Saturday 3 April 2010

শীর্ষ ওলামা মাশায়েখদের উদ্বেগ : সরকার দেশ থেকে ইসলাম নির্মূল করার চেষ্টা করছে : রাবি শিক্ষক, গভর্নরের গ্রেফতার ও শাস্তি দাবি

রকিবুল হক
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বোরকা নিষিদ্ধ ও পবিত্র কোরআন তিলাওয়াতের পরিবর্তে রবীন্দ্রসঙ্গীত দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুষ্ঠান উদ্বোধন করার সিদ্ধান্তে তীব্র ক্ষোভ ও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে দেশের শীর্ষস্থানীয় ওলামা-মাশায়েখরা বলেছেন, সরকার অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে দেশ থেকে পবিত্র ইসলাম, ইসলামী মূল্যবোধ, ধর্মীয় চেতনা নির্মূল করার কাজ শুরু করে দিয়েছে। দেশের নব্বইভাগ মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে জাতিকে ধর্মহীন করার চেষ্টা সরকারের জন্য বুমেরাং হতে পারে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি ড. একেএম শফিউল ইসলাম ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমানের গ্রেফতার ও শাস্তি দাবি করে তারা বলেন, অতীতে যখনই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে তখনই ইসলাম ও ইসলামী মূল্যবোধ ধ্বংসের উদ্যোগ নিয়েছে। অবিলম্বে ড. শফিউল ইসলাম ও ড. আতিউর রহমানকে বহিষ্কার ও গ্রেফতার করা না হলে দেশের সর্বস্তরের জনগণকে নিয়ে সরকারবিরোধী তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। তারা বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর দেশের শত বছরের ঐতিহ্য মাদ্রাসা শিক্ষাকে জঙ্গিবাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে একের পর মিথ্যা অপবাদ দিয়ে মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার কাজ শুরু করে। ইসলামের বিরুদ্ধে নানামুখী ষড়যন্ত্রের পর এবার সরকার বোরকা নিষিদ্ধ করার দুঃসাহস দেখিয়েছে। ইসলামী আদর্শে বিশ্বাসী সব শ্রেণীর, সব পেশার মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তারা বলেন, তীব্র আন্দোলনের মাধ্যমে এ সরকারের ইসলাম ও দেশবিরোধী চক্রান্ত রুখে দেয়া হবে।
প্রসঙ্গত, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রীদের বোরকা পরার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে কর্তৃপক্ষ। গত ৩১ মার্চ অর্থমন্ত্রীর উপস্থিতিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি অনুষ্ঠান কোরআন তিলাওয়াতের পরিবর্তে রবীন্দ্রসঙ্গীত দিয়ে শুরু করা হয়।
ইসলামী ঐক্যজোট চেয়ারম্যান মুফতি ফজলুল হক আমিনী বলেন, বর্তমান ইসলামবিরোধী সরকারের মূল পরিকল্পনা হচ্ছে দেশ থেকে চিরতরে ইসলাম ও ইসলামী আদর্শ উত্খাত করা। তারা এই অ্যাসাইনমেন্ট নিয়েই ক্ষমতায় এসেছে। একইভাবে তুরস্ক ও স্পেনে বোরকা নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। সরকার মুখে ইসলামের কথা বললেও তাদের মূল কাজই হচ্ছে তাদের প্রভুদের কথামতো ইসলামকে ধ্বংস করা। রবীন্দ্রসঙ্গীত এখন অনুষ্ঠানের উদ্বোধনীতে ব্যবহার করছে। কিছুদিন পরে সরকার মিলাদ মাহফিলেও রবীন্দ্রসঙ্গীত বাধ্যতামূলক করবে। প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা বলেছেন দেশে একমাত্র আওয়ামী লীগই হচ্ছে ইসলামের পক্ষের শক্তি। একথা দ্বারাই প্রমাণ করে তারা ইসলামকে ভয় পায় এবং ইসলামের নামেই তারা ক্ষমতায় থাকতে চায়। তাদের ইসলাম প্রীতির নমুনাই হচ্ছে মাদ্রাসা শিক্ষা ধ্বংস করা, বোরকা নিষিদ্ধ করা এবং কোরআন তিলাওয়াতের পরিবর্তে রবীন্দ্রসঙ্গীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু করা। সময় এসেছে ঐক্যবদ্ধভাবে আওয়ামী লীগের হঠকারিতার জবাব দেয়ার। আওয়ামী লীগের এসব কর্মসূচি চলতে থাকলে দেশে ইসলামী মূল্যবোধ বিপর্যয়ে পড়বে।
