুদকের পক্ষ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি, বৃহত্ পুঁজির বিনিয়োগকারীদের ভয় না দেখিয়ে তাদের বিনিয়োগে বাধ্য করা, আইসিবিকে শেয়ার ক্রয়ে বাধ্য করা, প্রিমিয়াম ছাড়াই আইপিওতে কোম্পানিকে শেয়ার ছাড়ার অনুমতি দেয়া, বিনিয়োগকারীদের বিরুদ্ধে সব মামলা প্রত্যাহার।
এ সময় পরিষদের সিনিয়র সহ-সভাপতি কাজী নজরুল ইসলাম, সহ-সভাপতি সেলিম চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে এম শাহদাত উল্লাহ ফিরোজ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
পরিষদের নেতারা বলেন, শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের নিয়ে প্রতারণা করা হচ্ছে। ব্যাংকগুলো বিনিয়োগে আসার ঘোষণা দিলেও তারা বিনিয়োগ করছে না। ব্যাংকগুলো যদি ৭ থেকে ১০ দিন পর্যন্ত বড় ফান্ড নিয়ে বাজারে বিনিয়োগ শুরু করতো তাহলে বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতো। কিন্তু তা হচ্ছে না। তারা আরও বলেন, ব্যাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি) ৫ হাজার কোটি টাকার ‘স্টক মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড’ গঠনের ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু আমরা ধারণা করছি, এ ধরনের ফান্ড গঠন করা সম্ভব হবে না। বাংলাদেশ ফান্ড গঠন করে বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে মনস্তাত্ত্বিক প্রতারণা করা হয়েছে বলে তারা জানান।

No comments:

Post a Comment