Monday 31 October 2011

ইসলামী সংগঠনের নেতাদের তীব্র প্রতিক্রিয়া : কুফরি বক্তব্যের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে তওবা করতে হবে

রকিবুল হক
গত বুধবার রাজধানীর একটি পূজামণ্ডপ পরিদর্শনকালে ‘গজে চড়ে মা দুর্গা আসায় ফসল ভালো হয়েছে’ বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে বক্তব্য দিয়েছেন তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিভিন্ন ইসলামী সংগঠনের নেতারা। পৃথক প্রতিক্রিয়ায় তারা বলেন, কোনো মুসলমান এ ধরনের বক্তব্য দিতে পারে না। প্রধানমন্ত্রী এ বক্তব্যের মাধ্যমে দুর্গাকে মহান আল্লাহর শরিক সাব্যস্ত করেছেন। কুফরি এই বক্তব্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী সারা বিশ্বের মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে চরম আঘাত এবং নিজে ইমান হারিয়েছেন। এ জন্য অবশ্যই তাকে তওবা করতে হবে বলেও মন্তব্য করেন ইসলামী ব্যক্তিত্বরা।
ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মুফতি ফজলুল হক আমিনী এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘গজে চড়ে মা দুর্গা আসায় ফসল ভালো হয়েছে’—দেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হিন্দুয়ানি এই বক্তব্য কোনো মুসলমানের পক্ষে উচ্চারণ করা হারাম। কোনো মুসলমান যদি বিশ্বাস নিয়ে এই কথা বলে এবং সে মনে করে মা দুর্গা বা অন্য কোনো মূর্তির কোনো ক্ষমতা রয়েছে, তাহলে তার ইমান থাকতে পারে না। তিনি বলেন, আমি আগে থেকেই বলে আসছি, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগ সরকার এ দেশ
থেকে কোরআন-হাদিস ধ্বংস করে অন্য ধর্মের আদর্শে বাংলাদেশ গড়তে চায়। দুর্গাপূজা উপলক্ষে শেখ হাসিনার এই বক্তব্যে এই সত্য আরও সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল করীম এক বিবৃতিতে গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুর্গা প্রসঙ্গে যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা যদি অন্তর থেকে দিয়ে থাকেন তাহলে তিনি কুফরি করেছেন। কোনো মুসলমান মা দুর্গা বলে স্বীকার করে নিলে সে বেইমান হয়ে যায়। ‘এবারের পূজা উত্সবে মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ সব ধর্মের মানুষ একাত্ম হয়েছে। এটা বাংলাদেশের জন্য বড় অর্জন।’ প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্য প্রসঙ্গে চরমোনাই পীর বলেন, দুর্গাপূজায় আওয়ামী লীগের মানুষ অংশগ্রহণ করেছে, এজন্য তাদের কাছে এটা বড় অর্জন হতে পারে, কিন্তু মুসলমানের জন্য পূজা কোনো অর্জন নয়। শেখ হাসিনা মা দুর্গাকে প্রভু হিসেবে মেনে নিলেও কোনো মুসলমান তা মানতে পারে না।
খেলাফত আন্দোলনের আমির মাওলানা শাহ আহমদুল্লাহ আশরাফ ও মহাসচিব মাওলানা জাফরুল্লাহ খান এক যুক্ত বিবৃতিতে বলেন, দুর্গা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে প্রমাণিত হয়, আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস বাদ দিয়ে দুর্গার প্রতি আস্থা স্থাপন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মাধ্যমে তিনি বেইমান হয়ে গেছেন। তারা বলেন, কোরআন-হাদিসের আকিদা অনুযায়ী সবকিছুর মালিক আল্লাহ। তার হুকুম ছাড়া কোনো কিছু পরিবর্তন হতে পারে না। মানুষের তৈরি প্রাণহীন মূর্তি কিছু পরিবর্তন করতে পারে, কেউ এ বিষয়ের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করলে সে মুশরিক হয়ে যায়। তার নামাজ-রোজা কিছুই কাজে আসে না, এমনকি তার ইমান থাকে না। প্রধানমন্ত্রী এ বক্তব্যের মাধ্যমে দেশের মুসলামানদের হিন্দু বানাতে উত্সাহী করেছেন। তারা অবিলম্বে তাকে তওবা করার আহ্বান জানান। অন্যথায় আল্লাহর গজবের জন্য প্রস্তুত থাকতে হুশিয়ার করেন।