খেলাফত মজলিস আমির মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাক বলেন, সরকার বিদেশিদের সঙ্গে চুক্তি করে তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়নে ক্ষমতায় এসেছে। তাই কোরআন তিলাওয়াতের পরিবর্তে রবীন্দ্রসঙ্গীত দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের বোরকা পরা নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটি সরকারের পুরনো অভ্যাস। একজন মুসলামন হিসেবে আমি এর তীব্র নিন্দা জানাই। এর প্রতিবাদ করা প্রতিটি মুসলমানের নৈতিক, সাংবিধানিক ও ইমানি দায়িত্ব। এসবের বিরুদ্ধে ইসলামী দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করে প্রতিবাদ জানাতে হবে।
খেলাফত আন্দোলনের আমির মাওলানা আহমদুল্লাহ আশরাফ বলেন, আল্লাহর কালামের পরিবর্তে রবীন্দ্রসঙ্গীত পরিবেশন বিধর্মীদের প্রতি ভালোবাসা এবং অনৈসলামিক কাজকে স্বীকৃতি দেয়ার জন্য করা হয়েছে। বাংলাদেশের নব্বইভাগ মানুষ মুসলমান। কাজেই কোনো বিবেকবান, দেশপ্রেমিক শিক্ষিত মানুষ এ কাজ করতে পারে না। ভারতের প্রতি আনুগত্যশীল হয়ে অতিভক্তির প্রমাণ দেয়ার জন্য মুসলমান হয়েও সরকার এটা করেছে। মুসলমান ও ইসলামী আদর্শের বিরুদ্ধে সরকার এখন নানামুখী ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তে লিপ্ত। দেশের মানুষের পক্ষে এটা বুঝতে আর বাকি নেই। বাংলাদেশ ও ইসলামের বিরুদ্ধে যারা এ কাজ করছে, মুসলমান হয়ে থাকলে প্রধানমন্ত্রী অবশ্যই এর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। তা না হলে জনগণ এর সমুচিত জবাব দেবে। বাংলাদেশের কোনো প্রতিষ্ঠান বোরকা পরার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার দুঃসাহস দেখাতে পারে, এটা ভাবতেও অবাক লাগে।
আহকামে শরীয়াহ হেফাজত কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ড. মাওলানা আবু ইউসুফ মাদানী বলেন, তিন লাখ মসজিদের বাংলাদেশে বোরকা নিষিদ্ধ হবে আর পবিত্র কোরআন তিলাওয়াতের পরিবর্তে রবীন্দ্রসঙ্গীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু করা হবে এটা কোনো মুসলমান একবিন্দু রক্ত থাকতে মেনে নিতে পারে না। এর প্রতিবাদ করা সবার ইমানি দায়িত্ব। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি ড. একেএম শফিউল ইসলাম ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমানের গ্রেফতার ও শাস্তি দাবি করে তিনি বলেন, অতীতে যখনই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে, তখনই ইসলাম ও ইসলামী মূল্যবোধ ধ্বংসের উদ্যোগ নিয়েছে। এবারও তারা একই পথে এগুচ্ছে। সরকার তাদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হলে এর জন্য তাদের চরম মূল্য দিতে হবে।
নেজামে ইসলাম পার্টি ও ইসলামী ঐক্যজোট মহাসচিব মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী বলেছেন, বর্তমান ধর্মনিরপেক্ষ সরকার এখন এসবই করতে চায়। বাংলাদেশের মতো দেশে বোরকা নিষিদ্ধ করা ও রবীন্দ্রসঙ্গীত দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু সরকারের অনৈসলামীকরণ প্রক্রিয়ার অংশ। তিনি বলেন, রবীন্দ্রসঙ্গীত দিয়ে এদেশে কোনোদিন অনুষ্ঠান শুরু হয়নি। এটা ধর্মনিরপেক্ষ দেশ নয় যে, কোরআন তিলাওয়াতে সমস্যা হবে। তিনি বলেন, এ সরকার ইসলামবিরোধী। তারা আল্লাহ বলতে চায় না, সৃষ্টিকর্তা বলতে চায়। বিসমিল্লাহর পরিবর্তে পরম করুণাময় আল্লাহ, জিন্দাবাদের পরিবর্তে জয়বাংলা বলতে চায়। তারা যখনই ক্ষমতায় এসেছে তখনই তাদের কার্যক্রমে অনৈসলামিক ধ্যান-ধারণা ফুটে ওঠে। এবার ক্ষমতায় আসার পর ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষানীতি চালুর ষড়যন্ত্র, ফতোয়া নিষিদ্ধ, সম্পত্তিতে নারী-পুরুষের সমানাধিকার দেয়ার উদ্যোগ নতুন কিছু নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তিনি বলেন, সরকার সংবিধান থেকে বিসমিল্লাহ এবং সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস শব্দগুলো উঠিয়ে দিয়ে দেশকে সেকুলার রাষ্ট্র বানানোর কাজ শুরু করে দিয়েছে। সরকারের এ ইসলামবিরোধী কাজের প্রতিবাদ করতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমির মাওলানা আবদুর রব ইউসুফী বলেন, বর্তমান সরকার দেশকে ধর্মনিরপেক্ষতার দিকে নেয়ার চেষ্টা করছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বোরকা পরা নিষিদ্ধ করার ঘটনা সেই ধারাবাহিকতার অংশমাত্র। এ বিষয়ে মুসলমানদের সচেতন হতে হবে।
