Thursday 1 April 2010

'প্রকৃত' যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চায় বিএনপি

Shamokal শুত্রুবার | ২ এপ্রিল ২০১০ | ১৯ চৈত্র ১৪১৬ | ১৬ রবিউস সানি ১৪৩১

বিশেষ প্রতিনিধি
সরকারি দলের নির্বাচনী অঙ্গীকার অনুযায়ী \'প্রকৃত\' যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চায় প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। সরকার বর্তমানে \'মানবতাবিরোধী\' অপরাধের কথা বলে যুদ্ধাপরাধের বিচার করলে তা \'রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ\' করতে চায় বলে সন্দেহ প্রকাশ করছে দলটি।
এমনকি \'আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল অ্যাক্ট\' অনুযায়ী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হওয়ার ব্যাপারেও প্রশ্ন তুলছে তারা।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ অভিমত ব্যক্ত করা হয়। বৈঠকে একই সঙ্গে চলমান বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাসের ভয়াবহ সংকটের মধ্যে সরকার জনগণের দৃষ্টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়া শুরু করেছে বলে অভিমত ব্যক্ত করে দলটি। সূত্র জানায়, বৈঠকে যুদ্ধাপরাধের বিচারের পাশাপাশি চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, জনদুর্ভোগের বিষয়, দলের সাংগঠনিক অবস্থা, বিভাগীয় মহাসমাবেশের ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা হয়। বৈঠকের সিদ্ধান্ত আজ দুপুর ১২টায় দলের নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তা তুলে ধরবেন।
রাত সাড়ে ৮টায় গুলশান কার্যালয়ে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সভাপতিত্বে বৈঠক শুরু হয়ে পৌনে ১১টায় শেষ হয়। বৈঠকে স্থায়ী কমিটির সদস্যদের মধ্যে মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, এম শামসুল ইসলাম, লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান, বেগম সারোয়ারী রহমান, এমকে আনোয়ার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও নজরুল ইসলাম খান উপস্থিত ছিলেন।
সূত্র জানায়, বৈঠকে বলা হয়, বিএনপি \'প্রকৃত\' যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চায়। \'প্রতিহিংসামূলক\' বিচার নয়। সরকার যে \'মানবতাবিরোধী\' বিচারের কথা বলছে_ তা আগের দেওয়া অঙ্গীকারের সঙ্গে কোনো মিল নেই। মানবতাবিরোধী বিচার \'ওয়ার্ল্ড ক্রাইম ট্রাইব্যুনাল অ্যাক্ট\'-এর অধীন করা হয়। কিন্তু সরকার তা করছে না বলে অভিমত ব্যক্ত করা হয়। বৈঠকে আরও বলা হয়, সরকার নির্বাচনের আগে জনগণকে দেওয়া কোনো ওয়াদাই পূরণ করতে পারছে না। তারা অবিলম্বে পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাসসহ সব নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়নের জোর দাবি জানান।
সূত্র জানায়, বৈঠকে বিএনপির বিভাগীয় মহাসমাবেশ দ্রুত সম্পন্ন করে ঢাকায় মহাসমাবেশ থেকে দেশ ও জনস্বার্থ রক্ষায় সরকারবিরোধী আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণার ব্যাপারে আলোচনা হয়। বৈঠকে আগামী ১৮ এপ্রিল খুলনা বিভাগ, ২৮ বা ২৯ এপ্রিল বরিশাল, ৪ মে রাজশাহী বিভাগ এবং পরে সিলেট বিভাগে মহাসমাবেশ করার সিদ্ধান্ত হয়। একই সঙ্গে দ্রুত বিরোধপূর্ণ ঢাকা মহানগরসহ দলের অবশিষ্ট জেলাগুলোতে কমিটি গঠনের ব্যাপারেও আলোচনা হয়।
দেলোয়ারের ব্রিফিং
এর আগে দুপুরে প্রকৃত যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে বিএনপির আপত্তি নেই বলে জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন। একই সঙ্গে তিনি বলেন, আমরা প্রকৃত যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিপক্ষে নই। তবে এ বিচার নিয়ে উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা চলছে। যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করতে অসৎ উদ্দেশ্য চরিতার্থে সরকারের মন্ত্রীরা তাদের বিরুদ্ধে নানা আবোল-তাবোল অবান্তর মন্তব্য করে চলছেন।
আরমানিটোলার নিজ বাসায় সাংবাদিকদের দেওয়া এক ব্রিফিংয়ে প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। বিএনপি মহাসচিব বলেন, \'আমরা বারবার বলে আসছি, প্রকৃত যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। এটা আমাদের দলের অবস্থান। কিন্তু যেখানে সরকার রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে বিচার প্রক্রিয়া চালাচ্ছে, তাতে কীভাবে নিরপেক্ষ তদন্ত হবে?\' তিনি বলেন, \'সত্যিকার অপরাধের সুষ্ঠু তদন্ত করে বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে। তা না হলে ন্যায়বিচার নিয়ে জনমনে সন্দেহ দেখা দেবে।\'
তিনি আরও বলেন, চট্টগ্রামের মহাসমাবেশে খালেদা জিয়া তার বক্তব্যে অতীতের মতো এবারও পরোক্ষভাবে যুদ্ধাপরাধীদের সমর্থন দিয়েছেন_ আওয়ামী লীগের এ অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তারা অসৎ উদ্দেশ্যে এসব অবান্তর মন্তব্য করছেন।
খোন্দকার দেলোয়ার অভিযোগ করে বলেন, মহাজোট সরকার জনপ্রিয়তা প্রমাণে ভোলা-৩ আসনের উপনির্বাচনে জয়ের সবরকম কারসাজি সম্পন্ন করেছে।

No comments:

Post a Comment