Wednesday 23 February 2011

দুই বছরে ২৪ টাকার রসুন ২শ’ টাকা অন্যান্য মসলার দাম বেড়েছে তিনগুণ

সৈয়দ মিজানুর রহমান

২০০৯ সালের এই সময়ে বাজারে এক কেজি রসুনের খুচরা দর ছিল ২৪ থেকে ৩২ টাকা। এখন রসুন বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ২০০ টাকা কেজি দরে। দুই বছর আগে বাজারে এক কেজি হলুদের দাম ছিল ৯৫ থেকে ১১০ টাকা, যা বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৩২৫ থেকে ৩৫০ টাকা দরে। শুকনা মরিচের খুচরা মূল্য দুই বছর আগে যেখানে প্রতি কেজি ৯০ থেকে ১১০ টাকা ছিল, বর্তমানে তা বিক্রি হচ্ছে ১৯০ থেকে ২২০ টাকা কেজি। আদার দর দুই বছর আগে প্রতি কেজি ৪০ থেকে ৪২ টাকা ছিল। এখন আদা বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮৫ টাকা দরে।
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বাজারদর তথ্যে জানা গেছে, মসলার দর গত ২ বছর ধরেই ঊর্ধ্বমুখী। এ সময়ে দফায় দফায় মূল্যবৃদ্ধির কারণে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে মসলার বাজার। বাজার ঘুরে জানা গেছে, এলাচ, জিরা, ধনে, যত্রিক, কবাবচিনি ও অন্যান্য মসলার দামও এখন আকাশচুম্বী। গত দুই বছরে প্রকারভেদে কেজি প্রতি ১০০ টাকা থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত বেড়েছে এসব মসলার দাম।
মসলার বাজারে গত দুই বছরে দরবৃদ্ধির শীর্ষে আছে রসুন। ব্যবসায়ীরা বলেছেন, আমদানি ব্যয় বাড়ায় রসুনের দাম বেড়েছে। দেশি রসুনের দাম বাড়ার কারণ হিসেবে অনেক ব্যবসায়ী বলেছেন, একশ্রেণীর মজুতদার, আমদানিকারক, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের কারসাজিতেই ধাপে ধাপে রসুনের দাম বেড়েছে। দামের ব্যবধান কমিয়ে আনতে সরকারকে রসুন আমদানির পরামর্শ দিয়েছেন কেউ কেউ।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সাধারণত চীন ও ভারত থেকে আমদানি হয়ে থাকে রসুন। চীনে নতুন মৌসুমের রসুন বাজারে উঠতে শুরু করেছে। সে জন্য সেখানে দামও নিম্নমুখী। তবে অভ্যন্তরীণ বাজারে রসুনের দাম ঊর্ধ্বমুখী বলে জানিয়েছে টিসিবি। টিসিবির তথ্যমতে, গত দুই বছরে রসুনের দাম প্রায় তিনগুণ বেড়েছে। গত এক বছরের শতকরা হিসাবে রসুনের দাম বেড়েছে ৬১ শতাংশ। গত এক মাসে দরবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ৭ ভাগ। শ্যামবাজারের আড়তদার আবদুস সাত্তার জানিয়েছেন, স্থানীয়ভাবে উত্পাদন কমে যাওয়ায় রসুনের দাম বাড়ছেই। তিনি বলেন, দেশের ৫টি জেলায় বেশি রসুন উত্পাদিত হয়। এগুলো হলো নাটোর, ফরিদপুর, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও মানিকগঞ্জ। এর মধ্যে নাটোরে সবচেয়ে বেশি রসুন উত্পাদিত হয়।
রসুন আমদানিকারক আমজাদ হোসেন জানিয়েছেন, ভারত থেকে রসুন আমদানি প্রায় বন্ধ হওয়ার পথে। আমদানিতে কিছু জটিলতা তৈরি হওয়ায় ব্যবসায়ীরা এখন চীন থেকেই আমদানি করছেন। তবে চীন থেকে আমদানিতে সময় বেশি লাগে, পরিবহন খরচও বেশি। এ কারণে দাম ঊর্ধ্বমুখী। তিনি দাবি করেন, কিছু আড়তদার রসুনের মজুত গড়ে তুলছেন। এরা স্থানীয়ভাবে উত্পাদিত রসুন কৃষকদের কাছ থেকে সস্তায় কিনে থাকেন, সেগুলোও পরে চড়া দামে বিক্রি করছেন। বাজারে সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ না থাকার ফলেই ধাপে ধাপে রসুনের দাম বেড়ে যাচ্ছে বলে জানান তিনি।