তিনি বলেন, ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিদর্শনে তার প্রদত্ত বক্তব্য সম্পূর্ণ কুফরি। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী হজ করেন, তাহাজ্জুদ পড়েন এবং কোরআনও তেলাওয়াত করেন। এখন দেখা যায় তিনি পূজাও করেন! প্রধানমন্ত্রীকে স্পষ্ট করতে হবে, তিনি কোন ধর্মের অনুসারী?
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশের নায়েবে আমির মাওলানা আবদুর রব ইউসুফী এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, প্রধামন্ত্রীর এ বক্তব্যে হিন্দুধর্মে তার বিশ্বাস স্পষ্ট হয়ে গেছে। এ বক্তব্য প্রত্যাহার ও তওবা না করলে তিনি মুসলমান দাবি করতে পারেন না।
বাংলাদেশ জাতীয় ফতোয়া বোর্ডের পক্ষে অধ্যাপক ড. মাওলানা আবদুস সালাম মাদানী, অধ্যাপক ড. ইয়াহইয়ার রহমান, মাওলানা নুর হোসাইন আল কাসেমী, ড. খলিলুর রহমান মাদানী, মাওলানা আবুল বাশার প্রমুখ এক বিবৃতিতে বলেন, দুর্গা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য ইমান বিনষ্টকারী সর্বনাশা। কোনো মুসলিম নারীর মুখে এ বক্তব্য শোভা পায় না। ৯২ শতাংশ মুসলমানের এদেশে একজন মুসলিম প্রধানমন্ত্রীর মুখে এ বক্তব্য আশা করা যায় না। তারা বলেন, যে অশুভ শক্তি ও বামদের চাপে প্রধানমন্ত্রী এই ইমানবিধ্বংসী বক্তব্য দিয়ে মুসলিম মিল্লাতকে প্রশ্নবিদ্ধ ও বিশ্বের দরবারে দেশের ভাবমর্যাদা ক্ষুণ্ন করেছেন, সে সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর এখনই সতর্ক হওয়া জরুরি।
দেশের শীর্ষ ৫ হাজার আলেমের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, মুসলমান এক আল্লাহ ছাড়া কাউকে ক্ষমতার অধিকারী বিশ্বাস করলে তার ইমান থাকে না। প্রধানমন্ত্রী শেখা হাসিনা দুর্গা সম্পর্কে যে কথা বলেছেন, তাতে তিনি ইমান হারিয়েছেন। অবিলম্বে তওবার মাধ্যমে তাকে ইসলামে দাখিল করতে হবে, অন্যথায় তিনি মুসলিম থাকতে পারবেন না। বিবৃতিদাতারা হলেন—ড. মুফতি নিজামুদ্দিন, মাওলানা মুস্তাফিজুর রহমান, খাজা শাহ ওয়ালিউল্লাহ, মাওলানা মুহাম্মদ জাকির হোসাইন, মাওলানা আবদুল মান্নান মিঞা, মাওলানা আবদুল ওয়াজেদ প্রমুখ।
তাহফিজে হারামাইন পরিষদের সভাপতি মাওলানা সাদেক আহমদ সিদ্দিকী এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, প্রধানমন্ত্রী দুর্গাকে মহান আল্লাহর সঙ্গে শরিক করেছেন। এর মাধ্যমে তিনি মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়েছেন। তার এ কথার জন্য অবশ্যই তওবা করতে হবে।
উল্লেখ্য, গত বুধবার দুর্গোত্সব উপলক্ষে ঢাকেশ্বরী মন্দির ও রামকৃষ্ণ মিশনে পূজামণ্ডপ পরিদর্শনকালে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘আমরা জানি এবং শুনেছি মা দুর্গা প্রত্যেক বছর কোনো না কোনো বাহনে চড়ে আমাদের এ বসুন্ধরায় আসেন। এবার আমাদের দেবী এসেছেন গজে চড়ে। জানি, গজে চড়ে এলে এ পৃথিবী ধন-ধান্যে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে। তা আমরা দেখতেই পাচ্ছি। এবার ফসল ভালো হয়েছে। মানুষ সুখে-শান্তিতে আছে। দেশের জিডিপি বৃদ্ধি পেয়ে ৭ ভাগে দাঁড়িয়েছে।’

No comments:

Post a Comment