ইসলামী আন্দোলন ঢাকা মহানগর সভাপতি মাওলানা এটিএম হেমায়েত উদ্দিন বলেন, কোরআন তিলাওয়াতের পরিবর্তে রবীন্দ্রসঙ্গীত পরিবেশন সরাসরি ইসলামের ওপর চরম আঘাতের শামিল। সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের দেশে এ ধরনের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে মুসলমানদের অন্তরে চরম আঘাত হানা হয়েছে। এর তীব্র নিন্দা জানিয়ে তিনি আরও বলেন, হিজাব ইসলামের মৌলিক বিধান। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীদের বোরকা পরা নিষিদ্ধ করে শরিয়তের এই বিধানের ওপর আঘাত হানা হয়েছে। এসব বিষয় দেশের মানুষ কোনোদিন মেনে নেবে না। এভাবে ইসলামের ওপর একের পর এক আঘাত হানার ঘটনায় সরকারকে সতর্ক করে দিয়ে তিনি বলেন, এদেশ পীর-আউলিয়ার দেশ। এখানে যেভাবে মসজিদ, মাদ্রাসা ও ইসলামের ওপর আঘাত হানা হচ্ছে তার পরিণতি হবে ভয়াবহ। ১৬ এপ্রিল মুক্তাঙ্গনে ইসলামী আন্দোলনের পক্ষ থেকে লক্ষাধিক মানুষের সমাবেশ ঘটিয়ে এর দাঁতভাঙা জবাব দেয়া হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
তাহফিজে হারামাইন পরিষদের সভাপতি মাওলানা সাদেক আহমদ সিদ্দিকী বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. শফিউল ইসলামকে অবিলম্বে বহিষ্কার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর একের পর এক ইসলামবিরোধী সিদ্ধান্ত নিতে থাকে। তারা দিনবদলের নামে ইসলাম বদলের কাজ করে যাচ্ছে। রাষ্ট্রপতি যখন সব ধরনের ফতোয়া নিষিদ্ধ করা হবে বলে ঘোষণা দেন, প্রধানমন্ত্রী যখন উত্তরাধিকার আইন বদলাতে চান, পাটমন্ত্রী যখন ধর্মকে মদের নেশার সঙ্গে তুলনা করেন এবং সরকারি দলের সাধারণ সম্পাদককে যখন আলেম-ওলামাদের কটাক্ষ করে বক্তব্য দিতে দেখা যায়, তখন বুঝতে কষ্ট হয় না, বর্তমান সরকার দিনবদলের নামে ইসলাম বদলের চেষ্টা করছে। সরকারের এ আশা পূরণ হবে না।
আওয়ামী লীগ সমর্থক ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান আলহাজ মিছবাহুর রহমান চৌধুরী বলেছেন, কোরআন তিলাওয়াতের পরিবর্তে রবীন্দ্রসঙ্গীত দিয়ে অনুষ্ঠান শুরুর ধৃষ্টতা যে দেখায় তাকে কোনো অবস্থায় ক্ষমা করা যায় না। বাংলাদেশের শতকরা নব্বইভাগ মানুষের ধর্মবিশ্বাস হচ্ছে ইসলাম। ধর্ম বিশ্বাসের ওপর আঘাত দেয়া সংবিধানেরও লঙ্ঘন। যারাই এটা করেছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। তিনি বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীদের বোরকা পরা নিষিদ্ধ করে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের মনে চরমভাবে আঘাত দেয়া হয়েছে। এটা করার অধিকার কারও নেই।
বাংলাদেশ আওয়ামী ওলামা লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি মাওলানা আখতার হোসাইন বোখারী বলেন, আমরা আওয়ামী লীগ করি বলে ইসলামের বিপক্ষে কোনো দিনই অবস্থান নেব না। বাংলাদেশে পবিত্র কোরআন তিলাওয়াতের পরিবর্তে রবীন্দ্রসঙ্গীত দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু করা হবে, অন্ততপক্ষে এটা সহ্য করার মতো নয়। বোরকা হচ্ছে নারীদের জন্য ইসলামের একটি বিধান। এটা নিষিদ্ধ করার অধিকার কারও নেই। মুসলমানদের সাংবিধানিক অধিকার হচ্ছে বোরকা পরা। এ অধিকার কেউ আদেশ জারি করে হরণ করতে পারে না। এ ধরনের ইসলামবিরোধী ও অসাংবিধানিক কার্যকলাপের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো সবার দায়িত্ব।

http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/04/04/25831

No comments:

Post a Comment