হলুদের দামও গত দুই বছরে প্রায় তিনগুণ বেড়েছে। টিসিবির হিসাবে ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাজারে প্রতি কেজি হলুদ বিক্রি হয়েছে ৯৫ থেকে ১১০ টাকা। ২০১০ সালের ফেবু্রয়ারিতে হলুদ বিক্রি হয় ১৬০ থেকে ১৭৫ টাকা, যা গতকাল বাজারে বিক্রি হয় ২৮০ থেকে ৩২৫ টাকা কেজি দরে।
শুকনা মরিচের দাম ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে ছিল প্রতি কেজি ৯০ থেকে ১১০ টাকা। ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারিতে এসে শুকনা মরিচের দাম বেড়ে বিক্রি হয় ১২০ থেকে ১৫০ টাকা কেজি। গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে শুকনা মরিচ বিক্রি হয়েছে ১৯০ থেকে ২২০ টাকা কেজি। টিসিবির হিসাবে গত এক বছরে এর দাম প্রায় ৩৫ শতাংশ বেড়েছে।
বাজারে এক কেজি আদার দাম এখন ৭৫ থেকে ৮০ টাকা। তবে দুই বছর আগে আদার দাম ছিল প্রতি কেজি ৪০ থেকে ৪২ টাকা কেজি। গত বছর ফেব্রুয়ারিতেও আদা বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে।
বাজারে গত দুই বছর আগে ৫০ গ্রাম এলাচ বিক্রি হয়েছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকায়। কারওয়ান বাজারের মসলা বিক্রেতা কামাল হোসেন গতকাল আমার দেশকে জানিয়েছেন, বর্তমানে ৫০ গ্রাম এলাচ বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৭০ টাকায়। তিনি জানান, গত কোরবানি ঈদের আগে থেকে এলাচ, জিরা, যত্রিক, কবাবচিনি ও অন্যান্য মসলার দাম হঠাত্ বেড়ে যায়। সেই থেকে চড়া দামেই মসলা বিক্রি হচ্ছে। তিনি জানান, মাত্র এক বছর আগেও ১০০ গ্রাম জিরা বিক্রি হয়েছে ২০ থেকে ২৫ টাকায়। এখন তা বিক্রি হচ্ছে ১৫৫ থেকে ১৬০ টাকায়।
১০০ গ্রাম যত্রিক বিক্রি হতো দুই বছর আগে ১০০ টাকায়। এখন তা ২৫০ টাকা ছাড়িয়ে গেছে।
রাজধানীর মৌলভীবাজারের ব্যবসায়ীরা বলেছেন, গত প্রায় এক বছর ধরেই মসলার দাম চড়া। এর মধ্যে কয়েকদফা দাম বেড়েছে মসলার। তবে একসঙ্গে সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে গত কোরবানির ঈদের আগে। ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ জানিয়েছেন, মসলার ওপর সরকার শুল্ক বসিয়েছে। এ কারণে দাম বেড়ে গেছে। এ বিষয়ে মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি এনায়েতুল্লা জানান, শুল্ক বৃদ্ধির নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে মসলার বাজারে। দাম আরও বাড়তে পারে। তিনি বলেন, এতদিন এক টন মাল আমদানি করতে ১৮শ’ ডলার শুল্ক ধরা হতো। বর্তমানে ৩ হাজার ডলার শুল্ক ধরা হচ্ছে। সে হিসাবে এক টন মাল আমদানি করতে ৫২ হাজার টাকার বেশি শুল্ক দিতে হচ্ছে। তাই মালের দাম আরও বাড়তে পারে।

No comments:

Post a Comment