Saturday 9 July 2011

কাল থেকে দেশব্যাপী ৩০ ঘণ্টার হরতাল : ইমান রক্ষার দাবিতে রাজপথে সক্রিয় থাকার ঘোষণা ১২ দলের












রকিবুল হক
আগামীকাল থেকে সারাদেশে একটানা ৩০ ঘণ্টার হরতাল শুরু হচ্ছে। সংবিধান থেকে আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস তুলে দিয়ে ধর্মনিরপেক্ষতা পুনঃস্থাপনের প্রতিবাদ, ইসলামবিরোধী শিক্ষানীতি এবং কোরআনবিরোধী নারীনীতি বাতিলসহ বিভিন্ন দাবিতে ইসলামী ও সমমনা ১২টি দল কাল সকাল ৬টা থেকে ১১ জুলাই দুপুর ১২টা পর্যন্ত এই হরতালের ডাক দেয়। একই দাবিতে পৃথকভাবে ১০ তারিখে সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালন করবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। ইমান রক্ষার দাবিতে ঘোষিত এই হরতালে সক্রিয় থাকার ঘোষণা দিয়েছে সংশ্লিষ্ট দলগুলো। যে কোনো মূল্যে কর্মসূচি সফল করতে দেশব্যাপী ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে তারা। এদিকে বিএনপি-জামায়াতসহ চারদলীয় জোট ও সমমনা অন্য দলগুলোও ৩০ ঘণ্টার এই হরতালে পূর্ণ সমর্থন দিয়েছে।গত ৩০ জুন আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস বাদ দিয়ে ধর্মনিরপেক্ষতা পুনঃস্থাপন সংবলিত সংবিধান জাতীয় সংসদে পাস হওয়ার প্রতিবাদে ইসলামী এবং সমমনা ১২টি দল এক বৈঠক করে ১০ ও ১১ জুলাই ৩০ ঘণ্টার হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করে। দলগুলো হচ্ছে—বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, নেজামে ইসলাম পার্টি, ইসলামী ঐক্য আন্দোলন, সম্মিলিত উলামা-মাশায়েখ পরিষদ, জাগপা, ইসলামিক পার্টি, মুসলিম লীগ, বাংলাদেশ ন্যাপ, ন্যাপ ভাসানী, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও এনডিপি। এর আগে একই ইস্যুতে ১০ জুলাই দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ঘোষণা করে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। এদিকে গতকাল পৃথক সংবাদ সম্মেলন করে ইসলামী ও সমমনা দলগুলোর ডাকা ৩০ ঘণ্টার হরতালের প্রতি পূর্ণ সমর্থন ঘোষণা করেছে বিএনপি-জামায়াতসহ চারদলীয় জোট এবং সমমনা বিভিন্ন দল। ১২ দলের হরতালে আরও সমর্থন দিয়েছে—বাংলাদেশ ওলামা পরিষদ, জাতীয় ফতোয়া বোর্ড, আহকামে শরিয়াহ হেফাজত কমিটিসহ বেশকিছু ধর্মীয় সংগঠন।৩০ ঘণ্টার এই হরতাল সফলের জন্য সংশ্লিষ্ট দলগুলো এরই মধ্যে মিছিল-সমাবেশ, পোস্টারিং, হ্যান্ডবিল বিলিসহ ব্যাপক কর্মসূচি পালন করেছে। গতকাল হরতালের সমর্থনে রাজধানীতে মিছিল-সমাবেশ এবং প্রচারপত্র বিলি করেছে দলগুলো। পুলিশি অবস্থান উপেক্ষা করে হরতালে সক্রিয় থাকার জন্য কেন্দ্রীয়ভাবে রাজধানীতে দফায় দফায় বৈঠক করছেন নেতারা। রাজপথে পিকেটিং ও মিছিল-সমাবেশ করার কৌশল নেয়া হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।হরতালের প্রস্তুতি বিষয়ে ১২ দলের সমন্বয়কারী ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমির মুফতি আবদুর রব ইউসুফী বলেন, হরতাল সফলের জন্য জনসচেতনতা সৃষ্টিতে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালাচ্ছি। সারাদেশে সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোর মধ্যে সমন্বয় করছি। ঢাকায় নেতাদের নিয়ে কলাকৌশল নির্ধারণে বার বার বৈঠক করা হচ্ছে। হরতালে রাজধানীসহ সারাদেশে পিকেটিং করা হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ঢাকায় পিকেটিংয়ের জন্য থানায় থানায় দায়িত্ব ও স্পট ভাগ করে দেয়া হয়েছে। কিছু জায়গায় সম্মিলিতভাবে, আবার কোথাও আলাদাভাবে দলগুলো পিকেটিং ও মিছিল করবে। তিনি বলেন, আমরা হরতালে তেমন কঠোর হতে না পারলেও সরকার যদি আমাদের সঙ্গে অন্য দলগুলোর মতো আচরণ করে বা হরতালে বাধা দেয়, তাহলে আন্দোলন কঠিন রূপ ধারণ করতে পারে। এক্ষেত্রে হরতাল আরও বাড়িয়ে দেয়া হবে বলেও হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন তিনি। সম্মিলিত উলামা-মাশায়েখ পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক ড. খলিলুর রহমান মাদানী বলেন, হরতালে গোটা রাজধানীজুড়ে পিকেটিং করা হবে। ১২ দলের পক্ষ থেকে আলাদাভাবে এবং কিছু জায়গায় সমন্বিতভাবে এই পিকেটিং করা হবে। যেভাবেই হোক, দাবি আদায়ে আরও সক্রিয় আন্দোলন করার ইঙ্গিত দেন তিনি।ইসলামী আন্দোলনের ঢাকা মহানগর সভাপতি অধ্যাপক এটিএম হেমায়েত উদ্দিন বলেন, আমরা হরতালে অভ্যস্ত নই। তবুও এ সরকারের ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে ইমানের দাবিতে হরতাল ডাকতে বাধ্য হয়েছি। তিনি বলেন, চরমোনাই পীরের ঘোষণা অনুযায়ী গণতান্ত্রিক অধিকার হিসেবে আমরা ১০ তারিখে শান্তিপূর্ণ সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালন করব। এজন্য সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সারাদেশে সংগঠনের নেতাকর্মীদের সংগঠিত করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। হরতাল উপলক্ষে রাজধানীসহ সারাদেশে মিছিল-সমাবেশ, হ্যান্ডবিল ও পোস্টার দিয়ে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। হরতাল সফলে কাল রাজপথে সাংগঠনিক শক্তি প্রয়োগ এবং শক্ত পিকেটিং করার কথা জানান তিনি। এর আগে তিনি এক সমাবেশে বলেছিলেন, ১০ তারিখের হরতালে চরমোনাই পীরের শক্তি ও ভক্তদের পরীক্ষা হবে। হরতালের মাধ্যমে সারা দেশ অচল করে দেয়া হবে। এতে সরকার বাধা দিলে প্রয়োজনে লাগাতার হরতাল দেয়ার হুমকি দেন তিনি

No comments:

Post a Comment