Friday 25 May 2012

ইকোনমিস্টের প্রতিবেদন শেখ হাসিনা দেশকে বিপজ্জনক পথে নিয়ে যাচ্ছেন ভারতের হাতেই চাবিকাঠি নয়া দিগন্ত ডেস্ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে বিপজ্জনক পথে নিয়ে যাচ্ছেন বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী পত্রিকা ইকোনমিস্ট। গতকাল শুক্রবার পত্রিকাটির অনলাইন সংস্করণে রাজনৈতিক উত্তেজনা, দুর্নীতি, খুন, অপহরণ ইত্যাদি বিষয় তুলে দু’টি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। একটির শিরোনাম ছিল ‘বাংলাদেশ’স টক্সিক পলিটিকস : ইট ইজ আপ টু ইন্ডিয়া টু ট্রাই টু স্টপ শেখ হাসিনা রুইনিং বাংলাদেশ’। অপরটির শিরোনাম ছিল ‘পলিটিকস ইন বাংলাদেশ : দ্য প্রাইম মিনিস্টার সেটস দ্য কান্ট্রি অন অ্যা ডেঞ্জারাস পাথ’। প্রতিবেদনে বলা হয়, পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন হতে প্রায় ১৮ মাস বাকি থাকতেই রাজপথে বিক্ষোভ দেখা যাচ্ছে। বিরোধী নেতাদের কারাগারে পাঠানো হচ্ছে, তাদের গুম ও খুনের জন্য ক্ষমতার পুরনো প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে ব্যাপকভাবে দায়ী করা হচ্ছে। পরবর্তী নির্বাচন কার তত্ত্বাবধানে হবে এবং তা আসলেই নিরপেক্ষ হবে কি না তা নিয়ে পরস্পর বিরোধী অবস্থান দেখা যাচ্ছে। এটা ইতোমধ্যে এত তীব্র হয়ে উঠেছে যে, অনেক পর্যবেক্ষক প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক কোনো নির্বাচন আদৌ হবে কি না তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। বাংলাদেশীরা ইতোমধ্যে খাদ্য ও জ্বালানির মূল্য, মারাত্মক লোডশেডিং এবং নতুন নতুন সড়ক নির্মাণের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গে ুব্ধ হয়ে উঠেছেন। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) নেতা বেগম খালেদা জিয়া অন্যায় আচরণের জন্য শেখ হাসিনাকে দায়ী করেছেন। এতে বলা হয়, মাস খানেক আগে এক তরুণ রাজনীতিবিদকে অপহরণ করা হয়, খুব সম্ভবত তাকে খুন করা হয়েছে। এর আগে অন্য দু’জনকে হত্যা করা হয়। চলতি মাসে সিনিয়র কয়েকজন সংসদ সদস্যসহ ৩৩ জন বিরোধী নেতাকে কারাগারে ঢোকানো হয়। খালেদা জিয়া বলেন, বিএনপির তিন হাজার নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি জানান, আতঙ্ক সৃষ্টির জন্য এটা করা হয়েছে। এতে বলা হয়, আরো অনেক কলঙ্কিত বিষয় রয়ে গেছে। সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি রহস্যজনক হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। এক সৌদি কূটনীতিক গুলিতে নিহত হয়েছেন, এক ট্রেড ইউনিয়ন কর্মী নির্যাতিত ও খুন হয়েছেন, দুর্নীতির অনুসন্ধান করার পর এক সাংবাদিক দম্পতিকে হত্যা করা হয়েছে। ঢাকায় মোটরসাইকেলে গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তা এই সাংবাদিকের পিছু নিয়েছিল। সেনাবাহিনীর ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ কঠোর করতে জানুয়ারিতে ক্যুর গুজব ছড়ানো হয়। বাংলাদেশের অন্যতম সুপরিচিত ব্যক্তিত্ব, গ্রামীণ ব্যাংকের মুহাম্মদ ইউনূসকে হেনস্তা করা হয়েছে। মতিভ্রমের শিকার শেখ হাসিনা তাকে রাজনৈতিক হুমকি মনে করেন। চলতি মাসে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি কিনটন ঢাকায় তার সাথে সাক্ষাৎ করে তাকে সমর্থনের আশ্বাস দিয়েছেন। এতে অবশ্য স্বস্তিদায়ক অবস্থার সৃষ্টি হয়নি। মন্ত্রীরা তার সমালোচনা করছেন আর সরকার তার ব্যাংকের কার্যক্রম পর্যালোচনার জন্য আরেক দফা কমিশন গঠন করেছে। আর কমিশন গঠন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ইউনূস। বস্তুত সরকার গ্রামীণ ব্যাংককে