Wednesday 23 February 2011

মানবাধিকার কমিশন চেয়ারম্যান : আড়িয়ল বিলে সহিংসতার জন্য সরকার দায়ী


স্টাফ রিপোর্টার

আড়িয়ল বিলে গণবিস্ফোরণ, পরবর্তী সময়ে ওই এলাকার ৩ থেকে ৫ হাজার মানুষের ওপর নেমে আসে মামলা, নির্যাতন। ঘটে এলাকার অধিবাসীদের বাড়িঘর তছনছের ঘটনাও। এসব ঘটনার জন্য সরকারই দায়ী। এ অভিমত জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমানের। আড়িয়ল বিলের ঘটনা সম্পর্কে ড. মিজানুর রহমান বলেন, সরকার কোনো অবস্থায়ই এ ঘটনার দায় এড়াতে পারে না। ঘটনার পরে হাজার হাজার লোকের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের ঘটনা মানবাধিকারের লঙ্ঘন। মানবাধিকার কমিশনের মতো পরিবেশ বিষয়ক একটি স্বাধীন কমিশন থাকলে আড়িয়ল বিলে পুলিশের ওপর হামলার এ ঘটনা ঘটত না। পরিবেশ কমিশন কখনোই আড়িয়ল বিলে বিমানবন্দর নির্মাণের জন্য সরকারকে ছাড় দিত না। গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) আয়োজিত বৈশ্বিক অভিজ্ঞতার আলোকে বাংলাদেশের পরিবেশ আইন ও পরিবেশ আদালতের আইনের সাম্প্রতিক সংস্কার শীর্ষক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।
পবা চেয়ারম্যান আবু নাসের খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সেমিনারে ‘বৈশ্বিক অভিজ্ঞতার আলোকে বাংলাদেশের পরিবেশ আইন ও আদালত সংস্কার ভাবনা’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক আবু নাসের মো. ওয়াহিদ। মূল প্রবন্ধের ওপর বক্তব্য রাখেন জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ সংক্রান্ত সর্বদলীয় সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান সাবের হোসেন চৌধুরী, আইন কমিশনের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অধ্যাপক শাহ আলম, পরিবেশবাদী সংগঠন বেলার নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, পরিবেশ অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক আবদুস সোবহান প্রমুখ। প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. মিজানুর রহমান আরও বলেন, আড়িয়ল বিলের দুঃখজনক ঘটনার পর কয়েক হাজার অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা করা মানবাধিকারের লঙ্ঘন। এ মামলা দায়েরে পুলিশকে অসীম ক্ষমতা দেয়ার কোনো যৌক্তিকতা থাকতে পারে না। এ ধরনের মামলায় মানবাধিকারের লঙ্ঘন হয়। দাবি আদায়ের জন্য আন্দোলনকারীদের ওপর এ ধরনের নির্যাতন কোনো সভ্য দেশ কিংবা সভ্য সমাজ গ্রহণ করে না। সবকিছুতেই একটি নিয়মতান্ত্রিক পন্থা থাকে। অনিয়মতান্ত্রিক ও অগণতান্ত্রিক কোনো কিছুই দেশের জন্য কল্যাণকর নয়। বিমানবন্দর নির্মাণ বন্ধ ও মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে যে হরতাল আহ্বান করা হয়েছে সেটিকেও আমি যৌক্তিক বলে মনে করি না। কেননা, হরতাল দাবি আদায়ের কোনো উপায় হতে পারে না। দাবি আদায়ের জন্য হরতালেরও বিকল্প কর্মসূচি গ্রহণ করা যায়। গণতান্ত্রিক দাবি গণতান্ত্রিক পন্থায় আদায় করতে হবে। হরতাল দিয়ে দাবি আদায় করা সমীচীন নয়।
পরিবেশ আইন সম্পর্কে ড. মিজানুর রহমান বলেন, প্রচলিত আইন দিয়ে পরিবেশ সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। এ জন্য একটি স্বাধীন পরিবেশ কমিশন প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব পেশ করা যেতে পারে। আজকে পরিবেশ কমিশন থাকলে আড়িয়ল বিলে প্রস্তাবিত বিমানবন্দর নির্মাণের জন্য সরকার পদক্ষেপ নিতে পারত না। তিনি বলেন, ১৯৯৫ সালে প্রণীত পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ২০০২ ও ২০১০ সালে সংশোধিত হয়। ২০০০ সালে এই আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করার জন্য পরিবেশ আদালত গঠিত হয়। কিন্তু প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই এ আদালত একটি অকার্যকর আদালত হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। পরিবেশ আইনের সফল বাস্তবায়ন, পরিবেশ বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও সংশ্লিষ্ট সবার জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার স্বার্থে বাংলাদেশে স্বাধীন পরিবেশ কমিশন গঠন জরুরি।
ড. শাহআলম বলেন, পরিবেশ সংক্রান্ত সব আইনকে সমন্বিত করে একটি বিস্তৃত আইন প্রণয়ন করা দরকার। উল্লেখ্য, মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরের আড়িয়ল বিলে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণ নিয়ে সোমবার স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে সংঘর্ষে এক পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হওয়ার পর ২১ হাজার লোককে আসামি করে চারটি মামলা করা হয়। এর মধ্যে একটি মামলায় বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াসহ ৩ হাজার লোককে আসামি করা হয়। এর প্রতিবাদে বিএনপি আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে

No comments:

Post a Comment