Friday 7 January 2011

ইভটিজিং : রায়পুরায় ছেলে ও ছেলের বউকে বাঁচাতে গিয়ে বাবা খুন : ফরিদপুরে ছাত্রীর আত্মহত্যা

ডেস্ক রিপোর্ট

দেশব্যাপী ইভটিজিংয়ের ভয়াবহতা বাড়ছেই। ইভটিজিং প্রতিরোধে সরকার কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা দিলেও বন্ধ করা যাচ্ছে না সামাজিক এ ব্যাধি। গতকাল ও শনিবার রাতে পৃথক ইভটিজিংয়ের ঘটনায় ঝরে গেল আরও দুটি তাজা প্রাণ। তবে একটি বখাটের পিটুনিতে মৃত্যু অপরটি আত্মহত্যার মাধ্যমে বখাটের প্রতিনিয়ত উত্ত্যক্তের কারণে দুর্বিষহ হয়ে ওঠা জীবন থেকে মুক্তির। মৃত্যুর ঘটনাটি ঘটেছে নরসিংদীর রায়পুরায়। আর আত্মহত্যার ঘটনাটি ঘটেছে ফরিদপুর উপজেলায়। প্রথম খুনের ঘটনাটি ঘটে বখাটেদের হাত থেকে ছেলে ও ছেলের বউকে বাঁচাতে গিয়ে। আর দ্বিতীয়টি ঘটে স্কুলে আসা-যাওয়ার পথে প্রতিনিয়ত উত্ত্যক্ত করা শেষে বখাটের কাছে শ্লীলতাহানির অপমানের কারণে। বিস্তারিত প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর :
নরসিংদী : নরসিংদীর রায়পুরায় ইভটিজারদের হাত থেকে ছেলে ও ছেলের বউকে বাঁচাতে গিয়ে খুন হয়েছেন এক ব্যবসায়ী। তার নাম রতন ভূঞা (৫০)। বাড়ি উপজেলার রহিমাবাদ গ্রামে। তার নির্মম মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তবে পুলিশ এ ঘটনায় কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি।
নিহত রতন ভূঞার ছেলে রবিনের স্ত্রী সোনিয়া আক্তার আদীয়াবাদ কলেজের প্রথমবর্ষের ছাত্রী। গতকাল সকালে সোনিয়া তার সহপাঠী শান্তা, হনুফা, মিতু ও সেলিনাসহ হাসনাবাদ বাজারে অলিউল্লাহ স্যারের কাছে প্রাইভেট পড়ে বাড়ি ফিরছিল। রবিনের দোকানের সামনে পৌঁছলে আগে থেকে ওঁত্ পেতে থাকা বখাটে যুবক সোহেল, জসিম উদ্দিন ও রাজিব তাদের গতিরোধ করে। একপর্যায়ে তাদের যৌন হয়রানির চেষ্টা চালায়।
এ সময় স্ত্রীকে চোখের সামনে উত্ত্যক্ত করতে দেখে রবিন প্রতিবাদ করলে বখাটেরা তাকে পেটাতে শুরু করে। তাদের চিত্কারে আশপাশের লোকজনসহ বাবা রতন ভূঞা ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। তিনি ছেলেকে বাঁচাতে চেষ্টা চালান। এ সময় বখাটেরা তাকেও এলোপাতাড়ি পেটাতে থাকে। ভয়ে আশপাশের লোকজন দৌড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে পালিয়ে যায়। ইভটিজারদের বেধড়ক পিটুনিতে একপর্যায়ে রতন ভূঞা মাটিতে লুটে পড়েন। পরে বখাটেরা মৃত ভেবে পালিয়ে যায়। এলাকাবাসী রতন ভূঞাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় প্রথমে নরসিংদী সদর হাসপাতাল ও পরে ঢাকা নেয়ার পথে বিকালে তিনি মারা যান। এ ঘটনায় জেলাব্যাপী তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। তবে পুলিশ এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। রায়পুরা থানার পুলিশ ইন্সপেক্টর মোমিন মিয়া ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে টেলিফোনে বলেন, অপরাধীদের আটক করতে পুরো এলাকায় তল্লাশি চলছে। নিহতের ছেলে রবিন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, পাশের আদীয়াবাদ গ্রামেই বর্তমান সরকারের ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী রাজি উদ্দিন আহমেদ রাজুর গ্রামের বাড়ি। আমার বিশ্বাস তিনি পুলিশ প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দ্রুত অ্যাকশনে যাওয়ার নির্দেশ দেবেন। এ ঘটনায় পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
ফরিদপুর : মধুখালীর চাপা রানীর রক্তের দাগ শুকানোর আগেই বখাটের কারণে পালিয়ে থেকেও মুক্তি মিলল না ফরিদপুরের স্কুলছাত্রী মুক্তি রানী মণ্ডলের (১৩)। উত্ত্যক্তের যন্ত্রণা সইতে না পেরে শনিবার রাতে আত্মহত্যা করে সে। মামার বাড়ি পালিয়ে থেকেও নিজেকে রক্ষা করতে পারেনি মেধাবী ছাত্রী মুক্তি। সে গাজনা উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী ছিল। দুই বছর ধরে বখাটে সুব্রত দাস তাকে উত্ত্যক্ত করে আসছিল। ঘটনাটি ঘটেছে শনিবার রাতে। মুক্তির মৃত্যুর পর উত্ত্যক্তকারী সুব্রত ও তার পরিবারের সদস্যরা পালিয়ে বেড়াচ্ছে।
ফরিদপুর সদর উপজেলার বিষ্ণুদিয়া গ্রামের শ্রীকান্ত মণ্ডলের মেয়ে মুক্তি রানীকে দুই বছর ধরে উত্ত্যক্ত করে আসছিল একই গ্রামের সুব্রত দাস। মুক্তিদের বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে বন্ধুদের নিয়ে সে তাকে বিরক্ত করত। এলাকার প্রভাশালী মহলের ছত্রছায়ায় থাকার কারণে তাকে কেউ কিছু বলতে পারত না। তারপরও স্থানীয় চেয়ারম্যান ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের কাছে নালিশ দিয়েছিলেন মুক্তির বাবা; কিন্তু তাতেও শেষ রক্ষা হলো না। সম্প্রতি বখাটে সুব্রত তার উত্ত্যক্ততার মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। এ কারণে তাকে তার মামার বাড়ি মধুখালী উপজেলার ব্যাসদিয়া গ্রামে পাঠিয়ে দেয়া হয়; কিন্তু সুব্রত সেখানে গিয়েও তাকে বিরক্ত করা শুরু করে। এরপর তাকে বাড়ি ফিরিয়ে আনা হয়। শুক্রবার রাতে সে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে ঘরের বাইরে গেলে আগে থেকে ওঁত্ পেতে থাকা সুব্রত তাকে ঝাপটে ধরে ধর্ষণের চেষ্টা চালায়। মুক্তির চিত্কারে বাড়ির লোকজন এসে তাকে উদ্ধার করে। এ সময় বখাটে সুব্রত দৌড়ে পালিয়ে যায়। পরদিন মুক্তিকে আবার তার মামাবাড়িতে পাঠানো হয়; কিন্তু শনিবার রাতে অপমান সহ্য করতে না পেরে সে বিষপান করে। বিষয়টি টের পেয়ে তাকে হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। লাশের ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল মুক্তির লাশ দাহ করা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছে কোতোয়ালি থানার ওসি নূরে আলম সিদ্দিকী।
ইভটিজিং : ৬ মাসে দেশে খুন হয়েছেন ৩০ জন, আহত একশ’