কব্জা করতে চাচ্ছে। সরকারের বিরুদ্ধে আরো অনেক অভিযোগ রয়েছে। দুর্নীতি এত ব্যাপক যে, তা দাতাদেরও উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জাপান তার উপ-প্রধানমন্ত্রীকে পাঠিয়ে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার দাবি ব্যক্ত করেছে। সাম্প্রতিক এক দুর্নীতির ঘটনায়, রেলমন্ত্রীর সহকারীর গাড়ি থেকে বস্তাভর্তি টাকা পাওয়ার পরে তিনি পদত্যাগ করেছিলেন। কিন্তু অল্প পরেই তাকে মন্ত্রিসভায় পুনর্বহাল করা হয়। এ দিকে গণতন্ত্র নিয়েও সংশয় রয়ে গেছে। ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত চলতি সপ্তাহে হিলারি কিনটনের হুঁশিয়ারি পুনর্ব্যক্ত করে বলেছেন, পরবর্তী নির্বাচন অবশ্যই ‘অংশগ্রহণমূলক’ হতে হবে। অর্থাৎ নির্বাচন আয়োজন করতে হবে নিরপেক্ষভাবে, যাতে বিরোধী দল অংশ নিতে পারে। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো ভারতের মনোভাবে পরিবর্তন এসেছে। শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগের দীর্ঘ দিনের ঘনিষ্ঠ মিত্র ভারত ইসলামি চরমপন্থী এবং ভারতীয় উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় বিদ্রোহীদের দমন, বাণিজ্য উদারীকরণের প্রশংসা করে আসছিল। ভারতের ক্ষমতাসীন কংগ্রেস সম্ভবত একটি পক্ষের ওপর নির্ভরশীলতা হ্রাস করেছে। দেশটির অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখার্জি সম্প্রতি বেগম খালেদা জিয়ার সাথে সাক্ষাৎ করে তাকে দিল্লি সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। খালেদা জিয়া বলেছেন, তিনি দিল্লির গ্রীষ্মের গরমের পরে সেখানে যাবেন। খালেদা জিয়া প্রতিবেশী দেশটিকে ‘বন্ধু’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। এটা তার দলের অবস্থানগত পরিবর্তনের সূচক হতে পারে। শেখ হাসিনাকে যত একরোখা মনে হচ্ছে, জনগণ তত তার কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন বলে মনে হচ্ছে। অবশ্য সব দোষের জন্য শেখ হাসিনাকে দায়ী করা যায় না। তবে তিনি সংবিধান পাল্টে দিয়েছেন। যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য ইতঃপূর্বে তিনি আন্দোলন করেছিলেন, সেটাই এখন বাদ দিয়েছেন। তিনি সম্ভবত আগামী নির্বাচনে আরো ভালোভাবে জয়ের বিকল্পগুলো খোলা রাখতে চাচ্ছেন। অন্য দিকে খালেদা জিয়া রাজপথে বিক্ষোভ ও অনশন করছেন এবং জুনে গণ-আন্দোলনের হুমকি দিয়েছেন। এর দুঃখজনক পরিণাম হবে রাজনীতিতে আরো মেরুকরণ এবং সঙ্ঘাত সৃষ্টি। ইকোনমিস্টের অপর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে বহির্বিশ্ব কিছুটা চেষ্টা করছে। বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুর অর্থায়ন থেকে সরে এসেছে, ইউনূসের প্রতি অসদাচরণ ও হয়রানিমূলক তৎপরতার নিন্দা করেছেন ইউরোপিয়ান রাষ্ট্রদূতেরা। ইউনূসের প্রতি সমর্থন জানাতে হিলারি কিনটন চলতি মাসে ঢাকা এসেছিলেন। কিন্তু সরকারকে অনড় মনে হচ্ছে। হিলারির প্রতি অবজ্ঞাপূর্ণ আচরণ প্রদর্শন করতেই যেন সরকার গ্রামীণ ব্যাংকের মালিকানা নিয়ে নতুন কমিশন গঠন করছে, এর মাধ্যমে ব্যাংকটির মালিকানা সরকার নেবে কিংবা ধ্বংসও করে ফেলতে পারে। ঢাকার ওপর একমাত্র যে দেশ অনেক প্রভাব সৃষ্টি করতে পারে সে হলো ভারত। ইসলামপন্থীদের দমন করার কারণে আঞ্চলিক পরাশক্তি ভারত শেখ হাসিনার বাড়াবাড়ি সহ্য করেছে। ভারত এখন উভয় দলের সাথে ঘনিষ্ঠ হতে চায় বলে মনে হচ্ছে। ভারত যদি তার প্রতিবেশী দেশটিতে কার্যকর গণতন্ত্র দেখতে চায়, তবে তাকে আরো বলিষ্ঠভাবে এর পক্ষে কথা বলতে হবে। http://www.dailynayadiganta.com/details/48707

No comments:

Post a Comment