Friday 9 December 2011

সিলেটের জৈন্তাপুর ও গোয়াইনঘাটে মানববন্ধন : সারী নদীর উত্সমুখে ভারতের ড্যাম নিয়ে ফুঁসে উঠছে জনতা


জৈন্তাপুর প্রতিনিধি

সিলেটের সারী নদীর উত্সমুখে ভারত ড্যাম নির্মাণ করে পরীক্ষামূলকভাবে বিদ্যুত্ উত্পাদন করায় সারী নদী বাঁচাও সংগঠনের মাধ্যমে গতকাল নদীর তীরে এলাকাবাসীর উদ্যোগে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। সংগঠনের সভাপতি আবদুল্লাহর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক বোরহানের পরিচালনায় এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন জৈন্তাপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ জয়নাল আবেদীন। তিনি বলেন, আগামী ২-৩ বছরের মধ্যে সারী নদীর উজানে ভারতের বাঁধ নির্মাণ করে বিদ্যুত্ উত্পাদনের ফলে সিলেটবাসী মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হবে। নদী তীরবর্তীসহ দূরের এলাকার লোকজনের জীবন-জীবিকায় ও জীববৈচিত্র্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সারী নদীর জলজ সম্পদ নষ্টের পাশাপাশি বালু ও পাথর মহাল ধ্বংস হয়ে যাবে। শ্রমিক ও কৃষকরা বেকার হয়ে পড়বে, খরা, দুর্যোগ ও মঙ্গায় পরিণত হবে বৃহত্তর সিলেট।
ভারত প্রায় দেড় যুগ আগে টিপাই মুখে বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা করে তখন বাংলাদেশের জনগণ দলমত নির্বিশেষে ভারতের বিপক্ষে আন্দোলন সংগ্রাম গড়ে তুললে প্রতিবাদেরমুখে বাঁধ নির্মাণ
কিছুটা স্থবির হয়ে যায়। কিন্ু্ত ভারত আবার ফারাক্কার মতো সিলেট অঞ্চলকে মরুভূমিতে পরিণত করতে টিপাই মুখে বাঁধ নির্মাণ করতে মরিয়া হয়ে ওঠে।
সিলেট জৈন্তাপুর উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া সারী নদীকে বলা হয় লাইফ রিভার ও লাইফ লাইন। এ নদীর পানি দিয়ে এদেশের কৃষক কৃষিকাজ করে বিভিন্ন ফসল উত্পাদন করে দেশের খাদ্য ঘাটতি মেটাতে সহায়তা করছে। জীববৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে টিকিয়ে রেখেছে এ নদীটি। জৈন্তাপুর উপজেলার সারী নদীর পানি দেশ-বিদেশে ‘স্বচ্ছ নীল পানি’ নামে পরিচিত। সারী নদীটি গভীর হওয়ায় বিরল প্রজাতির মাছ যেমন বাঘমাছ, কালিয়ারা, বোয়াল, গাঘটসহ হাজারও প্রজাতির মাছের প্রজনন কেন্দ্র এ নদীটি। সারী নদীর বালু বুয়েটের পরীক্ষিত ও উন্নতমানের হওয়ায় দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে অট্টালিকা ও টাওয়ার নির্মাণকাজেও ব্যবহার করা হচ্ছে। সরকার এখান থেকে বছরে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব আয় করছে। এ বছর শুধু বালু থেকে ১ কোটি ৪৪ লাখ টাকা সরকার লিজ মানি পেয়েছে। সিলেটের জৈন্তাপুরের উজানে ভারত সেখানে ড্যাম নির্মাণ করে বিদ্যুত্ উত্পাদন শুরু করেছে।
ভারত এ ড্যাম ব্যবহার করে ১২৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুত্ কেন্দ্র স্থাপন করে। ২০০২ সালের ২৫ অক্টোবর ভারতের তত্কালীন রাষ্ট্রপতি এপিজে আবুল কালাম আন্তর্জাতিক নদী আইন তোয়াক্কা না করে এ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। সারী নদীর উজানে ভারত ড্যাম নির্মাণ করলেও এখন এ বিষয়েও বাংলাদেশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা অবগত নন।
সারী নদীরতীরবাসী ইউপি সদস্য আবদুস শুক্করসহ এলাকাবাসী জানান, সারী নদীর উজানে ভারতের বাঁধ নির্মাণের ফলে পানির স্তর নিচে নেমে যায়। এ নদীপথে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা লঞ্চ-স্টিমার, নৌকাযোগে পাথর-বালু, কয়লা ও চুনাপাথরসহ বিভিন্ন দ্রব্যসামগ্রী সরবরাহ করা হতো। পানির নাব্য কমে যাওয়ার ফলে গত কয়েক বছর থেকে এ নদীতে লঞ্চ-স্টিমার আসতে দেখা যায়নি। ড্যাম নির্মাণের খবর পেয়ে নদীতীরবর্তী ও দূরবর্তী অঞ্চলের লোকজন ক্ষোভে আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
মত্স্যজীবী সুরঞ্জিত দাস জানায়, সারী নদীর পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় দিন দিন মাছের প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে। হাজার হাজার মত্স্যজীবী শ্রমিকরা বেকার হয়ে পড়েছে। বালু ও পাথর শ্রমিকদের মধ্যে আবদুল মালেক জানান নদীতে স্রোত না থাকায় পর্যাপ্ত পরিমাণে বালু, পাথর আসছে না। যার ফলে শ্রমিক ও ব্যবসায়ীরা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কৃষিজীবী ময়নুল হোসেন, করিম, আবদুল জানান, বর্ষাকালে নদীতে ঢল না আসায় কৃষি জমিতে পলি মাটি না পড়ায় আগের তুলনায় ফসল ভালো হচ্ছে না।
মানববন্ধনে অন্যদের মধ্যে বক্তৃতা করেন জৈন্তাপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও ১নং জৈন্তাপুর নিজপাট ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল মালিক মানিক, উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল হাফিজ, বিএনপি নেতা ইলিয়াছ উদ্দিন লিপু, গোয়াইনঘাটের বিএনপি নেতা হাজী ফখরুল ইসলাম, গোয়াইনঘাটের যুবদল নেতা মাস্টার শফিকুর রহমান, জৈন্তাপুর উপজেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক বাহারুল আলম বাহার, জৈন্তাপুরের যুবদল নেতা লাল মিয়া, সমছির আহমদ, সরফ উদ্দিন, নুরুল ইসলাম, ছাত্রদল নেতা বুলবুল, বুরহান
I

No comments:

Post a Comment