বরিশাল অফিস জানায়, গত ৬ মাসে ইভটিজিংয়ের শিকার হয়ে ও প্রতিবাদ করতে গিয়ে সারাদেশে ৩০ জন খুন হয়েছেন। গুরুতর আহত ও পঙ্গু হয়েছেন শতাধিক। ‘ইভটিজিং রোধে আমরা সচেতন’— এ স্লোগান নিয়ে বরিশালে অনলাইন সংবাদ সংস্থা বাংলা নিউজ ডটকম আয়োজিত এক মানববন্ধনে বক্তারা এ তথ্য জানান। বক্তারা আরও বলেন, ইভটিজিংয়ের জন্য শুধু ছেলেমেয়েরাই দায়ী নয়, ইভটিজিং বন্ধে বাবা-মা, অভিভাবককেও সচেতন হতে হবে। বর্তমানে দেশজুড়ে ব্যাপক আকার ধারণ করা ইভটিজিং সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমেই রোধ করা সম্ভব।
গতকাল সকাল ১১টায় নগরীর অশ্বিনীকুমার টাউন হল চত্বরে দৈনিক বিপ্লবী বাংলাদেশের সম্পাদক নূরুল আলম ফরিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে অন্যদের মধ্যে বক্তৃতা করেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. হানিফ, মানবাধিকার জোটের জেলা সভাপতি ডা. সৈয়দ হাবিবুর রহমান, চেম্বার অব কমার্সের জেলা সভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু, প্রেস ক্লাবের সাবেক সম্পাদক মুরাদ আহম্মেদ, ডা. মিজানুর রহমান প্রমুখ।
এবার চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রী ইভটিজিংয়ের কবলে
বিয়ানীবাজার (সিলেট) প্রতিনিধি জানান, এবার চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রীও ইভটিজিংয়ের কবলে পড়েছে। শুধু তাই নয়, বখাটে ইভটিজার ওই ছাত্রীর বসতবাড়িতেও নিয়মিত ঢিল ছুড়ে মারছে। বিয়ানীবাজার পৌর শহরের নয়াগ্রামে এ ধরনের ঘটনায় থানায় এজাহার দেয়া হয়েছে। পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে। তবে এজাহারটি এখন পর্যন্ত মামলা হিসেবে নথিভুক্ত হয়নি বলে জানান বাদী। একই গ্রামের আবদুল মালিকের ছেলে ইভটিজার হোসেন আহমদ (২২) পলাতক রয়েছে। স্থানীয় পৌর কমিশনারও ইভটিজার হোসেন আহমদকে নিবৃত্ত করতে পারেননি।
নয়াগ্রামের আবদুল হেকিমের বাড়িতে ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করেন নুরু মিয়া। তার চতুর্থ শ্রেণীপড়ুয়া মেয়েকে প্রায়ই উত্ত্যক্ত করে হোসেন। এমনকি সে তাদের বসতঘরে ঢিল ছুড়ে মারে। সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত সে নিয়মিত নুরু মিয়ার বাসায় ঢিল ছোড়ে। ভাড়াটিয়াকে নিরাপত্তা দিতে মালিক আবদুল হেকিম এসব ঘটনার প্রতিবাদ করলে বখাটে হোসেন তাকেও গালাগাল শুরু করে। বিষয়টি আবদুল হেকিম পৌরসভার প্রশাসক তফজ্জুল হোসেনকে অবহিত করেন। কিন্তু তিনিও হোসেনের অপকর্ম বন্ধ করতে পারেননি। উপায়ান্তর না দেখে আবদুল হেকিম বাদী হয়ে বিয়ানীবাজার থানায় এজাহার দায়ের করেন। থানার এএসআই আরিফ অভিযোগ পেয়ে তাত্ক্ষণিক তদন্তে গিয়ে এর সত্যতা পান। তিনি জানান, পৌর কমিশনারও হোসেনকে ইভটিজিং থেকে নিবৃত্ত করতে পারেননি। সে বর্তমানে পলাতক রয়েছে

No comments:

Post a Comment