Wednesday 21 December 2011

রাজশাহীতে আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি : ২০টি হত্যাকাণ্ডের ১৭টি গুপ্তহত্যা : গ্রেফতার হয়নি জড়িতরা, আতঙ্ক

রাজশাহী অফিস
রাজশাহীতে বেড়েছে গুপ্তহত্যার ঘটনা। গত সাড়ে তিন মাসে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে ২০টি। এর মধ্যে অপহরণ করে অথবা অজ্ঞাত স্থানে হত্যা করে অন্য স্থানে নিয়ে গিয়ে লাশ ফেলে দেয়া হয়েছে ১৭টি। তবে পুলিশ লাশ উদ্ধার করলেও এসব গুপ্ত হত্যাকাণ্ডের কারণ উদঘাটন করতে পারেনি। এখনও গ্রেফতার হয়নি হত্যাকাণ্ডের ঘটনার সঙ্গে জড়িতরা। এ নিয়ে রাজশাহীর জনমনে ব্যাপক আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে।
সর্বশেষ ১৫ ডিসেম্বর রাজশাহী পুঠিয়া উপজেলার জয়গিরপাড়া গ্রামে জোড়া খুনের ঘটনা ঘটে। পুলিশ এখনও এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। কেন এ নির্মম হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে তাও বের করতে পারেনি পুলিশ। ফলে এ নিয়ে উদ্বিগ্ন মানুষ। তবে পুলিশ বলছে এসব ঘটনার তদন্ত চলছে। খুব শিগগিরই খুনিদের আইনের আওতায় আনা হবে।
গত ১৫ ডিসেম্বর পুঠিয়া উপজেলার জয়গিরপাড়া গ্রামের নাসিরের ছেলে আলম এবং একই গ্রামের ভাদুর মেয়ে সাহারা ওরফে কালনীর লাশ কুড়েপুকুড়িয়া বাগান থেকে উদ্ধার করা হয়। তাদেরকে শ্বাসরোধ, জবাই ও পায়ের রগ কেটে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল।
কিন্তু পুলিশ এ জোড়া খুনের কারণ এখনও উদ্ধার করতে পারেনি। গ্রেফতারও করতে পারেনি কাউকে। এর আগে গত ৮ ডিসেম্বর নগরীর মতিহার থানার আবহাওয়া অফিসের পাশে আখক্ষেত থেকে আয়া নার্গিসের লাশ উদ্ধার করা হয়। তাকে অন্য কোথাও হত্যা করে সন্ত্রাসীরা লাশ সেখানে ফেলে গেছে বলে পুলিশের ধারণা। এছাড়াও এ এলাকা থেকে গত তিন মাসে ৪টি লাশ উদ্ধার করা হয়। অপরদিকে গত ৫ ডিসেম্বর নগরীর কেশবপুর এলাকায় শওকত হোসেন রোকন (২২) নামের এক কলেজ ছাত্র খুন হয়। ২৯ নভেম্বর দুর্গাপুর উপজেলার চকজয়নগর এলাকা থেকে অজ্ঞাত ব্যক্তির বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই ব্যক্তিকে হত্যার পর লাশ নদীর তীরে ফেলে রাখা হয় বলে পুলিশ জানায়। দুই মাস পেরিয়ে গেলেও পুলিশ ওই অজ্ঞাত ব্যক্তির পরিচয় উদ্ধার করতে পারেনি। গত ১৫ অক্টোবর নগরীর মতিহার এলাকায় এক নারীকে মোবাইলে ডেকে নিয়ে হত্যা করা হয়। পুলিশ এ ঘটনায় মামলা নিলেও কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। এছাড়া গত ২৯ অক্টোবর রাজপাড়া থানার কোর্ট যাত্রী ছাউনির পাশ থেকে অজ্ঞাত এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ২০ সেপ্টেম্বর নগরীর বোয়ালিয়া থানা এলাকায় যুবলীগ কর্মীদের হাতে খুন হন আওয়ামী লীগ নেতা পিন্টু। ২৪ নভেম্বর নগরীর গোরহাঙা মসজিদের পেছনের পুকুর থেকে অজ্ঞাত লাশ উদ্ধার করে বোয়ালিয়া থানা পুলিশ। চোর সন্দেহে তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয় বলে জানায় পুলিশ। ৪ ডিসেম্বর নগরীর রাজপাড়া থানার বুলনপুরে প্রতিপক্ষের ধারাল অস্ত্রের আঘাতে নিহত হন রোকন। ১১ নভেম্বর ইলিয়াস হোসেন মিন্টু নামের এক মাদরাসা ছাত্রকে হত্যা করা হয়। ২২ অক্টোবর পদ্মা নদীর চর থেকে রাবি সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষক শরীফুল ইসলামের ভাই ব্যবসায়ী তৌহিদুল ইসলামের লাশ উদ্ধার করে রাজপাড়া থানা পুলিশ। পরিকল্পিতভাবে নগরীর টি-বাঁধে নিয়ে গিয়ে তাকে হত্যা করা হয়। গত ৫ সেপ্টেম্বর হাতেম আলী নামে এক কৃষককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। ২১ সেপ্টেম্বরে চারঘাটে শহিদ আলী নামে এক প্রতিবন্ধী যুবককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। একই দিনে পুঠিয়ার ধোকড়াকুল এলাকার একটি আখক্ষেত থেকে অজ্ঞাত ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারের কমপক্ষে এক মাস আগে তাকে হত্যা করে লাশ পুঁতে রাখা হয়েছিল বলে পুলিশের ধারণা। বাগমারা বারনই নদী থেকে ৬ আগস্ট আরিফুল ইসলাম নামে একজনের হাত-পা বাঁধা ও ২৯ সেপ্টেম্বর ডাঙাপাড়া বিলের মধ্যে টুটুল নামে একজনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তবে এসব ঘটনার মোটিভ এখনও উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ।
সমপ্রতি রাজশাহী এলাকায় গুপ্তহত্যার ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় এবং পুলিশ এসব ঘটনার কোনো মোটিভ উদঘাটন বা খুনিদের গ্রেফতার না করতে পারার ঘটনায় রাজশাহীর মানুষ এখন চরম উদ্বিগ্ন বলে জানান রাজশাহীর জনসাধারণ। এ ব্যাপারে রাজশাহী পুলিশ সুপার এসএম রোকনউদ্দিন জানান, এসব ঘটনা তদন্ত চলছে। খুব শিগগিরই খুনিদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। এদিকে গত রোববার রাজশাহী জেলা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কমিটির জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এক সভায় উপস্থিত সদস্যরা এসব হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা বলেন, ২০ দিনের ব্যবধানে পাঁচটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা উদ্বেগের বিষয়। তারা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে গুপ্তহত্যাসহ অন্যান্য অপরাধ বন্ধে আরও সক্রিয় হওয়ার পরামর্শ দেন।
http://www.amardeshonline.com/pages/details/2011/12/21/123271

No comments:

Post a Comment